প্রবাহমান নদী স্রোতের মত এমএলএফ  নতুন এক সাহিত্য সংস্কৃতি উন্মোচন করে

মালাবার - ইতিহাস থেকে সমুদ্রের পথে ভারত প্রবেশের দ্বার এবং বহু সংস্কৃতি, কলা-সাহিত্য, বাবস্য-বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল। জনমিলন এবং ভাষার সঙ্গমে সমদ্র সৈকত ধরে গড়ে উঠেছে নতুন অভিন্ন বৈচিত্র্য। এইসব সভ্যতাগত বৈশিষ্ট্য সমূহকে এক নতুন উপায়ে বৃহত্তর জনসংখ্যার সামনে তুলে ধরে সেজে উঠেছে সমুদ্র প্রায়-সমতলে অবস্থিত সাহিত্য শহর কালিকটের উপকূলে মালাবার লিটারেচার ফেস্টিভাল (এমএলএফ) বা মালাবার সাহিত্য উৎসব।

রাজ্যের উদীয়মান প্রকাশনী বুক প্লাস দ্বারা সংগঠিত সাহিত্য উৎসবটি ৩০ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত চার দিন ব্যাপী কালিকট সমুদ্র সৈকতে উদযাপিত হয়। অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক লেখক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কর্মী এবং অন্যান্য বুদ্ধিজীবী উত্সবে অংশগ্রহণ করেন। এমনকি এই বছর উৎসবটির প্রথম সংস্করণেও অংশগ্রহণকারী এবং সাহিত্যপ্রেমী শ্রোতাদের সংখ্যা সত্যিই অপ্রত্যাশিত। তাছাড়া, সেটা তো হবারই ছিল - কালিকট যে এখন সাহিত্যের শহর।  

সম্প্রতি মালাপ্পুরম জেলায় অবস্থিত কালিকট শহরটি ২০০৪ সালে চালু হওয়া ইউনেস্কো-এর  ক্রিয়েটিভ সিটি নেটওয়ার্ক নামক প্রোগ্রামের অধীনে সিটি অফ লিটারেচার বা সাহিত্যের শহর হিসেবে আখ্যায়িত হয়।  দেশের আরেকটি শহর মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়র সঙ্গীতের শহর পদবী লাভ করে। এই মর্যাদাপূর্ণ আন্তরজাতিক খেতাব অর্জনের সাফল্যের পেছনে রয়েছে শহরে গতিশীল বিভিন্ন সাহিত্য কর্মকাণ্ড। বর্তমান সাহিত্য মেলা এই শহরের সাহিত্য ও শিক্ষার ঐতিহ্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। 

কেরালা রাজ্যে প্রভাবশালী ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লীগের সভাপতি সৈয়দ সাদিক আলী শিহাব থাঙ্গাল উৎসবের উদ্বোধন করেন। ৭০টিরও অধিক বিষয়ভিত্তিক অনুষ্ঠান যথাক্রমে কাডল (সমুদ্র), তিরা (ঢেও) এবং তুরা (সৈকত) তিনটি ভেনুতে চলতে থাকে। সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানের প্রধান থিম ছিল প্রবাহমান নদী যার স্রোতে মিলেলিত হয়ে অব্যাহতভাবে বয়ে যেতে থাকে কলা, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও সভ্যতার প্রবাহ। এই এমএলএফ মালাবারের ভাষা, সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতির জন্য একটি অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়ায়। 

মালাবারের দৃষ্টিকোণ থেকে মালায়ালাম সাহিত্যের পুনঃপঠন এই উৎসবের প্রধান লক্ষ্য।  মালাবার সম্প্রদায়, তাদের জীবন, রাজনীতি, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ভাষা, যাত্রা এবং গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করে বিভিন্ন সেশন অনুষ্ঠিত হয়।  বই আলোচনা, সাক্ষাৎকার এবং আলোচনা-বিতর্ক ছাড়াও, উৎসবে চলচ্চিত্র প্রদর্শন, সঙ্গীত আবৃত্তি এবং শিল্প পরিবেশনাও করা হয়। মাপিলা, দলিত এবং আদিবাসী জীবন বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ এবং কর্মীদের আলোচনায় বিশেষ স্থান পায় যা মূলধারার কেরালার ইতিহাসে অস্পষ্ট থেকে যায়।

মালাবার সংস্কৃতি এবং শিল্পের বৈচিত্র্য উদযাপন করে, উৎসবটি সংখ্যালঘু, দলিত এবং আদিবাসীদের প্রতিনিধিত্ব করে। এছাড়াও, রাজনীতি, গল্প উপন্যাস, অনুবাদ সাহিত্য, জনপ্রিয় সংস্কৃতি, মাপিলাপট, আরবি-মালায়ালম, স্বাস্থ্য, খাদ্য সংস্কৃতি, মিডিয়া, চলচ্চিত্র প্রকাশনা, নাটক, পর্যটন, ফুটবল, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই, লোককাহিনী, স্মৃতি, আঞ্চলিক যাত্রা, সাংস্কৃতিক, ঐতিহ্য  ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় প্রতিফলিত হয়। তাছাড়া, লাক্ষাদ্বীপ, কায়ালপত্তনম, আন্দামান, হিজাজ এবং আফ্রিকার মতো জায়গাগুলির সাথে মালাবারের ঐতিহাসিক সংযোগ নিয়ে আলোচনার জন্য বিশেষ সেশনও হয়।  

আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উধ্যাপক নিশাদ জাইদি, বিখ্যাত লেখক টিডি রামকৃষ্ণন, আসামের কবি হাফিজ আহমেদ প্রমুখ ব্যাক্তিত্ব বিশেষ বিশেষ সেশনে উপস্থিত ছিলেন। বিভিন্ন সংস্থা এবং ব্যবসায়িক গোষ্ঠীও এমএলএফ-এর সাথে সহযোগিতায় বেশ ভূমিকা পালন করে।  মালাবার সাহিত্য উৎসবের বিশেষ আকর্ষণ ওয়ারসি ব্রাদার্স পরিবেশিত কাওয়ালি রাত্রি ছিল যা বেশ কয়েক অমালয়ালাম ভাষী শ্রোতাদেরও আকৃষ্ট করে। প্রবাহমান নদীর স্রোতের মত এমএলএফ মালাবার পরিবেশে নতুন এক সাহিত্য সংস্কৃতির আচারানুষ্ঠান উন্মোচন করে। 

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter