হযরত ইউসুফ আলাইিস সালামের কিংবদন্তি কাহিনী
হযরত ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর পিতার নাম ছিল হযরত ইয়াকুব (আলাইহিস সালাম) আর ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) নবী ছিলেন এবং তার বাবাও নবী ছিলেন আর আদম (আলাইহিস সালাম) থেকে ইশা (আলাইহিস সালাম) পর্যন্ত যত নাবী এসেছে তার মধ্যে সবচেয়ে সে দেখতে সুন্দর ছিল। এবং তার মাতার নাম রাহিলা এবং তিনার সতমার নাম ছিল লিয়া। হযরত ইয়াকুব (আলাইহিস সালাম) এর দ্বিতিয় স্ত্রী রাহিলার গর্ভ থেকে হযরত ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) জন্মহযরত ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর সংক্ষীপ্ত জীবনী গ্রহণ করেন। ও রাহিলার গর্ভ থেকেই বনি ইয়ামিনের জন্ম গ্রহণ হয় । এই দুই পুত্র ছাড়া আরও দশজন পুত্র সন্তান ছিল। সেই পুত্র গুলি হযরত ইয়াকুব (আলাইহিস সালাম) এর প্রথম স্ত্রী লিয়ার গর্ভ থেকে জন্ম গ্রহণ করেন। যখন হযরত ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর মাত্র পাঁচ বছর তখন তার মা রাহিলা বনি ইয়ামিনের জন্ম দেয়ার পরে তিনি মৃত্যু বরন করেন। ইয়াকুব (আলাইহিস সালাম) ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) কে অনেক ভালো বাসতো শুধু তার বাবা ভালো বাসতো তাই নয় হযরত ইউসুফ (আলাইহিস সালাম)এর স্বভাব বা চরিত্র দেখে পাড়া প্রতিবেশীরাও ভালো বাসতো এবং তার দশজন ভায়ের মধ্যে সবছেয়ে সে দেখতে সুন্দর ছিল। তার সত দশটি ভাইয়ের দ্বারা হযরত ইয়াকুব (আলাইহিস সালাম) এর মন ভরতো না কারণ তার দশটা ভাইয়ের স্বভাব বা চরিত্র ভালছিল না । আর তারা অনেক ঝগড়াটে আর হিংস্রীত ছিল । ইয়াকুব (আলাইহিস সালাম) ইউসুফ (আলাইহিস) কে অনেক ভালো বাসতো । তাই তারা দশ ভাই তাকে অনেক হিংসা করতো। তার জন্য ইয়াকুব (আলাইহিস সালাম) ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) কে চোখে চোখে রাখতেন।আল্লাহ তাআলা ইয়াকুব (আলাইহিস সালাম) কে প্রথমেই জানিয়ে দিয়েছিল যে হযরত ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) কে নবুয়াত দান করবে।
হযরত ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর অলৌকিক স্বপ্ন
হযরত ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) একদিন রাতে সে একটা স্বপ্ন দেখেছিল যে এগারোটা তারা বা নক্ষত্র আর চাঁদ আর সূর্য তাকে সেজদা করছে তখন হযরত ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) তার বাবা হযরত ইয়াকুব (আলাইহিস সালাম)কে বলল। তখন ইয়াকুব (আলাইহিস সালাম) ও যেনেনিল যে আল্লাহ তাআলা ইউসুফ (আলাইহিস সালাম)কে নবুয়াত দিবেন। আর ইয়াকুব (আলাইহিস সালাম) ইউসুফ (আলাইহিস সালাম)কে বলল যে তুমি তোমার স্বপ্ন তোমার সত ভাইদের বলবে না কারণ তারা নাবী বংশের ছেলে তাই তারা স্বপ্নের মানে বুঝে নিতে পারে। ইয়াকুব (আলাইহিস সালাম) তাকে আরও বলল যে চাঁদ আর সূর্যের অর্থ হল তোমার মা বাবা আর এগারোটা তারার অর্থ হল তোমার এগারোটা ভাই আর সেজদা করা অর্থ হল অনুগত্য স্বীকার করা। যদি তোমার সত ভাই জানতে পারে তাহলে তোমার উপর আরও হিংসা করবে। আর তোমাকে মেরে দিতে চাইবে। এই সব ইয়াকুব (আলাইহিস সালাম) এর আর ইউসুফ (আলাইহিস সালাম)এর মধ্যে কথা-বাত্রা ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর ভাই আড়াল থেকে দাড়িয়ে শুনে নিয়ে ছিল। এবং তখন তার সত ভাইটা অন্য ভাইদের বলে দিল। তারপর সত ভাই মিলে পরামর্শ করল যে ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) কে কিভাবে হত্যা করা যাই। আমরা যদি ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) কে হত্যা না করি তাহলে আমরা বাবার ভালোবাসা থেকে চির জীবনের জন্য বঞ্চিত থাকবো।
