ইসলামে আমানতের গুরত্ব
ইসলামে আল্লাহপ্রদত্ত সব নিয়ামতই বান্দার কাছে আমানত। এসবের হেফাজত করতে হবে, না হয় পরকালে জবাবদিহি হতে হবে। যেমন: জীবন, যৌবন, চক্ষু, কর্ণ, বাক্শক্তি, হস্ত-পদ প্রভৃতি সবই। আল্লাহ তাআলা যে সম্পদ দিয়েছেন, তা দ্বীনের পথে মানুষের কল্যাণে ব্যয় করতে হবে। এবং অপর ব্যাক্তির ধন ও সম্পদ যত্ন সহকারে নিজের নিকট জমা করে রাখা, তাকে আমানতদারী বলে।
ইসলাম প্রত্যেক ব্যক্তিকে আমানতদারী এবং আমানত সহকারে কর্ম করার আদেশ দিয়েছেন এবং প্রত্যেক মুসলিমকে অবশ্যই আমানতদার হতে হবে।নিজেকে এমন ভাবে গড়ে তুলতে হবে যে তাকে প্রত্যেক মানুষ বিশ্বাস করে। মহান আল্লাহ তায়ালা কুরআন শরীফ বলেন “ নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা কে আদেশ দিয়েছে আমরা সমূহ তার হকদারদের কাছে পৌঁছে দিতে”। আল্লাহ তায়ালা কুরআন শরীফে বিভিন্ন স্থানে আমানতের ব্যাপারে উল্লেখ করেছে এবং আমানাতসহ অপর ব্যাক্তির মাল ও সম্পদ ফিরিয়ে দেয়।মহান আল্লাহ আমানতদারী কে বেশি পছন্দ কেছেন ও অধিক মাত্রায় ভালোবাসে।
আমরা যদি রসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর পুরো জীবনী পড়ি তাহলে তিনার ব্যাবহারের মধ্যে আমানত হলো অন্যতম গুণ বা ইতিবাচক। তিনেক আরবের কুরাইশরা “সাদিকুল আমীন” নামে। আখ্যা দেয়।কারণ তিনি কুরাইশদের মালপত্র আমানতসহ পৌঁছে দিতেন।
আমানতের বিপরীত হচ্ছে খেয়ানত করা, আর খিয়ানত করা হলো মুনাফিকের একটি লক্ষন। যেমন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ‘যখন তার কাছে আমানত রাখা হবে তখন সে খেয়ানোত করবে।'
হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এমন খুতবা কম দিতেন যে সব খতবাই তিনি এই কথাটি বলতেন না 'যার মধ্যে আমানতদারিতা নেই তার ঈমান নেই।'
ইসলাম ধর্মে আমানত বিভিন্ন ধরনের উল্লেখযোগ্য:- দ্বীনের আমানত, দায়িত্বের আমানত, আর্থিক আমানত, জিহ্বার আমানত, কথার আমানত ও পরামর্শের ক্ষেত্রে আমানত।
দ্বীনের আমানত
দ্বীনের আমানত হল ইসলামের পঞ্চ আরকান আদায় করা। যেমন- নামাজ, রোযা, যাকাত ইত্যাদি আদায় করা। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন নিশ্চয়ই আমি আকাশ, জমিন ও পর্বতমালার প্রতি এই আমানত পেশ করেছি, অতঃপর তারা তা বহন করতে অস্বীকার করেছে এবং এতে ভীত হয়েছে। আর মানুষ তা বহন করেছে।‘( সূরা আল-আহযাব)
দায়িত্বের আমানত
এটা সব থেকে গুরত্ব, কারণ এটা হক্কুল ইবাদতের মধ্যে পড়ছে।যখন আপনাকে কোনো দায়িত্ব দেওয়া হবে, সেটা একটি আমানত সেই দায়িত্ব ঠিক ভাবে পালন করার মধ্যে কোনো ত্রুটি না থেকে এবং সেটা ভালো ভাবে হেফাজতসহ্ রাখা হলো একটি আমানত। তার মধ্য কোনো ত্রুটি থাকলে অপর ব্যাক্তি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবে অতঃপর সে তার নিকট নিআমানতের খিয়ানত হিসেবে গণ্য হবে এবং তার ওপর রাগোনিত হবে।যদি সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করে, তাহলে আমানত বাড়বে অতঃপর লোকজন বেশি ভালোবাসবে।যায় কারণে একজন ন্যায়পরায়ণ সমাজ সেবা ও তাদের কল্যাণের জন্য রত থাকবে।
জিহ্বার আমানত
জিহ্বার রক্ষণাবেক্ষণ করা প্রত্যেক মানুষের ওপর অপরিহার্য বিশেষ ভাবে মুসলমানদের।কারণ কুরআন শরীফে এবং হাদিসে ইহার ব্যাপারে সতর্ক বা সাবধান করে দেওয়া হয়েছে। এর প্রসঙ্গে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন 'যে চুপ করে থাকলো সে নাজাত পেল।' জিব্হা দ্বারা অপরকে আক্রান্ত করি, এবং বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকি এবং কু-শব্দ বলি। জিহ্বার আমানত হলো তাকে হিফাজত করে রাখি এবং অপর ব্যাক্তি যাতে কোনো রকমের কষ্ট না পায়। জিহ্বাকে গীবত, ঝগড়া, পরচর্চা, অভিশাপ ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা।
কথার আমানত
ইসলামে কথার আমানতকে প্রচুর গুরত্ব দেওয়া হয়েছে। কেউ যদি আপনাকে কোনো গোপন বা অন্য কথা বললে যেটি একই বারের মতো কাউকে প্রকাশ কর যাবে না এবং সে আপনাকে যদি আপনাকে প্রকাশ করতে বারণ করে বা ন করে তাও আপনি তা প্রকাশ করতে পারবেন না কারণ সেটা হবে আপনার আমানত। আর আমানতের খিয়ানত করা ভীষণ পাপ জনক কাজ।অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'তোমরা কারো গোপনীয় বস্তু প্রকাশ করনা, কারণ সেটা মুনাফিকের লক্ষন। আর যে ব্যক্তি অপর ব্যক্তির গোপনীয় লুকিয়ে রাখবে কাল কিয়ামতে দিন আল্লাহ তায়ালা তার গোপনীয় বস্তুকে প্রকাশ করতে দেবেনা। সেই ব্যক্তিকে ডাকা হবে পর্দার আড়ালে এবং আল্লাহ বলবে, কাল তুমি অপর ব্যক্তির গোপনীয় বিষয়কে লুকিয়ে রেখেছিলে তাই আজ আমি তোমার গোপনীয় বস্তুকে লুকিয়ে দিলাম।
পরামর্শের ক্ষেত্রে আমানত
পরামর্শের ক্ষেত্রে আমানত বলতে এটি ব্যাবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পরামর্শ বা কোনো রায় চায় বা আপনাকে কোনো রায় বললো, সেটা তার জন্য লাভজনক তাহলে সেটা একধরনের আমানত। আর সেটা অপর ব্যক্তির কাছে প্রকাশ করা আমানতের খিয়ানত হবে।
খেয়ানতকারীর পরিণতি
কাল কিয়ামতের দিন অঙ্গীকার ও বিশ্বাস ভঙ্গকারী ব্যক্তিদের ডেকে বলা হবে, এটি অমুকের সন্তান অমুকের বিশ্বাসঘাতকতা। আর যে ব্যাক্তি আমানতে খিয়ানত করবে কাল কিয়ামতের ময়দানে তাকে সাই বস্তু নিয়ে কবর থেকে ওঠানো হবে।
আবু সাঈদ খুদরী (রা) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ‘প্রত্যেক খেয়ানতকারীর জন্য ক্বিয়ামতের দিন একটি ঝান্ডা থাকবে, যা তার পিঠের পিছনে পুঁতে দেওয়া হবে। অন্য বর্ণনায় এসেছে, তার খেয়ানতের পরিমাণ অনুযায়ী সেটি উঁচু হবে। সাবধান! জনগণের নেতার খেয়ানতের চাইতে বড় খেয়ানত আর হবেনা’। দায়িত্বশীলগণ কোনরূপ খেয়ানত করবেন না বলে অঙ্গীকার করে থাকেন। অথচ তারাই অঙ্গীকার ভঙ্গ করে আমানতের খেয়ানত করেন। আল্লাহ বলেন- ‘তোমরা অঙ্গীকার পূর্ণ কর। নিশ্চয়ই অঙ্গীকার সম্পর্কে (ক্বিয়ামতের দিন) তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে’ (বানু ইসরাইল)।