আন্তরিকতা বা এখলাস

আন্তরিকতা এখলাস অর্থ হচ্ছে আল্লাহ বান্দার মধ্যে যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক যা বান্দা আল্লাহ ছাড়া কারোর উপর নির্ভরশীল নয়। এখলাস হল বান্দার  মু'মিনগনদের ঢাল যা নিকৃষ্ট কুকর্ম থেকে তিনাদের কে বিরত রাখে শয়তানি চিন্তাধারা অহংকার ধ্বংস করে সঠিক পথে অগ্রসর করেন। এখলাস মানে হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্যে ইবাদত করা অন্য কাউরির উপর কামনা না করা কাউরির কাছ থেকে খ্যাতি বা প্রশংসা থেকে দূরত থাকা। আল্লাহ ছাড়া কাউরির উপর প্রতিদানের আকাক্ঙ্খা না রাখার অর্থই হল এখলাস। 

বান্দা ইখলাস বা আন্তরিকতা তখনি অনুধাবন করতে পাবে  যখন তার অন্তরে এই রকম চিন্তা ভাবনা থাকে যে 'কে আমাকে দেখছে আর কে দেখছে না, সেটা না ভেবেআল্লাহ সর্বক্ষণ আমাকে দেখছেন’—এই ভয় ভাবনা মাথায় রেখে ইবাদত করার নাম ইখলাস। বিষয়ে পবিত্র কোরআন শরীফে মহান আল্লাহ তাআলা উল্লেখ করেছেন - " তারা মানত পূর্ণ করে এবং সেদিনকে ভয় করে, যেদিনের অনিষ্ট হবে সুদূরপ্রসারী। তারা আল্লাহকে ভালোবেসে অভাবগ্রস্ত, এতিম বন্দিদের আহার দেয়। (তারা বলে) শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমরা তোমাদের আহার দান করি। তোমাদের কাছে আমরা কোনো প্রতিদান কৃতজ্ঞতা কামনা করি না।" (সুরা দাহর, আয়াত : -) 

 

এখলাস হচ্ছে এমন একটি যন্ত্র যা আমাদের অন্তরে আমাদের আমল কে সুন্দর্য বানিয়ে রাখে যা অন্য কাউরির আমলের সঙ্গে অতুলনীয়। ইখলাস ওই জিনিস যা বান্দার অন্তরে নিজের রবের উপর পূর্ণ মনোযোগ থাকার কারণে বান্দার স্মরণে অন্য কাউরির গ্রহণ করা মাথায় না আসা। অথচ তার মনে শুধু আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের সন্তুষ্টি অৰ্জনের ব্যাকুলতা থাকে। এই জন্য আল্লাহ তায়ালার জন্যে সারাটা জীবন বিসর্জন করার নিমিত্তে আল্লাহ তিনাকে প্রতিদান দেন। এই উপলক্ষে পবিত্র হাদিস শরীফে উল্লেখ করেছেন "যে আল্লাহর জন্য হবে, আল্লাহ তার জন্য হয়ে যাবেন" অর্থাৎ যে ব্যাক্তি অন্তর থেকে আল্লাহর কর্মে লিপ্ত থাকবেন নিশ্চই আল্লাহ তার প্রতিদান দিবেন।    

 রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন:প্রত্যেক কাজ নিয়তের সঙ্গে সম্পর্কিত। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী ফল পাবে। তাই যার হিজরত হবে দুনিয়া লাভের অথবা কোন নারীকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে, সেই উদ্দেশ্যই হবে তার হিজরতের প্রাপ্য (বোখারী শরীফ।" অতএব যে ব্যাক্তি ভালো নিয়তের সঙ্গে কোন কিছু আমল  করার নিয়ত করল অর্থাৎ আল্লাহ তিনাকে তার প্রতিদান দিবেন। যে আমলগুলো করবে ভালো নিয়তের সঙ্গে কর, যতসামান্য অল্প আমলী হয় না কেন ওই অল্প আমলি তোমার নাজাতের জন্য যথেষ্ট। কেননা আবু হুরাইরা রাঃ হতে বর্ণিত  দোজাহানের বাদশা হজরত মোহাম্মদ (সাঃ) হাদিস শরীফে এরশাদ করেছেন: মহান আল্লাহ তোমার শরীর সম্পত্তির দিকে দেখেনা, বরং তোমার অন্তর আমলের দিকে দেখে (মুসলিম, হাদিস : ২৫৬৪) আল্লাহ যেন আমাদের সর্বদা এখলাসের সঙ্গে আমল করার তৌফিক দান করুক।

মুখলিস হওয়ার কিছু পদক্ষেপ 

প্রথমত: আল্লাহর একত্বাবোধ কে নিজের অন্তরে যথার্থভাবে প্রতিষ্টা করা। আল্লাহ তায়ালা কুরআন শরীফে উল্লেখ করেছেন : আপনি নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর এবাদত করুন। জেনে রাখুন, নিষ্ঠাপূর্ণ এবাদত আল্লাহরই নিমিত্ত। (সূরা: আল-যুমার, আয়াত: -)

দ্বিতীয়ত: আমাদের রাসূল হজরত মোহাম্মদ সাঃ কে পরিপূর্ণ ভাবে অনুসরণ করা। রাসূল (সাঃ) যা কিছু করার অনুমতি দিয়েছেন সেগুলিকে গ্রহণ করা যে জিনিস থেকে বিরত থাকতে বলেছেন সেই জিনিসগুলোকে প্রত্যাখান করা। এর জন্যে আল্লাহ কোরান শরীফে এরশাদ করেছেন: "(হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য করা রাসুলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক তাদের। তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ তাঁর রাসুলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর-যদি তোমরা আল্লাহ কেয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম।) (সূরা আন-নিসা, আয়াত,৫৯)" 

তৃতীয়ত: যদি আপনি মুখলিস হতে চান তাহলে নেক আমলে অভ্যস্ত হন, এবং সর্বদা সাত শ্রেণীর লোকের কথা স্মরণ করুন যাদের তিনি এমন দিনে আরশের ছায়ায় আশ্রয় দিবেন যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না।

চতুর্থ: লোক দেখানোর মানসিকতা অৰ্জন করা এবংএ ব্যপারে সাবধান থাকা। মানুষ যখন লোক মুখে কৃতিত্ব লোক দেখানো কাজের দিকে পা বাড়ায় বা লোকিকতার কোন উপায়কে স্বাগতম জানায় তখন সে ইখলাসের পথ হতে দূরে সরে যায়। যেমন কিছু কিছু লোক নিজের প্রশংসা  বিষয়ে আলোচনা করে। অথবা কারো আলোচনায় তৃপ্তিবোধ করে কিংবা তার কোন ভালকাজের কথা বলে বেড়ায়। প্রসঙ্গে আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:

(যে ব্যক্তি পার্থিবজীবন তার চাকচিক্যই কামনা করে, হয় আমি তাদের দুনিয়াতেই তাদের আমলের প্রতিফল ভোগ করিয়ে দেব এবং তাতে তাদের প্রতি কিছুমাত্র কমতি করা হয় না। এরাই হল সেসব লোক আখেরাতে যাদের জন্য আগুন ছাড়া নেই। তারা এখানে যা কিছু করেছিল সবই বরবাদ করেছে, আর যা কিছু উপার্জন করেছিল, সবই বিনষ্ট হল।) (সূরা: হুদ, আয়াত: ১৫- ১৬।) রিয়া বা লৌকিকতা হল ছোট শিরক। আর লোকিকতা বা এই ছোট শিরকের অন্যতম কুফল যেহেতু আমল কবুল না হওয়া, যেহেতু এই একটি কুফলই এই গর্হিত কাজটি জঘণ্য হওয়ার জন্য যথেষ্ঠ। বাহ্যত কোন কাজ অনেক ভাল মনে হলেও লৌকিকতা বা রিয়ার কারণে তা মূল্যহীন। এমন আমল ব্যক্তির মুখে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়।

 

পঞ্চম: সর্বদা আল্লাহ তায়ালার কাছে দুয়া প্রার্থনা করা সর্বদা এই কাজের উপর মনোযোগ হয়ে আল্লাহর প্রার্থনায় ডুবে থাকতে হবে তাতে আল্লাহ তিনার উপর সন্তুষ্টি অবর্তীর্ণ করেন তিনাকে সঠিক পথে পথ নির্দেশন করেন তিনার উদ্দেশ্য পূর্ণ করেন আল্লাহ বান্দার মধ্যে বন্ধুত্ত্ব কঠরতাই পরিপূর্ণ হয় এবং আল্লাহর বিশেষ বান্ডা হিসেবে আল্লাহ তিনাকে গ্রহণ করে নেই। 

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter