আতা বিন আবি রাবাহ (রহঃ)

৯৭ হিজরি সনের যিলহজ মাসের দশ তারিখটি ছিল এক উতপ্ত দিন । সেই দিনেই বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত হাজীগন নিজের প্রতিপালকের সন্তুষ্টি অর্জন করার নিমিত্তে কাবার চারি সাইডে তাওয়াফ করছিল । তাওয়াফ কারীদের মধ্যে মুসলিম সম্রাট আব্দুল মালিক ও তার দুই পুত্র ছিলেন। আজ সাধারন মানুষের মতই রাজার পড়নে শুধুমাত্র দুটি কাপড়। সম্রাট হওয়ার কোন প্রতীক তিনার উপরে নায়। সবায়ের মতই তিনিও সেই উজ্জ্বল সূর্যের তাপে কাবার তাওয়াফ করেই যাচ্ছেন এবং তার পিছনে থাকা দুই সুসন্তানও তাওয়াফে মগ্ন। কিছুক্ষন পর যখন তাওয়াফের আবর্তন শেষ করে বাদশা নিজ প্রজাদের বললেন উল্লেখ করে জিজ্ঞেস করলেন, যে উক্ত জ্ঞ্যানি ব্যাক্তি কোথায় ? প্রজারা সকলেই মসজিদের দিকে ইশারা করল । বাদশা যখন হাঁটতে আরম্ভ করলেন তখন প্রজারা তিনার জন্য রাস্তা তৈরি করে দিচ্ছিল। কিন্তু বাদশার নিষেধের কারনে তারা চলে যায় । মুসলিম সম্রাট আব্দুল মালিক, তিনার দুই পুত্র এবং প্রজা সকলেই সেই জ্ঞ্যানির খোঁজে মসজিদে চলে এলেন, এবং সেখানে দেখলেন যে অনেক হাজীগন তিনারই অপেক্ষায় বসে আসেন এবং তিনি নামাজে মগ্ন আছেন । মুসলিম সম্রাট কোনো বিভেদ না করে তাদের সঙ্গেই অপেক্ষা করতে শুরু করেন । যখন সেই জ্ঞ্যানি ব্যাক্তির নামাজ শেষ হয়, তখন তিনি এসে রাজাকে দেখতে পেয়ে সালাম জানান, এবং সর্বপরি মুসলিম সম্রাটের হজের বিষয় নিয়ে সমস্ত সংশয় দূর করেন। তিনি প্রত্যেক উত্তরের সঙ্গে সঙ্গে একটি করে হাদিসও বর্ননা করেন। তিনাদের প্রশ্ন উত্তরের মজলিস শেষ হলে রাজা আব্দুল মালিক ও তিনার পুত্র সেখান থেকে বিদায় নেয়। তিনারা যখন সাফা মারওয়া পর্বতে দৌড়ানো আরম্ভ করেন তখন একজন ব্যাক্তি হাঁক দিয়ে বলে যে কেউ যেন আতা বিন আবু রাবাহ রহঃ ছাড়া অন্য কাউকে কোন প্রশ্ন বা মাস’আলা জিজ্ঞাসা না করে । এই শুনে রাজার দুই পুত্র রাগম্বিত হয়ে যায় এবং মুসলিম সম্রাটকে অনুরোধ করে যে একজন রাজার উপস্থিতিতে এই মানুষ এই ধরনের সিধান্ত কিভাবে দিতে পারে। তারা নিজ আব্বাকে এটাও বলে যে আমরা কি তার মাথা কেটে নিয়ে আসবো ? তখন মুসলিম সম্রাট আব্দুল মালিক বলেন যে “না না কক্ষনও না, আমরা যার কাছে গিয়ে এই সব সংশয় দূর করলাম তিনিই হলেন আতা বিন আবু রাবাহ রহঃ। তিনি নবী সাঃ এর খাদিম হজরত আনাস বিন মালিক রাঃ এর ছাত্র। আল্লহ তিনাকে অনেক জ্ঞ্যান প্রদান করেছেন তাই তিনি নিজের জ্ঞ্যানের মাধ্যমে এই মর্জাদা পেয়েছেন। তোমরাও জ্ঞ্যান অর্জন করো আল্লাহ তায়ালা তয়ামদেরকেও মর্জাদা প্রদান করবেন”।

 আতা বিন আবি রাবাহ রহঃ এর আত্মজীবনী

আতা বিন আবু রাবাহ রহঃ উমাইয়া খেলাফতের সময় অনেক বড় তাবীঈ ছিলেন । তিনার ইতিহাসে সর্বপরি তিনি একটি মুসলিম নারীর দাস হিসেবে জীবন কাটাতেন। তিনি দিনের ২৪ ঘন্টাকে তিন ভাগে ভাগ করেছিলেন । প্রথম ভাগে তিনি আল্লাহ আয়ালার ইবাদতে মগ্ন হতেন, দ্বিতীয়ত তিনি নিজের মালকিনের খিদমত করতেন এবং শেষের ভাগে তিনি জ্ঞ্যান অর্জন করতেন। তিনার মালকিন যখন দেখলেন যে এই দাসটি জ্ঞ্যানের পিপাসু হয়ে গেছে, তখন আল্লাহকে খুশি করার নিমিত্তে তাকে আযাদ করে দিয়েছিলেন । তখন থেকেই আতা বিন আবু রাবাহ রহঃ মসজিদকে নিজের ঘর বলে মনে করতেন। সকালে উঠে সেখানেই গিয়ে জ্ঞ্যান অর্জন করতেন এবং নামাজের সময় হলে উক্ত সময়ে নামাজ আদায় করতেন। এবং রাত পোহালেই সকলের ঘুমিয়ে যাওয়ার পর মসজিদে এসে সারা রাত ইবাদাত করতেন। এই ছিল তিনার ডেইলি টাইমটেবিল।

আবু হানিফা রহঃ এর বর্ননা

আবু হানিফা রহঃ বলেন যে একদা হজ্ব পালন করার পর আমি নাপিতের কাছে চুল কাটতে যাই, কিন্তু অজানায় আমি কিবলার দিকে মুখ করি না, তখন নাপিত আমাকে ধমক দিয়ে আদেশ দেয় যেন আমি কাবার দিকে মুখ করে বসি। আমি তার কথা মত কিবলার দিকে ঘুরে নিস্তব্ধ বসে রইলাম, তখন সেই নাপিত আবার আমাকে ধমক দিয়ে বলে যে তুই চুপ করে কেন বসে আছিস, জোড়ে জোড়ে তকবির পর! (সেই নাপিত জানতো না যে এনি হলেন হানাফী মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা আবু হানিফা রহঃ) আমি তার কথা মত জোড় গলায় তকবির পড়তে শুরু করলাম। যখন আমার চুল কাটা হয়ে গেলো আমি বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম। সেটা দেখে আবার নাপিত বললো যে কোথায় যাচ্ছ, স্নান করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে, যাও! আমি তার নির্দেশানুযায়ী গোসল করে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করলাম। আমি বেরিয়ে যাওয়ার সময় তাকে জিজ্ঞেস করলাম যে চুল কাটার কত টাকা লাগবে ? তখন সে রাগম্বিত হয়ে বললো যে কোন হাজী সাহেব এখানে এসে পয়সা জিজ্ঞেস করে না যা ইচ্ছা তাই দেয়।

এবার আবু হানিফা রহঃ বলেন যে শেষে আমি সেই নাপিতকে জিজ্ঞেস করলাম যে তুমি এইসব শিক্ষা কোথায় অর্জন করলে? সে উত্তর দিল যে আতা বিন আবু রাবাহ রহঃ আমাকে এই সব শিখিয়েছেন।

আতা বিন আবি রাবাহ রহঃ ব্যয়বহুল

আতা বিন আবু রাবাহ রহঃ সর্বদা নিম্ন দামের কাপড় পরিধান করতেন, তিনার কোন কাপড়ের দাম ৫ দিরহামের বেশি হয়নি। তিনি তিন মাস শুধু শুকনো রুটি খেয়ে জীবনযাপন করেছেন। ইসলাম ধর্মের সম্রাট আব্দুল মালিক রহঃ তিনাকে বারংবার  নিমন্ত্রন জানিয়েছিলেন কিন্তু তিনি কক্ষনও সেই দাওয়াত গ্রহন করেন নি। শুধু মাত্র তক্ষনও বাদশাদের কাছে জেতেন যখন সমস্ত মুসলিমদের জন্য যাওয়ার দরকার হত। একদা এক সময় যখন তিনি বাদশা আব্দুল মালিক রহঃ এর রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করেন তখন সম্রাট অনেক খুশি হয়ে যায় এবং ভাবে যে হয়তো আমার নিমন্ত্রন গ্রহন করে এসছে। কিন্তু তিনি বাদশাকে নির্দেশ দেয় যে সে যেন মুসলিমদের সঙ্গে কক্ষনও অত্যাচার না করে এবং চলে যান। বাদশা তিনাকে একটি পুঁতলিতে কিছু টাকা দেওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু তিনি সেটা ফিরিয়ে দেন।

উপসংহার

আতা বিন আবু রাবাহ রহঃ আল্লাহ তায়ালার অনেক বর পীর এবং অলী ছিলেন। তিনি নিজের সর্বত্রয় আল্লাহ নামে ওয়াকফ করে দিয়েছিলেন। নবী সাঃ এর সমস্ত সুন্নতের প্রতি আমল করতেন । বর্তমান মানব সমাজও  যদি এই রকম ভাবে আল্লাহর রসুল মোহাম্মদ সাঃ এর সমস্ত সুন্নতকে আঁকড়ে ধরে তাহলে আবার ইসলাম উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাবে ইনশাআল্লাহ।

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter