ইরানে হিজাব বিরোধী বিক্ষোভ, মাশা আমিনীর মৃত্যু
বহু বছর আগেই ইরান সরকার একটি আইন পাস করেন যেই আইনে বলা হয় ইরানের সমস্ত মহিলাদেরকে হিজাব পরিধান করা অপরিহার্য। মাথার চুল পরিপূর্ণভাবে ঢাকা থাকতে হবে এবং হিজাবটি তাদের কাঁধ বরাবর হওয়া দরকার। এর বিপরীতে যদি কোন মহিলা বিনা হিজাব পরে রাস্তায় বা পাবলিক প্লেসে বের হয় তাহলে তাদের প্রতি কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর জন্য ইরানের সরকার নৈতিকতা পুলিশের ব্যবস্থা করেছেন সে পুলিশদের কাজ হচ্ছে চারিদিকে দেখিয়ে বেড়া কোথায় কোন মহিলার ঠিকমতো হিজাব পরছে কিনা? যদি কোন মহিলা বিনা হিসাবে দেখতে পাওয়া যায় তাহলে এই নৈতিকতা পুলিশেরা তাকে জোরজবস্তি হিজাব পড়তে বাধ্য করছে। এই পুলিশ এর অত্যাচার মহিলাদের ওপর অনেক বেড়ে যাওয়ার ফলে ইরানের মহিলারা এবং ছাত্ররা রাস্তায় নেমে পড়েছে এবং বিক্ষোভ শুরু করছে। যদি আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখি তাহলে দেখতে পাবো সমস্ত জায়গায় এটি দেখা যাবে যে ইরানে হিজাব বিরোধী বিক্ষোভ মহিলারা রাস্তায় নেমে হিজাবে আগুন লাগাচ্ছে এবং নিজেদের চুলকে কেটে ফেলছে। কিন্তু কেন আজ মুসলমানদের এই অবস্থা?
কিছুদিন আগের কথা, ১৪ সেপ্টেম্বর মাসা আমিনী এবং তার পরিবার কুর্দিস্তান থেকে ইরানের রাজধানী তেহরানের দিকে আসছিল। রাস্তায় এই নৈতিকতা পুলিশরা তাদের গাড়িকে আটক করে এবং দেখে যে মাশা আমিনি সেই সময় ঠিকমতো ভাবে হিজাব পরিধান করেন নি যেই কারণে সেই পুলিশেরা তাকে জোরজবস্তি গাড়ি থেকে হিচকে নামাই এবং তাকে নিজেদের গাড়িতে চড়াই। তার ভাই কাইরাস পুলিশের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে কিন্তু তারা কিছু শোনে না এবং মাথা আমিনীকে তাদের গাড়ির মধ্যে তোলে এবং বলে আমরা একে এক ঘন্টার জন্য উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য পুলিশ স্টেশন নিয়ে যাচ্ছি । পুলিশ স্টেশনে নিয়ে গিয়ে মাশা আমিনীকে বেধড়ক মারা হয় যার ফলে সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়, সেখানে তার ভাই এবং পুরো পরিবার উপস্থিত ছিল এবং কিছুক্ষণ পরেই একটি অ্যাম্বুলেন্স এখানে আসে এবং মাশা আমিনিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার দুদিন পর ১৬ সেপ্টেম্বর মাশা আমিনির মৃত্যু হয়। তার পরিবার কেস করে যে এই পুলিশেরাই তার মেয়েকে মেরেছে।কিন্তু পুলিশেরা অস্বীকার করে যে আমরা তাকে কোন রকমের মারধর করিনি সে হার্ট অ্যাটাক হয়ে মারা গেছে।
মাশা আমিনি ছিল ২২ বছরের এক যাবতীয় মেয়ে তার কি করে হার্ট অ্যাটাক হয়ে মৃত্যু হতে পারে ভাবার বিষয়?
এই পুলিশরা এর আগেও অনেক মেয়ের সঙ্গে এরকম খারাপ ব্যবহার করেছে তাদেরকে মারধর করেছে হিজাব না পড়ার অভিযোগে। কিন্তু তখন এত বিক্ষোভ দেখা দেয়নি কিন্তু মাশা আমিনীর মৃত্যুর পর হিজাব বিরোধী বিক্ষোভটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
ইরানে বাধ্যতামূলক হিজাবের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ২০১৭ সালে শুরু হয়েছিল। কিন্তু মাথা আমিনীর মৃত্যুর পর এই বিক্ষোভ আগুনের মতো পুরো ইরানে ছড়িয়ে পড়ে।
তাঁর জানাজার পর ইরানের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
কুর্দিস্তান প্রদেশের সাক্কেজ, সানন্দাজ, দিভান্দার্রেহ, বানেহ ও বিজার শহরে বিক্ষোভ শুরু হয় এবং পরে ইরানের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে।
যদি আমরা ভারতে দেখি এরকমই এক ঘটনা কর্ণাটকে হিজাবের বিরুদ্ধে ছাত্ররা বিক্ষোভ করছে তারা হিজাব পড়তে চাইছে এবং ইরানের মহিলারা হিজাব পড়তে চাচ্ছে না এই দুই দেশের সমস্যা আলাদা হলেও এর একটি সমাধান যে মহিলা যা পড়তে চাই সে সেই পুরো জিনিস পরিধান করতে পারে তাকে জোর করে কোন জিনিস অপরিহার্য করা সরকারের উচিত হবে না।