হযরত ইউসুফ (আলাইহিস সালাম)এর ভাইদের ষড়যন্ত্র
আগেকার যুগে সেই দেশে আমীরের ছেলেরাও মাঠে ছাগল ভেড়া চড়াতে নিয়ে যেতো ইয়াকুব (আলাইহিস সালাম) যেমন নবী ছিল তেমনও তার সম্পত্তি ছিল। আর ছাগল, ভেড়া, গরু, উট, গাধা, ছিল । তার দশজন পুত্র সেগুলো চড়াতে নিয়ে যেত ।আর ইয়াকুব (আলাইহিস সালাম) ইউসুফ (আলাইহিস সালাম)কে তাদের সঙ্গে যেতে দিত না । ইয়াকুব (আলাইহিস সালাম) জানতো যে তার দশজন পুত্ররা ইউসুফ (আলাইহিস সালাম)এর উপর কতটা পরিমাণ হিংসা করে।একসময় তারা দশজন ভাই কথাবাত্রা করতে লাগল যে বাবা ইউসুফকে আর তার ভাই বনি ইয়ামিনকে অনেক ভালো বাসছে এবং আমাদের এত ভালোবাসে না স্নেহ করে না। যদি বাবার স্নেহ বা ভালোবাসা পেতে হয় তাহলে ইউসুফকে হত্যা করতে হবে। বাবা ইউসুফকেই ভালোবাসছে তখন তাদের মধ্যে একটা ভাই বলল কি করতে হবে ? কেউ কিছুই তো বলল না। তখন এক ভাই বলল যে ইউসুফ কে হত্যা করতে হবে। তাকে আমাদের সঙ্গে ছাগল চড়াতে নিয়ে যাব। তারপর তাকে হত্যা করে দিব ।অন্য ভাই বলল যে ইউসুফকে যদি ডাকা হয় তাহলে সে বলবে বাবাকে জিজ্ঞাসা করে আসি যদি বাবাকে জিজ্ঞাসা করে তাহলে বাবা মানা করে দিবে। তখন অন্য ভাই বলল তাহলে আমরা বাবার কাছে গিয়ে ইউসুফের অনুমতি নেব। তখন তাদের মধ্যে একটা ভাই ছিল তার নাম হল রুবেল। সে অন্যদের মত অত নিষ্ঠুর ছিলনা। তখন রুবেল বলল তাকে হত্যা করা যাবেনা।তাকে হত্যা করা আমাদের জন্য ভাল হবে না। অন্য ভাই জিজ্ঞেস করল তাহলে তাকে কি করা যায় তুমি বল ? তখন রুবেল বলল যে তাকে একটি কুয়াতে ফেলে দিতে হবে আর সেই কুয়াতে বেশি জল না থাক।যদি কোনো বিদেশি সেই কুয়াতে জল নিতে যায় তাহলে ইউসুফ কে সেই কুয়া থেকে তুলে নিবে আর তাকে অনেক দূরে নিয়ে চলে যাবে।তাই রুবেলের কথা সবাই মেনে নিল ।তারপর পরের দিন দশজন ভাই তার বাবা ইয়াকুব (আলাইহিস সালাম) এর কাছে গেল আর বলল আমরা ছাগল গরু চরাতে গিয়ে মাঠে অনেক খেলা করি আর মজা করি ।আর ইউসুফ ঘরেই বসে থাকে আর সে খেলা করে না তাই আমাদের তা ভালো লাগে না।তাই আমরা ইউসুফকে আমাদের সঙ্গে নিয়ে যেতে চাই।তখন ইয়াকুব (আলাইহিস সালাম) বলল -যদি ইউসুফ আমার চোখের আড়াল হয় তাহলে আমার মন ভাল থাকে না। আর তোমরা যখন মাঠে খেলবা তখন যদি ইউসুফ একটু দূরে চলে যায় তাহলে তাকে নেকড়ে বাঘে ধরে নিয়ে যাবে তখন ভাই গুলো বলল যে আমরা ইউসুফকে দেখে রাখব।
তারপর ইয়াকুব (আলাইহিস সালাম) অনিচ্ছাই ইউসুফকে তাদের সঙ্গে যাওয়ার অনুমতি দিল। ইউসুফ এর সত-ভাইরা ইউসুফকে নিয়ে গেল তারপর একটু দূরে গিয়ে ইউসুফকে অত্যাচার করতে লাগল। আর একটি বড় জঙ্গলের মধ্যবর্তী স্থানে ছিল কুয়া সেই কুয়াতে ইউসুফকে কুয়ার ভিতরে ফেলে দিল এবং ইউসুফ এর জামাটা নিয়ে নিল আর একটা ছাগল কে কেটে তার রক্ত তিনার জামাতে লাগিয়ে দিল। আর তারা ইয়াকুব (আলাইহিস সালাম) এর কাছে গেল এবং বলল যে বাবা ইউসুফ কে নেকড়ে বাঘে নিয়ে চলে গেছে। আর আমরা ইউসুফ কে ধরতে গেলাম তো তার জামাটা রয়ে গেল আর ইউসুফ কে নিয়ে চলে গেল। তারপর ইয়াকুব (আ) তার জামা টা নিয়ে অনেক কান্না করতে লাগলো। তারপর ওই কুয়ার পাস দিয়ে কিছু লোক মিশরের দিকে যাচ্ছিল। তাদের কাছে জল ছিল না তাই তারা কুয়া থেকে জল নেবার জন্য কুয়ার দিকে গেল। তাদের পাত্র জল নেবার জন্য কুয়াই ফেলে দিল। যখন তারা কুয়া থেকে পাত্র উঠাল। তখন ইউসুফ উঠে এলো। তখন তাদের মধ্যে এক জন লোক বলল-“এটা কে?
তখন অন্য জন বলল আমরা একে দাস করে বেশি দামে বিক্রয় করব। এত সুন্দর দাস পাওয়া যায়না। তাই তাকে তাদের সঙ্গে মিশরের দিকে নিয়ে গেলো। আর তাকে বাজারে নিয়ে গিয়ে তাকে বিক্রয় করার জন্য বলল। তখন মিশরের রাজা উজীর আযীয মিশর সেখানে ছিল অতপর রাজা ইউসুফ কে দেখে তাকে অনেক দামে কিনে নিল। এবং তার রাজ বাড়িতে নিয়ে চলে গেল।