পাপ-আচার জয়োল্লাসের সতর্কবার্তা
প্রতি পাঁচ বছর পর পর রাজ্যসভার ভোট হয়। ঠিক তেমনই ২০২১শে-ও হল পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যসভার ভোট। আপনারা এই ভোট সম্পর্কে অনেক কিছুই জানেন। তাই এই ভোট সম্পর্কে বিস্তারিত বলার কিছু নেই। তবুও আমি এর সম্বন্ধে কয়েকটা কথা উল্লেখ করতে চাই। এই ভোটের ফলাফল বেরিয়েছিল মে মাসের ২ তারিখে অর্থাৎ আরবি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী রমজান মাসের ১৯ তারিখ। মানে ২০২১-এ রাজ্যসভার ভোটের ফলাফল হয়েছিল পবিত্র রমজান মাসে। আমরা সকলেই জানি যে রমজান মাসে শয়তানকে শিকল বন্ধ করা হয়। তাছাড়া এই রমজান মাসের ফজিলত অপরিসীম। তা জানা সত্ত্বেও আমরা এই মাসটিতে রোজা অবস্থায় পার্টির জয়ের ফলে নানা রকম অশ্লীল কাজ করেছি। যেমন হোলি খেলা, পটকা ফোটা, গান বাজানো, ডান্স করা ইত্যাদি। কিন্তু ইসলাম কি এই কাজগুলো সমর্থন করে? অতএব আসুন জেনে নিই এর সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কী?
আমি প্রথমেই বলেছি যে, এই ভোটের ফলাফল হয়েছিল পবিত্র রমজান মাসে। অর্থাৎ অনেকেই এই দিনে রোজা রেখেছিল। কিন্তু তাদের কি রোজা অবস্থায় এই অশ্লীল কাজ গুলো করা ঠিক হয়েছিল? তাদের কি রোজা রেখে কিছু লাভ হয়েছে? এই সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: "যে ব্যাক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল বর্জন করেনি, তার পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই" ( বুখারী)। এছাড়াও অন্য একটি হাদিসে বর্ণিত রয়েছে: যে ব্যক্তি জামায়াত বা সংগঠন ত্যাগ করে এক বিঘত পরিমাণ দূরে সরে গেল সে যেন নিজের কাঁধ থেকে ইসলামের রসি বা বাঁধন খুলে ফেলল, যতক্ষণ না সে ফিরে আসবে। আর যে ব্যক্তি জাহেলিয়াতের নিয়ম-নীতির দিকে লোকেদেরকে আহ্বান জানাবে সে জাহান্নামের জ্বালানি হবে, যদিও সে রোজা রাখে, নামাজ পড়ে এবং নিজেকে মুসলমান বলে দাবি করে।( মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি)
আমরা এই হাদীস দুইটি থেকে বুঝতে পারলাম যে যদি কেউ রোজা অবস্থায় অশ্লীল কাজ করে কিংবা জাহিলিয়াতের নিয়ম-নীতির দিকে আহ্বান করে তাহলে তার রোজা রেখে কিছু লাভ হবে না এবং সে হবে জাহান্নামের জ্বালানি।
এছাড়া এই দিনে অনেকেই আতশবাজি ও পটকাবাজি করেছে। যেটা একটা ব্যাপক আতঙ্ক ও ভীতি সৃষ্টি করে এবং জনসাধারণের জন্য খুব কষ্টদায়ক। অথচ আল্লাহ তা'আলা বলেন: যা বিনা অপরাধে মোমিন পুরুষ ও মোমিন নারীদের কষ্ট দেই তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে ( সূরা আহযাব-৫৮, সহীহ বুখারী ২৯০৫)।
আবার এই দিনে অনেকে গান বাজিয়ে ডান্স করেছে কিন্তু আল্লাহ তাআলা ও তিনার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গান বাজনা সম্পূর্ণ হারাম ও অবৈধ বলে ঘোষণা করেছেন ( সূরা লোকমান-৬, বুখারী-৫৫৯০,৬৮৯১)। এই দিনে অনেকেই প্রচুর পরিমাণে অর্থ অইসলামিক ও হারাম কাজে ব্যয় করেছে, যেটা অপচয় ও অপব্যয়ে শামিল। ইসলাম অপব্যয়কারীকে শয়তানের ভাই হিসাবে আখ্যায়িত করেছে (সূরা বানী ইস্রাইল২৬-২৭)।
ইলেকশনে কোন দলের জয়ের ফলে আমরা যে কাজগুলি করে থাকি সেই কাজ গুলি হল বেধর্মীদের কাজ। এই দিনে হোলি খেলা, আতশবাজি, পটকা বাজি, ডিজে বাজানো, ডান্স করা, নেশা সেবন সহ বিভিন্ন ধরনের অপসংস্কৃতি কার্যাবলী করা হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করল সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত ( আহমদ, আবু দাউদ ,মিশকাত -৪৩৪৭)।
এছাড়াও এই ভোটের ফলাফল হয়েছিল করোনা কালে। যার ফলে আমাদের উচিত ছিল যে আমরা জয়ের উৎসব পালন করার জন্য একত্রিত না হয়। তবুও আমরা করোনার নিয়ম নীতি কে অমান্য করে একত্রিত হয়েছিলাম। এছাড়াও আমরা যে পটকাবাজি করেছিলাম সেটা একটা শব্দদূষনেরও কারণ।
আমাদের প্রয়োজন আমরা এরকম অশ্লীল কাজ না করি। সেটা রমজান মাস হোক কিংবা
অন্য মাস বা আবার সেটা করোনাকালীন হোক কিংবা সাধারণ কালে। কেননা আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজিদে বলেছেন: তোমরা অশ্লীলতার ধারে কাছেও যেও না, সেটা গোপনে হোক বা প্রকাশ্যে ( সূরা আনআম-১৫১)। আর আমরা যারা এই কাজগুলো করেছি তারা যেন আল্লাহর কাছে তাওবা করে নিই। পরিশেষে, আমি আল্লাহর কাছে এটাই দোয়া করি যে, আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের সমস্ত গুনাহ কে মাফ করে দেন এবং অশ্লীল কাজ থেকে দূরে থাকার তৌফিক দান করেন। আমিন।