মহাকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি সম্পর্কে মহান আল্লাহর বানী
“যারা কুফুরী করে তারা কি ভেবে দেখে না যে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী মিশেছিল ওতপ্রোতভাবে। অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করেছিলাম এবং প্রাণবান সমস্ত কিছু সৃষ্টি করলাম পানি থেকে।“ (সুরা আম্বিয়াঃ ৩০)
বিশ্বজগত সৃষ্টি সম্পর্কে এবং সৃষ্টির প্রকাশ সম্পর্কে সৌরমণ্ডল সম্পর্কিত মতবাদের যেসব পরিবর্তন হয়েছে সেসব পরিবর্তন চৌদ্দশত বছর আগে কুরআনে বর্ণিত সত্যের কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছে।
কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন, আকাশমণ্ডলী এবং পৃথিবী মিশেছিল ওতপ্রোতভাবে। তারপর আমি উভয়কে পৃথক করেছিলাম। মহান আল্লাহর এই ঘোষণা চিন্তাভাবনার দাবী রাখে।
বর্তমান মতবাদ হচ্ছে নক্ষত্রমণ্ডলী যেমন সৌর ব্যবস্থা যা কিনা সূর্য এবং তার চারিপাশে ঘূর্ণায়মান গ্রহসমূহ সমন্বিত রয়েছে, যার মধ্যে চাঁদ এবং পৃথিবীও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এসব কিছু এক সময়ে ছিল একত্রিত। পরবর্তীকালে আলাদা হয়ে বিচ্ছিন্নভাবে পরিচিতি লাভ করে। পৃথিবী ছিল সূর্যের একটি অংশ তারপর সূর্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শীতল হয়েছ। সৌরজগত সম্পর্কিত এই মতবাদ বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় কিন্তু আগামী কালই নতুন কোন মতবাদের উপস্থাপনের ফলে এই মতবাদ পরিত্যক্ত ঘোষিত হতে পারে। নতুন মতবাদও সেই মতবাদে বিশ্বজগত সৃষ্টি সম্পর্কে নতুন মতবাদ উপস্থাপন করা হবে।
কুরআনের প্রতি আমাদের অবিচল বিশ্বাস রয়েছে। কুরআনে বর্ণিত নিশ্চিত বিষয়কে অনিশ্চিত এবং ধারণা নির্ভর কোন বিষয় দিয়েচ আমরা যাচাই করার প্রয়োজন আমাদের নেই। যেসব ধারণা নির্ভর বিষয় আজ জনপ্রিয় অথচ আগামীকাল পরিত্যক্ত হয়ে যেতে পারে। এ কারণে আমি কুরআনের এই তাফসীরে কুরআনের যুক্তি এবং বক্তব্যের সঙ্গে বিজ্ঞানের মতবাদের সাদৃশ্য দেখানোর কোন চেষ্টাই করি না। বলা বাহুল্য বিজ্ঞানের ধারণা নির্ভর বক্তব্য অভিজ্ঞতায় প্রমাণিত বিষয়ের চেয়ে আলাদা। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, উত্তাপ পেয়ে ধাতু গলে যায় উত্তাপ পেয়ে পানি বাষ্পে পরিণত হয় তারপর ঠাণ্ডার কারণে পানি বরফ হয়ে জমাট বেঁধে যায় ইত্যাদি। এই ধরনের বৈজ্ঞানিক তথ্য সম্পর্কে আমি ইতিপূর্বে আলোচনা করেছি। প্রমাণিত বাস্তবতা হচ্ছে বিজ্ঞানের মতাদর্শের চেয়ে ভিন্ন রকম।
কুরআন বৈজ্ঞানিক মতাদর্শের কোন গ্রন্থ নয় এবং কুরআন এজন্য অবতীর্ণ হয় নি যে বিজ্ঞানের সুত্র ব্যাখ্যা করবে। কুরআন হচ্ছে সমগ্র জীবনের জন্য একটা ব্যবস্থা। কুরআনের এ ব্যবস্থা বিবেককে প্রশিক্ষণ দেয় যেন বিবেক নিজের সীমারেখার মধ্যে স্বাধীনভাবে তৎপরতা চালাতে পারে। কুরআন সমাজকে এমন মেজাজ দান করে যা বিবেককে স্বাধীনভাবে সেই সমাজে কাজ করার সুযোগ এনে দেয়। কুরআন বিজ্ঞানের আংশিক অথবা বিস্তারিত তথ্য সম্পর্কে ভিন্নমত পোষণ করে না এবং আপত্তি উত্থাপন করে না। এসকল কাজ বিবেকের প্রশিক্ষণের পর স্বাধীনভাবে পরিচালনার জন্য বিবেকের উপরই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
কুরআন কখনো পৃথিবীর কিছু সত্যের প্রতি ইঙ্গিত করে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী মিশেছিল ওতপ্রোতভাবে অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম। একথার সত্যতায় বিশ্বাসী হওয়ার জন্য আমাদের জন্য এটাই যথেষ্ট যে একথা কুরআনে বলা হয়েছে। যদিও কুরআন থেকে আমরা এ তথ্য জানতে পারি না যে, আকাশ এবং পৃথিবী পরস্পর আলাদা হওয়ার ঘটনা কিভাবে ঘটেছিল। মহাকাশ এবং সৌরজগত সম্পর্কে কুরআন যে তথ্য আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছে আমরা তার প্রতিই বিশ্বাস স্থাপন করেছি।
আমরা কুরআনে বর্ণিত বক্তব্যের বাইরে অন্য কোন বক্তব্যকে সত্য মনে করি না। তাছাড়া আমরা ধারণা প্রসূত বৈজ্ঞানিক তথ্য দিয়ে কুরআনের বর্ণিত সত্য যাচাই করার কথাও চিন্তা করি না কারণ কুরআনের প্রতিটি কথা অপরিবর্তনীয় এবং অবধারিত সত্য। এতে সন্দেহের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই।
বিজ্ঞানের আবিষ্কার দিয়ে কুরআনের সত্যতা প্রমাণের কোন প্রয়োজন নেই। বড়জোর আমরা একথা বলতে পারি যে, সৌরজগত সম্পর্কে বিজ্ঞানের ধারণা নির্ভর বক্তব্যের সঙ্গে কুরআনের বক্তব্যের কোন বিরোধ নেই। যদিও কুরআনের বক্তব্য বিজ্ঞানের গবেষণা এবং আবিষ্কারের অনেক আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। অনেক আগেই মানে হচ্ছে শত শত বছর আগে।
কুরআনের উপরোক্ত আয়াতে পরের অংশে বলা হয়েছে, এবং প্রাণবান সবকিছু সৃষ্টি করলাম পানি থেকে। এখানেও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশ করা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা প্রাণী সৃষ্টি সম্পর্কে এ আবিষ্কার বলে, থিয়োরি ডারউইন আবিষ্কার করে ছে যে, পানি থেকে জীবনের উৎপত্তি হয়েছে।
এসত্য নিঃসন্দেহে চমকে দেওয়ার মতো। কিন্তু আমাদের নিকট এতথ্যের মধ্যে কোন চমক নেই কারণ শত শত বছর আগেই কুরআন এ সত্য আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে। এসত্য নতুন করে জানার পরও কুরআনের প্রতি আমাদের বিশ্বাস আগেই মতোই আগেই ঈমান এনেছি। বৈজ্ঞানিক মতামত বা আবিষ্কারের কারণে কুরআনের প্রতি আমাদের বিশ্বাস নতুন মাত্রা পাবেনা হ্যাঁ তবে যারা দুর্বল বিশ্বাসী তারা এইসবের প্রতি নির্ভর করে তাদের ঈমানের মাত্রা বাড়ানোর জন্য। ডারউইনের আবিষ্কার সম্পর্কে আমরা বড়জোর একথা বলতে পারি যে, ডারউইনের মতামত কুরআনের বর্ণিত তথ্যের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ, সংঘর্ষিক নয়।