কুরআনঃপবিত্র পাঠ
কুরআন হল ইসলাম ধর্মের ধর্মগ্রন্থ । কোরআন হলো আল্লাহর কিতাব তাই কুরআনকে كتاب الله বলা হয়। এছাড়াও কোরআন হলো আল্লাহর বাণী। এই কোরআনের মধ্যে আল্লাহতায়ালা মুসলমানদের সঠিক পথ দেখান তাই কুরআনকে ইসলাম ধর্মের ধর্মগ্রন্থ বলা হয়। কুরআন হচ্ছে এমন একটি বই যে বইয়ে কোন ভুল নেই। তাই আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজিদে বলেছেন ذلك الكتاب لا ريب فيه هدى للمتقين, অর্থাৎ, কুরআন হচ্ছে এমন একটি গ্রন্থ যার মধ্যে কোন সন্দেহ অবকাশ নেই ।এই কুরআন টি জিব্রাইল আলাইহিস সালামের দারায় আমাদের শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালামের উপর অবতীর্ণ হয়। এই কুরআনের আলাদা আলাদা অনেক নাম আছে যেমন- الفرقان, الهدى, النور, المجيد ইত্যাদি। এই কুরআনের মধ্যে ১১৪ টি সূরা আছে এবং ৩০ টি পারা আছে। এই ১১৪টি সূরার মধ্যে ৮৬টি মাক্কি সূরা এবং ২৮টি মাদানী সূরা। কুরআনের প্রথম সূরার নাম হচ্ছে الفاتحه, এবং সর্বশেষ সূরার নাম হচ্ছে الناس. কুরআনের সবথেকে বড় সূরার নাম البقرة. এবং সবথেকে ছোট সূরার নাম الكوثر. কুরআনের সবচেয়ে বড় আয়াতের নাম ايات الدين এবং সবচেয়ে ছোট আয়াতের নাম طه. এই কুরআনের মধ্যে এমন১৪টি আয়াত আছে যেখানে আমাদের সেজদা করতে হয়। এই কুরআন টি পরিপূর্ণ হতে ২৩ বছর সময় লেগেছিল। এই কুরআন টি রমজান মাসের শেষের দশ দিনে নাযিল হয়। কুরআন শব্দের অর্থ হচ্ছে যে পাঠ করা। এই কুরআন টি আরবি ভাষায় রচিত।
আমার প্রিয় ভাইয়েরা, আমরা কি জানি এই কুরআন কবে শুরু হয়েছিল এবং কিভাবে শুরু হয়েছিল? তবে চলুন আমরা সেই ঘটনাটি সংক্ষেপে জেনে নি।মক্কা থেকে তিন মাইল দূরে হেরা নামে একটি পর্বত গুহা ছিল।হযরত মুহাম্মদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই গুহায় খোদার স্মরণে মগ্ন থাকতেন। এভাবে দীর্ঘ ৬মাস কেটে গেল। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম৪০বছর বয়সে পদার্পণ করলেন। একদা তিনি হেরাগুহায় যথারীতি খোদার স্মরণে মশগুল রয়েছেন। সময় টি তখন রমজান মাসের শেষ দিক। হঠাৎ জিবরীল আলাইহিস সালাম তার সামনে প্রেরিত হলেন।হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম আত্মপ্রকাশ করেই হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন পড়ো'।তিনি বললেন আমি পড়তে জানি না।একথা শুনে জিবরাঈল আলাইহিস সালাম মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বুকে জড়িয়ে ধরে এমনি জোর চাপ দিলেন যে, তিনি থতমত খেয়ে গেলেন। অতঃপর হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ছেড়ে দিয়ে আবার বললেন পড়ো। কিন্তু তিনি আগের জবাবেরি পুনরুক্তি করলেন। জিবরাঈল আলাইহিস সালাম আবার তাকে আলিঙ্গন করে সজোরে চাপ দিলেন এবং বললেন পড়ো। এবারেও হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাব দিলেন আমি পড়তে জানি না। পুনর্বার জিবরাঈল আলাইহিস সালাম হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বুকে চেপে ধরলেন এবং ছেড়ে দিয়ে বললেন اقرا باسم ربك الذي
خلق.خلق الانسان من علق. اقرا وربك الاكرم. الذي علم بالقلم. علم الانسان مالم يعلم অর্থাৎ ,পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন জমাট বাঁধা রক্ত থেকে । পড়ো এবং তোমার প্রভু অতিব সম্মানিত যিনিকলম দ্বারা শিক্ষা দিয়েছেন । তিনি মানুষকে এমন জিনিস শিখিয়েছেন যাসে জানত না। তাহলে আমার প্রিয় ভাইয়েরা আমরা এই ঘটনা থেকে জানতে পারলাম যে কুরআনের সর্বপ্রথম সূরা আলাকের এই পাঁচটি আয়াত অবতীর্ণ হয়। এই ঘটনাটির পর কিছুদিন পর্যন্ত কোন অহি আসেনি। এরপর সূরা মুদ্দাসসিরের প্রারম্ভিক আয়াতসমূহ
নাজিল হলো। يايهاالمدثر. قم فانذر. وربك فكبر. وثيابك فطهر. ورجزفاهجر. ولا تمنن تستكثر. ولربك فاصبر. অর্থাৎ ' হে কম্বল আচ্ছাদনকারি!ওঠো এবং( লোকদেরকে ভ্রষ্টতার পরিণতি সম্পর্কে) ভয় দেখাও আর আপন প্রভুর শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ব বর্ণনা করো। লেবাস-পোশাক পরিষ্কার রাখো এবং নোংরামি অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকো। বেশি পাওয়ার উদ্দেশ্যে কারো প্রতি অনুগ্রহ করো না। এবং আপন প্রভুর খাতিরে খাতিরে বিপদ মুসিবতে ধৈর্য ধারণ করো। এরপর থেকে পরস্পর ২৩বছর একের পর এক আয়াত নাযিল হতে থাকলো থাকলো। হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকালের পর হযরত আবু বক্কর হযরত আবু বক্কর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কুরআনের পান্ডুলিপি তৈরি করেন। সেই যুগে কুরআনে হরকত দেওয়া না থাকায় মানুষদের পড়তে অসুবিধা হতো। সেই কারণে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কুরআনে হরকত দেয়। যার কারণে কুরআন পড়তে অনেক সুবিধা হয় এবং পড়তে ভুল ও কম হয়। কুরআন বর্তমানে এমন একটি গ্রন্থ যে পৃথিবীতে সর্বাধিক পঠিত হয়। এবং এই গ্রন্থটি কে মানুষ বর্তমানে আনুমানিক ১২০ টি ভাষায় অনূদিত করেছে। যার ফলে প্রত্যেক দেশের মানুষ সহজেই কুরআনকে বুঝতে পারছে।