গণতন্ত্র দিবসে সংবিধানের নামে সংখ্যালঘুর উদ্দেশ্যে

দেশের সবচেয়ে বিতর্কিত স্থান অযোধ্যায় ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ভেঙে নতুন রাম লাল্লা জন্মভূমি মন্দির নির্মাণ এবং গত ২২ জানুয়ারি তা উদঘাটন করা হয়। সত্য ও নম্রতার প্রতীক রাম নিয়ে কোনো কথা নেই, তাঁর মন্দির নিয়েও নেই। সব কিছু উপেক্ষা করে সকল দেশবাসী সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে নিয়েছে। 

   কিন্তু অপ্রত্যাশিত কথা ছিল স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে ধর্ম নিয়ে নতুন রাজনীতির খেলা। বিশ্বজুড়ে ধর্মনিরপেক্ষতার যে প্রতীকে ভারত পরিচিত তা পাতার তাসের মত মনে হচ্ছে ঝরে পড়ে যাচ্ছে। দেশের জাতীয়তাবাদ যে এবার ধর্মের নামে গঠিত হচ্ছে। চার দিন পরেই প্রজাতন্ত্র দিবস। সরকার বিশেষ ধর্মের নয়; নাগরিক মাধ্যমে সংবিধানের। উক্ত দিবসের উপলক্ষে এর বাস্তবতা মূল্যায়ন করা যাক। সংবিধানের অন্যান্য দিক ইচ্ছাকৃত উপেক্ষা করে, এখানে শুধুমাত্র সংখ্যালঘু অধিকার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। 

সংখ্যালঘু অধিকার

ভারত বিশ্বের এক অনন্য বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশ। বিভিন্ন জাতি ভাষা সংস্কৃতি ও সভ্যতার প্রাণিস্থান এই দেশে। উপনিবেশিক শক্তি ব্রিটিশের হাত থেকে স্বাধীনতার পর দেশ পরিচালনার সংবিধান এই বৈচিত্র দৃষ্টিকোণে রেখে গড়ে ওঠে। সংখ্যালঘু সংরক্ষণ এবং তাদের পর্যাপ্ত অধিকার প্রদানকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় যেহেতু সংবিধান পিতা ডঃ আম্বেদকার এই সংখ্যালঘু শ্রেণী থেকেই। 

   সংখ্যালঘুদের জন্য সংবিধানে প্রদত্ত মৌলিক অধিকারের অনেক বিধান রয়েছে। যেমন

   অনুচ্ছেদ 15 (1) এবং (2) – ধর্ম, জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ বা জন্মস্থানের ভিত্তিতে নাগরিকদের প্রতি বৈষম্য নিষিদ্ধ। অনুচ্ছেদ 16(1) এবং (2) - রাজ্যের অধীনস্থ যেকোনো অফিসে চাকরি বা নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে নাগরিকদের সুযোগের সমতার অধিকার। অনুচ্ছেদ 25(1) - জনগণের বিবেকের স্বাধীনতা এবং স্বাধীনভাবে ধর্মের প্রচার, অনুশীলন এবং প্রচারের অধিকার - জনশৃঙ্খলা, নৈতিকতা এবং অন্যান্য মৌলিক অধিকারের সাপেক্ষে। অনুচ্ছেদ 28 - শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় নির্দেশ বা ধর্মীয় উপাসনায় উপস্থিত হওয়ার বিষয়ে জনগণের স্বাধীনতা সম্পূর্ণরূপে রক্ষিত। অনুচ্ছেদ 30(1) – সকল ধর্মীয় ও ভাষাগত সংখ্যালঘুদের তাদের পছন্দের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার অধিকার। অনুচ্ছেদ 30(2) – রাজ্যের কাছ থেকে সাহায্য পাওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য থেকে সংখ্যালঘু-পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা

   এসব ছাড়া, একই উদ্দেশ্য সামনে রেখে সময় সময়ে বিভিন্ন সংসদীয় আইন এবং সাংবিধানিক অঙ্গ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। 

অধিকার লঙ্ঘন 

বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র সংবিধান দেশে সমস্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে দ্ব্যর্থহীনভাবে মর্যাদাপূর্ণ অধিকার প্রদান করে, কিন্তু শাসন কর্তৃপক্ষের রাজনৈতিকভাবে অনুপ্রাণিত ধর্মীয়তা দেশের সুন্দর ভাবমূর্তি নষ্ট করতে দেখা যাচ্ছে।  21শে অক্টোবর, 2022-এ প্রকাশিত হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে দেশের দেশে ক্রমবর্ধমান সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদী মনোভাব ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘু, দলিত এবং উপজাতি সম্প্রদায়কে, যারা সবচেয়ে প্রান্তিক, বৈষম্য ও সহিংসতার ঝুঁকিতে ফেলেছে।’

   অনুরূপ একটি প্রতিবেদন - “জাতীয় সরকার এমন নীতি গ্রহণ করেছে যা বৈষম্যমূলক, স্বাধীন প্রতিষ্ঠান এবং বিচার ব্যবস্থায় পক্ষপাত ঘটাচ্ছে।  নিরাপত্তা বাহিনী কঠোর আইনের অধীনে বানোয়াট অভিযোগে মুসলমানদের গ্রেফতার করে, এবং সংক্ষিপ্ত শাস্তি হিসাবে আইনী অনুমোদন ছাড়াই মুসলমানদের বাড়িঘর এবং সম্পত্তি গুঁড়িয়ে দিয়েছে।”

   এই মূল্যায়ন শুধুমাত্র একটি দৃষ্টিকোণ দিয়ে ছিল। শিক্ষা, ধর্ম, অর্থনীতি, রাজনীতি ইত্যাদির দিক দিয়েও সংখ্যালঘু শ্রেণী বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন। এই পরিস্থিতি দেশে বহুত্ববাদী বৈচিত্র্য এবং সংখ্যালঘু অধিকারের সৌন্দর্য রক্ষার দিকে সম্মিলিত গ্রহণের হাঁক দেয়। 

সমবেদনা

যা হবার তা ছিলই - কখনও নিরাশ নয়; বরং ন্যায়ের নিমিত্তে আইন অনুসারে সংগ্রামী হওয়া চাই।  ভবিষ্যৎ রেখা নিঃসন্দেহে বিধাতার লেখা অতিক্রম করবে না। এইসব প্রতিকূলতার মধ্যেও আশা, শান্তি, সংকল্প এবং সংগ্রাম ছাড়া অন্য কিছুর অন্বেষণী হওয়া উচিত নয়। জয়ী হবে সত্যের সংবিধান। 

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter