ইসলাম: শান্তির ধর্ম

  ইসলাম, ইসলাম শব্দটি হলো একটি আরবি শব্দ। যার অর্থ হল আত্মসমর্পণ বা শান্তি। ইসলাম এমন একটি ধর্ম যেটি আল্লাহর কাছে একমাত্র ধর্ম। তাই আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজিদে বলে দিলেন ان الدين عند الله الاسلام. প্রিয় ভায়েরা আমারা কি জানি এই ইসলাম খানা কিভাবে এল? তাহলে চলুন আমরা ইসলামের সম্পর্কে কিছু জেনেনি। আজ থেকে ১৪০০বছর পূর্বে রাজনৈতিক দিক থেকে তখন পারস্য ও রোম এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি বর্তমান ছিল। পারস্যের ধর্ম মত ছিল মাজুসিয়াত- অগ্নি পূজা। এর প্রতিপত্তি ছিল ইরাক থেকে ভারতের সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত। আর রোমের ধর্ম ছিল ঈসাঈয়াত- খ্রীস্টবআদ। এটি গোটা ইউরোপ,  এশিয়া ও আফ্রিকাকে পরিবেষ্টন করে ছিল। এই দুটি বৃহৎ শক্তি ছাড়া ধর্মীয় দিক থেকে   ইহুদি ও হিন্দু ধর্মের কিছুটা গুরুত্ব ছিল। এরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ এলাকায় সভ্যতার দাবি করত। 
অগ্নিপূজা ছাড়া ইরানে  নক্ষত্র পূজার ও ব্যাপক প্রচলন ছিল। সেই সঙ্গে রাজা - ওমরাহ গণ ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রজাদের কাছে  খোদা ও দেবতার  আসনে অধিষ্ঠিত ছিল। তাদেরকে যথারীতি সেজদা করা হত এবং তাদের খোদায়ীর প্রশস্তি মূলক সংগীত গাওয়া হতো।  এক কথায়, সারাদেশ থেকেই তাওহিদের ধারণা ধারণা বিদায় নিয়েছিল । এছাড়া আরবে পূজা-উপাসনার জন্যে  আরবরা অসংখ্য প্রকার মূর্তি নির্মাণ করে নিয়েছিল। এই সকল মূর্তির পাশাপাশি তারা মূর্তির পাশাপাশি তারা গ্রহ নক্ষত্রের ও  পূজা করত। বিভিন্ন গোত্রের লোকেরা বিভিন্ন নক্ষত্রের পূজা করত। এর ভীতর সূর্য ও চন্দ্রের পূজায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তারা জিন এবং ভূত-প্রেতের ও পূজা করত। এদের সম্পর্কে নানা প্রকার অদ্ভুত কথা তাদের মধ্যে প্রচলিত ছিল। এছাড়া মুসলিম জাতিগুলোর মধ্যে আর যেসব কুসংস্কারের প্রচলন দেখা যায়, সেসবও এদের মধ্যে বর্তমান ছিল। এক কথায়, ধর্মাচরণ, নৈতিকতা, সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে তখনকার আরব অধঃপতনের চরম সীমায় উপনীত হয়েছিল। অতএব আপনারা বুঝতে পারছেন আগের অবস্থা কেমন ছিল। এইসব পরিস্থিতির জন্য আল্লাহ তাআলা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ৫৭০খ্রিস্টাব্দের বারই রবিউল আউয়ালে দুনিয়াতে আল্লাহর পয়গম্বর হয়ে পাঠালেন। অতএব তৎকালীন দুনিয়ার অবস্থা, আরবের বিশেষ পরিস্থিতি এবং সংশ্লিষ্ট জাতির স্বভাব প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য বিশেষত্ব- এর কোন জিনিসই ইসলামী আন্দোলনের পক্ষে অনুকূল ছিলনা। কিন্তু যখন এর ফলাফল প্রকাশ পেল, তখনই স্পষ্ট বোঝা গেল ঃ  " ব্রজ্জের ধবনী  ছিল  সে, অথবা ছিল সে  ' সওতে হাদী ' ছিল যে কাঁপায়ে আরবের মাটি রসূল  সত্যবাদী। জাগালো সে এক নতুন লগন  সকলের অন্তরে জাগায়ে গেল জনতাকে চির- সুপ্তির প্রান্তরে! সাড়া পড়ে গেল চারিদিকে এই সত্যের পয়গামে, হল মুখরিত গিরি প্রান্তর চির  সত্যের নামে। "


৫৭০ খ্রিস্টাব্দের বারই রবিউল আউয়ালে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কায় জন্মগ্রহণ করলেন। তিনি জন্মের পূর্বেই তার পিতা আব্দুল্লাহ ইন্তেকাল করেন এবং ৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে তিনার আম্মা আমিনা ইন্তেকাল করেন। তারপরে চাচা আবু তালিব তিনাকে লালন পালন করেন। এবং তিনিও ৫৭৮ খ্রিস্টাব্দে ইন্তেকাল করেন। তারপরে তিনাকে তিনার দাদা আব্দুল মুত্তালিব তিনাকে  লালন পালন করেন। নবুয়ত পাবার আগেও তিনি যুদ্ধ করেছেন। যেমন ফুজ্জারের যুদ্ধ , হলফুল ফুজুল এর যুদ্ধ। এই  হল ফুল ফুজুলের যুদ্ধে  একটি চুক্তি সম্পাদন করেন। এই চুক্তিতে হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও অংশগ্রহণ করেন এবং এতে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হন। নবুয়তের জামানায় এই চুক্তি সম্পর্কেই তিনি মন্তব্য করেনঃ' আমাকে ওই চুক্তির বদলে যদি একটি লাল রং এর উটও দেয়া হতো তবুও তা আমি কবুল করতাম না। আজও যদি কেউ ঐরূপ চুক্তির জন্য আমাকে আমন্ত্রণ জানাই, তাতে সাড়া দিতে আমি প্রস্তুত। 


আমার প্রিয় ভাইয়েরা এবার আমরা জানতে পারব যে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  কিভাবে নবুওয়াত লাভ করেন। মক্কা থেকে তিন মাইল দূরে হেরা নামে  একটি পর্বত গুহা ছিল। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই গুহায় খোদার স্মরণে মগ্ন থাকতেন। এভাবে দীর্ঘ 6 মাস কেটে গেল। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম৪০বছর বয়সে পদার্পণ করলেন। একদা তিনি  হেরাগুহায় যথারীতি খোদার স্মরণে মশগুল রয়েছেন। সময় টি তখন রমজান মাসের শেষ দিক। হঠাৎ জিবরীল আলাইহিস সালাম তার সামনে  প্রেরিত হলেন। হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম  আত্মপ্রকাশ করেই হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন পড়ো'। তিনি বললেন আমি পড়তে জানি  না। একথা শুনে জিবরাঈল আলাইহিস সালাম মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বুকে জড়িয়ে ধরে এমনি জোর চাপ দিলেন যে, তিনি থতমত খেয়ে গেলেন। অতঃপর হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  কে ছেড়ে দিয়ে আবার বললেন পড়ো। কিন্তু তিনি আগের জবাবেরি  পুনরুক্তি করলেন। জিবরাঈল আলাইহিস সালাম আমার তাকে আলিঙ্গন  সজোরে চাপ দিলেন এবং বললেন পড়ো। এবারেও হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাব দিলেন  আমি পড়তে জানি না। পুনর্বার জিবরাঈল আলাইহিস সালাম হযরত সাঃ কে বুকে চেপে ধরলেন এবং ছেড়ে দিয়ে বললেন  اقرا باسم ربك الذي خلق. خلق الانسان من علق.  اقرا وربك الاكرم الذي علم بالقلم. علم الانسان مالم يعلم  অর্থাৎ ,পড় তোমার প্রভুর নামে, 


যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন জমাট বাঁধা রক্ত থেকে । পড়ো এবং তোমার প্রভু অতিব সম্মানিত যিনি কলম দ্বারা  শিক্ষা দিয়েছেন । তিনি মানুষকে এমন জিনিস শিখিয়েছেন যা সে জানত না। এই হচ্ছে সর্বপ্রথম ওহী এবং নবীজির নবুওয়াত লাভ। এখান থেকে হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনের দাওয়াতি পর্যায় শুরু হলো। প্রথম দিকে তিনি গোপনে দাওয়াত দিতে শুরু করলেন। তিনার দাওয়াতে কয়েক জন ইসলাম গ্রহণ  করলেন যেমন  খাদিজা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা, আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু, যায়েদ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু প্রমুখ ব্যাক্তি। এদের পর আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর প্রচেষ্টায় ওসমান রাদিয়াল্লাহু তা'আলা  আনহু ,জুবায়ের রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ,আব্দুর রহমান বিন আউফ রাদিয়াল্লাহু  তা'আলা আনহু ,সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ,তালহা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু  ইসলাম গ্রহণ করেন  ।

গোপনে ইসলামের দাওয়াত ছড়াতে লাগলো এবং মুসলমানদের সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকলো। এরপর তিনি প্রকাশ্যে  ইসলামের দাওয়াত দিতে শুরু করলেন। সুতরাং একদিন হযরত সাল্লাহু আলাইহিওয়া  সালাম  সাফা পর্বতের উপর আরোহন করলেন এবং সেখানে দাঁড়িয়ে উচ্চ স্বরে বললেন হে লোকসকল! আমি যদি বলি যে, এই পাহাড়ের পিছনে বিরাট একদল শত্রুসৈন্য তোমাদের ওপর হামলা চালানোর জন্য ওত পেতে আছে, তাহলে তোমরা কি তা বিশ্বাস করবে? লোকেরা বলল, নিশ্চয়ই করব। তুমি তো কখনো কখনো মিথ্যা কথা বলনি, আমরা তোমাকে সাদেক সাদেক এবং আলামিন বলেই জানি। হযরত সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম বললেন ,তাহলে শোনো আমি তোমাদেরকে এক খোদার বন্দেগীর  দিকে আহবান জানাচ্ছি এবং মূর্তি পূজার পরিণাম থেকে তোমাদের বাঁচাতে চাচ্ছি। তোমরা যদি আমার কথা না মানো, তাহলে তোমাদের এক কঠিন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি সম্পর্কেও সতর্ক করে দিচ্ছি। এটা ছিল ইসলামের সাধারণ ও প্রকাশ্য দাওয়াতের সূচনা। এইভাবে ইসলাম চারিদিকে ছড়াতে লাগলো। এর ফলে কুরাইশগণ রা  মুসলমানদেরকে জুলুম করতে শুরু করলো। সেজন্য হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবিসিনিয়ার দিকে হিজরতের জন্য  প্রস্তুত হল। এই হিজরত করার কারণ ছিল কুরাইশদের জুলুম থেকে রক্ষা পাওয়া এবং আবিসিনিয়ায় ইসলামের দাওয়াত দেওয়া। তিনি  আবিসিনিয়ায় হিজরতের পর মক্কায় আরো জুলুম শুরু হয়ে গেল। যার  কারণে তিনি মদিনার দিকে হিজরতের জন্য ফায়সালা করলেন। মদিনায়   গিয়ে ও কুরাইশরা থামেনি। মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ করবার জন্য প্রস্তুত ছিল। তারপরে মুসলমানদের সাথে  কুরাইশদের বদর যুদ্ধ হয়েছিল। বদর যুদ্ধে মুসলমানরা শুধু ৩১৩জন সৈন্য ছিল এবং যুদ্ধের জন্য অস্ত্রপাতি ও সেরকম ছিলনা অপরদিকে কুরাইশরা ১০০০ জন সৈন্য ছিল এবং তাদের কাছে যুদ্ধের জন্য অনেক অস্ত্রপাতি  ছিল। মুসলমানরা দুর্বল হওয়ার পরও আল্লাহর সাহায্যে বদর যুদ্ধ জয় লাভ করেছিল। এর পরেই আবার ওহুদ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হলো অপরদিকে মুসলমানরা ও প্রস্তুত হল। এই যুদ্ধে মুসলমানরা ছিল ১০০০জন কিন্তু তারমধ্যে এক মুনাফিকের দল ৩০০জন চলে গেল। যার ফলে মুসলমানরা ৭০০জন হয়ে গেল। এবং অপর দিকে  কুরাইশরা ছিল ৩০০০ জন। অতঃপর  আবার আল্লাহর সাহায্যে  উহুদ যুদ্ধ ও কুরাইশ দের কাছ থেকে আবার জয়লাভ করলো। এরপর কাফেরদের দল যুদ্ধের জন্য মদিনার দিকে রওনা হল। এবং মুসলমানরা ও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে লাগলো এবং মাটি খুড়তে লাগলো। এই খন্দক যুদ্ধ তেও মুসলমানরা জয়লাভ করলো। এইভাবে ইসলাম আরো ছড়াতে লাগলো লাগলো। এরপরে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবা জিয়ারতের জন্য তৈরি হলেন। যার ফলে কুরাইশরা মুসলমানদের সাথে   দশ বছরের  হুদায়বিয়ার সন্ধি  করল। এরপরে  কুরাইশরা নিজে থেকে এই সন্ধিটি  প্রত্যাখ্যান করেছিল ।এটা ছিল মুসলমানদের এক বিরাট জয়। যার ফলে মুসলমানরা মক্কা বিজয় করেছিল। এরপরে মুসলমানরা হুনাইনের যুদ্ধ জয় লাভ করেছিল, তাবুকের যুদ্ধে জয়লাভ করেছিল। যার ফলে মুসলমানরা এক বিরাট শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। পরিশেষে হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৬৩২খ্রিস্টাব্দে ইন্তেকাল করেন। তিনার ইন্তেকালের পর খোলাফায়ে রাশেদীনরা পারস্য রোম এইসব শক্তিশালী দেশের সাথে যুদ্ধ করে জয় লাভ করেছিল এবং ইসলামকে আরো শক্তিশালী করে গড়ে তুলেছিল। যার ফলে বর্তমানেও ইসলামের প্রভাব ছড়িয়ে আছে। 
                       

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter