পরীক্ষা না প্রায়শ্চিত্ত
একই ধরনের কাজ দ্বিবিধ কারণে কার্যকারণ ক্ষেত্রকে করে দ্বান্দিক। কি কারণে বা উদ্দেশ্যে এ কাজ বা ফল, তা অনুধাবনে মনের জগতে উঠে ঝড়। হয় মন তোলপাড়। এ ঝড়ের দিক নির্দেশনা হয় জীবনের বোঝাপারা দিয়ে। কি এই বোঝাপারা? কার সাথে কিসের বোঝাপারা? সৃষ্টির সাথে কি স্রষ্টার? যিনি ঘোষণা করেন-
  “আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করবো (কখনো) ভয়-ভীতি, (কখনো) ক্ষুধা -অনাহার, (কখনো) বা জান-মাল ও ফসলাদি ক্ষতি সাধন করে”। 
(সুরা বাক্বারাহ, পারা ২, আয়াত ১৫৫)
তিনি আরো বলেন-
“হে ঈমানদারগণ নিশ্চয়ই নিশ্চয় জান মালের (ক্ষতি সাধনের) মাধ্যমে তোমাদের পরীক্ষা নেওয়া হবে'' ।
(সুরা আল- ইমরান, পারা ৪, আয়াত ১৮৬)
তিনি আরো বলেন-
“তোমাদের যা অকল্যান হয় তা নিজেরই কারণে।''
(সুরা নেসা, পারা ৪, আয়াত ৭৯) 
তিনি আরো বলেন-
“তোমাদের যে বিপদাপদ ঘটে, তা তো তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল।''
(সুরা আশশুরা, পারা ২৫, আয়াত ৩০)
উপরোক্ত ঘোষণাবানী বলে দেয় আমার জীবনে বিপদ-আপদ, দুঃখ-বেদনা নেমে আসার কারণ দ্বিবিধ। যখন আমি অপরাধী তখন তা আমার অপরাধ লাগবে, নইতো বা তা আমার জন্য পরীক্ষা। জীবন উত্তরণের সবুজ সংকেত। আমি কোথায়? অপরাধী না পরীক্ষার্থী? সৃষ্টির সাথে স্রষ্টার বোঝাপারা বা সম্পর্কই কি এর দেবে সমাধান? প্রচ্ছন্নতা বা আলো-আঁধারে ঘেরা মাধুর্য যখন আপনজনের আহ্বানে থাকে, তখন মনের প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ বয়ে আনে কখনো আলো, কখনো বা আঁধার। আশা ও নিরাশার মাঝে দানা বাঁধে ভরসা ও নির্ভরশীলতা। গভীর ভাবনায় ডুব দেয় মন যাতে থাকে ক্ষণিকের হারানোর মূর্ছনা ও আকাশে ভেসে বেড়ানোর অনাবিল আনন্দ। এটাই কি বিভোরতা? অদেখার অনাবিল আনন্দ যা মন কে করে না ক্লান্ত। অহরহ ভাবায় তাঁর কথা। একি তাই, যা পার্থিব প্রণয়ে অবুছ মনের সবুজ ভাবনা? সে কাঁদল তো কাঁদল কেন? হাসল তো হাসল কেন? জীবনের বেলাভূমিতে এ বাস্তব পার্থিব অনুভূতি বোধক্ষেত্র বা জীবনবিজ্ঞান ক্ষেত্র কি অপার্থিব বৃহত্তর বোধক্ষেত্রকে বোঝতে সহায়ক? একি এমনই বক সাদা বোঝাতে দুধ সাদার কথা? এ ভাবেই কি বিজ্ঞানময় সমস্ত সৃষ্টি অজ্ঞানীদের জন্য সর্বশক্তিমান বিজ্ঞানীকে জানতে তাঁর ল্যাবরেটরী?
জীবনের আপদ-বিপদ, দুঃখ-বেদনা ও না পাওয়া ভরসা দেয়- 'তোর হারানোর কিছুই নেই । এ তোর প্রেমের পরীক্ষা বা সর্বশক্তিমান আল্লাহর ডাকে সারা না দেওয়ার মাসুল। তোর সংশোধন তাঁর পথে। এ যে দোটানা, আশা-নিরাশা, আলো-আঁধার যার মাঝে লুকিয়ে আছে আপনজনের আপন করার কথা। তবে আমি যখন ভাবছি আমার বিপদ, ব্যথা ও বেদনা আমার অপকর্মের ফল ও তার প্রায়চ্শিত্ত, তখন জীবন পাচ্ছে নির্মলতা ও স্বচ্ছতা। আর যখন তা আমার পরীক্ষা, তখন এর সফলতা বয়ে আনবে জীবনের গ্রহনযোগ্যতার আর এক নতুন সোপান। এটা অভাবনীয়, অকল্পনীয় ও অতুলনীয়। উভয় ক্ষেত্রেই রয়েছে জীবনের উৎকর্ষতা। একটা জীবন সংশোধনের বার্তা বহন করে আর অন্যটা বলে জীবন উত্তরণের কথা। দুটোই জীবনের অগ্রগতি, তবে রয়েছে স্তরভেদ। জীবনের এ সংশোধন বা উত্তরণের ট্রেনিং ক্ষেত্রে কিন্তু নেই কোন প্রকার ভেদ।
কোনটা ভাবব, পরীক্ষা না প্রায়শ্চিত্ত ? প্রেমিক না অপরাধী? এখানেও স্তরভেদই মনকে বলে- 'এ তোর পরীক্ষা'। আর এ ভাবেই আমি ভাবতে অভ্যস্ত। কিন্তু যখন তা আলেমূল গায়েবের বিচার ব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্য পূর্ণ নয়, অর্থাৎ আমি তার স্কুলের ছাত্র না হয়েই পরীক্ষার্থী হওয়ার স্বপ্ন দেখি এ বড়ই ধৃষ্টতা ও অমূলক। আমি যা নই, তা যখন ভাবি, তাতে শয়তানের হাতছানি থাকতে পারে। তখন তা হবে নিজে নিজেকেই প্রতারণা, হেয় ও লাঞ্ছিত করার শামিল।
আমি দুর্বল ও অসম্পূর্ণ তাই অপরাধ বোধ আমার অসম্পূর্ণতার সাথে সামঞ্জস্য পূর্ণ। সেহেতু এর প্রায়চ্শিত্ত ও সংশোধন তাঁর পথে । এখানেও তিনি। আর এ যদি তা না হয়ে হয় পরীক্ষা, তবে তো সোনায় সোহাগা। আমার অপরাধী ভাবনা তখন আপনজন কে করবে আরো অনেক খুশি, বলবেন এ তোমার অপরাধের ফসল নয়, এ তোমাকে আরো কাছে করার বার্তা। মন হবে দৃঢ়। আমার পরীক্ষার ধকল হবে আরো মধুময়। তা হবে নিচ থেকে উপরে উঠা, নয় উপর থেকে নিচে অবতরণ।
   আমার বিচারে আমি যখন ইমানদার, কিন্তু তা কমজোরী। যাতে থাকে ভয় ও ভরসা। হয় ভাবনার জগতে উঠা নামা। ভয় ও আশার দোলনায় দোলে মন। এভাবেই আমি যখন 'পরীক্ষা না প্রায়শ্চিত্ত' এই ভাবনায় দোদুল্লমান। তখন এর যিনি  কেন্দ্রবিন্দু, তিনি পরম সুন্দর আল্লাহ। যতক্ষণ এই ভাবনায় দুলছি, ততক্ষণই কেন্দ্রবিন্দু কেন্দ্রিক এই আমি। অন্যথায় দ্বান্দিকতা শেষ। অর্থাৎ, দোলা শেষ। তখন কেন্দ্রবিন্দুর বাঁধণমুক্ত আমি। এর জন্যই কি এটা যখন অশেষ, তখন বাঁধণ অটুট? এভাবেই  তিনি আমার সাথে বিপদ-আপদে ধৈর্য ধারণ কালে। তাই  তাঁর ঘোষণা - 
“আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে আছেন”।
(সুরা বাক্বারাহ, পারা ২, আয়াত ১৫৩)
আর যখন তিনি সাথে, তখন সবই মধুময়। সাথে শুধু সাথী, আত্মহারা এই । এযেন, সব হারিয়ে সব পাওয়া। অমরের পদতলে অমরত্ত। একি মরার আগেই মরা? না মরার আগেই বেঁচে যাওয়া?
 
  
             
            
                     
            
                     
            
                                             
            
                                             
            
                                             
            
                                             
            
                                             
            
                                             
                     
            
             
            
             
            
             
            
            