কিয়ামতের দিন
কিয়ামতের দিন হচ্ছে সেই দিন যে দিনে শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেওয়া হবে, ফলে আসমান ও জমিনে যারা আছে তারা অজ্ঞান হয়ে পড়বে। এরপর আবার শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেওয়া হবে সঙ্গে সঙ্গে তারা দাড়িয়ে যাবে এবং দেখতে থাকবে। এটি এমন ভয়ানক চিৎকার হবে, যার শব্দে আসমান ও জমিনের যারা আছে সবাই মৃত্যুবরন করবে এবং যারা যেমন গুনাহ করেছে তাদেরকে সেই রকম শাস্তি দেওয়া হবে; যে যত গুনাহ করেছে সে তার হিসাবে তার ঘামে ডুবে থাকবে। সেই দিন কোন ছায়া থাকবে না আল্লাহ তায়ালার ছায়া ছারা।
কিয়ামতের দিনে মানুষের অবস্থা
সেই দিন সবাই নাফসি নাফসি করবে। কেও কাউকে দেখবে না - স্বামী স্ত্রীকে চিনবে না, বাব-মা ছেলেকে চিনবে না, ছেলে বাব-মাকে চিনবে না। সেই দিন সূর্য থাকবে মাথা থেকে এক হাত দূরে আর তার তাপে মাথার মগজ গলে কান দিয়ে বেরিয়ে আসবে। সকলই আদাম (আঃ)-এর কাছে আল্লাহর আরসের সামনে শাফায়াত করার জন্য আসবে এবং বলবে: এ মানব প্রজাতির পিতা আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন না আমরা কোন অবস্থায় আছি? আপনি আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে শাফায়াত করেন। তখন তিনি মানা করে দেবেন এবং বলবেন তোমরা নুহ (আঃ)-এর কাছে যাও। সবাই নুহ (আঃ)-কে বলবে: আপনি এই পৃথ্বীর প্রথম রাসুল আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন না আমরা কন অবস্থায় রয়েছে? আপনি আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে শাফায়াত করেন। তখন তিনি মানা করে দেবেন এবং বলবেন: আমার আল্লাহ তায়ালা যা রাগ করেছেন সেই রকম রাগ আর কার উপর করেননি; আমি একজন নবী যে তার উম্মতের জন্য দাওয়াত করার বদলে বদদুয়া বা তাদের বিপক্ষে দুয়া করেছে। তিনি বলবেন: তোমরা অন্য নবীর কাছে শাফায়াত করো। এই ভাবে কোনো নবীই তাদের জন্য শাফায়াত করবে না
নবী কারিম (সাঃ)-এর শাফায়াত
অবশেষে সকলই নবী কারিম (সাঃ)-এর কাছে আসবেন এবং আল্লাহ তায়ালার কাছে শাফায়াত করার জন্য বলবেন তখন নবী কারিম (সাঃ) সিজদায় পরে যাবেন ও তিনার উম্মতের জন্য শাফায়াত করতে লাগবেন এবং বলবেন: (রাব্বি হাবলি উম্মাতি)। যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা তিনার উম্মতের প্রতি শাফায়াত কুবুল করবেন না তিনি মাথা উঠাবেননা। আল্লাহ তায়ালা যখন রাজি হয়ে যাবেন তখন নবী কারিম (সাঃ)-কে বলা হবে: হে আমার হাবিব! আপনি আপনার মাথা উঠান আমি আপনার উম্মতের জন্য করা আপনার শাফায়াতকে কুবুল করলাম। তারপরে হিসাব শুরু হবে যে যে ভাবে আমল করেছে তাকে সেই ভাবে সয়ওয়াব প্রদান করা হবে। যারা সৎ হবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং যারা গুনাহগার তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের একটি হাদিস শরীফে বর্ণিত রয়েছে যে এমন কোনো ব্যাক্তি নাই যে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পা তুলতে পারবে না। প্রথমত প্রশ্ন করা হবে তুমি তোমার জীবন কিভাবে অতিবাহিত করেছো? দ্বিতীয়ত তুমি তোমার ধন ও সম্পদ কিভাবে এবং কিসে কিসে খরচ করেছ? তৃতীয়ত তুমি তোমার ধন ও সম্পদ কিভাবে এবং কোথা থেকে অর্জন করেছ? চতুর্থত তুমি তোমার জৈবন কাল কিভাবে অতিবাহিত করেছ? পঞ্চমত তুমি তোমার শিক্ষা অনুসারে কিভাবে আমল করেছ? হাশরের ময়দানে মানুষকে খালি পায়ে,খালি গায়ে খাত্না বিহীন অবস্থায় হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে এক নরম তুলতুলে ও শুভ্র রঙের মাথে, যেখানে লূকানোর মত কোনো উঁচু উঠান ও নিচু গর্ত থাকবে না।
