খেলাফত অবসানের একশত বছর পর :বিশ্ব ও ইসলাম
The Abbasid Caliphate of Cairo (1261-1517)

ঠিক একশত বছর আগে উনিশশো বাইশ খ্রিস্টাব্দে উসমানী খিলাফতের অবসানের পর মুসলিম বিশ্ব নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করে। আধুনিকতা ও অত্যাধুনিকতার ধাপ পার করে ঠান্ডা যুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বিশ্ব নতুন বিশ্ব পদ্ধতি ও বিশ্বায়নের যুগে পা রেখেছে। বিশ্ব মুসলিম তথা অসংখ্য মুসলিম নেতা ইসলাম বিশ্বের কোনো পুনরুজ্জীবনের তাগিদে বিভিন্ন বৈপ্লবিক আন্দোলন চালিয়ে যাই। জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠান করে বিশ্বশান্তি, নিরাপত্তা, স্বাধীনতা, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রকে আধুনিক বিশ্বের মূল লক্ষ্য গণ্য করা হয়।অতঃপর বিশ্ব রাজনীতিতে আমেরিকা একক নেতার ভূমিকায় প্রতিষ্ঠা পায়। সাম্রাজ্যবাদ প্রায় ধ্বংস হয় ও জাতি রাষ্ট্রের নামে দুশোর অধিক রাজনৈতিক ইউনিটের অস্তিত্ব ঘটে। এদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির পর বিংশ শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত যথা চুয়াল্লিশ বছর যাবত আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়ন ঠান্ডা যুদ্ধে লিপ্ত থাকে, ফলপ্রসূত বিভিন্ন দেশে যুদ্ধের হাহাকার ছড়ানো হয়। ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে সোভিয়াত ইউনিয়নের পতনের সাথে কমিউনিজামের মৃত্যু ঘটে, অতঃপর আমেরিকা সারা বিশ্বে প্রাধান্য বজায় রাখার উদ্দেশ্যে খুমায়নীর আঁচলে ইসলামকে শত্রুরূপে প্রস্তাব করে ও সারা বিশ্ব অ্যামেরো সেন্ট্রিক হয়ে যায়।

 

বিশ্বব্যাপী আধিপত্য বজায় রাখার জন্য আমেরিকা বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করে। ইতিহাসের পাতায় আমেরিকাকে দেখতে পায় যে তারা বিভিন্ন মুসলিম দেশের  সাথে মৈত্রবন্ধনে ছিল, কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ইসলামের প্রতি তাদের শত্রুতা প্রকাশ পায়। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের জন্য যে তালিবানদের তারা জন্ম দেয়। তাদের বিরুদ্ধেই বছরের পর বছর যুদ্ধ করে। পাকিস্তানকে তারা নিজের স্বার্থের জন্য ব্যবহার করে,  জুলফিকার আলী ভুট্টখান ও ইয়াহিয়াকে তারা নিজের জঘন্য স্বার্থে ব্যবহার করে, অতঃপর যখন তারা রাষ্ট্রপতি জিয়াউল হককে ইসলামপন্থী পান, তখন তারা তাকে হত্যা করে। অন্যদিকে. সুদানের জাফর আর নামেরিকে গণতান্ত্রিক দেশ প্রতিষ্ঠানের উৎসাহ দেয়, কিন্তু যখন দেখতে পাই যে দেশটি ইসলামপন্থীদের হাতে যাচ্ছে. তখনই সেখানে তারা সামরিক অভ্যুত্থান চালিয়ে দেই। মধ্যপ্রাচ্যে তেলক্ষেত্রে সামরিক অধিপত্য নিশ্চিত করার জন্য আমেরিকা পরিকল্পিতভাবে ইরাককে কুয়েত দখলের জন্য প্রলোভন দেয়। অতঃপর ইসরাইলের নিরাপত্তা, uni-poler বা এক রঙা বিশ্ব ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য ইরাকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। যার ফলে সমস্ত বিশ্ব ব্যবস্থা ওয়াশিংটন মুখী হয়ে পরে।

 

ওসমানিয়া খিলাফত অবসানের পর মুসলিম বিশ্ব পাশ্চাত্যের বিভিন্ন নীতির অন্তরালে লুকিয়ে পড়ে। পাশ্চাত্য দেশগুলি সর্বদা ডবল স্ট্যান্ডার্ড নীতি বজায় রাখে। ফিলিস্তিন ও ইসরাইল সংঘাতে সমাপ্তি আনার জায়গায় অস্ত্র ব্যবসার সমৃদ্ধি ও মুসলিম বিশ্বের থেকে ইসরাইলকে ব্রহ্মাস্ত্ররূপে প্রতিষ্ঠা করে। যে ইসরাইলের অস্তিত্বই ছিল না, তাদেরকেই অর্ধেক দেশ দিয়ে দেওয়া হয়। বিশ্বব্যাপী উন্নততর পরিবহণ  ব্যবস্থা জন্মের ফলে ইউরোপ দেশে বিশাল ভাবে ইসলামের বিস্তার ঘটে। ইসলামের এই সম্প্রসারণের  ঢেউকে থামানোর জন্য মুসলিম বিশ্বের জাগরণকে Islamic conspiracy theory এবং Islamic fundamentalism বলে আখ্যায়িত করা হয়।  তেমনই বসনিয়া হার্জেগোভিনায়  ইসলামের  সম্প্রসারণ রুখতে Ethnic cleansing  নামকনীতি গ্রহণ করা হয়। মৌলবাদ শব্দটি নিশ্চয়ই আমাদের খুব পরিচিত, কিন্তু এই শব্দ দ্বারা যে অর্থ প্রকাশ পায় বা সারা বিশ্বের জনগণের চিন্তায় যে চিত্র অঙ্কিত হয় তা আমেরিকার দান। ইরান বিপ্লবের পরে এই শব্দটির ব্যাপক প্রচার হয়। যার ফলে মৌলবাদ শব্দের দ্বারা আতঙ্ক, অত্যাচার ও নিকৃষ্ট কিছু মানুষের চিত্র পরিদর্শিত করা হয়। এমনকি আজ মৌলবাদকে গালি হিসাবেও ব্যবহার করা হচ্ছে।

পাশ্চাত্য দেশগুলি মুসলিম বিশ্বের এক ছত্রতলায় আসার বিষয় কখনো সঠিক নজরে দেখতে পারেনি। শিয়া সুন্নির সংঘাত ও দ্বন্দ্ব তারা সারা বিশ্বে ব্যাপকভাবে প্রসারণ করে। যদিও একবার শিয়া সুন্নি মৈত্রী বন্ধনের চেষ্টা করা হয় ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে, যাকে আমরা খার্তুম রিসলিউশন নামে জানি। এই বছর এপ্রিল মাসে, পঞ্চান্নটি দেশের ইসলামী নেতাবৃন্দ ও বুদ্ধিজীবীদের একটি অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত করা হয়, যাকে পাশ্চাত্য দেশগুলির সঠিক নজরে দেখতে পারেনি।

সমাজকে নিরপেক্ষকরনের নামে বাস্তবাদী চিন্তাকে সম্প্রসারণ করা হয়। রাজনীতি ও ধর্মকে আলাদা করানো হয়। যে আমেরিকা নিরপেক্ষতার দাবি করে তাদের ছায়াতলেই ধর্ম ও বিশ্বাসের ওপর ইসরাইল নামক একটি গোটা দেশের প্রতিষ্ঠান করা হলো। বছরের পর বছর আমেরিকা আফগানিস্তান,সোভিয়াত ইউনিয়ন ও বিভিন্ন দেশের সাথে যুদ্ধে হাজার হাজার আক্রমণ চালায়। অথচ তাদের বিরোধী কোনো মুসলিম দেশ বাড়িতে আগুন লাগালেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ফতোয়া জারি করে দেওয়া হয়। হ্যাঁ, অবশ্য স্যাটানিক ভার্সেস এর লেখক স্টান্ট মাস্টার  সলমন খুরশিদকে হত্যা করার ফতোয়াটি আমেরিকাকে অনেক সাহায্য করেছে। তবে তাকে হত্যা করার ফতোয়া দেওয়াটা মুসলিম বিশ্বের জন্য লাভজনক ছিল কিনা তা বিবেচনা করা খুব দ্বন্দ্বময় বিষয়।

যাই হোক মুসলিম বিশ্ব উসমানিয়া খিলাফতের পতনের একশত বছর উদযাপন করছে। হ্যাঁ, এত বছর পরেও যদি আমরা নিজেকে চিনতে না পারি. তো উদযাপন ছাড়া কি বলবো। এই দীর্ঘ সময়ে হাজার হাজার বিখ্যাত চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের আবির্ভাব হয়। ইরানে আয়াতুল্লা খুমায়নিন সাংঘাতিক প্রচেষ্টার ফলে ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে ইরান একটি  প্রজাতন্ত্র ইসলামী দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠা হয়। মিশরের হাসানুল বান্না ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে, মুসলিম ব্রাদার হুডের জন্ম দেয়।  যাদেরকেও প্রাশ্চাত্য দেশগুলি terrorism এর সীলমোহর লাগিয়ে দেয়। মালয়েশিয়ায় নাকিবুল আক্তাসের নেতৃত্বে "শিক্ষা ইসলামীকরণ" ও সেখানকার প্রধানমন্ত্রী টুঙ্কু আব্দুল রহমানের নেতৃত্বে ইসলাম হাদারীর মতো দুইটি বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয়। লিবিয়ায় সানুসী ও তুর্কিতে গুলেন আন্দোলনের অবির্ভাব হয়। ভারতে ও পাকিস্তানে আলীগড়, বেরেলি, দেওবন্দী, জামাতি ইসলামী আন্দোলনের ছাড়াও বিভিন্ন আঞ্চলিক আন্দোলনও চলে। কিন্তু আমার প্রশ্ন একটাই যে,  মুসলিম কি পেরেছে নিজেকে পুনর্জীবিত করতে। তারা কি নিজের হারিয়ে যাওয়া সঅম্মন ও শক্তি ফিরে পেয়েছে। ভেবে দেখেছেন আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি। এত আন্দোলন, এত পুনর্গঠন ও আধুনিকীকরণ ফলপ্রসু কেন হয় না? নাকি এসব ধর্মের নামে False hopes ব্যবসা  চলছে, বা হয়তো আমাদের নেতৃবৃন্দরা কমিউনিস্টের কিছু বুদ্ধিজীবীদের প্রভাবে এইসব আন্দোলন শুরু করেন।

 

কাল মার্কসের সাম্যবাদী চিন্তাধারায় লেনিন ও স্টালিনের মতো বহু নেতা প্রভাবিত হন। যার ফলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর শক্তিশালী সোভিয়েত রিপাবলিকের প্রতিষ্ঠা হয়। মুসলিম বিশ্বেও এর প্রভাব ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ হয়। যার ফলে Communist manifesto কে মডেল বানিয়ে মুসলিম বিশ্বেও বিভিন্ন ধার্মিক ও রাজনৈতিক ম্যানিফেস্টোর আবির্ভাব ঘটে। এর বদলে যদি আমরা জাপানকে মডেল বানিয়ে চলতাম তাহলে ফলাফল হয়তো অনেক লাভজনক হওয়ার সম্ভবঅনা ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানে যে ক্ষয়ক্ষতি হয় তারপরেও তারা দেশকে সংস্কৃতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভাবে চাঙ্গা করতে সক্ষম হয়েছে, কেন যে তারা নিজের দেশকে বৈজ্ঞানিক রিসার্চ, আধুনিককরণ ও নতুন রূপে উন্নততর দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠান করতে সক্ষম হয়েছে।

 

আমাদের বুঝতে হবে যে সমাজ তলোয়ার ও গান কালচার কে সার্বিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। আমাদের বুঝতে হবে যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সমাপ্তির সাথে সাথে War of people এরও দা এন্ড হয়েছে। আর অনেক আগেই সারা বিশ্বে War of intelligence বা বুদ্ধির খেল শুরু হয়। বিগত প্রায় ছয়শত বছর আগে ফিকাহশাস্ত্রে ইজতিহাদের দরজা বন্ধ করার পরে, অধিকতর মুসলিম  জ্ঞানী বিজ্ঞানীরা জ্ঞান-বিজ্ঞান, কারিগরি, শিল্পকলা ও প্রযুক্তি শক্তির ওপর একাডেমিক খোঁজ থেকে বিরত থাকে। সবাই পুরনো বইগুলির ব্যাখ্যা ও ব্যাখ্যার উপর ব্যাখ্যা লিখতে ব্যস্ত হয়ে পরে। যার ফলে দর্শন, বিজ্ঞান, নৈতিকতা, সামাজিকতা, রাজনীতি ইত্যাদি বিষয়ে এই সময়ে কোন বিরল গ্রন্থের সন্ধান পাওয়া যায় না। ছয়শত বছর আগে ইবনে খালদুনের মুকাদ্দামাহ এর পরে সার্বজনীন গৃহীত কোন গ্রন্থ পাওয়া যায় না। অবশেষে ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে মরিস বুকাইলের দা বাইবেল দা কোরান এন্ড সায়েন্স নামক একটি সর্বমান্য ইসলামী গ্রন্থের  প্রকাশ করে। যে ধর্মের অনুসারীরা কাদেসিয়া যুদ্ধে ষাট হাজার সৈনের সামনে দুই লাখ সৈন নিয়েও পরাজয় হয়। তারা এত বছর পর কি করে এত সমৃদ্ধশীল হয়ে পড়লো। আমরা সর্বদা সালাউদ্দিন আয়ুবিকেই হিরো রূপে দেখেছি। শতাব্দীর পর শতাব্দী দ্বিতীয় সালাউদ্দিনেরই অপেক্ষা করেছি. কিন্তু আমরা এটা বুঝতে পারিনি যে সমাজ সময়ের সঙ্গে অতি দ্রুত পরিবর্তনশীল। এখন তলোয়ারধারি আর সালাহুদ্দিন নয় বরং অন্য রূপী সলাহুদ্দিন চাই।

 

উনবিংশ শতাব্দীতে যখন মুসলিম বিশ্বের সাথে পাশ্চাত্য দেশের মুখোমুখি হয়, তখন তারা আমাদের সেই অবস্থাতেই পায় যে অবস্থাতেই আমরা সাতশত বছর আগে হারের পর হার পরাজয় রুপে তাদেরকে উপহার দিয়েছিলাম। ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে কনস্টানটিনোপলের পতনের পর খ্রিস্টানরা পশ্চিমা দেশে স্থানান্তর হয়, অন্যদিকে স্পেনে মুসলিমদের পরাজয়ে পর খ্রিস্টানরা হয় এক জ্ঞান চর্চায় সমৃদ্ধশীল সমাজের উত্তরাধিকারী। তারপর বিভিন্ন গবেষণা, জ্ঞান চর্চা ও কর্মকৌশলের মাধ্যমে সারা বিশ্ব ইউরোসেন্ট্রিক হয়ে যায়। এত শতাব্দী ধরে বুদ্ধি ও চিন্তার স্থিতিশীলতার ফলে দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ যখন প্যান ইসলামিযাম ও মুসলিম মধ্য প্রাচ্য দেশগুলি পুনঃইসলামীকরণের ডাক দেই তখন তা কোনো রূপে ফলপ্রসু হয়নি।

 

মুসলিম বিশ্বে আরো এক শ্রেণীর মানুষ বা বুদ্ধিজীবীদের উল্লেখ করা খুবই প্রয়োজন। স্যার সৈয়দ আহমেদ, আবুল কালাম আজাদ ও আরও কিছু মনীষীদের কথা। যারা মুসলিম হওয়ার সাথে সাথে আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে মিলিয়ে চলতে শিখেছিলেন। যাদের উপর ব্রিটিশরা ভরসা রাখতো। তাদের ওপর মুসলিম বিশ্ব ফতোয়া আরোপ করে  তাদেরকে আমাদের সমাজ থেকে দূরীভূত করে। খান্দাক যুদ্ধের একটি ঘটনা আমাদের জানা অত্যন্ত দরকার। সেই যুদ্ধে মুসলিমদের অবস্থা যখন খুবই শোচনীয় হয়ে পড়ে। তখন নুয়াম বিন মাসউদ নামক একজন শত্রুপক্ষ থেকে প্রিয় নবীর কাছে আসেন ও ইসলাম গ্রহণ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। প্রিয় নবীজি তারও প্রস্তাব বহিস্কার করেননি বরং তাকে বিশ্বাস করেন ও তার দ্বারায় শত্রু পক্ষকে পরাজয় করার জন্য একটি সুন্দর ফাঁদ তৈরি করেন। প্রিয় নবী শত্রু পক্ষের মনোবল দুর্বল করার জন্য তাকে কাফেরদের দিকে ফিরিয়ে দেন,  অতঃপর কাফেররা খুব শীঘ্রই মদিনার প্রান্তর হতে পলায়ন করে। দেখলেন তো ইন্টারমিডিয়টর বা মধ্যস্থতাকারী থাকা একটা সমাজের জন্য কত গুরুত্বপূর্ণ।

উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দী ইতিহাসের গ্রন্থে অনেক নতুন নতুন অধ্যায় যুক্ত করে। পশ্চিমা দেশগুলি যখন আমাদের উপর আক্রমণ চালায় আমরা অতি উচ্চস্বরে জেহাদের ফতোয়া ঘোষণা করি আমরা বুঝতে পারিনি যে তীর তালওয়ারের যুগ পেরিয়ে গেছে। আমরা বুঝতে ব্যর্থ ছিলাম যে আগে মানুষ রাজাদের ধর্মের অনুসারী ছিল, আর আজ মানুষ সময়ের ধর্মের অনুসারী। তাই সেদিন যদি জিহাদের ফতোয়া জারি না করে শিক্ষা অর্জনের ফতোয়া জারি করতাম তাহলে হয়তো আমরা এই অবস্থায় থাকতাম না। কার্যকারিতা ছাড়া ফতোয়ার পর ফতোয়া জারি করে আমরা ফতোয়ার মূল্য ধূলিসাৎ করেছি। এমনকি ফতোয়া শব্দটি আজ কোথাও কোথাও অমূল্য কথাকে বোঝায়।

 

প্রযুক্তিগত উন্নতত র এই বিশ্বে আজ দা'ওয়াত করা খুব সহজ হয়ে গেছে। আগে প্রজাদের রাজার ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হতো। রাজাদের অনুগত্য করতে হতো, বাকস্বাধীনতা ও বৈদেশিক সম্পর্ক রাখাও অনিশ্চিত ছিল, কিন্তু আজ সারা বিশ্ব একটি গ্রামের ন্যায় হয়ে গেছে। সবার বাক স্বাধীনতার অধিকার রয়েছে, একে অপরের সাথে সম্পর্ক খুব দ্রুততর হয়ে গেছে। তাই পূর্বের থেকে দা'ওয়াত করা আজ খুব সহজতর হয়ে পড়েছে। তাই এখন আর তলোয়ার দ্বারা জেহাদ করার সময় নয়।  বরং এই সময়টা হলো প্রযুক্তি ও মিডিয়া দিয়ে জেহাদ করার সময়। সারা বিশ্বে ইসলামের সঠিক নিয়ম ও আদর্শ তুলে ধরা।  ইসলামের উন্নত সাহিত্যের প্রচার করা, আর পরিষ্কার করে দেওয়া যে ইসলামী ব্যবস্থায় হচ্ছে সর্বোত্তম গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা।  বিশ্বব্যাপী আধুনিকীকরণ ও সামাজিক পরিবর্তনের ফলে ক্রমান্বয়ে মানুষ নিজের পরিচিতি হারিয়ে ফেলেছে, মানুষ জাতি-রাষ্ট্রের পরিচিতি বহিস্কার  করছে। আর এই জাগা পূরণ করার জন্য যদি ইসলামের আদর্শ সঠিক রূপে উপস্থাপন করা হয় তাহলে সারা বিশ্ব পাশ্চাত্যের নিয়ম প্রত্যাখ্যান করবে।  সবাই ইসলামের উত্তম ভাবমূর্তি দেখে ইসলামের ছায়াতলে একজোট হবে। আর দেরি নয়, আসুন সবাই ইসলামের ছায়াতলে একত্র হয়, আর বিশ্বের সামনে ইসলামের সঠিক আদর্শ ও চিত্র তুলে ধরি। আর পৃথিবী নামক এই গ্রহে সর্বোত্তম আদর্শ ও সংবিধান প্রতিষ্ঠা করি।

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter