ইসলামোফোবিয়া: নতুন ভারতের মাথা ব্যাথা
সালটা ২০০২, ধর্মনিরপেক্ষতা ভারতের এক কালো সময়, যখন ঘটে এক মর্ণান্তিক ভয়াবহ গনহত্যা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজ রাজ্য গুজরাতের মূখ্যমন্ত্রী থাকা সময়কালিন বিশেষত মুসলিমদের বেছে বেছে হত্যা করার এক বেদনায়ক ঘটনা। নিকষ কালো অন্ধকারের মতো সংকটে তলিয়ে যাচ্ছে বর্তমান ভারত। আদর্শিক, আগ্রাসনকেন্দ্রিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক নানান সংকটে জর্জরিত ভারতবাসিরা। এখনও আধুনিক মতাদর্শ, উত্তর আধুনিক সব চিন্তাধারা, জয়নাবাদ, জেন্ডার ইনজাস্টিসের সয়লাভে ভেঙে পড়ার উপক্রম মানবতার ধৈর্যের বাঁধ। আধুনিকতার ছদ্মবেশে আদিম অজ্ঞতার প্রত্যাবর্তন হচ্ছে। ধর্ম, দর্শন, চিন্তা-চেতনার জগতেও আধুনিকতার মুখোশ পরে স্বনহিমায় আবার জ্বলজ্বল করছে আদি গ্রিক ও রোমান জাহেলিয়াত।
ইউরোপে ইসলামী দেশগুলি থেকে অভিবাসনের সমস্যা এবং বহুসংস্কৃতিবাদের নীতির পরে এটি পরবর্তী দিনের সম্ভাবনা ছিল যা সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য রাষ্ট্রীয় নীতি হিসাবে সামাজিক গোটাইজেশন প্রতিষ্ঠা করেছিল। ইউরোপ এখন এই নীতির ব্যর্থতা উপলব্ধি করছে কারণ এটি সহাবস্থানের পরিবর্তে কেবল আরও বিচ্ছিন্নতা এবং সহিংসতার দিকে পরিচালিত করেছে। রাজনৈতিক দার্শনিক স্লাভোজ জিজেক এটিকে দূরত্ব হিসাবে পার্থক্য সমস্যা হিসাবে উল্লেখ করেছেন। রাষ্ট্রগুলি সম্প্রদায়ের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব তৈরি করে পার্থক্য উদযাপন করে, যার ফলে গোপন বর্ণবাদ এবং জেনোফোবিক সহিংসতা ঘটে, যা জার্মানিতে নব্য-নাৎসিদের সাম্প্রতিক পুনরুত্থানে প্রতিফলিত হয়।
ডিফল্টরূপে, এটি আরও বোঝায় যে সংঘটিত সহিংসতা এলোমেলো এবং বিশেষত মুসলমানদের ভয় এবং দানবকরণ ব্যতীত অন্য কোনও দৃশ্যমান প্যাটার্ন নেই। ইসলামোফোবিয়া এমন একটি বিভাগ যা ইউরোপের জন্য প্রাসঙ্গিক, এবং বিশেষত উত্তর আমেরিকার জন্য, যেখানে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা মুসলমানদের ফোবিয়া থেকে জন্মগ্রহণ করে যাদের একটি অজানা পরিবর্তনশীল হিসাবে দেখা হয়, কেবল মাত্র এই ধারণা ছাড়া যে তারা আক্রমণাত্মক এবং সহিংসতার প্রবণ।
ইসলামোফোবিয়ার মতো ক্যাচ-অল ক্যাটাগরির বাইরে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতার প্রকৃতির প্রশ্নটি পুনরায় তৈরি করার আসন্ন প্রয়োজন রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতার এই ধরনের সংস্কৃতিবাদী নির্মাণ মুসলমানদের বিরুদ্ধে বৈষম্যের অসম ও অন্যায্য পদ্ধতির সামাজিক প্রশ্নকে স্থানচ্যুত করে। সহিংসতার প্রকৃতি এবং এটিকে বৈধতা দেওয়ার জন্য স্থানীয়ভাবে নির্মিত মাইক্রো-আখ্যানগুলি বিচ্ছিন্ন করার প্রয়োজন রয়েছে। দূর থেকে দেখলেও সব কিছু একই রকম দেখায়।
দীপা কুমার তার “ইসলামোফোবিয়া এন্ড দ্য পলিটিক্স অব এম্পায়ার” গ্রন্থে লিখছেন, “৯/১১ ঘটনার ততক্ষনাৎ, যে সমস্ত আমেরিকানরা ইসলামের দিকে আগ্রহী ছিলনা তারাও মুসলিমদের পবিত্র গ্রন্থের দিকে ফিরে আসে, এটা জানার জন্য যে এই আক্রমনটি কেন হল? তার বিপরীতে কেউ কিন্তু বাইবেল বা, ওল্ড টেস্টমেন্ট বা নিউ টেস্টমেন্ট খুলে দেখেনি যে কেন তিমোথি ম্যাকবেঘ ওকলাহোমা শহরের ফেডেরাল বিল্ডিংয়ে বম মেরেছিল?”
তবুও মুসলিম বিরোধী সহিংসতার স্রোত ইঙ্গিত দেয় যে এই গল্পগুলির সত্যতা খুব কমই গুরুত্বপূর্ণ; সাধারণ মানুষ দৃঢ় মিথ্যাচারের দিকে ঝুঁকে পড়বে। তারা ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে, পর্দার অন্তরাল থেকে ইসলামোফোবিয়া ছড়াতে ব্যাতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। আর এই জন্য তারা মিলিয়ন বিলিয়ন ডলারও ব্যায় করেছে। “Centre for American Progress” এর একটি রিপোর্ট বলছে, ২০০১ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত ইসলামোফোবিয়া ছড়াতে নিয়োজিত দলগুলো প্রায় ৪২.৬ মিলিয়ন ডলারের বেশি অনুদান পেয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে সে অনুদানের পরিমান আরও বেড়ে গেছে। ২০১৬ সালে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের “Berkery Centre for Race and Gender” ও “CAIR” একটি যৌথ গবেশনায় দেখা যায়, ২০০৮ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত ইসলামোফোবিয়া ছড়াতে নিয়োজিত দলগুলো অনুদান পেয়েছে ২০৫ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের ইসলামোফোবিয়া নেটওয়ার্কের অন্তঃকেন্দ্রে রয়েছে প্রায় ৩৬ টি গোষ্টি, যাদের মূল লক্ষ্যই হল ইসলামোফোবিয়া ছড়ানো।
ইসলামকে চরমপন্থী ও সন্ত্রাসাবাদের ধর্ম হিসেবে তুতে ধরা হচ্ছে। ইসলামকে ধংস করার বিশ্বব্যাপি যে ষড়যন্ত্র ও নাশকতার ছক গড়ে উঠেছে, তার মধ্যে ভারত অন্যতম। ইসলামোফোবিয়া আজ ভারতের মতো বিপজ্জনকভাবে বিশ্বের আর কোথাও প্রকাশ পায়নি। সুপরিচিত শিক্ষাবিদ এবং ইসলামোফোবিয়া বিশেষজ্ঞ খালেদ বেইদুন স্পষ্টভাবে ভারতকে বিশ্বব্যাপী ইসলামোফোবিয়ার কেন্দ্রস্থল হিসাবে বর্ণনা করেছেন। এটি কেবল ইসলামোফিক আক্রমণের ফ্রিকোয়েন্সির কারণে নয় - যা এখন একটি দৈনন্দিন ঘটনা বা শয়তান ভাষা শোনার সময় অশ্লীলতার গভীরতা বা এমনকি মুসলমানদের বিরুদ্ধে সংঘটিত সহিংসতার মাত্রাও। এর বাইরে, ভারতে ইসলামোফোবিয়ার গুরুত্ব দ্বিগুণ: প্রথমত, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ) দ্বারা নথিভুক্ত দেশের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক অফিসগুলিতে ইসলামোফোবিয়ার জন্য নির্লজ্জ প্রাতিষ্ঠানিক সমর্থন এবং দ্বিতীয়ত, ভারতীয় মুসলমানদের অর্থপূর্ণ সুরক্ষার জন্য বিচার বিভাগ, পুলিশ বা অন্য কোনও আইনি কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করার কোনও উপায় নেই।
ভারতে ইসলামোফোবিয়া বহুমাত্রিক, বিস্তৃত, গভীরভাবে শিকড়যুক্ত এবং বিপজ্জনকভাবে উত্থাপিত, বিশেষত অর্থনৈতিকভাবে বঞ্চিত বা রাজনৈতিকভাবে দ্বন্দ্বপূর্ণ অঞ্চলে প্রান্তিক মুসলিম জনগোষ্ঠীকে প্রভাবিত করে। ভারতে মুসলমানদের বর্ণবাদী প্রথার সাথে লড়াই করতে হয়, তাদের দেশপ্রেম প্রমাণ করতে হয়, ক্রমবর্ধমান শারীরিক ও প্রতীকী সহিংসতার মুখোমুখি হতে হয় এবং এখনও সুপ্ত পাকিস্তানি কট্টর বা সম্ভাব্য অ-নাগরিক অভিবাসী বা শরণার্থী হিসাবে দেখা হয়। ভারতে এবং ভারতের নামে কাশ্মীরে মুসলমানরা যা ভোগ করছে তা হলো অধিকারের চরম লঙ্ঘন এবং সহিংসতা ত্বরান্বিত করা; নজরদারি এবং বৃহৎ আকারের ডেটা রেজিস্টারের আকারে প্রযুক্তির ব্যবহার, ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর বিধিনিষেধ, সোশ্যাল মিডিয়া ঘৃণা এবং নতুন অ-প্রাণঘাতী ভিড় নিয়ন্ত্রণ শৈলীর অস্ত্র, এবং ডিটেনশন ক্যাম্পগুলির মতো অবকাঠামো বিকাশ বা জমি দখল বা জনতাত্ত্বিক পরিবর্তন সক্ষম করার জন্য আইন প্রণয়নের মাধ্যমে এটি আরও তীব্র তর হয়েছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী পল ব্রাস তার “ফর্মস অব কালেক্টিভ ভায়োলেন্স: দাঙ্গা, গণহত্যা ইন মডার্ন ইন্ডিয়া” বইয়ে উল্লেখ করেছেন যে বেশিরভাগ সাম্প্রদায়িক সহিংসতা এবং দাঙ্গা সংগঠিত এবং সুপরিকল্পিত এবং খুব কমই স্বতঃস্ফূর্ত। গোরক্ষকদের দ্বারা সাম্প্রতিক গণপিটুনির অনেকগুলি গরু অর্থনীতির সাথে যুক্ত ছিল এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ঘটেছিল। তারা এলোমেলো ছিল না বা মুসলমানদের অজানা ভয় থেকে জন্মগ্রহণ করেনি।
প্রতি বছর ভারতে ইসলামোফোবিয়া আরও স্বাভাবিক এবং মূলধারার হয়ে উঠছে। প্রায় ৮০ শতাংশ হিন্দু অধ্যুষিত দেশে কীভাবে এবং কেন মুসলিম এবং ইসলাম ধর্মকে জাতির জন্য হুমকি হিসাবে দেখা হয় তা বোঝার জন্য, সমসাময়িক পুনরুত্থিত সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু জাতীয়তাবাদের একটি রূপের পূর্ববর্তী এবং প্রকাশগুলি বোঝা অত্যাবশ্যক, যা অন্যথায় হিন্দুত্ব নামে পরিচিত। হিন্দুত্ব, বা একটি প্রধান রাজনৈতিক পরিচয় হিসাবে হিন্দুত্বের দাবি একটি বিশুদ্ধ জাতি এবং হিন্দু ভূমির স্থানিক ধারণা তৈরি করতে চায়, যা তার বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ শত্রু বা অন্যদের বিরুদ্ধে সুরক্ষিত করা দরকার। ভারতে হিন্দুত্বপ্রকল্প উপমহাদেশকে ভারত ও পাকিস্তানে বিভক্ত করার মাধ্যমে ঔপনিবেশিক স্বাধীন ভারত গঠনের আগে থেকেই ছিল। এর উৎপত্তি ১৯২৫ সালে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) প্রতিষ্ঠা এবং পরবর্তীকালে ডানপন্থী হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলির একটি পরিবারের সম্প্রসারণের মাধ্যমে পাওয়া যায় যা সম্মিলিতভাবে সংঘ পরিবার নামে পরিচিত। বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট আরএসএস মতাদর্শী নাৎসি জার্মানির প্রশংসক ছিলেন এবং ভারতে জাতিগত ধর্মীয় হিন্দু জাতীয়তাবাদের পক্ষে ছিলেন।
বেশ কয়েকটি ধর্মান্ধ হিন্দু সংগঠন রয়েছে যারা ক্ষমতাসীন দলের পৃষ্ঠপোষকতা ভোগ করে। এর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্র স্বয়ংসেবক সংঘ, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরং দল এবং তাদের দল। তারা বৃহত্তর ভারত অর্থাৎ হিন্দু রাষ্ট্র এর স্বপ্ন লালন করে যার জন্য সবাই সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে মুসলিমদের ভারত থেকে বিতাড়িত করতে হবে। বিজেপির চিন্তাধারা যে আর এস এস (রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ) ও হিন্দুত্বাবাদের চেয়ে আলাদা নয় তা স্বয়ং বিজেপির রাজনিতিবিদদের দ্বারা প্রমানিত। ১৯৯০ এর দশকে আর এস এস থেকে লাল কৃষ্ণ আডবানি ও অটল বিহারি বাজপেয়ীর নেতৃত্বে বিজেপি একটি জাতীয় রাজনৈতিক দল হিসেবে কংরেসের বিরূদ্ধে দাড়াতে সক্ষম হয়। বাজপেয়জী দলের মুখ হয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ঐক্যতার কথা বললে আডবানিজি হিন্দুত্বাবাদের প্রদ্বীপ জালাতে থাকেন। অতঃপর বাজপেয়ীর পরে দলের নেতৃত্ব আডবানিজির হাতে আসলে তিনিও ঐকতার আহ্বান দিতে শুরু করেন, তখনই তৎকালিন গুজরাতের মূখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হিন্দুত্বাবাদের কামান সামলান। ঠিক বর্তমানে যখন প্রধানমন্ত্রী “সবকা সাথ সবকা বিকাস” এর কথা বলছেন, তো হিন্দুত্বাবাদকে সামলে রেখেছেন উত্তর প্রদেশের মূখ্যমন্ত্রী যোগী অদিত্যানাথ। এবং ভোটের সময় কাছিয়ে আসলে এরা ছুটাছুটি করে পীর বাবা, সূফী, মাজার ও মুসলমানদের দরবারে।
২০১৪ সালে মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে ইসলামোফোবিয়া রাষ্ট্রীয় নীতির বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি ২০১৯ সালে স্পষ্ট হয়েছিল, যখন মোদী নেতৃত্বাধীন সরকার ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ এবং ৩৫এ অনুচ্ছেদ বাতিল করে নির্বাসিত হিন্দুদের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য কাশ্মীরে ফিরিয়ে আনার হিন্দু জাতীয়তাবাদী স্বপ্ন অনুসরণ করেছিল। বিবিসি দ্বারা প্রকাশিত দুই পর্বের ডকুমেন্ট্রি “ইন্ডিয়া: দ্যা মোদি কোয়েশ্চনস” এর ভিতরে এটি স্পষ্টরূপে বর্নিত যে কিভাবে নরেন্দ্র মোদি গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়া পর্যন্ত কতগুলি ইসলামবিরোধি কাজ করেছেন। ২০০২ সালের গুজরাত গনহত্যা থেকে শুরু করে মব লিচিঙ্গ, এন আর সি, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, তিন তালাক, দিল্লির সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) দুই উচ্চপদস্থ প্রতিনিধি নুপুর শর্মা এবং নবীন জিন্দাল নবী মুহাম্মদ সম্পর্কে ক্ষমার অযোগ্য মন্তব্য করা, হিজাবের ওপর নিষেদ্ধতা জারি করা, মসজিদ মাদ্রাসাকে সন্ত্রাসাবাদের তকমা দেওয়া, মুসলিমদের বাড়ি ঘরের ওপর বুল্ডোজার দিয়ে আক্রমন করা, মন্দির-মসজিদের এক নতুন অধ্যায় শুরু করা যেমন, বাবরি মসজিদ-রাম জন্মভূমি বিবাদ, গ্যানভাপি মসজিদ বিবাদ, কাশী মথূরা মসজিদ বিতর্ক ইত্যাদি। এছাড়াও ২০১৯ সালে মোদী সরকার নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) প্রণয়ন করে যা পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে অমুসলিম অভিবাসীদের ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য দ্রুত ট্র্যাক দেয়। প্রস্তাবিত জাতীয় নাগরিক পঞ্জির সাথে একত্রে, এটি ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য ধর্মীয় পরীক্ষা প্রবর্তনের প্রচেষ্টা হিসাবে দেখা হয়েছিল যা কার্যকরভাবে মুসলমানদের বাদ দেবে। সিএএ প্রবর্তনের ফলে বড় আকারের বিক্ষোভ হয়েছিল যা সরকার নৃশংসভাবে দমন করবে।
আগামিদিনে আমাদের সামনে এক বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ইসলাম বিদ্বেষ ও ইসলামোফোবিয়ার মোকাবেলা করা। যদি এবিষয়ে সবাই সচেতন না হয় এবং এর ধারাবাহিকতা চলতে থাকে, তাহলে সংঘাদতের পথে হাঁটবে জনসাধারন। বৈশ্বিক ও জাতিসঙ্ঘের ইসলামোফোবিয়া মোকাবেলার বিষয়গুলোকে সামনে রেখে সরকার ও সচেতন নাগরিক সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে দেশের শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায়। ১৫ ই মার্চ কে আন্তর্জাতিক ইসলামোফোবিয়া বিরোধিতা দিবস ঘোষনা করে জাতিসঙ্ঘ যেমনভাবে ইসলামোফোবিয়ার বিরোধিতা করার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে সমস্ত দেশের তাতে সাহায্য করা উচিৎ।
কিন্তু সারা পৃথিবী জুড়ে যে ইসলাম ও মুসলিম ভীতি গড়ে উঠেছে সাম্প্রতিক সময়ে, তার সবই কি ভিত্তিহীন? এত বড় ষড়যন্ত্র যদি অন্য কোন ধর্মের বিরুদ্ধে করা হত? শত শত মিলিয়ন ডলার যদি শুধুমাত্র ঘৃনা ছড়ানোর কাজে ব্যয়িত হত? তাহলে সে ধর্মের অবস্থা কি হত? শতাব্দী প্রাচীন বিভিন্ন ধর্মের সংমিশ্রনে গড়ে ওঠা এই ধর্মনিরপেক্ষতা ভারত যেখানে হিন্দু, মুসলিম, সিখ, ইসাই, জৈন, পারসি, য়াহুদি ও বিভিন্ন ধর্মে বিশ্বাষী ও অবিশ্বাসি লোকেরা নিজ ভাইয়ের মতো বসবাস করে। কিন্তু হটাৎ মোদির এই ভারতে ১৪.২৭% মুসলমানদের থেকে কিভাবে ৭৯.৮% হিন্দু ভয় পেতে শুরু করল?
লেখক: মোহাম্মাদ শেখ
সিনিয়র সেকেন্ডারী প্রথম বছর
দারুল হুদা ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, পশ্চিমবঙ্গ ক্যাম্পাস, বীরভূম