ঈমাম নাজমুদ্দিন ওমর আল-নাসাফী
সঠিক আকিদা বা বিশ্বাস রাখা হল এমন এক মূল্যবান সম্পদ যার মাধ্যমে মানবতার প্রতিষ্ঠা সক্ষম হয়েছে। সঠিক আকিদার দ্বারায় আমাদের পূর্বপুরুষরা ইসলাম ধর্মকে অক্ষুন্য রেখেছেন। ওসমান রাঃ এর হত্যার পর যা ঘটে তার কারণে মুসলিম সম্প্রদায় দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়, সুন্নি এবং শিয়া। শিয়া মুসলমানরা নিজেদের আকিদায় অনেক কুসংস্কার, ভুলভ্রান্তি স্বীকৃত দেয়, যার কারণে ইসলাম ধর্মের মূল আকিদা বা বিশ্বাসগুলো তলিয়ে যেতে শুরু হয়। কিন্তু এমত অবস্থায় সুন্নি মুসালমানরা ইসলামের প্রধান সঠিক আকিদাগুলোকে রক্ষার জন্যে অগ্রসর হন। আজ তাঁদেরই অবদানের ফলে আমরা ইসলামের সঠিক বিশ্বাসগুলো পেয়েছি। ঈমাম আশয়ারী, আবু মানসুর-আল-মাতুরিদী প্রমুখরা সুন্নি আকিদা রক্ষায় অগ্রিম প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। যিনাদের অবদানের ফলে সুন্নি আকিদা বা বিশ্বাস চিরতরের জন্যে সঞ্চিত হয়েছে, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন, নাজমুদ্দিন ওমর আল-নাসাফী। নাজমুদ্দিন ওমর নাসাফী সামারকান্দ ও যাইহুনের মধ্যবর্তী ‘নাসাফ’ নামক গ্রামে ৪৬১ হিজরি সনে জন্মগ্রহণ করেন। তিনার পুরো নাম ‘ঈমাম নাজমুদ্দিন আবু হাফস ওমর বিন মোহাম্মাদ বিন ইসমাইল বিন লুকমান আন-নাসাফী। তিনি উজবেকিস্তানের বড়ো শহর সামারকান্দে বড়ো হন, সেখানেই নিজের স্বর্গিয় মাতাপিতা সহ সেই যূগের মহান উলামায়ে কেরামদের থেকে জ্ঞান অর্জন করেন। আবুল কাসিম বিন বায়ান, ইসমাইল বিন মোহাম্মাদ আল-নুহি, কাজী হাসান বিন আব্দুল মালিক এবং আরও খ্যাতনামা উলামায়েদের থেকে কুরান, হাদিস, ফিকহ, নাহাভ, আকিদা, বিজ্ঞান ও নানান বিভাগে জ্ঞান লাভ করেন। নাজমুদ্দিন নাসাফী সাহেব ইসলামিক শাস্ত্রে হানাফি মাযহাবের এবং আকিদার বিদ্যানে ঈমাম আবু ইউসুফের ছাত্র হযরত আবু মানসুর আল-মাতুরিদী অনুসরণকারী ছিলেন। তিনি হানাফি মাযহাবের সমস্ত আকিদা সেই মাযহাবের শ্রেষ্ঠ ঈমাম ‘ঈমাম আবু হানিফার’ ‘আল-ফিকহুল-আকবর নামক বই থেকে গ্রহণ করেন। নাসাফী ঈমাম আকিদা বিদ্যার সঙ্গে সঙ্গে আরবী ব্যাকরণ শাস্ত্রে অধিক খ্যত লাভ করেছিলেন। একদিন তিনি তাফসিরুল-কাশশাফের লেখক ঈমাম যামাখশারী এর দর্জায় যান, ঈমাম যামাখশারি জিজ্ঞেস করেন দর্জায় কে ? তিনি বলেন, “ওমর”। ঈমাম যামাখশারী বললেন “ইনসরিফ” (চলে যাও), তখন তিনি প্রত্যুতরে বললেন “ওমর লা ইয়ানসরিফ ফাইন্নাহু গাইরু মুনসারিফ” (ওমরতো গাইর মুনসারিফ, আরবী ব্যাকরণ শাস্ত্র অনুযায়ী ওমর হল এমন এক বিষেশ্য যে সব বিশেষ্যগুলো অন্য রূপে রুপান্তর হয়না)। তিনি (যামাখশারী) আবার বললেন “ইযা নুক্কিরা সরিফা” (যদি তাকে অচেনা মানা যায় তাহলে রূপান্তরিত বিশেষ্যর মধ্যে হয়)। ঈমাম নাজমুদ্দিন ওমর আল-নাসাফীর থেকে অনেক উলামায়ে দ্বীন ও ঈমামগন উপকৃত হয়েছিলেন। মোহাম্মাদ বিন ইব্রাহিম আল-তুরাবশাতি, আবু-লাইস আহামদ বিন আমর সহ নানান বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামগন আপনার থেকে জ্ঞান অর্জন করেন। এছারাও বিভিন্ন বিজ্ঞবানেরা তিনার বিভিন্ন স্থানে প্রশংসাও করেন। বিভিন্ন কলায় তিনি আপন অতুলনীয় অবদান চিরতরের জন্য আহলে সুন্নাত অল-জামাতের কল্যাণে রেখে যান। তিনি হাদিস, কুরান, ফিকহ, তাসাউফ, আকিদা, তাফসির সমস্ত বিভাগেই অনেক বই লেখেন। তিনার উল্লেখযোগ্য কিছু বইগুলি হল-
১) আল ইজাযাতুল মুতারজিমা বিলহুরুফিল মুজামা
২) আল-আশ-আর
৩) আল-আকমাল আল-আতোয়াল ফি তাফসিরিল কুরান
৪) আল-আকায়িদু নাসাফিয়া
তিনার সমস্ত বইগুচ্ছর মধ্যে আল-আকায়িদুন-নাসাফিয়া বইটি সব থেকে বেশি প্রচলিত। তিনি স্বয়ং এই বইটি আপন ঈমামদের থেকে সংগ্রহ করে লেখেন। আশায়েরা ও মাতুরিদিয়ার সমস্ত অনুসরনকারীরা এই বইটি নিজের আকিদার জন্যে ব্যাবহার করে থাকে। আল-আকায়িদুন-নাসাফিয়া বইটিতে আকিদার প্রতিটি বিষয়কে অংশগ্রহণ করিয়েছেন। আকায়িদুন নাসাফিয়া বইটিকে সাদুদ্দিন তাফতাযানি সহ অনেক আলিমে দ্বীনরা শারাহ করেন। তিনার বইটি আবার আহমাদ বিন মুসা আল-খেয়ালি ‘ শারহুল-খেয়ালি’ নামে শারাহ করেন।
তিনি জুমাদুল উলার ১৩ তারিখ রাত্রি বেলায় সামারকান্দে ৫৩৭ হিজরি সনে চিরতরের জন্যে আল্লাহর রহমতের তরে পরলোগ-গমন করেন ।