ইমাম বুসিরি ( রাঃ) এর কাসিদাতুল বুর্দা

ইমাম বুসিরি (রাঃ) একজন প্রসিদ্ধ বুজুর্গ ,ফকিহ, ও মুসলিম লেখক, শিক্ষক ছিলেন, তিনি (৬০৮-৬৯৬) হিজ্রিতে  মিশরে জন্ম গ্রহন করেন,তিনার পুরো নাম হল- মুহম্মাদ বিন সাইদ আল বুসিরি (রাঃ) এবং তিনি মিশরেই পড়া লেখা করেছিলেন আর আরবী ভাষায় অনেক জ্ঞান অর্জন করেন যার ফলে তিনি অনেক আরবী ভাষায় কবিতা বা কাসিদা লেখতে আরম্ভ করেন এবং সেই কারণে তিনি এক সুপ্রসিদ্ধ মিশরি লেখক ও কবি হন। ইমাম বুসিরি স্বয়ং বলেন আমি আমার জীবনে অনেক কাসিদা ও কবিতা অন্য মানুষের প্রশং সাই লেখেছি এবং আমি আরবী ভাষায় অনেক পুস্তক রচনা করেছি কিন্তু আমি একদিন এক বিশেষ বড়ো রোগে লিপ্ত হয়ে যায় যার কারণে আমার হাত পা কাজ করা বন্দ করে দিয়েছিল,অর্থাৎ  ফালিজ হয়ে যায়। তখন আমি আর কোন রাস্তা খোজে পাইনা যে আমি কেমন করে এই মারাত্যক রোগ থেকে রক্ষা পাবো। সে সময় আমার মনে আসে যে আমি এক মুসলিম ও জ্ঞানি মানুষ তাহলে আমি কেন না একটি কাসিদাহ আল্লাহ ও তার রসুলের প্রেমে না লিখি, যেহেতু আমার শরির অঙ্গসমূহ আমার সাথ দেইনা আমি আল্লাহ ও তার হাবিব মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি অছাল্লামের কাছে এই রোগ থেকে সুস্থতা অর্জনের আশা রাখতে পারি। তাই তিনি সপ্তম শতাব্দি হিজ্রিতে কাসিদা লিখতে আরম্ভ করেন, এবং এই কবিতাটির নাম কাসিদাতুল বুর্দা বা কাসিদাতুল বুরআত নামে বিখ্যাত হয়, যথা এই কবিতাটির আসল নাম কিন্তু আল কাওয়াকিবুদ্দুরিয়া ফি মদহি খাইরিল বারিয়া( الكواكب الدرية فى مدح خير البرية) যেটি কম পক্ষে ১৬০ টি লাইনের আরবী ভাষায় লিখিত সুদীর্ঘ একটি কবিতা বা কাসিদা , এবং সেই কারণে সমস্ত আরবী ভাষায় লিখিত কবিতা বা কাসিদা গুলির মধ্যে সব থেকে সুদীর্ঘ কবিতা বা কাসিদা হল এই  ইমাম বুসিরি (রাঃ) এর লিখিত কাসিদা যথা (الكواكب الدرية فى مدح خير البرية)। তিনার এই কবিতাটি লেখার কারণ তিনি এক বিশেষ মারাত্যক রোগে বঞ্চিত হয়েছিলেন যেই রোগটাকে আরবী ভাষায় ফালিজ বলা হয়, যথা সেটি একধরনের ত্বকের রোগ যার কারণে সমস্ত শরিরের ত্বক একদম খারাপ হয়ে যায় এবং দেখতে অসৌন্দর্য লাগে এবং মানুষ তাকে এমন পরিস্থিতি দেখে দূরদুরান্তে চলে যান।এবং তাই হয় ইমাম বুসিরি (রাঃ) এর আত্মিয় সজন তিনাকে ছেড়ে চলে যান তখন তিনি সেই কারণে আল্লাহর নিকট এবং তার প্রিয় নবী মুহাম্মাদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লামের নিকট সুস্থতার উপায় হিসেবে আশাবাদী হয়ে এই কাসিদা আল বুরদা লেখতে আরম্ভ করেন। আর শেষে  ইমাম বুসিরি ( রাঃ) এই ত্বক (ফালিজ)  রোগ থেকে রক্ষা পান। 

ইমাম বুসিরি (রাঃ) নিজে বলেছেন-  “যে আমি যখন এই এই রোগে ঘিরে পড়ি তখন আমি নবীর প্রশংসাই কাসিদা আকারে একটি কবিতা লেখার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করতে শুরু করি ,যার দ্বারা আমি মহান করুনাময় আল্লাহ পাকের কাছে এবং তার প্রিয় নবী রাসুলের কাছে সুস্থতার উপায় হিসেবে আশাবাদী হতে পারি যে আল্লাহ পাক আমাকে সুস্থ করে তুলবে , এবং তিনি আর ও বলেন যে আমি এই কাসিদাটি সবসময় পুনরাবৃত্তি করতেই থাকতাম , গাইতাম, এবং এর মাধ্যমে আমি মহান আল্লাহর প্রতি ফরিয়াদ করতাম , কিন্তু  একদিন আমি যখন রাত্রি বেলায় কাসিদা পড়ার পর ঘুমিয়ে যায় সেই সময় ঘুমন্ত অবস্থায় আমি নবী কারিম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লামকে স্বপ্নের মধ্যে দেখতে পাই , এবং নবী করিম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম যেন তিনার নিজের বরকতময় হাতখানি দিয়ে আমার মুখটি মুছলেন । আমার  শরিরের উপর তিনার মুবারক চাদরটি রাখলেন, তখনই আমি সঙ্গে সঙ্গে ঘুম থেকে উঠে বসি এবং  আমার শরিরের দিকে দেখি তো  আমার শরিরের মধ্যে কোনরকমের রোগ ও ছিল না এবং তার সাথে কোনরকমের দাগ ও চিহ্ন ছিলনা যেমনকি আমার কোন রোগ ছিল না, সব ঠিক হয়ে গিয়ে ছিল আমার আমি একদম সুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম। এবং তিনি আল্লাহর শুক্রিয়া আদাই করেন। 

কাসিদাটির কিছু লাইন যেমনঃ- 

مولاي صل وسلم دائما أبدا           على حبيبك خير الخلق كلهم

أمن تذكر جيران بذى سلم                  مزجت دمعا جرى من مقلة بدم

أم هبت الريح من تلقاء كاظمة                   وأومض البرق فى الظلماء من إضم

  তাই আজ মুসলিম দুনিয়ায় এই কাসিদাটি প্রচলনীয় এবং তার অনেক বিশেষ্য রয়েছে তিনার মধ্যে কোন অসুখ বিসুখ হলে এই কাসিদা পড়ে দুয়া করা হয়, এবং তার ফাতিহা করা হয়, যথা প্রতি বৃহস্পতিবার রাত্রে এই কাসিদাহ বুর্দা বা( الكواكب الدرية فى مدح خير البرية)  পড়া হয়। এর অনেক ফযিলত ও বরকত রয়েছে এই কবিতাটিতে নবী পাকের আচার আচারনের ব্যাপারে বলা হয়েছে, মানুষের সাথে তিনার ব্যাবহার আল্লাহর প্রতি তিনার কর্ম বিশেষ তিনার সাহাবিদের সংগে তিনার সৎ ব্যাবহার ইত্যাদি।তাই এই কাসিদা থেকে অনেক কিছু জানতে ও শিখতে পাওয়া যায়। আল্লাহ যেন আমাদের কে কাসিদা বুর্দা এর ফযিলত ও বরকতে শরিরের সমস্ত অসুখ বিসুখ থেকে মুক্তি দান করুন, এবং আল্লাহ পাক ইমাম বুসিরি (রাঃ) কে জান্নাত বাসি করুন--- আমিন।

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter