মুজেযা হজরত মুসা,সুলাইমান ও ঈসা (আঃ)
প্রত্যেক মাখলুক কে সৃষ্টি করার পেছনে আল্লাহ তায়ালার কিছু উদ্দেশ্য রয়েছে। উদ্দেশ্য বিহিন আল্লাহ একটি পিপীলিকাও সৃষ্টি করেননি। তার মধ্যে আল্লাহ তায়ালা মানুষ ও জীন সম্প্রদাই কে তিনার ইবাদত বন্দেগি করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু মানুষ সভ্যতা এতই নির্বোধ যে তারা তাদের প্রভুকে তাদের সৃষ্টি কর্তাকে ভুলে গিয়ে তারা মূর্তি পুজই লিপ্ত হয়ে গিয়েছিল। তারা মূর্তিগুলোকে নিজেদের উপাসনালয়ে স্থাপন করে তাদের পায়ে মাথা নত করতে থাকে। আল্লাহ তায়ালা এদেরকে সঠিক পথেরদিশারি করার জন্য যুগে যুগে নবিদেরকে প্রেরন করেছেন। এবং তাদেরকে বিশেষ অলৌকিক শক্তি প্রদান করেছেন যাতে করে তারা তার সম্প্রদাইকে সেই অলৌকিক শক্তি দারা আল্লাহ তায়ালার পথে আহ্বান করতে পারে। সেই অলৌকিক শক্তিকেই মুজেযা বলে।
আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে দুইলক্ষ্য চব্বিশ হাজার পইগম্বর পাঠিয়েছে। তাদের সকলকে কিছু মুজেযা প্রদান করেছেন। তার মধ্যে কিছু নবির মুজেযা নিচে উল্লেক্ষ্য করা হল।
হজরত মুসা (আঃ)- হজরত মুসা (আঃ) বানি ইসরাইল গত্রের একজন নবি। যার উপরে আল্লাহ তায়ালা তাওরাত গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছেন। তিনি এক আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছিলেন। তিনার কওমের লোকেরা অত্যচারি ফেরাউন (সেই সময়ের রাজা) কে আল্লাহ বলে ইবাদত করত। তাই আল্লাহ তায়ালা মুসা (আঃ) কে তাদের মধ্যে প্রেরন করলেন যাতে করে মুসা (আঃ) তাদেরকে সত্তের পথে অর্থাৎ এক আল্লাহর পথে দাওয়াত দেই। সাথে আল্লাহ কিছু মুজেযা প্রদান করলেন যাতে করে সেই মুজেযার মাধ্যমে মানুষদেরকে এটা প্রমান করতে পারে যে আল্লাহ এক তিনি যা চাই তাই করতে পারেন।
লাঠি সাপে পরিবর্তন- আল্লাহ তায়ালা মুসা (আঃ) কে একটি মুজেযা প্রদান করেছেলিন যা তার হাতের লাঠি যমিনে নিক্ষেপ করলেই সাপে পরিবর্তন হয়ে যেত। তিনাকে আল্লাহ তায়ালা আদেশ দিলেন যে সে এবং তার ভাই হারুন ফেরাউন কে আল্লাহর পথে যেন আহ্বান করে। সেই আদেশ পাওয়ার মুসা (আঃ) এবং তার ভাই হারুন (আঃ) ফেরাউনের দরবারে যাই, ফেরাউন কে এক আল্লাহর ভিতি প্রদর্শন করার জন্য। কিন্তু তারা যখন ফেরাউন কে আল্লাহর পথে দাওয়াত দিল তখন ফেরাউন এবং তার সভাসদগন তাকে মিথ্যাবাদী বলে গালাগালি দিল। তখন ফেরাউন এবং সভাসদগণ তাকে বল্ল তুমি যে আল্লাহর বার্তাবাহক তার প্রমান কি তখন মুসা (আঃ) তার হাতের লাঠি যমিনে নিক্ষেপ করে এবং তা সাথে সাথে এক বিরাট সাপের রূপ ধারন করে। তা দেখে সকলেই বলতে থাকে মুসা অনেক বড় জাদুগর সে জাদুর মাধ্যমে লাঠিকে সাপ বানিয়ে দিয়েছে। এবং ফেরাউন বলতে থাকে “এ মুসা তুমি যদি মিসরের বিখ্যাত জাদুগরদেরকে হারাতে পার তবেই আমি আল্লাহর উপর ঈমান আনব”। মুসা (আঃ) তার কথাই রাজি হয়ে যায় এবং প্রতিযোগিতা করতে মইদানে উপস্থিত হয়। প্রত্যেক জাদুগর তাদের জাদু দেখাই এবং তারা জাদুর মাধ্যমে অনেক জন্তু জানোয়ার বানিয়ে মুসা (আঃ)এর দিকে ছেরে দেই। তখন মুসা (আঃ) নিজের লাঠিকে যমিনে নিক্ষেপ করে এবং তা সাথে সাথে সাপের রূপ নিয়ে নেই এবং জাদুগরদের জাদুর জন্তুকে খেয়ে নেই। তাই দেখে অনেকেই মুসা (আঃ)এর সান্নিধ্যে চলে আসে। কিন্তু জালিম ফেরাউন সে মুসা (আঃ)এর বিরোধিতা করতে থাকে।
বাহু থেকে উজ্জ্বল আলোর বিকিরণ-হজরত মুসা (আঃ)কে আল্লাহ তায়ালা অপর এক অলৌকিক ক্ষমতা প্রদান করেছিলেন যার মাধ্যমে বাহু থেকে আলো বিচ্ছুরিত হত। মুসা (আঃ) তার লাঠি যখনি নিজের বাহুতে রাখত তখনি তার বাহুদ্বয় থেকে উজ্জ্বল আলো বিচ্ছুরিত হত।
লাঠির আঘাতে নীলনদে রাস্তা-মুসা (আঃ) যখন ফেরাউনকে আল্লাহর পথে ডাক দেই তখন ফেরাউন মুসা (আঃ)এর ডাকে সাড়া নাদিয়ে তার অনুচরদের উপর কঠোর অত্যাচার চালাতে থাকে। তার ফলে মুসা (আঃ) মিশর পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেই। এবং তারা সকলে কোন এক নিশিরাতে জন্মভূমি ছেরে কোন এক অজানা দেশের দিকে পারি দেই। সেই খবর ফেরাউনের কানে পৌছাই। ফেরাউন মুসা (আঃ) ও তার দলবলকে পাকরাও করার জন্য তাদেরকে তিন দিক থেকে ঘেরাও করে ফেলে। সামনে ছিল নীলনদ তখন আল্লাহ তায়ালার হুকুমে মুসা আলাইহিসসালাম তার লাঠি দ্বারা নীলনদে আঘাত করে। এবং সাথে সাথে নীলনদে রাস্তা তৈরি হয়ে যাই। সেই রাস্তা দ্বারা মুসা (আঃ) ও তার দলবল নীলনদ পার হয়ে চলে যাই। কিন্তু ফেরাউন ও তার দলবল নীলনদে ডুবে মারা যাই।
হজরত সুলাইমান (আঃ)-হজরত সুলাইমান (আঃ) হলেন নবি দাউদ (আঃ)এর পুত্রসন্তান। তিনি ছিলিন অতিবিচক্ষন চালাক ও জ্ঞানী। তিনার সমতুল্য জ্ঞানী ব্যক্তি অতিঅল্পয় ছিলেন। তিনি ছিলেন গোটা পৃথিবীর বাদশা। তার হুকুম সকল পশু পাখি জীবজন্তু, এমনকি আঠারো হাজার মাখলুকাত তার হুকুমের গোলাম ছিল। তিনাকে আল্লাহ কিছু মুজেযা প্রদান করেছিলেন।
পিপীলিকার ভাষা বোঝা- হজরত সুলাইমান (আঃ) প্রত্যেক জীবজন্তুর ভাষা বুঝতে পারতেন। প্রত্যেক কীটপতঙ্গরও ভাষা বুঝতে পারতেন।
কুরানে এসেছে যে, একদা হজরত সুলাইমান (আঃ) তার দলবলসহ কথাও ভ্রমনে বের হয়েছিলেন। পথিমধ্যে কোন এক পাহারের কাছে অবতার হওয়ার জন্য বাতাস কে হুকুম দেই যে সেই জাইগাতে যেন তাকে নামিয়ে দেয়। তখন সুলাইমান (আঃ) শুনতে পাই যে পিপীলিকাদের সর্দার পিপীলিকাদেরকে বলছে যে “তোমরা নিজের নিজের ঘরে প্রবেশ কর কেননা সুলাইমান (আঃ) ও তার দলবল এখানে নামবে তোমরা তার পায়ের তলাই দাবা পরে মারা যাবা। তখন সুলাইমান (আঃ) তার কথা শুনে মুচকি হাসে, এবং তাদেরকে আশ্বস্ত করতে থাকে যে তাদের কোন ভই নাই।
বাতাসের মাধ্যমে ভ্রমন-হজরত সুলাইমান আলাইহিসসালামকে আল্লাহ তায়ালা অপরএক অলৌকিক শক্তি প্রদান করেছেন। তিনি বাতাসকে হুকুম করতেন এবং বাতাস তাকে তার গন্তব্যস্থানে পৌছে দিতেন। তিনি বাতাসের মাধ্যমে এক মাসের সফর কিছু সময়ের মধ্যে পৌঁছে যেতেন।
হজরত ঈসা (আঃ)- হজরত ঈসা (আঃ) ছিলেন মারয়ামের সন্তান। তিনি ছিলেন আল্লাহর একজন নবি। যার উপর আল্লাহ তায়ালা পবিত্র ইঞ্জিল গ্রন্থ নাজিল করেছিলেন। তিনাকে আল্লাহ তায়ালা পিতাবিহিন জন্ম দিয়েছেন। তিনাকে রুহুল্লাহ বলা হয়। তিনি মানুষদের মধ্যে সত্তের আলো ছড়াবার জন্য আপ্রান চেষ্টা করেছেন। তিনাকে আল্লাহ তায়ালা বিনা পিতার ঔরসে সৃষ্টি করেছেন।
মুরদা ব্যক্তিকে পুনরাই জীবিত করা- হজরত ঈসা (আঃ) কে আল্লাহ তায়ালা এক বিশেষ মুজেযা প্রদান করেছিলেন। যার মাধ্যমে তিনি আল্লাহর নামে মুরদা ব্যক্তিকে জীবিত করে দিতে পারতেন
কথিত আছে যে একদা হজরত ঈসা আলাইহিসসালাম এক রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি সেই রাস্তাই এক বুড়ি কে দেখতে পাই যে একটি কবরের পাসে বসে কান্না করতেছে। তখন ঈসা আলাইহিসসালাম থামতে না পেরে সেই বুড়িকে জিজ্ঞেসা করিল যে “এ বুড়ি তুমি কান্না করিতেছ কেন” তখন সেই বুড়ি ঈসা আলাইহিসসালামকে বলতে থাকে যে “ বাবা আমার একটি সন্তান ছিল সে ছাড়া এই পৃথিবীতে আমার আর কেউ ছিলনা কিন্তু সে এই দুনিয়া ছেড়ে পরলোকে গমন করেছে” তখন ঈসা আলাইহিসসালামের সেই বুড়ির উপর দয়া হয় এবং সে বলতে থাকে “ হে যুবক তুমি আল্লাহ তায়ালার নামে জীবিত হয়ে যাও” এই বলার সাথে সাথে সেই যুবকটি সাথে সাথে জীবিত হয়ে যাই।
অসুস্থ ব্যক্তিকে সুস্থ করা- হজরত ঈসা আলাইহিসসালাম কোন অসুস্থ ব্যক্তি কে যদি স্পর্শ করতেন তবে সেই ব্যক্তি সাথে সাথে সুস্থ হয়ে যেত। আল্লাহ তায়ালা হজরত ঈসা আলাইহিসসালাম কে এই মুজেযা দিয়েছিলেন তার কারণ সেই সময়ে চারিদিকে দুরভিক্ষ্য চলছিল সকলেই অসুস্থ হয়ে পরছিল। ঈসা আলাইহিসসালামের এই মুজেযা দেখে তারা যেন সঠিক