কিয়ামত কখন শুরু হবে
হযরত আবু যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ একদিন সূর্য অস্ত যাওয়ার পর হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম আমাকে বললেন: এ আবু যার তুমি কি বলতে পারবে যাওয়ার পর কোথাই যাই। তখন আমি উত্তরানুসারে বললাম আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুল ভালো জানেন। তখন তিনি উত্তরে বললেন: নিশ্চয় সূর্য যেতে যেতে আল্লাহর আরশের নিচে গিয়ে আল্লাহ তায়ালাকে সিজদা করে এবং অভ্যাসানুসারে সে পূর্ব দিক দিয়ে উদয় হওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করে তারপর সে পশ্চিম দিকে অস্ত গিয়ে পূর্ব দিকে উদয় হয়। এরকম ভাবে একদিন তার সাজদা গ্রহণ করা হবে না এবং পূর্ব দিক দিয়ে উদয় হওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে না। তারপর তাকে আদেশ দেওয়া হবে তুমি যে দিক দিয়ে এসেছ সেই দিক দিয়ে উঠ। অতএব সূর্যকে পশ্চিম দিক দিয়ে উদয় হওয়ার জন্য বলা হবে সেই দিন হবে কিয়ামতের দিন।
ইসরাফিল (আঃ) যখন প্রথমবার শিঙ্গায় ফুঁৎকার দিবেন তখন পৃথ্বীর মানবগণ কিট পতঙ্গের মত দৈাড়াদৈাড়ি করতে শুরু করবে, আকাশ খণ্ড বিখণ্ড হয়ে যাবে, নক্ষত্র আকাশ থেকে পৃথ্বীতে এসে ঝরে পড়বে। আবার যখন দ্বিতীয়বার শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেওয়া হবে তখন সমস্ত মানবগণ এবং প্রাণীরা মৃত্যুবরণ করবে। আবার যখন ৪০ বছর পরে শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেওয়া হবে তখন সমস্ত মানবগণ এবং প্রাণীরা পুনরায় জীবিত হবে।
কিয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে তিনটি দল থাকবে
(১) যারা মাটির উপর দাঁড়াবে
(২ )যারা বাহনে বসবে
(৩) আর এক দল মাথা নিচে এবং পা উপরে করে দাঁড়াবে
একজন সাহাবা এসে নাবি কারিম (সাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন: ইয়া রাসুলুল্লাহ তাহলে তারা কিভাবে চলবে? তখন নাবি কারিম (সাঃ) উত্তরে বলেন: যিনি তাদেরকে পায়ে হাঁটান, তিনি তাদেরকে মাথায় হাঁটাবেন। কিয়ামতের দিন হচ্ছে সেই দিন যে দিন কোনো আত্মার অন্যের আত্মার উপরে অধিকার থাকবে না এবং সেই দিনে শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালারই হুকুম হবে তাছারা কারোর হুকুম হবে না।
সেই ভায়াবহ কিয়ামতের দিনে কাউকে ছায়াতে রাখা হবেন না সাতজন ব্যাক্তি ছারা
(১) ন্যায় প্রতিষ্ঠাকারী ইমাম (২) সেই যে তার জীবন আল্লাহ তায়ালার ইবাদতে পূর্ণ করেছে (৩) সেই দুই ব্যাক্তি যারা আল্লাহর জন্য ভালবাসা রেখেচছেন এবং আল্লাহরই জন্য আলাদা হয়েছেন (৪) সেই ব্যাক্তি যার হৃদয় সর্বদা মসজিদের চিন্তায় ডুবে থাকে (৫) আর এক ব্যাক্তি সে ডান হাত দিয়ে সাদকা করলো কিন্তু বাম হাত জানতে পারল না (৬) এক ব্যাক্তি গোপনে আল্লাহ তায়ালাকে শ্বরণ এবং আল্লাহর ভয়ে কাঁদলো (৭) সেই ব্যাক্তি যাকে কোন ভালো পরিবারের সুন্দরি মেয়ে খারাপ কাজের দিকে ডাকলো কিন্তু সে বলল: না আমি আললাহকে ভয় করি। এই সাতজন ব্যাক্তি ছাড়া কেউ সেই দিন আল্লাহ তায়ালরা আরশের ছায়া পাবে না। কিয়ামতের দিন হবে অনেক ভায়াবহ। সেই দিন মানুষেরা পলায়ণ করবে। কেও কাউকে চিনবে না। সেই কত চেহারা কতগুলো চেহারা হাসবে খুশী করবে এবং কতগুলো চেহারা মলিন ও মরচ্ছান্নিত হবে।