ইয়াউমে আশুরা ও তার হুকুম

ভুমিকাঃ

ইসলামী ক্যালেন্ডারের গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোর মধ্যে একটি হল আশুরার দিন। আশুরা হল আরবী মুহাররম মাসের দশম দিন। এই দিনটি ইসলামের একটি মহৎ দিন। বিশ্বব্যাপী মুসলিমসমাজ এই দিন উপলক্ষে যাবতীয় অনুষ্ঠান অনুষ্টিত করে থাকে। আরবী মাসের মধ্যে সর্বপ্রথম মাস হল "মুহাররাম"। মুহাররম মূল শব্দের অর্থ হলো "নিষিদ্ধ"। এই মাসের ১০ তারিখ ইসলামে অনেক মর্যাদাপূর্ণ ও তাৎপর্যময় দিন। এই দিনে রয়েছে অসংখ্য ফযিলত। এই মাসটিকে বলা হয় আল্লাহর মাস। এই দিনেই ইসলামের নেতা অর্থাৎ হযরত মহাম্মাদ (সাঃ) এর কলিজার  টুকরো হাসান এবং হোসাইন (রা) কাফেরদের বঞ্চনায় পানির অভাবে অসহায় অবস্থায় ইসলামের নিমিত্তে নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। 

আশুরার দিনের ঐতিহাসিক ঘটনাসমূহ:

আমাদের ধর্মীয় জীবনে নানা তাৎপর্যময় ঘটনার জন্য এই মাস টি অত্যন্ত সম্মানিত। কেননা মুহাররমের আশুরার ফযিলতের অনেক প্রভাব আছে। এই দিনে আল্লাহ রব্বুল আলামীন মানবজাতির আদি পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করেন এবং তাঁর তাওবা এই দিনেই কবুল করেন। আবার এই মহররম মাসের এই দিনেই  বেহেশত হতে পৃথিবীতে তিনি পদার্পন করেন। এই দিনেই  আরশ, কুরসি, আসমান, জমিন ,চন্দ্র, সূর্য ও নখত্র সৃষ্টি করা হয়। আবার এই দিনই  জান্নাত সৃষ্টি করা হয়। এই দিন হজরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম জন্ম গ্রহন করেন এবং এই দিনেই তিনি 'খলিলূল্লাহ' উপাধি লাভ করেন। এই দিনে নমরুদের প্রজ্জলিত আগুন থেকে নাজাত লাভ করেন। আশুরার দিনে নবী হযরত মুসা আলাইহিস সালাম ফেরাউন; জালিম বাদশার অত্যাচার ও নির্যাতন থেকে মুক্তি লাভ করেন। ফেরাউন তার প্রহরী সহিত নীল নদে নিমজ্জিত হয় এই পবিত্র আশুরার দিনেই। নবী হযরত মুসা আলাই সাল্লাম তুর পাহাড়ে আল্লাহর পাকের সঙ্গে কথা বলেছিলেন পবিত্র আশুরার দিনেই।

হজরত নুহ আলাইহিস সালামের নৌকা জুদিপাহাড়ে এই দিনে থেমে যায়। এই দিনে হজরত সুলায়মান আলাইহিসসালাম কে এক অজানা দেশের মালিক বানানো হয়। এই পবিত্র দিনে নবী হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম মাছের পেট থেকে ৪০ দিন থাকার পর মুক্তি লাভ করেন এবং এই দিনেই নবী হযরত ইউনুস আলাইহিস সালামের কওমের তওবা আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন। এই দিনে হজরত ইয়াকুব আলাইহিসসালামের চোখের জ্যোতি ফিরিইয়ে দেওয়া হয়। হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম কে এই দিনে কান'আনের কূপ থেকে মুক্তি করা হয়। এই পবিত্র দিনেই হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইয়াকুব লম্বা সময়ের জন্য বিচ্ছিন্ন থাকার ৪০ বছর পর পুনরায় পরস্পরের দেখা পান। এই দিনে হজরত আইয়ুব আলাইহিসসালাম তার জীবনঘাতী রোগ থেকে নিরাময় লাভ করেন। এই পবিত্র দিনে হযরত ঈসা আলাইহিস সাল্লাম ইয়াহুদীদের অত্যাচার ও বিদ্রুপ থেকে মুক্তি লাভ করে আসমানে গমন করেন। এই পবিত্র দিলে নবী হযরত দাউদ আলাইহিস্ সালাম এর দোয়া আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা কবুল করেন। এই আশুরার দিনেই তিনি নীল আকাশ থেকে এই ত্রিভুবনের বুকে প্রথম মেঘমালা সৃষ্টি করে প্রথমবারের জন্য বৃষ্টি বর্ষণ করেন। এই পবিত্র দিনে কাবার গিলাফ সর্বপ্রথম্ বারের  জন্য লাগানো হয়। এছাড়াও এই পবিত্র দিনে আমাদের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম মা হযরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু তায়ালাকে বিবাহ করেন। এই পবিত্র আশুরার দিনে আবার কিয়ামত সংঘটিত হবে।

আশুরার ফজিলতঃ- 

হজরত আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদ সাল্লল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম বলেছেন, যেমনভাবে ফরজ নামাজের পরে বেশি মর্যাদা তাহাজ্জুদ নামাজের ঠিক তেমনটাই রমজানের রোজার পরে আশুরার রোজার।                                              -তিরমিজি, নাসায়ি

অন্য এক ইসনাদে বর্ণিত, হজরত মুহাম্মাদ সাল্লল্লাহু আলাইহিওয়াসালামের কাছে জানতে চাওয়া হয় যে ফরজের পর কোন নামাজ এবং রমজানের রোজার পর কোন রোজা অধিক ফজিলতের। তখন রাসুল্লাল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহিওয়াসালাম তাহাজ্জুদের নামাজ ও মুহাররমের রোজার কথা বলেন।

আশুরার রোজাঃ

রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে দশম তারিখের রোজার বিশেষ বন্দোবস্ত ছিল। আল্লাহর রসুল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসালাম নিজে ও রোজা রাখতেন এবং সাহাবিদের দশম দিনের রোজা রাখার প্রেরনা দিতেন। কিন্ত রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর তার প্রতিজ্ঞা ও এর উৎসাহ ত্যাগ করেন। সে ক্ষেত্রে প্রতিটি ব্যাক্তি কে তার ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়।

মুসলিম শরিফে সামুরা বিন জাবির হতে বর্ণিত হয়েছে প্রিয় নাবি সাল্লল্লাহু আলাইহিওয়াসালাম আশুরার দিনের রোজা সংক্রান্ত প্রেরনা আমাদের দিতেন এবং বিশেষ করে রোজার ওয়াদা করতেন কিন্তু রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর তিনি আমাদের নিষেধ ও করেননি আবার আদেশ ও দেননি। বরং প্রেরনা ও প্রতিজ্ঞাকে আমাদের ইচ্ছার প্রতি ছেড়ে দিয়ে ছিলেন। হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেছেন, রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোজা রাখা হত কিন্তু রমজানের রোজা ফরজ হওয়ায় তার মর্যাদা ও ফযিলতের প্রতি প্রথম পদে স্থাপন করানো হয়।  অতএব  আমাদের এই আশুরার রোজার মুল্য এবং তার তাৎপর্য এর প্রতি ধ্যান রেখে রোজা রাখতে হবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে রোজা রাখার তৌফিক  দান করুক আমিন।

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter