জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ রক্ষায় ইসলামের শিক্ষা: আধুনিক সংকটে নবী (সা.)-এর পরিবেশবান্ধব আদর্শ
আধুনিক বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তন, বনভূমি ক্ষয়, বায়ু ও জল দূষণসহ পরিবেশগত বিপর্যয় প্রতিবিম্বিত হচ্ছে। শিল্পায়ন এবং অতিমাত্রায় ভূ-উপযোগের ফলে ভূপৃষ্ঠের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এ সংকটে ইসলামী দর্শন ও নবী (সা.)-এর জীবন পাঠ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামের দৃষ্টি অনুযায়ী সৃষ্টি বিশ্ব আল্লাহর (স.ও.) ঈশ্বরের নৈঃশব্দিক নিদর্শন (আয়াত), যাকে সৌন্দর্য ও সুষমায় রক্ষা করা যায়। কোরআনে বলা হয়েছে, “নিশ্চয়ই আকাশ-পাতাল ও দিন-রাতের পরিবর্তনসহ সবকিছু মানবজ্ঞানীদের জন্য নিদর্শন”। নবীর শিক্ষা অনুসারে প্রকৃতি সংরক্ষণকে ইবাদতের অংশ বিবেচনা করা হয়; যেমন অলঙ্কার হিসেবে সবই ফেরেশতাদের প্রণাম করে। একদিকে আমরা দেখি, বিশাল সমুদ্রের জাহাজ, বর্ষণমুখর বৃষ্টি, গর্জনরত মেঘ ও তুষারমালার নানান দৃশ্য—এসবই আল্লাহর শক্তি ও করুণার প্রমাণ। অন্যদিকে নৈরাশ্যজনক বিষয় হলো, মানুষ প্রাকৃতিক সম্পদ অপচয় করছে। কোরআনে সতর্ক করা হয়েছে, “আসমান-পাতাল ও জীব জগৎ সৃষ্টি করা আল্লাহর জন্য ভালো, আপনি কি দেখেন না যে তিনি আপনাদের জন্য নানা সম্পদ প্রেরণ করেছেন?” (২:২৬৪, অনুবাদ)। এই নীতির ওপর দাঁড়িয়ে ইসলাম সৃষ্টির প্রতি সতর্ক ও দায়িত্বশীল মনোভাব গড়ে তুলতে শেখায়।
ইসলামী পরিবেশ নৈতিকতার মূলনীতি
ইসলামে পরিবেশ-নীতি মূলত তাওহিদ এবং খলিফা ধারণার ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। আল্লাহ্ তাওহিদ অনুসারে তিনি স্রষ্টা; অতএব সমস্ত সৃষ্টি বিশ্ব তাঁরই নিয়ন্ত্রণে। কোরআনে বলা হয়েছে, আল্লাহ্ মানবকে পৃথিবীতে খলিফা (স্থপতি/প্রতিনিধি) হিসেবে নিয়োগ করবেন। অর্থাৎ মানুষকে পরিবেশ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। যেমন আল্লাহ্ নিজে বলেন, “নিশ্চয়ই আমি ভূমিতে একজন স্থায়ী কর্তৃপক্ষ (খলিফা) জারি করতে যাচ্ছি।” ফেরেশতারা এ কথা শুনে প্রশ্ন করেছিল, “একজন মানুষ কী করুণাময় সত্তা হিসেবে সৃষ্টি করব যিনি অবাধ্যতা করবে?” ইসলাম এই মর্মে উত্তর দেয় যে মানুষের মধ্যে ক্ষমতা ও বুদ্ধির কারণেই তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ফলে মুসলমানকে পৃথিবীকে আমানত হিসেবে দেখে তার যত্ন নিতে শেখায়।
কোরআন এ কথাও স্মরণ করায় যে পৃথিবীর প্রতিটি প্রানি ও পাখিরা আল্লাহ্র ইবাদত করছেন, যেমন―
وَمَا مِن دَآبَّةٍۢ فِى ٱلْأَرْضِ وَلَا طَـٰٓئِرٍۢ يَطِيرُ بِجَنَاحَيْهِ إِلَّآ أُمَمٌ أَمْثَالُكُم ۚ مَّا فَرَّطْنَا فِى ٱلْكِتَـٰبِ مِن شَىْءٍۢ ۚ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّهِمْ يُحْشَرُونَ
“পৃথিবীতে এমন কোনো জীব নেই, এমনকি আকাশে পাখিও নেই, যাদের সম্প্রদায় তোমাদের মত করে গঠিত না। আমরা [সর্বকিছু] লিপিতে রেখেছি এবং সবই অবশেষে তাদের প্রতিপালকের নিকট ফিরে যাবে।”
এ আয়াত (৬:৩৮) দেখায় যে সকল সৃষ্টি পরস্পর সংযুক্ত; মানবকুল অন্য প্রাণীর মর্যাদা ও অধিকারকে অবহেলা করতে পারে না। সূরা আল-হজ্জ (২২:১৮)-এ আল্লাহ্ স্বয়ং বলেছেন যে তিনি আকাশ-পাতাল ও সব প্রাণীকেই তাঁর সামনে সেজদা করেন। এর মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে পৃথিবীর প্রতিটি দিশাই আল্লাহ্র স্মরণে অভিষিক্ত।
নবী (সা.)-এর জীবনেও পরিবেশবান্ধব নীতির নজীর রয়েছে। তিনি বৃক্ষরোপণের প্রতি গুরুত্ব দেন এবং এটিকে সদকার কাজ হিসেবে বর্ণনা করেন। হাদিসে বর্ণিত, কোনো মুসলিম যদি গাছ রোপণ করে আর তার ফল থেকে মানুষ, পশুপাখি অথবা অন্য কোনো প্রাণী লাভ করে, তাহলে সেটি তার পক্ষ থেকে সদকা হিসেবে গণ্য হবে। খাদ্য ও জলের অপচয় কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে: একবার সাহাবী সাআদ (রাঃ) নর্দমার পাশে ওয়াজু করছিলেন, তখন নবী (সা.) বলেন, “সাআদ! এই অপব্যয় কী?” তিনি বললেন, “ওদুর ধারে গিয়েছি, এমন সুযোগে কি অপব্যয় থাকতে পারে?” নবী (সা.) উত্তরে বললেন, “হ্যাঁ, এমনকি যদি তুমি স্বচ্ছ জলের ধারে থেকেও অপচয় করতে পার।”। এর থেকে বোঝা যায়, জল সম্পদের গুরুত্ব তিনি কতটা উপলব্ধি করতেন।
ইসলামে সৃষ্টি জগৎকে রক্ষা করতে প্রশংসিত হতে ঈমানদার হিসেবে বর্ণনা করা হয়। যেমন সূরা আল-ফুরকানে (২৫:৬৩) বলা হয়েছে, “সর্বগুণসম্মানিতের প্রকৃত অনুগত হল তারাই যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে বিচরণ করে”। এই আয়াত অনুযায়ী আমল বলতে বোঝানো হয়েছে পরিবেশে ক্ষতিকর কাজ এড়িয়ে চলা, অর্থাৎ যতটা সম্ভব পৃথিবীতে ন্যূনতম চাপ ফেলা। আমেরিকান আলেম ইমাম জায়েদ শাকির বলেন, এই আয়াত পরিবেশ রক্ষায় ক্ষতিকর কাজ পরিহার করার গুরুত্ব দেয় এবং পরিবেশের যত্ন নেওয়াকে ফরজ হিসেবে গণ্য করে।
ইসলামের পরিবেশ নৈতিকতার কিছু মূলনীতি: ইসলাম বিশ্বাস করে যে মানুষ সৃষ্টির সব উপাদানকে সম্বন্ধ ও পরস্পর নির্ভরশীল হিসেবে দেখবে। তাই তাওহিদ ধর্মে সৃষ্টিকে সম্মান দেখানো অপরিহার্য, এবং খলিফার দায়িত্ব হলো পৃথিবীতে ফিতরতি ভারসাম্য বজায় রাখা। নবী (সা.)-এর হাদিসগুলো পরিবেশ রক্ষার নৈতিকতার নির্দেশ দেয়: যেমন গাছ রোপণকে সদকা বলেছেন, পশুপাখির প্রতি দয়া দেখাতে বলেছেন, রাস্তা পরিষ্কার করা বা লোকালয় পরিস্কার করা নিজেও সদকা বলে গন্য করেছেন। এ ছাড়া অতিরিক্ত ভোজ এবং অপচয়বিরোধী শিক্ষা দিয়ে মুসলিমদের নৈতিক হ্রাস বা বেপরোয়া ব্যবহারের বিরুদ্ধে সতর্ক করা হয়েছে।
আধুনিক পরিবেশ সংকট ও ইসলামী আদর্শের প্রাসঙ্গিকতা
আজকের বিশ্বে সূক্ষ্ম থেকে বিরাট সকল স্তরে পরিবেশগত সংকট দেখা দিয়েছে। গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর কারণে মেরু অঞ্চলে বরফ গলছে, সমুদ্রস্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিধ্বংসী বন্যা ও খরা বেড়েই চলেছে। উন্নয়ন ও নগরায়নে বনাঞ্চল ব্যাপক হারে উজাড় হচ্ছে। শিল্প ও যানবাহন থেকে বিষাক্ত গ্যাস নির্গমন ও প্লাস্টিকের ব্যবহার বায়ু–জল দূষণ বাড়াচ্ছে। এর ফলশ্রুতি হিসেবে বিশেষ করে গ্লোবাল সাদার্ন কয়েকটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলো মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, পর্যবেক্ষকদের হিসেব অনুযায়ী ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেশের প্রায় সাতে এক জন স্থানচ্যুত হতে পারে। অন্যদিকে ইনডোনেশিয়া বিশ্বে গ্রীনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের তালিকায় পঞ্চম স্থানে থেকেও এর বিরুদ্ধে শক্তিশালী ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এই চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলার ক্ষেত্রে ইসলামের আদর্শগুলো দিকনির্দেশনার কাজ করে।
ইসলামে মাঝারি জীবন (ই’তেদাল) ও অপব্যয়বর্জনের জোর দেওয়া হয়েছে। নবী (সা.) মরুভূমির পরিবেশে জন্মগ্রহণ করেন, তাই পানির মূল্য তিনি জানতেন; কোরআন-হাদিসে বর্ণিত, তিনি আর-জিজ্ঞাসা করলে সাআদকে বলেছিলেন, “জলের উৎসের পাশে থেকেও অপচয় করা যায়।”। তেমনিভাবে খাদ্যে সংযমের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, “মানুষের পেট ভর্তি করানো সবচেয়ে অপমানজনক”। এই শিক্ষাগুলো আজকের অতিরিক্ত উৎপাদন–বিপণন এবং খাদ্য অপচয়ের যুগে শতভাগ প্রাসঙ্গিক। ইসলাম বৈশ্বিক ভারসাম্য (মীযান)-এর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়; আমরা যেন নিরবে কিন্তু বাস্তবে প্রকৃতির ভারসাম্য ভেঙে না দিই। এই নৈতিক ভ্রুরেখা অনুসারে চিরাচরিত মুসলিম মর্যাদাসমূহ (মারুফ, মুনকর, ই’তেদাল) পরিবেশ রক্ষায় নেতৃত্ব দেয়। নীতিগত দিক দিয়ে ইসলাম ন্যায্যতা এবং সংযমের শিক্ষায় সমৃদ্ধ; তাই আজকের পরিবেশগত ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচিও এই আদর্শের সাথে সুরেলা ভাবে মানানসই।
তবে বাস্তবতায় অনেক মুসলিম দেশ উষ্ণতা ও বন্যার মতো সমস্যায় যথেষ্ট দুর্বল, অথচ অনেক ক্ষেত্রে পরিবেশ রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বিশ্বের যে অঞ্চলে মুসলিম জনসংখ্যা বেশি (বিশেষ করে মরুভূমি অঞ্চলে), সেখানেই জলবায়ু দুর্ঘটনার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। এই দ্বন্দ্ব থেকে উত্তরণে ইসলামী আদর্শ কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ইসলামি আহবানে (২০১৫ সালের ইসলামী ঘোষণাপত্রে) ১.৬ বিলিয়ন মুসলমানদের কাছে পরিবেশ দূষণ ও জীববৈচিত্র্য হ্রাসের বিরুদ্ধে জোরালো পদক্ষেপ চাওয়া হয়েছে। একইভাবে, সূরা আনবিয়া (২১:৩০) বলে, “আসলে আকাশ-পাতাল ও পৃথিবী একত্র ছিল; আমরা সেগুলো আলাদা করেছি এবং তাদের প্রত্যেক জীবন্ত সৃষ্টি জলের সাহায্যে অঙ্কুরিত করেছি”। এর অর্থ প্রকৃতি সংক্রান্ত যে কোনো ভাঙচুর মানবজাতির বিরুদ্ধে অপরাধ এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের ওপর কারামুক্ত পরিচালনা তা ইসলামের নৈতিক কাঠামোয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
ভূমি উজাড়, নদী-বনানী অপচয়, দূষণ – এসবের বিরুদ্ধে ইসলামের আদর্শ মূলত এক। নবী (সা.) গাছপালা বাঁচাতে উদ্বুদ্ধ করেছেন, উদ্ভিদবিধ্বংসক কর্মকে অনুচিত বলেছেন। উদাহরণস্বরূপ, একবার রাফি (রাঃ) খিদের তাড়নায় খেজুর গাছের দিকে ইট ছুঁড়ছিলেন; নবী (সা.) বললেন, “গাছে ইটছোঁড়ো না, পড়ে থাকা ফল খা; আল্লাহ্ তোমাকে পেটপুর করবে এবং জল দিবে।”। এই সহনশীল দৃষ্টিকোণ থেকে বোঝা যায়, ইসলাম বন উজাড় ও উদ্ভিদবিধ্বংসকে তীব্র নিন্দা করে। তদুপরি, রাস্তা-ঘাট পরিষ্কার করা, বন আচ্ছাদন সংরক্ষণ ও জলাশয় ধারণ করার কাজও ইসলামে মর্যাদাসম্পন্ন; কারণ নবী (সা.) বলেছিলেন, “রাস্তা থেকে যেকোনো ক্ষতিকর বস্তু সরানো সদকার সমান।”।
মুসলিম সমাজের কর্তব্য ও পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ
ইসলাম আমাদের সবাইকে দায়িত্বশীল পদক্ষেপের আহ্বান জানায়। ব্যক্তি ও সমাজ দুটো ক্ষেত্রেই পরিবেশরক্ষা মৌলিক কর্তব্য। ব্যক্তিগত জীবনে ইসলামী নৈতিকতা অনুযায়ী অপচয় এড়াতে হবে: পানির যত্ন নিয়ে ওয়ূযু বা গোসল করা, ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র বন্ধ রাখা, এবং পর্যাপ্ত খাদ্য গ্রহণের পর অপরের ক্ষুধা পূরণে উৎসাহিত হওয়া। সামাজিক দিক থেকে মসজিদ ও মাদ্রাসায় পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ নিতে হবে: যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জ্বালানি সাশ্রয়ে কর্মসূচি এবং চারপাশে গাছ লাগানোর উদ্যোগ। উদাহরণস্বরূপ, সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশ পবিত্র হজকে সুস্থায়ী করতে পরিকল্পনা করছে, আর বিশ্বব্যাপী কিছু ত্বরিকমতে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে উঠছে যেখানে খতিবদের পরিবেশ সচেতনতায় শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে।
ক্লাইমেট জাস্টিস বা সামাজিক ন্যায়বিচারেও ইসলামী মূল্যবোধ ভূমিকা রাখে। নবী (সা.)’র শিক্ষা অনুসারে দুর্বল ও ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর (যেমন শিশু, প্রবীণ, গরীব) প্রতি হেফাজত আমাদের কর্তব্য; জলবায়ু পরিবর্তনের যন্ত্রণায় সাধারণ মানুষের চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এ সামাজিক শ্রেণিগুলো। তাই বর্তমান জলবায়ু ন্যায়বিচার আন্দোলন মুসলিম সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ: অন্যায় ভোগীদের সাহায্যে এগিয়ে আসা নিজেই ইসলামী সহানুভূতির শিক্ষা। এ প্রসঙ্গে উদাহরণস্বরূপ, ২০১৫ সালে প্রণীত ইসলামিক ঘোষণাপত্র অন জলবায়ু পরিবর্তন তৃণমূল পর্যায় থেকে বৈশ্বিক ক্ষেত্রে ১.৬ বিলিয়ন মুসলিমকে পরিবেশ-সংকট মোকাবেলায় উদ্যোগী হতে আহ্বান জানায়।
ইসলামী চিন্তাধারা ও শিক্ষা আধুনিক উদ্যোগেও অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে। বিভিন্ন মুসলিম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং অলাভজনক সংগঠন (যেমন IFEES ইত্যাদি) পরিবেশ রক্ষা ও সচেতনতায় কাজ করছে। ‘সবুজ রমজান’ (Green Ramadan) ক্যাম্পেইন মুসলিমদের রোজার সময়ে খাদ্যের অপচয় কমানো, পুনর্ব্যবহারযোগ্য পাত্র ব্যবহার ইত্যাদি পরিবেশবান্ধব অভ্যাস গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করছে। তদুপরি, তরুণ সমাজের অনেক কর্মী গ্রিন হাদিস সংগ্রহ করে পরিবেশ-বান্ধব জীবনাচারে নবীর শিক্ষাকে ছড়িয়ে দিচ্ছে।
ইসলামের নৈতিক শিক্ষা শুধু ব্যক্তিগত নয়, রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও দিশানির্দেশ প্রদান করে। আজকের পরিস্থিতিতে মুসলিম দেশে পরিবেশ আইন-কানুন প্রণয়ন ও কঠোর বাস্তবায়ন অপরিহার্য। ইসলামী মূলনীতি অনুযায়ী সরকার ও সমাজকে আদালত (আদল) এবং দায়িত্বশীল ব্যবস্থাপনায় স্থিত থাকতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, ‘অমুসলিমদের প্রতি আল্লাহর দান-অনুগ্রহ না-জানার’ অনুচ্ছেদের মধ্যে পড়ে না-যথাযথ ব্যাবস্থাপনার কারণে কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঢেকে না-দেওয়াও। এমতাবস্থায় সরকারী ও সামাজিক উদ্যোগে গ্রিন এনার্জি, পুনঃব্যবহারযোগ্য সম্পদ, পরিবেশ শিক্ষা, এবং অবদান-ব্যতীত কর্পোরেট উদ্যোগ ইত্যাদি সমন্বিত হওয়া দরকার।
সমগ্র মুসলিম উম্মাহর কাছে আহ্বান, নবীর জীবনবাণীর প্রতি ফিরে তাকিয়ে প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে। নবী (সা.) তাঁর আদর্শে শিক্ষা দিয়েছেন যে সব সৃষ্টি সম্মান পাওয়ার যোগ্য; তাই তার আদর্শকে যুগোপযোগী ভাবে কাজে লাগিয়ে আধুনিক সংকট মোকাবিলায় সক্রিয় অংশগ্রহণই জলবায়ু ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার পথ। ভারসাম্যবোধ, সংযম ও সদকার তাগিদ দিয়ে ইসলাম আমাদের দেখায়—সৃষ্টির প্রতি যত্ন এবং দায়বদ্ধতা কেবল মানবিক কর্তব্যই নয়, আল্লাহ’র আদেশও।
অতএব, ইসলামিক শিক্ষার আলোকে আমরা পরিবেশ রক্ষাকে ইবাদতের সমতুল্য মানতে পারি। এই শিক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে ব্যক্তিগত থেকে বৈশ্বিক পর্যায়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে—যেমন বৃক্ষরোপণ, জল ও বায়ু দূষণ রোধ, পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্রযুক্তি চালু করা—তাহলেই আমরা নবী (সা.)-এর পরিবেশবান্ধব আদর্শের পরিপূর্ণ রূপায়ণ করতে পারব।