খতমে নবুয়ত রক্ষা ও ইমাম আহমদ রেযা (রহ.)-এর ভূমিকা

ইসলাম সবসময় সত্য ও পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান হিসেবে টিকে আছে। সেইজন্যই যুগে যুগে ইসলামবিরোধীরা ও ভুলপথের মানুষ ইসলামি বিশ্বাসকে ধ্বংস করতে উঠে পড়ে লেগেছে। তারা মুসলমানদের ঈমান নষ্ট করার চেষ্টা করেছে। উপমহাদেশের মাটিতেও অনেক ফেতনা (গোমরাহী মতবাদ) এসেছে, যারা ইসলামের ভিত দুর্বল করতে চেয়েছে। এই সব ফেতনার মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক ও মিথ্যা মতবাদ হলো “কাদিয়ানীত” বা “মিরজাইয়্যাত”, যার প্রতিষ্ঠাতা ছিল মিরজা গুলাম আহমদ কাদিয়ানী। সে নবুয়তের মিথ্যা দাবি করেছিল এবং তার অনুসারীদেরকে বুঝিয়েছিল যে সে নাকি আল্লাহর পক্ষ থেকে নবী হয়েছে। এভাবে সে ‘খতমে নবুয়ত’—যেটি ইসলামের মূল আকিদা—এর স্পষ্ট অস্বীকার করেছে।

খতমে নবুয়ত অর্থ হলো, নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ নবী। তাঁর পর আর কোনো নবী আসবে না। এই আকিদার অস্বীকার মানে কুরআন-হাদীসের স্পষ্ট অস্বীকার করা। হযরত গাউসুল আযম বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মর্যাদায় কেউ পৌঁছতে পারে না, আর না কেউ তাঁর গুণে শরিক হতে পারে। বিখ্যাত সুফি কবি ইমাম বুসায়রী বলেন: “আপনার সৌন্দর্য ও গুণাবলীতে কেউ শরিক নয়। আপনার সৌন্দর্য একক এবং অপার।”

মিরজা কাদিয়ানীর এই মিথ্যা নবুয়তের দাবি ও বিভ্রান্তি থেকে মুসলমানদের রক্ষা করার জন্য অনেক বড় বড় ওলিয়া-আলিমরা কঠোর পরিশ্রম করেছেন। এই সকল আলিমদের মধ্যে ইমাম আহমদ রেযা খান বেরলভী (রহ.)-এর নাম সবচেয়ে উজ্জ্বল।

ইমাম আহমদ রেযা (রহ.) কাদিয়ানীতের বিরুদ্ধে একাধিক বই লিখেছেন এবং ইসলামের সঠিক আকিদা মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন। ১৩২০ হিজরিতে তিনি এক বিখ্যাত আলিমের কিতাব ‘আল-মু’তাকাদ আল-মুনতাকাদ’তে হাশিয়া লিখে মিরজার কুফরগুলো স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন এবং বলেন:
“তার আরও অনেক কুফর রয়েছে। আল্লাহ মুসলমানদের তাকে এবং সকল দজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা করুন।”

১৩২৪ হিজরিতে তিনি হারামাইন শরীফাইনের বড় বড় আলিমদের কাছে একটি প্রশ্নপত্র পাঠান, যাতে কাদিয়ানীদের কুফরের ব্যাখ্যা ছিল। উত্তরে তারা স্পষ্ট ফতোয়া দেন যে, কাদিয়ানীরা কাফের।

ইমাম আহমদ রেযা (রহ.)-এর কিছু বিখ্যাত রচনা:

  1. জাযাল্লাহু ‘আদু ও বাবাহু ফি খতমিন্নুবুয়্যাহ – এতে ১২০টি হাদীস এবং ৩০ জন ইমামের কাদিয়ানীদের কুফরের ফতোয়া রয়েছে।
  2. কাহরুদ দিয়ান ‘আলা মুরতাদ বেকাদিয়ান – এতে মিরজার মিথ্যা কথার প্রতিবাদ করা হয়েছে।
  3. আস-সাও’ ওয়াল ‘ইকাব ‘আলা মাসীহিল কায্জাব – এক প্রশ্নের জবাবে লেখা এই কিতাবে তিনি প্রমাণ করেছেন যে কাদিয়ানী হওয়া মানেই ইসলাম থেকে বের হওয়া।
  4. আল-জাররাস-দিয়ানী ‘আলা মুরতাদ-ই কাদিয়ানী – ইমামের শেষ কিতাব, যা তিনি মৃত্যুর কয়েকদিন আগে লিখেছিলেন।

ইমাম সাহেবের ছেলে, হযরত হামিদ রেযা খান (রহ.) “আস-সারিমুর-রাব্বানী ‘আলা ইসরাফিল কাদিয়ানী” নামে একটি কিতাব লেখেন, যেখানে মিরজার “মসীহ” দাবির জবাব আছে। ইমাম আহমদ রেযা (রহ.)-এর আরেক পুত্র মুফতী আযম হযরত মোস্তফা রেযা খান (রহ.)-ও কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে রচনা করেন।

“ফাতাওয়া রেযভীয়া” (পুরাতন ১২ খণ্ড, নতুন ৩২ খণ্ড) নামক তাঁর বিশাল ফতোয়া গ্রন্থেও বহু প্রশ্নের উত্তর আছে, যা কাদিয়ানীদের আসল চেহারা উন্মোচন করে।

তাঁর ছাত্র ও খলিফারা কাদিয়ানীতের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে কাজ করেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আল্লামা আব্দুল আলীম মীরঠী (রহ.), যিনি “হাকীকাতুল-মিরজাইয়ীন” (আরবি) এবং “মিরজায়ী হাকীকাত কা ইযহার” (উর্দু) নামে বই লিখেছেন।

আজকের প্রয়োজন
আজ আমাদের প্রয়োজন এই যে, ইমাম আহমদ রেযা (রহ.)-এর এই কিতাবগুলোকে সংকলন করে ছাপানো হোক, অন্য ভাষায় অনুবাদ করা হোক এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হোক। যাতে মুসলমানরা কাদিয়ানী ফেতনার বিষ থেকে রক্ষা পায় এবং খতমে নবুয়তের পবিত্র আকিদা চিরকাল অটুট থাকে।

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter