ইসলামের দৃষ্টিতে নববর্ষ
আমরা সবাই জানি যে, খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ সালে জুলিয়াস সিজার সর্বপ্রথম ইংরেজি নববর্ষ উৎসবের প্রচলন করেন। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের পর প্রথম জানুয়ারী সম্পূর্ণ ভাবে নববর্ষের দিন হিসেবে নির্দিষ্ট হয় ১৫৮২ সালে। ধীরে ধীরে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এই উৎসব পালন করা হয়। সাধারনভাবে প্রাচীন যুগে অনেক দেশেই এই নববর্ষকে ভিন্ন তারিখে পালন করা হত। যদি আমরা ইতিহাসের পাতা খুলে দেখি তাহলে দেখা যাবে যে, মেসোপটোমিয়ায় আকিতু শুরু হতো মহাবিষুবের দিনে অর্থাৎ ২০ মার্চ। আসিরিয়ায় শুরু হতো জলবিষুবের দিনে, ২১সেপ্টেম্বার। মিসর, ফিনিসিয়া আর পারসিকদের নতুন বছর শুরু হতো ২১ সেপ্টেম্বার। গ্রিকদের নববর্ষ শুরু হতো খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দী পর্যন্ত ২১ডিসেম্বার। মধ্যযুগে উইরপের বেশির ভাগ দেশে নববর্ষ শুরু হতো ২৫ মার্চ। পহেলা জানুয়ারি পাকাভাবে নববর্ষের দিন হিসেবে নির্দিষ্ট হয় ১৫৮২ সালে। আসতে আসতে সারা বিশ্বে এই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নববর্ষ পালন করা হচ্ছ্যে।
আমরা যদি বর্তমানে নববর্ষ নামে যে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ও নগ্নতার প্রদর্শন দেখি, তবে কি একজন মুমিনের কাছে সেটা শোভা পায়? বছরের নববর্ষে যখন এক মুমিন উপস্থিত হয়, তখন তার অনুভূতি এ ধরনের হওয়া দরকার, যে দিনগুলো তার শেষ হয়ে গেল, তা তো তার জিবনেরই একটি মল্যবান অংশ। একটি বছর শেষ হওয়ার সরল অর্থ, তার জীবন সংকীর্ণ হয়ে এলো। তার জিবনের দালান থেকে ৩৬৫ দিনের ৩৬৫পাথর খসে পরলো। এখন আনন্দ- উল্লাসের সমায় নয়। বরং এই সমায়টা হিসাব নিকাশের সমায়। সে সমায় একটি মুমিনের ভেজায় আস্তেবে যে একটি বছর তো আমি শেষ করেছি, কিন্তু যে মহান উদ্দেশেয় মহান আল্লাহ তাবারাক ওয়াতালা আমাকে এই পৃথিবীতে পাঠালেন। সে পথে কতটুকু অগ্রসর হয়েছি? সে পথে আমার আমার কতটুকু নেকি আর পাপ হয়েছে। এক মুমিন বান্দা ভাবতে থাকে।
আমাদের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা: ), একাবার মিম্বারে দাঁড়িয়ে তার খুতবাই এক উক্তি দিয়েছিলেন যা ইমাম তিরমিজি (রা:), ইবনে আবি শেইবা এরা দুজন তাদের বয়ে উল্লেক করেন। হযরত উমার (রাঃ) বলেছিলেন ,হিসাব চাওয়ার আগে নেযেরা হিসাব করে নাও । তুমার কাজ মাপ করার আগেই নেজেই নিজের কাজের পরিমাপ করে নাও। এই হাদিস দারা বুছাগেল যে, যখন নতুন বছর আসবে তখন একটি আল্লাহর বান্দা তার আমললের হিসাব নিকাশ শুরু করে দায়। যখন নতুন বছর আসিত তখন সাহাবা (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) নতুন বছরের জন্য একটি দুআ পাঠ করত। আর সে দুয়া হল : হে আল্লাহ, আমাদের উপর এই বছরকে নিরাপত্তা, ঈমান, নিরাপত্তা, ইসলাম, শয়তান থেকে রক্ষা ও আপনার সন্তুষ্টি সহকারে নিয়ে এসো। (বাঘাওয়ির মু'জামুস সাহাবাহ, এবং তাবারানির আল-মু'জামুল আওসাত, হাদিস: ৬২৩৭।
আমরা অনেকে ধ্যান না করলেও, একটি উৎসব সাধারন ভাবে একটি ধর্মীও অনুযায়ী পালন করা হয়। উৎসবের উপক্ষগুলো খোঁজ করলে পাওয়া যাবে। উৎসব পালনকারী জাতির অনুভূতি , সংস্কার ও ধ্যান-ধারণার ছোঁয়া। যেমন, খ্রিস্টানদের বড়দিন তাদের বিশ্বাস মতে স্রষ্টার পুত্রের জন্মদিন। ইহুদিদের উৎসব রোজ হাশানা। ওল্ড টেস্টামেন্ট দ্বারা বর্ণিত ইহুদিদের ধর্মীয় পবিত্র দিন সাবাত হিসেবে পালিত হয়। এমনিভাবে সব ধর্মীয় এর উৎসব উপলব্ধি আছে। আর এ জন্যই প্রিয় নাবি হযরত মুহাম্মাদ ﷺ মুসলিম জাতির উৎসব নির্ধারণ করে দিয়েছেন। অন্যদের উৎসব এ অনুপ্রবেশের সুযোগ নেই। আমাদের রাসুল (সা) ইরশাদ করেন, প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ঈদ (উৎসব) রয়েছে , আর এটা ( ঈদুল ফিতর আর ঈদুল আযহা ) আমাদের মুসলিম জাতির ঈদ। (বুখারি ও মুসলিম শরীফ) এই হাদিস থেকে মুসলিম ও অমুসলিম জাতির উৎসবের মৌলিক একটি পার্থক্য বোছায়। আর অমুসলিম জাতির উৎসবের দীনগুলো হচ্ছে তাদের আচরণের দীন। এ দীনে তারা সব কানুনের বাঁধ ভেঙে লজ্জাজনক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। আর এই কর্মকাণ্ডের মূল কাজের রূপ হচ্ছে মদ্যপান ও খারাপ আচরণ। অপর দিকে মুসলিম জাতির উৎসব হচ্ছে ইবাদতের সঙ্গে সরাসরি লিপ্ত। গভীরভাবে ভাবতে হবে। ইসলাম কেবল কিছু আচার-অনুষ্ঠানিকতার নাম নয়। বরং ইসলাম মানুষের পুরো জীবনকে আল্লাহর ইবাদত করার জন্য নির্ধারিত কোরে দিয়েছে। সে জন্য মুসলিম জাতির আনন্দ- উৎসব আল্লাহর ঘৃণা আচরণে নিহিত নয়। বরং আল্লাহর নির্দেশ পালন ও নিষেধ থেকে বিরত থাকার মধ্যেই নিহিত। তাই তাদের প্রতিটি কাজের খাজে খাঁজে জড়িয়ে থাকবে তাদের ধর্মীয় শরীয়ত তাদের ঈমান আখিরাতের প্রতি কঠিন বিশ্বাস আল্লাহর প্রতি ভয় ও ভালোবাসা।
ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে ইংরেজি নববর্ষ ও যাবতীয় অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কারণ , এতে কয়েক ধরনের ইসলামবিরোধী কর্ম রয়েছে। এক শিরকপূরন অনুষ্ঠান ও সংগীত। দুই কুকর্ম আর অশ্লীতা অনুষ্ঠান। তিন গান ও বাদ্যযন্ত্রের অনুষ্ঠান। চার সময় অপচয়কারী অনর্থক বাজে কথা ও কাজ। এই সব কর্ম আমাদের ইসলামী শরিওয়াত থেকে আমাদের কে অব্যাহত করে দেয়। এখানে রাসূল ﷺ- এর ১ম বিখ্যাত হাদীস রয়েছে, "যে ব্যক্তি কোন জাতিকে অনুকরণ করে, সে তাদের মধ্য থেকে আসবে" (আবু দাউদ)। আমরা এই হাদিস দারা অনুকরণ করতে পারলাম যে আমরা যদি ইসলামিক অনুযায়ী উৎসব না মানায় তাহলে আমরা ইসলাম থকে ছাঁটায় খেয়ে যাব।
হযরত আনাস বিন মালিক (রাঃ) রিওয়ায়াত করেন আরেকটি হাদিসে, নবী (সা:) এমন লোকদের দলকে উত্তর দিয়েছিলেন যারা দুটি উৎসব পালন করছিল যা প্রাক-ইসলামী সময়ে লোকেরা উদযাপন করত। "আল্লাহ তা'আলা আপনার জন্য তাদের পরিবর্তে দু'দুটি দিন দিয়েছেন, যা উত্তম, ঈদুল ফিতর ও 'ঈদুল আযহা'র দিন। এই বিশেষ হাদিসটি প্রথম হাদিসে উত্থাপিত বিষয়গুলিকে সমর্থন করে এবং শক্তিশালী করে। এই হাদিসে নবী মুহাম্মাদ সা: সরলভাবে মুসলমানদের নির্দেশ দিয়েছেন যে, সর্বশর্বক্তিমান আল্লাহ তায়ালা অন্য ধর্মের উৎসবকে দুই ঈদের আদলে মুসলমানদের দুটি উৎসব দিয়ে প্রতিস্থাপিত করেছেন।
সারমর্ম:
এখন গ্রেগরিয়ান এবং ইসলামী ক্যালেন্ডার, গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের স্থিতি এবং অন্যদের অনুকরণ করার বিষয়ে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে পার্থক্য পড়া এবং বোঝার পরে, যে কোনও ধরণের প্রত্যক্ষ বা জড়িত থাকা বা মজা, প্রেম এবং উপভোগের নামে অন্য ধর্মের কোনও উৎসব উদযাপন করা সম্পূর্ণ হারাম।