ইউরোপে নতুন মুসলিমদের সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ

ধর্ম পরিবর্তন করে ইসলামে প্রবেশ করাকে চরম্পন্থা ও সন্ত্রাসবাদের
অভিযোগে ভুল ভাবে প্রদর্শন করা হচ্ছে এবং বর্তমানের ধর্মনিরপেক্ষ সমাজে
ইসলাম ধর্মে পরিবর্তন হওয়াকে প্রাক আধুনিক হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
পশ্চিমা সমাজে এটি ইসলামে ধর্মান্তরিত হওয়াতে প্রভাবিত করছে, নতুন
মুসলমানদের জন্য সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি করছে, কিন্তু সত্যের
সন্ধানকারীদের জন্য এইসব বিষয় কোনরকম বাধা সৃষ্টি করতে পারেনা।
এটি একটি তিক্ত সফর হলেও এর ফল খুব সুমধুর। একজন নতুন মুসলিম বলছেন,
“কুরআন বলছে যে আমরা যেন আমাদেরকে মুসলমান বলি, কিন্তু আমরা নিজেদেরকে
সত্য বিশ্বাসী করার পথে বেরিয়েছি।“


ইংল্যান্ড থেকে ২১ বছরের ক্যাথারিন হাঁটলি বলছেন, “আমার যাত্রা তখন শুরু হয়
যখন থেকে আমি মাধ্যমিক স্কুলে ধার্মিক বিষয় হিসাবে ইসলামের ব্যাপারে পড়া শুরু
করি, আমি নিজের মধ্যে তখন কিছু অনুভব করছিলাম। আমি স্কুলে লাঞ্চ টাইমে
কম্পিউটারে ইসলামের ব্যাপারে পড়তাম। আমি নিজেকে সম্পূর্ণ শান্তির মধ্যে খুঁজে
পেতাম, এমনকি আমি নিজের মধ্যে এমন একজনকে খুঁজে পেতাম যাকে আমি নিজেই
চিনতাম না।


আমি আমার মাথার ওড়না ও ইসলামিক বইগুলোকে একটি ড্রয়ারের মধ্যে লুকিয়ে
রাখতাম যাতে সেগুলো আমার বাবা মায়ের চোখে না পড়ে, এবং যখন আমি তাদেরকে
বিষয়টা (ধর্মান্তর) জানালাম তারা খুবই দুঃখিত হয়ে পড়েছিল, কিন্তু আমার
ইসলামের দিকে টান আরও বেড়ে গেছিল, এবং আমি ভদ্রভাবে বস্ত্র পরিধান করতে
শুরু করি আর রমযান মাসে লুকিয়ে রোযাও রাখতে শুরু করি।
এবং এক সপ্তাহ পরে আমার মা আমার ঘরে ছুটে আসে, আমি বলি “তুমি কি কিছু
বলতে চাও?” তখন সে তার ওয়ালেট থেকে আমার ইসলামিক সার্টিফিকেটটি বের
করে। আমার মনে হয় তখন সে যদি সিগারেট বা ড্রাগস পেত তাহলে তাকে কিছুটা কম
খারাপ লাগত। আমি আমার মায়ের চোখে স্বচ্ছ ভয় দেখতে পাচ্ছিলাম, সে বিষয়টা
বিশ্বাস করতে পারছিল না কেন আমি একটি বিদেশি ধর্মের জন্য নিজের
স্বাধিনতাকে ত্যাগ করছি? কেন আমি ওই সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছি?
বাবা মায়ের সঙ্গে থেকে ইসলাম পালন করা আমার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। তারা
আমার পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ পড়া পছন্দ করতনা এবং সেগুলোকে বিড়বিড়ানো বলত।
আমি সাধারনত আমার রুমের দরজার সামনে নামাজ পড়তাম আর আমার মা স্বেচ্ছায়
আমার সামনে চলে আসত আর বলত, “ক্যাথারিন তুমি কি এক কাপ চা খাবে?”

আমি আমার ঠাকুরদাকে বলতে শুনতাম,”মুসলিম মহিলারা তাদের স্বামীর থেকে তিন
পা পেছনে হাঁটে” এটা শুনে আমার রাগ উঠত কারণ এটা কোনভাবেই ধর্মের অংশ নয়
এটা নিছক একটি প্রথা।
আমি একটি এমন মুসলিম কে বিয়ে করব যে বলে,”একটি মুসলিম নারী হচ্ছে একটি
রত্ন যাকে তার স্বামী রক্ষা করে, একটি শামুক নয় যা তাকে রক্ষা করে।“
বিবাহের অনুষ্ঠানটি একটি মসজিদে হবে এবং আমার মনে হয় না যে তারা আসবে
(বাবা মা)। বিষয়টা আমাকে দুঃখিত করেছিল। ভাবছিলাম আমার বিয়েটা আমার
পরিবারের বাকি সদস্যদের মত আনন্দের হবে না, আর আমার স্বামীর সাথে আমার
বিবাহিত জীবনও খুব সুখের হবে কি না।“


এই সত্য ঘটনাটি কিছু নতুন মুসলমানদের দুঃখকষ্ট প্রকাশ করে, বিশেষ করে সেই
পরিবারের যারা অজ্ঞতার কারনে বা শত্রু মিডিয়ার প্রভাবে নতুন ধর্মের প্রতি
বিরক্তি, প্রত্যাখান ও উপহাস করে। পাশাপাশি উপাসনার কাজ গুলোকে লুকিয়ে করা
ও পরিবারের উপাসনাতে বিরক্ত করা। বিশেষ করে পরিবারের মধ্যে বিভ্রান্তি তখন
দেখা যায় যখন ছেলে মেয়েরা আনন্দের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে না।
পরিবারের বাইরে এমন কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে যা ইসলামে ধর্মান্তরিত
ব্যাক্তির যত্ন নেওয়াকে বাধা দেয় যতক্ষন না সে অবিচল হয়ে পড়ে। মাইকেল ইয়ং
নামক একজন নতুন ইংরেজ মুসলিম, ইউরোপের নতুন মুসলিমদের প্রতি অবহেলার
দিকে ইঙ্গিত করেছেন, তিনি ইসলাম গ্রহণ করার পর থেকে তার শহরের মাত্র দুজন
মুসলমানকে চেনেন এক প্রতিবেশি ও সহকর্মী। ইসলামে ধর্মান্তরিত হওয়ার পর
বৈজ্ঞানিক ও সামাজিকভাবে তার যত্ন নেওয়ার একটি অধ্যায়ন পদ্ধতি এবং একটি
ক্রমাগত পদ্ধতির অভাব দেখে তিনি বিস্মিত।
তিনি উল্লেখ করেন মসজিদ যাত্রিদের প্রয়োজন, নতুন মুসলিমদের প্রতি মনোযোগ
দেওয়া, তাদের আপন করা, এবং তাদের বাড়িতে আমন্ত্রন করা এবং ইসলামিক
জ্ঞানের রেফারেন্স হিসাবে ইন্টারনেট ব্যাবহার করার বিরুদ্ধে কঠোরভাবে সতর্ক
করেন। ইন্টারনেটে ইসলাম সম্পর্কে কি ভাল কি খারাপ এবং কি বিপজ্জনক তা
রয়েছে। যার জ্ঞান নেই সে কিছু চরমপন্থিদের সহজেই শিকার হবে।
গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে অতীতে ইসলামী বিজয়ের উদ্দেশ্য ছিল মানুষের উপর
নতুন বিশ্বাস চাপিয়ে দেওয়া নয়, বরং একটি প্রাতিষ্ঠানিক প্রেক্ষাপট তৈরি করা
যেখানে ইসলাম বিকাশ লাভ করতে পারে এবং একবার একটি ইসলামী পরিবেশ
প্রতিষ্ঠিত হলে জনসাধারণ স্বাভাবিকভাবেই এবং ধীরে ধীরে রূপান্তরিত হবে।
কিন্তু সমসাময়িক বিশ্বে বিষয়টি ভিন্ন। ইসলামের প্রতি আহবান জানানোর জন্য
এখন শুধু বাহ্যিকভাবে দাওয়াত যথেষ্ট নয় যেহেতু সমাজে এখন নানান ধরনের

দৃষ্টিভঙ্গি ছড়িয়ে পড়েছে যেরকম নাস্তিকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতা ও অন্যান্য
বিষয়গুলি। এই সময় যেটি কার্যকরীয় পদ্ধতি সেটি হল মানুষের ব্যাক্তিগতভাবে
নিকটবর্তী হয়ে তাদেরকে ইসলামের ব্যাপারে জ্ঞান পরিবেশন কর।
ইউরোপে ইসলামিক বিস্তারের সম্মুখে আসা চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে একটি হল, যে
প্রশ্ন করা হয় কিভাবে মুসলিমরা বাকি সমাজের সাথে শান্তিপূর্ণভাবে থাকতে পারে।
পশ্চিমা মিডিয়া এবং কিছু বর্ণবাদী দল নানা রকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যাতে তারা
মুসলিমদের বিশ্বাসযোগ্যতাকে নষ্ট করতে পারে। এমনকি নানা সংস্থা প্রিয় নবি
(সঃ) এর ব্যাঙ্গচিত্র ও কুরআন শরিফকে জালানো থেকেও দূরে থাকেনি।

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter