কোরবানীর উদ্দেশ্য শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির
আল্লাহ তাআলা জিন ও মানবকে শুধুমাত্র তিনার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। যেমন তিনি নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত ইত্যাদি ইবাদত বলে ঘোষণা করেছেন ঠিক তেমনই কুরবানীও হচ্ছে একটি ইবাদত। আল্লাহ তাআ'লা বিশেষ বিশেষ কিছুদিনের মহত্ব বৃদ্ধি করেছেন যেমন লাইলাতুল কদর, আশুরার দিন ইত্যাদি। ঠিক তেমনই আল্লাহ তাআ'লা যিলহজ মাসের দশ দিনও বিশেষ ইবাদতের জন্য গণ্য করেছেন।আল্লাহ তায়ালারই সমস্ত প্রশংসা যিনি আমাদের এই যিলহজ মাস পাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।
'কুরবানী' শব্দটির আভিধানিক অর্থ হল 'নিকটবর্তী হওয়া'। ইসলামী পরিভাষায় কুরবানী হচ্ছে নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট ব্যক্তির আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পুরস্কার লাভের আশায় নির্দিষ্ট পশু জবাই করা। কুরবানী হচ্ছে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। ইসলামে কুরবানী করা ইতিহাসে একটি অনেক প্রাচীন কর্ম। হাবিল হচ্ছে ইসলামের প্রথম ব্যক্তি যিনি কুরবানী করেন। ইসলামে হিজরী ক্যালেন্ডারের ১২তম চন্দ্র মাসের যিল-হজ্জ মাসের ১০ তারিখ সকাল থেকে ১৩ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত কুরবানী করার সময় হিসেবে নির্ধারিত। কুরবানী হিসেবে গরু, ছাগল, মেষ, উট, ভেড়া ইত্যাদি যবেহ করা যায়।
বর্তমানে আমরা কুরবানী দিয়ে ঠিকই, কিন্তু অনেক কিছু ছেড়ে দিয়ে থাকি। যেমন - নামায, রোজা, হজ, যাকাত। কেবলমাত্র আমরা প্রতিযোগিতার জন্য লোকেদের দেখাবার জন্য কুরবানী করে থাকি। কিন্তু আল্লাহ তাআ'লা কুরআন মাজীদের সূরা হজ্জের ৩৭ নম্বর আয়াতে ঘোষণা করেন:
"لَنۡ یَّنَالَ اللّٰهَ لُحُوۡمُهَا وَ لَا دِمَآؤُهَا وَ لٰکِنۡ یَّنَالُهُ التَّقۡوٰی مِنۡکُمۡ"
অর্থাৎ: আল্লাহর কাছে পৌঁছে না এগুলোর গোশ্ত ও রক্ত; বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া।
এই আয়াতটি থেকে এটাই বোঝা যায় যে আমরা যে কুরবানী করি সেগুলির মাংস বা রক্ত কিছুই আল্লাহর কাছে যায় না বরং আমাদের যে তাকওয়া সেটা আল্লাহর কাছে পৌঁছায়। এছাড়া যদি আমরা কুরআনের স
সূরা আস-সাফফাতের ১০৩ থেকে ১০৭ পর্যন্ত আয়াত দেখি তাহলে আমরা বুঝতে পারবো যে আমাদের কুরবানী কেমন হওয়া উচিত বা কিসের জন্য হওয়া উচিত।
আল্লাহ তাআ'লা বলেন: "অতঃপর যখন সে তার সাথে চলাফেরা করার বয়সে পৌঁছল, তখন সে বলল, ‘হে প্রিয় বৎস, আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে যবেহ করছি, অতএব দেখ তোমার কী অভিমত’; সে বলল, ‘হে আমার পিতা, আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, আপনি তাই করুন। আমাকে ইনশাআল্লাহ আপনি অবশ্যই ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন’। যখন পিতা-পুত্র উভয়েই (আল্লাহর আদেশের সামনে) আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইব্রাহীম (যবেহ করার জন্য) সন্তানের কপাল মাটিতে চেপে ধরল।”
“তখন আমি তাকে ডেকে বললাম: হে ইব্রাহীম!”
“সত্যিই তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে! আমি এভাবেই সৎকর্মশীলদের প্রতিদান দিয়ে থাকি।”
অতএব আমরা এই আয়াতগুলি থেকে বুঝতে পারি যে, কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পিতা ও ছেলে উভয়েরই কত বড় উৎসর্গ। এছাড়া আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদের অন্য একজায়গায় ঘোষণা করেন যে,"আপনি বলুনঃ আমার নামায, আমার কোরবাণী এবং আমার জীবন ও আমার মরন বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহরই জন্যে।" (সুরা আনাম ১৬২)
অতএব আমরা এই আয়াতগুলি থেকে বুঝতে পারলাম যে আমাদের কোরবানীর নিয়ত শুধু আল্লাহ তাআ'লাকে সন্তুষ্ট করার জন্য হওয়া উচিত।