আল-হামরা প্রাসাদে আজান আহ্বান দেন সিদি মুয়াজ আল-নাস
সময়ের প্রবাহকে হারিয়ে অনেক স্থানে এখনও স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বহু ইসলামী সভ্যতার বিস্ময়কর স্থাপত্য - কোনোটা মুসলমানের উপাসানালয়, কোনোটা সুলতানের রাজপ্রাসাদ তো কোনোটা জনসাধারণের বিদ্যালয় বা বৈদ্যশালা। বর্তমান ভারত, স্পেন এবং দুইয়ের মধ্যবর্তী স্থান এর প্রত্যক্ষ সাক্ষী। উদাহরণ বলার প্রয়োজন নেই।
স্পেনের শুধুমাত্র একটি স্থাপত্য আল-হামরা প্রাসাদ প্রাসঙ্গিক এই রচনাটি। কিন্তু তার পূর্বে স্বর্ণ-যুক্ত ইতিহাস স্বরনে মান-শুণ্য বর্তমানের প্রতি অনুতাপের এক ইদানিং দৃষ্টান্ত উল্লেখ্য যথাযথ। আল-হামরা প্রাসাদে আজান আহ্বানের কথা।
কে সেই সিদি মুয়াজ আল-নাস?
আল-হামরা প্রাসাদ প্রাঙ্গণে আযানরত এক ব্যক্তির ভিডিও ইন্টারনেটে দ্রুত প্রসারিত হয়। আযানের ডাক দিচ্ছেন সিরিয়ান সুফি সংগীতকার সিদি মুয়াজ আল-নাস। আশেপাশের মানুষ আশ্চর্য এক মধুর ধ্বনির প্রতি শ্রবণ ও তা ভিডিও শুটিংয়ে ব্যস্ত। সম্ভবত, প্রায় ৭০০ বছর পর উক্ত প্রাসাদের দেওয়াল প্রতিধ্বনির মাধ্যমে আজানের উত্তর দিচ্ছিল। সিদির কথায় তার অনুভব: অনেকদিন ধরে এই দেওয়ালগুলি আযানের ধ্বনি শ্রবণ করতে পায়নি।
সিরিয়ার প্রসিদ্ধ ধার্মিক পন্ডিত ডক্টর সামির আল-নাসের পুত্র সিদি আল-নাস। ইনশাদ আর মাকামাত সংগীত রীতিতে প্রশিক্ষিত সিদি সুফি সংগীতকেই নিজের প্রফেশনাল জীবন হিসেবে গড়ে তোলেন এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অবসরে অংশগ্রহণ করেন। তাছাড়া কুরআন পাঠের রীতি তাজবীদ বিদ্যায়ও তিনি অভিজ্ঞ, কিন্তু আল-হামরার উন্মুক্ত প্রাঙ্গনে বিভিন্ন পর্যটক সমাহারের মাঝখানে আযান দিয়ে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ইদানিং তাঁর মৃত্যুর ফলে এই প্রসিদ্ধতা আরও বৃদ্ধি পেয়ে যায়।
মৃত্যুর পর প্রতিক্রিয়
মুহাম্মাদ শফিক নামক এক টুইটার ব্যাবহারকারী পোস্ট করেন:
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। সিরিয়ার মহান পণ্ডিত ও শিক্ষক শায়খ সামির আল-নাসের প্রিয় পুত্র সিদি মুয়াজ আল-নাসের মৃত্যুর খবর শুনে অত্যন্ত দুঃখিত। মুয়াজের সাথে সাক্ষাত করার সৌভাগ্য কখনও হয়নি কিন্তু বহুবার শায়খ সামিরের সাক্ষাৎ ও সান্নিধ্য পেয়েছি। অত্যন্ত বিনয়ী, ভদ্র এবং প্রেমময়। মাননীয় শাইখ ও তাঁর পরিবারের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা। দুয়া করি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা যেন উনার মর্যাদাকে জান্নাতে উন্নীত করেন এবং পরিবারকে ধৈর্য্য ধারণ করার তৌফিক প্রদান করেন। আল ফাতিহা।
সিদির মৃত্যুর পর ইন্টারনেটে অনুরূপ অনেক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। প্রবীণ বাবা তার ছেলের জানাযা নামাযের নেতৃত্ব দেন।
আজও স্থির আল-হামরা প্রাসাদ
আন্দালুসের শেষ মুসলিম সম্রাজ্য গ্রানাডা শহরে অবস্থিত আল-হামরা প্রাসাদ। ইসলামী সভ্যতার সব চেয়ে বিস্ময়কর স্থাপত্যের মধ্যে এটি এক যা সময়ের প্রবাহের সঙ্গে স্থির।
নাসরিদ আমির মুহাম্মাদ প্রথম ১২৩৮ সালে উক্ত প্রাসাদের নির্মাণ আরম্ভ করেন। পরবর্তীতে, অন্যান্য শাসক স্থাপত্যটিকে রঙে-সুন্দর্যে আরও উন্নত ও সমৃদ্ধ করতে থাকে। ১৪৯২ স্পেনে মুসলিম শাসনের সম্পূর্ণ অধিপতনের পর প্রাসাদটি ফার্দিনান্দ ও ইসাবেলার রাজকীয় কোর্টে পরিবর্তিত হয়।
স্থাপত্য ক্ষেত্রে বিভিন্ন কলায় আল-হামরা প্রাসাদের প্রবাহ দেখা যায়। ১৯৮৪ সালে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তালিকায় স্থান পায় মুসলিম সাম্রাজ্যের এই কিতৃত্ব। আজ বিশ্বের বিভিন্ন কোন থেকে পর্যটকদের দল এই ইতিহাস আশ্চর্য্যের দর্শনে পাড়ি দিচ্ছে।