মদ্যপান হারাম

বর্তমান সমাজে সবচেয়ে ব্যাধি হল মদ্যপান যা সমাজকে সম্পূর্ণ রুপে ঘিরে নিয়েছে, যা সমাজকে  সম্পূর্ণ রুপে খারাপের দিকে ঠেলে দিয়েছে। সামাজিক বহু অশান্তির মূল কারণ হল মদ্যপান। মদ্যপান এমন একটি কাজ যে কাজের দ্বারা বন্ধুদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়, যে কাজের দ্বারা আমাদের সমাজের কাজের মধ্যে বিবাদ হয়, যে পদার্থের দ্বারা সম্পর্ক ভাঙন ধরে, যার দ্বারা আমাদের জীবন ধ্বংস হয়ে যায়। আমরা যদি মদ্যপান করি তাহলে সেই মদ আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকারক হবে। আর তার ফলে উপকারের চেয়ে বেশি অপকার হবে। কিন্তু আফসোস এখনকার মানুষ এইসব জিনিস কে বুঝতেই চায়না।

 আল-কুরআন  মদ্যপানকে সম্পূর্ণ হারাম ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। মদ্যপান যেহেতু একটি নেশা বা একটি কঠিন অভ্যাস, তাই তৎক্ষণাৎ নিষিদ্ধ না করে ধীরে ধীরে পদ্ধতি অনুযায়ী পর্যায়ের মাধ্যমে হারাম করা হয়েছে। মহা বৈজ্ঞানিক আল্লাহ পাক তিনটি পর্যায়ে মদ্যপানকে হারাম করেছেন। যাতে কারোর দীর্ঘদিনের অভ্যাস ছাড়তে কষ্ট না হয় বা ছাড়তে না পেরে লুকিয়ে আবার হারাম বস্তু পান না করে।

প্রথম পর্যায় - প্রাক ইসলামী যুগে মদ্যপানের ব্যাবহার অনেক ছিল। ইসলামের প্রথম অবস্থাতেও তা বজায় থাকে। একদা হজরত উমর ফারুক (রাঃ) হজরত মাআজ বিন জাবাল ও কিছু আনসার সাহাবী  (রাঃ) নবীজির নিকট জিজ্ঞাসা করলেন, যে মদ ও জুয়া মানুষের বুদ্ধি জ্ঞান কে হারিয়ে ফেলে এবং ধনসম্পদ কে ধ্বংস করে দেয়। এ সম্পর্কে আপনার মতামত কি? প্রশ্ন শুনে নবীজি উত্তরের অপেক্ষা করলেন। আর সেই অবস্থায় আয়াত নাযিল হল। আল্লাহ পাক বললেন, হে নবী যারা তোমাকে মদ ও জুয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করছে। তুমি তাদের বলে দাও, এর মধ্যে আছে মহাপাপ। এতে মানুষের উপকারিতাও আছে। কিন্তু এর মধ্যে উপকারিতার চেয়ে পাপ অনেক বেশি।

দেখতে গেলে মদ্যপান থেকে সামান্য কিছু উপকারও হয়। যথা – সাময়িক আনন্দ লাভ, শক্তি বিদ্ধি বা শারীরিক লাভ অনুভব হয়। কিন্তু এর মাধ্যমে, অনেক বড় বড় পাপের উম্মুক্ত হয়ে যায়, যা উপকারের তুলনায় অনেক বেশি ক্ষতিকর। আবার অনেক পাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দীর্ঘদিন পান করার পর নানান রোগের সৃষ্টি হয়। হজম ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। বোধ শক্তি কমে যায়। এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর কিছু মানুষ মদ্যপান ত্যাগ করেন। এবং কিছু মানুষ তখনও পান করতে থাকেন। 

দ্বিতীয় পর্যায় - একদিন হজরত আব্দুর রহমান ইবনি আউফ (রাঃ) কয়েকজন বন্ধু-বান্ধব সাহাবীকে আনেন তারপর মদ্যপানের ব্যবস্থা করেন এবং সকলে মিলে মদ্যপান করেন। সেই সময় মাগরিবের নামাজের সময় হয়ে যাওয়ার কারনে সকলে মিলে নামাজে দাঁড়িয়ে যান। একজন ইমাম হয়ে নামাজ শুরু করেন, তখন নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামাজে সুরা কাফিরুন পাঠ করতে গিয়ে ভুল পরে দেন এবং মারাত্মক আকারে অর্থের ভুল হয়ে যায়। এবং সেই অবস্থায় দ্বিতীয় আয়াত নাযিল হয়। আল্লাহ পাক বলেন, হে ইমানদারগণ তোমরা যখন নেশাগ্রস্ত থাকো, তখন নামাজের কাছে যেওনা। যতক্ষণ না বুঝতে সক্ষম হও, যা তোমরা বলছ। মদ্যপান করে যদি জ্ঞান হারিয়ে যায়; যা তোমরা বলছ বা যা তোমরা পড়ছ তা যদি তোমরা না বুঝতে পারো অথবা তা যদি বোঝার ক্ষমতা না থাকে তাহলে তোমরা সেই অবস্থায় নামাজের ধারে কাছেও যেওনা। কেননা তাতে মারাত্মক ধরনের ভুল হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই আয়াত নাযিল হওয়ার পর বেশ  কিছু বড় অংশের সাহাবী মদ্যপান ত্যাগ করেন। অনেকেই আবার দুই নামাজের মধ্যবর্তী সময়ে পান করতেন।

তৃতীয় পর্যায় – দ্বিতীয় আয়াত নাযিল হওয়ার পর সাহাবীদের মধ্যে অনেক সাহাবীই মদ্যপান ত্যাগ করেন। কিছু দিন পরে হজরত আতবান ইবনি মালেক (রাঃ) কয়েকজন সাহাবী বন্ধুকে ডাকেন যাদের মধ্যে সাআদ বিন আবি আক্কাস (রাঃ) ও উপস্থিত ছিলেন। খাওয়া দাওয়ার পর সকলে মিলে মদ্যপান করলেন। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় কবিতার প্রতিযোগিতা শুরু হল, তখন কবিতায় রীতি অনুযায়ী কবিতার মাধ্যমে আপন বংশের সুনাম ও প্রশংসা সহ পূর্বপুরুষ দের অহংকার মূলক কবিতা আবৃতি করলেন। এই অবস্থায় সাআদ বিন আবি আক্কাস (রাঃ) আবৃতি শুরু করলেন। এমন এক কবিতা আবৃতি করলেন, যাতে আনসার সাহাবাগণের দোষারোপ করে নিজেদের প্রশংসা ভরা ছিল। তা দেখে একজন আনসার সাহাবী রেগে গিয়ে উটের মাথার একটি হাড় নিয়ে হজরত সাআদ বিন আবি আক্কাস (রাঃ) এর মাথায় ছুড়ে মারলেন। এতে তিনি আহত হলেন। অতঃপর তিনি ঐ আনসার সাহাবার নামে রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট অভিযোগ করলেন, যেহেতু তখনও পর্যন্ত মদ্যপান হারাম করা হয়নি। তাই তিনি প্রার্থনা করলেন, হে আল্লাহ মদ্যপান সম্পর্কে আমাদের কে পরিস্কার বিধান বর্ণনা করুন। অতঃপর তৃতীয় আয়াত নাযিল হয়। এবং সম্পূর্ণ রুপে মদ্যপান চিরকালের জন্য হারাম করা হয়।

 আল্লাহ পাক বলেন, হে ইমানদারগণ, মদ, জুয়া, ভাগ্যনির্ধারক ইত্যাদি এগুলি শয়তানের অপবিত্র কাজ। সুতরাং তোমরা এইগুলি থেকে বিরত থাকো যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। শয়তান এগুলির মাধ্যমেই তোমাদের পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা ও বিবাদ সৃষ্টি করে। এবং তার কারনে সমাজ অশান্ত হয়ে ওঠে। এই আয়াত নাযিল হওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত সাহাবীর বাড়িতে যার যেখানে মদ ভরা ছিল তারা তৎক্ষণাৎ ফেলে দিয়েছিলেন। সেই দিন যখন এক ব্যক্তি মদিনার অলি-গলিতে প্রচার করতে লাগলেন, যে মদ্যপান হারাম করা হয়েছে, তখন যার হাতে মদের যে পাত্র ছিল সে সেখানেই ফেলেদিয়েছিলেন। যার কাছে মদের কলসি ছিল সে সেই কলস কে ভেঙে ফেলেছিলেন। সেদিন মদিনায় এত মদ ফেলা হয়েছিল, যে বৃষ্টির পানির মতো মদ প্রবাহিত হয়।   

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter