এই রমযান মাসে কিছু অবশ্যই পাঠ্য বইসমূহ

রমজান আল্লাহর বান্দার মাস। আর বান্দার প্রথম কর্তব্য স্রষ্টার বন্দেগী। জ্বীন ও মানুষের জন্ম সৃষ্টি শুধুমাত্র উপাসনার উদ্দেশ্যে। এই উপাসনা প্রক্রিয়ার আকার-আকৃতি মাত্রা-মার্কা বিভেদ। সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য অন্তর্নিহিত অবিসিন্ধি বা নিয়ত।

  'পড়ো' বলে ঐশ্বরিক বার্তা বা ওহীর সূচনা হয়। উম্মি নবী হন সর্বজ্ঞানী। অবশ্যই, জ্ঞানার্জন ইবাদত সারির প্রথম পর্যায়ে অবস্থান করে। ভুললে চলবে এখানেও প্রযোজ্য অন্তর্নিহিত নিয়ত। বহু উৎসের মধ্যে সর্ব প্রচলিত হচ্চে বই পাঠ। এই রমজান মাসে বই উৎস থেকে লাভবান হওয়ার জন্য অবশ্যই পাঠ্য কিছু বই সহ কিছু সম্পর্কিত তথ্য নিম্নে সারিবদ্ধ করা হল।

. কুরআন হাদীস

রমযান মাসে রোযা রেখে সব থেকে বেশি পাঠের নাম হচ্ছে কুরআন তিলাওয়াত। রজব মাস থেকে বিশ্বের মুসলমানরা দুআ করে আসছে: হে আল্লাহ! আমাদের রজব ও শাবান মাসে বরকত বর্ষিত করেন এবং রমযানে পৌঁছে দিন। এবং এই (মাসে) সিয়াম, কিয়াম ও কুরআন তিলাওয়াতের তৌফিকতা প্রদান করেন।

 নিঃসন্দেহে রমযানে তুলনায় রোযাই বড়ো ইবাদত। কিন্তু রোযার সময় প্রত্যেক ইবাদতের পরিণাম গুণের গুণের বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। অবশ্যই তিলাওয়াতেরও পূণ্য অন্য মাসের তুলনায় বেড়ে যায়। তারপর আসে নবীজীর হাদীস পাঠের বারি। কুরআন হাদীসের পরও যদি বিরতি সময় পাওয়া যায় তাহলে নিন্মের বইগুলি একবার দেখে নেওয়া যাক। (রমযান মাসকে লক্ষ্য করে শুধুমাত্র আধ্যাতিক বিষয়ের ওপর প্রলক্ষিত কিছু বই সারিবদ্ধ করা হয়েছে।)

. নব -এর বন

রোযার প্রধান উদ্দেশ্য হল তাক্বওয়া বা খোদাভীরুতা অর্জন। যেমন মহান আল্লাহ্ তাআ'লার ইরশাদ: হে ঈমানদরগণ! তোমাদের ওপর রোযা ফরয করা হয়েছে যেমন পূর্ববর্তীদের উপর ফরয করা হয়েছিল যাতে তোমাদের পরহেযগারী অর্জিত হয়। (কুরআন, সূরা বাকারা: ১৮৩)

  নবী মুহাম্মাদের সুম্পূর্ণ জীবনী হল এই শিক্ষার অন্যতম প্রধান উৎস। নবীজীর প্রথম জ্ঞাত জীবনী হচ্ছে ইবনে হিশাম রচিত সিরাতে ইবনে হিশাম। কিছু সর্বশ্রেষ্ঠ নবীর জীবনীগুলির মধ্যে শ্রেষ্ঠ হচ্ছে মার্টিন লিংসের (১৯০৯-২০০৫) মুহাম্মাদ: হিজ লাইফ বেসড অন দ্য এ্যারলিস্ট সোর্সেস (Muhammad: His Life Based on the Earliest Sources) যা ১৯৮৩ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। লেখক মুসলিম হয়ে আবু বাকর সিরাজুদ্দিন নাম ধারণ করেন, কিন্তু পূর্বনামেই বিশ্ব পরিচিত হন। অনুরপ বাংলাতেও একটি চমৎকার জীবনী হল বাংলাদেশের গোলাম মুস্তাফার লেখা বিশ্বনবী যা ১৯৪২ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। এসব ছাড়া আরও ভালো বিখ্যাত নবীজীর ওপর বই রচিত হয়েছে। লেখা সংক্ষিপ্ত করার উদ্দেশ্যে তা অউল্লেখিত থাকলো।

 

. দ্যা ফোরটি রূলস অফ লাভ

তুর্কির লেখিকা এলিফ শাফাক রচিত দ্যা ফোরটি রূলস অফ লাভ (The Forty Rules of Love) একটি আধ্যাতিক উপন্যাস। বইটিতে এক দিকে তেরো শতকের সুফি পণ্ডিত জালালউদ্দীন রুমি ও শামস তাবরেজ (রঃ)-এর পারস্পরিক প্রেম অন্যদিকে এলার হৃদয় ব্যাথার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। ভালোবাসার শব্দে এক নারীত্বের কলমে লিখিত ৩৮০ পৃষ্ঠার বইটি বাস্তব প্রেমের প্রকৃতি উন্মোচন করে। ২০০৯ সালে প্রথম প্রকাশিত বইটি বিবিসির সবচেয়ে প্রভাবশালী উপন্যাস তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। অবশ্যই, এর বাংলা সংস্করণও বিভিন্ন অনলাইন সাইটে উপলব্ধ আছে।

 

. প্রোডাক্টিভ মুসলিম

মুহাম্মাদ ফারিসের প্রোডাক্টিভ মুসলিম (Productive Muslim) এক ইসলামিক দৃষ্টিকোণে রচিত মোটিভেশনাল বইয়ের চেয়ে কম নয়। বইটির মূল চর্চা হল বিভিন্ন পার্থিব কাজেও যুক্ত হয়ে কোন এক ব্যাক্তি কি ভাবে তার প্রত্যেক মুহূর্তকে আল্লাহর জন্য নিয়োগ করতে পারে। দুনিয়া ও আখিাত দুই জগতেও সফল বলতে কি বোঝায়? মুহাম্মাদ ফারিস প্রোডাক্টিভ মুসলিম নামে এক ভার্চুয়াল কোম্পানিও স্থাপনা করেন যাতে লেখক মুসলিম সমাজকে সেলফ-হেলপের যথাযথ পরামর্শ ও নির্দেশিকা দিয়ে থাকেন।

 

. আলকেমিষ্ট 

বিশ্ববিখ্যাত কাল্পনিক উপন্যাস হৃদয় ও স্বপ্নের শব্দে রঞ্জিত। ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত ব্রাজিলীয় পাওলো কোয়েলহো আসলে বইটি সর্বপ্রথম পর্তুগিজ ভাষায় লেখেন, কিন্তু আজ ৮০টিরও অধিক ভাষায় এর অনুবাদ বিদ্যমান। যদিও লেখক মুসলিম নয় এবং ঘটনাও ইসলামিক নয়, তবুও বইটি তালিকাবদ্ধ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে হৃদয় কেন্দ্রিক অনুসন্ধান ও আন্তরিকতা যা আধ্যাত্মিকতাকে উদ্দীপিত করে।

 ইসলামে সুফিশিক্ষা ও আধ্যাত্বিক বিষয়বস্তু অর্জনের জন্য মূল অনেক গ্রন্থ আছে যেমন ইমাম গাজ্জালী (র:) ও অন্যান্য দ্বীনি পণ্ডিতদের। ওইসব অবশ্যই পাঠ্য। উপরন্তু, যত পড়বে তত বাড়বে।

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter