আরবি ভাষা সাহিত্যের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

আরবি ভাষা এমনই একটি ভাষা যা সর্বদা জনগণের কাছে জনপ্রিয় হয়ে এসছে। এই ভাষা আল্লাহর কাছে এত জনপ্রীয় যে আল্লাহ তা'আলা বলেন: إنا أنزلنا قرانا عربيا  “অর্থাৎ নিশ্চয়ই আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি আরবি হয়ে।”  এই ভাষার মর্যাদা বেশি হওয়ার এটাই সব থেকে বড় কারণ, তাছাড়া আরবি হচ্ছে কোরআনের ভাষা, জান্নাতিদের ভাষা এবং সেই সব লোকেদের ভাষা যিনারা সর্বদাই জ্ঞান জ্ঞানচর্চায় মগ্ন থাকেন। উনাদের মধ্যে লক্ষ্যনিয় হচ্ছেন নাবিগাতুল জিবয়ানি (পদ্যের জ্ঞানী), কুশু বিন সায়িদাতুল ইয়াদি (বক্তব্যের জ্ঞানী) এবং আরো অনেকেই |

 প্রত্যেক গোত্রের মধ্যে এমন কিছু মানুষ আছে যারা সর্বদাই নিজের গোত্রকে উন্যতমাণ করার চেষ্টা করে, তাদের চেষ্টা থাকে যে আমরা যেন অন্যদের চেয়ে বেশি উন্য়তমাণের হতে পারি। তাদের চেষ্টার মধ্যে একটি উদাহরণস্বরূপ এরকম হতে পারে যে, পুরনো যুগের তথ্যকে কিছু ভাগ্য ভাগ করে তা নিয়ে বিবেচনা করা বা চর্চা করা এবং সেই সব বিবেচনা চর্চাকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত বিভিন্ন ভাবে বিভক্ত করে তা বিশ্লেষণ করা, আর এই পদ্ধতিতেই নিয়ে আসা হয়েছে আরবি সাহিত্যের যুগ।

 আরবি সাহিত্যকে পুরোপুরি ভাবে পাঁচটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে সেই পাঁচটি যুগের শুরু কখন এবং এর সমাপ্তি কোথায় তা সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করা রয়েছে এবং তাছাড়াও রয়েছে কিছু লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য।

 সেই পাঁচটি যুগের মধ্যে প্রথমত যুগ হচ্ছে জাহেলী যুগ, যখন ইসলাম ধর্ম প্রথম মক্কা নগরে প্রকাশ হয় তখন এই যুগের সমাপ্তি ঘটে। প্রায় ১৫০ বছর ধরে চলে এসেছিল এই জাহিলি যুগের সময়সূচি।

 দ্বিতীয় যুগ হচ্ছে ইসলামের নবজাগরণের যুগ এই যুগটি শুরু হয়েছিল ইসলামের প্রথম যুগেই অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মক্কা আগমনের পর, এই যুগের সমাপ্তি প্রায় ১৩২ হিজরীতে বানি আব্বাসের সাম্রাজ্য উত্থানের সময় সংঘটিত হয়েছিল।।

 তৃতীয় যুগ এই যুগটি হচ্ছে বাণী আব্বাসের সাম্রাজ্য স্থাপনের সময়কাল, এটি শুরু হয়েছিল ১৩২ হিজরিতে আবুল আব্বাস আল-সাফ্ফা এর দ্বারা ৬৬৫ হিজরীতে বাগদাদের পতনের সময়। যেটি তাতার সৈন্য দ্বারা প্রতিফলিত করা হয়। এক নজরে বলতে গেলে তৃতীয় যুগটি শুরু হয় আব্বাসী রাজা ও সৈন দ্বারা এবং পতন বা এই যুগের সমাপ্তি হয় তাতার রাজা এবং তাদের বীর সৈন দ্বারা।।

 চতুর্থ যুগ এই যুগটি শুরু হয় প্রায় ৬৬৫ হিজরীতে যা তুরকি সাম্রাজ্যের সাহায্যে শীর্ষে পৌঁছে ওঠে। সেই তুরকি সাম্রাজ্য আজকের তুরকি নয় বরং সেই সব লোকেদের সাম্রাজ্য যারা সর্বদাই স্মরণীয়। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন কাজী মহিউদ্দিন আব্দুল জাহির, ইহাবুদ্দিন বিন ফাজলুল্লাহ আল-আমরি আরো অনেকেই। এই যুগে অধিকাংশ সময়ই বই প্রকাশের বৃদ্ধিতে লাগানো হয়েছিল। সেইসব বইয়ের কবিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ইবনু খালদুন এবং জালাল উদ্দিন সুয়ুতি রহিমাহুমুল্লাহ। তবে এই যুগের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে আরও একটি বিশেষ বিষয় লক্ষ্যণীয় যেটি হচ্ছে কবিতা ও কবি যেমন ইমাম আলবুসরী (রাঃ) এর রচিত কাসিদাতুল বুরদা এবং আল মানফুলুতির রচিত আন্নাজারা ওয়াল আবারাত (আরবি ভাষায় রচিত) আরো অনেকেই। তবে এই যুগের সমাপ্তি হয় প্রায় ১২২০ হিজরীতে অর্থাৎ শেষ নবজাগরনের উত্থানের সময়।।

 পঞ্চম যুগ এই যুগটি হচ্ছে আরবি ভাষা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ যুগ যেটি হল শেষ নবজাগরণের যুগ। এই যুগটি শুরু হয় প্রায় ১৩৩০ হিজরীর শেষের দিকে মোহাম্মাদ আলী বাশা-এর বংশধরের রাজত্য দ্বারা। এবং এটি আমাদের এই যুগ পর্যন্ত চলে এসেছে। এই যুগের কিছু লক্ষনীয় বৈশিষ্ট্য যথা এদের ভাষা পুরনো চারটি যুগের ভাষার চেয়ে একটু আধুনিক বা মডার্ন, এই যুগে অনেক অনেক আলিম-ওলামাগনের আবির্ভাব ঘটে, তিনাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন আব্দুল্লাহ বাশা যিনি মিশরে জন্মগ্রহণ করেন এবং সেখানেই আরবি নবজাগরণের একটি মুখ্য স্তম্ভ হয়ে গড়ে ওঠে, অন্য আরও আছেন যেমন মুস্তাফা বাশা কামিল, শেখ মোহাম্মদ আবদুহু, মোস্তফা লুৎফতি আল-মানফুলুতি ইত্যাদি। এই ছিল আরবি ভাষা  সাহিত্যের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ।।

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter