প্রচলিত ছেলে-মেয়ের বন্ধুত্ব: ইসলাম ও বিশেষজ্ঞরা যা বলে

'ওরে দোস্ত বা বন্ধু শোন , এই ছিল এক ছেলে তার  ছেলে বন্ধুকে আহ্বান করার নিয়ম এবং 'ওরে সই বা বান্ধবী শোন ' এই ছিল এক মেয়ে তার বান্ধবীকে আহ্বান করার নিয়ম। হ্যাঁ সেটা ছিল পুরনো যুগ আর এখন হল আধুনিক যুগ।সময়ের পরিবর্তনকে অনুসরণ করে বদলেছে সময়, বদলেছে কথাবার্তার ঢঙ।সে ছিল নিজ ধর্ম ও সভ্যতাকে পায়ে পায়ে ও ধাপে ধাপে চলার যুগ কিন্ত আজ সারা বিশ্ব ধীরে ধীরে নির্লজ্জ ও নোংরা পশ্চিমা সূর্যের আলোয় আলোকিত হচ্ছে। সমস্ত লজ্জা এর নোংরামির সীমা পর করছে সারা জাহান।

ইসলামের দৃষ্টিতে  

এ বিষয়টি পরিষ্কার করা দরকার যে, দায়িত্ব ও কর্তব্যের ক্ষেত্রে ইসলামে নারী ও পুরষ কখনো এক নয়। নিজ নিজ সক্ষমতা ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে পুরুষ যেমন স্বতন্ত্র, একজন নারীর ক্ষেত্রেও একই বিষয় প্রযোজ্য।  বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে যেমন নর নারীর ভিন্নতা আছে তেমনি শারীরিক গঠনের ক্ষেত্রেও তাদের ভিন্নতা বিদ্যমান। নারী পুরষের সাধারাণ যোগাযোগ ও মেলামেশায় ইসলামে কোন বিধি নিষেধ নেই। কিন্তু বিশেষ সম্পর্ক ও মেলামেশার ক্ষেত্রে বিধি নিষেধ রয়েছে।ভিন্ন সমাজ ও সংস্কৃতির মানুষের মাঝে যদি পারস্পারিক সদ্ভাব ও আচরণ বজায় থাকে তবে তাদের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গঠনে ইসলাম মানুষকে উৎসাহিত করেছে।  

উপরে বর্ণিত পন্থায় পারস্পারিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে শারীরিক মেলামেশায় অবশ্যই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। একজন পুরুষ কোন গাইরে মাহরামকে তথা যাদের সাথে সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে তাকে কোন অবস্থাতেই স্পর্শ করতে পারেনা।খুব প্রয়োজনে সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও নারী ও পুরুষকে যোগাযোগ করতে হয় তবে তার বিধান হচ্ছে  নারীকে অবশ্যই যথোপযুক্ত পোশাক পরিধান করতে হবে এবং ইসলাম নির্ধারিত পন্থায় কথা বলতে হবে। আর কোন অবস্থাতেই তৃতীয় কোন ব্যক্তির উপস্থিতি ব্যতীত নির্জন স্থানে যেতে পারবে না। 

ছেলে-মেয়ে, কিংবা যুবক-যুবতী, কিংবা পুরুষ-মহিলাদের মধ্যে ইসলামী শরীয়তে দৃষ্টিতে বন্ধুত্ব বৈধ কিনা তা জানার আগে আমরা পবিত্র কুরআনে বর্ণিত আয়াত এর বাংলা অনুবাদ দেখে নেই। সেখানে মহান আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেছেনঃ

"হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত (আহলে কিতাবদের) নও! তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় পাও, তবে আকর্ষণধর্মী ভঙ্গিতে কথা বলো না, যাতে যাদের মাঝে যৌনলিপ্সা আছে তারা তোমাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। বরং তোমরা স্বাভাবিক কথা বলো এবং তোমরা অবস্থান কর স্বীয় বসবাসের গৃহে, জাহেলী যুগের মেয়েদের মত নিজেদের প্রকাশ করো না।"{সূরা আহযাবঃ আয়াত-৩২}

উপরোক্ত আয়াত সমূহে পরিস্কার ভাষায় স্পষ্ট করে মেয়েদেরকে অন্যের সামনে নিজেকে প্রকাশ করতে, অপ্রয়োজনে কথা বলতে এবং আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। 

বন্ধুত্ব 

ইংরেজীতে কিছু অভিনব শব্দ রয়েছে! যেমনঃ জাস্ট ফ্রেন্ড, গুড ফ্রেন্ড এবং বেস্ট ফ্রেন্ড! আমাদের সমাজেও বন্ধুদের মাঝে প্রায়ই শব্দগুলো শোনা যায়! কাউকে জিজ্ঞেস করলে, উনি কি হন তোমার? জবাবে কেউ বলেন, জাস্ট ফ্রেন্ড! আবার কেউ বলেন, গুড ফ্রেন্ড! আবার কেউ  কেউ বলেন, এই তো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড! সমাজে অনেক রকম বন্ধুত্বের সস্পর্ক বিদ্যমান। কারো রয়েছে ক্লাসের বন্ধু, কারো আবার জাস্ট ফ্রেন্ড অথবা বেস্ট ফ্রেন্ড।  

তাছাড়া এই আধুনিক যুগে আরও অভিনব শব্দ ঢুকেছে যা এক ছেলে তার মেয়ে বন্ধুত্ব সম্পর্কে আহব্বান করে যা হল 'বেস্টি' (Bestie) এবং মেয়ে পরিবর্তে ডাকে 'বেস্টু' (Bestu)।  এই সব পশ্চিমা নোংরা সভ্যতা থেকে উৎপত্তি। 

ইতিহাস

আসুন দেখি 'বেস্টি' প্রচলিত শব্দের উৎসের ইতিহাস - OED বলে যে শব্দটি "মূলত এবং প্রধানত ব্রিটিশ" এবং এটির প্রথম উদ্ধৃতি হিসাবে ১৯৯১ সালের দ্য অবজারভারের উদ্ধৃতি রয়েছে :“Diana’s friends often date from the days BC (Before Charles). Some are Besties reliable pals from school.” 

 এরপর ২০০৮ সালে এক উপন্যাসে ব্যবহৃত হয়। তারপর ক্রমে ক্ৰমে এর ব্যবহার বাড়তে থাকে অবশেষে ২০১০ সালে দ্য টাইমস মাগ্জিনে ব্যবহৃত  হয় আর এটার ব্যবহার স্বাবাভিক হয়ে যায়।   

বিশেষজ্ঞদের উক্তি 

সতেরো শতকের সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক ও নাট্যকার উইলিয়াম শেক্সপিয়র বলেছিলেন, "একজন ছেলে কখনো একজন মেয়ের বন্ধু হতে পারে না, কারণ এখানে আবেগ আছে , দৈহিক আকাঙ্খা আছে।"একই কথা বলেছেন আইরিশ কবি অস্কার উইল্ডে "নারী এবং পুরুষের মাঝে কেবলই বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকা অসম্ভব । যা থাকতে পারে তা হলো আকাঙ্খা, দুর্বলতা, ঘৃণা কিংবা ভালোবাসা।"। বন্ধুত্বের সম্পর্ক নিয়ে ঢোকা একটা ভন্ডামী! শুধুই সুযোগের অপেক্ষা। সবশেষ পরিনতি পরকিয়া। 

বাংলা সাহিত্যিক  হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন, "ছেলে আর মেয়ে বন্ধু হতে পারে কিন্ত তারা অবশ্যই প্রেমে পড়বে । হয়তো খুবই অল্প সময়ের জন্য অথবা ভুল সময়ে । কিংবা খুবই দেরিতে , আর না হয় সব সময়ের জন্য । তবে প্রেমে তারা পড়বেই । শুধুই সুযোগের অপেক্ষা।"

বন্ধুত্ব নয় তো কি?

সত্যি বলতে, ছেলে ও মেয়েতে শুধুমাত্র বন্ধুত্ব অসম্ভব ও প্রকৃতি বিরুদ্ধ। কেননা শুধুমাত্র বন্ধুত্ব হলে প্রকৃতি নিজের অস্তিত্ব হারাবে। চুম্বক আর লোহা কখনো পাশাপাশি থাকতে পারে না.... আকৃষ্ট করবেই। যদি কেউ তা এড়িয়ে যায় তবে সে ভণ্ডামি করছে নয়তো ধোকা দিচ্ছে। আগুনের পাশে মোম গলবেই। ছেলে ও মেয়ে বন্ধুত্ব হতে পারে কিন্তু একসময় প্রেমে বা অবৈধ সম্পর্কে রুপ নিবেই। শুধুই সুযোগের অপেক্ষা। আর এটাই স্বাভাবিক।

তবে তাদের এই মন্তব্য গুলোকে জোরালো ভাবে সমর্থন দিচ্ছে Flirtationship যার অর্থ হচ্ছে ছিনালি করা। কড়া ভাষায় বলতে গেলে নোংরামি করা । তাই অভিবাক সহ সবাইকে এব্যাপারে এখনি বিশেষ ভাবে সতর্ক হওয়া আবশ্যক। নয়তো আমরা ক্রমান্বয়ে ওই সাংস্কৃতির দিকে অগ্রসর হচ্ছি। তাই লক্ষ্য রাখুন, আপনার বোন কিংবা মেয়ে, স্বামী কিংবা স্ত্রী, ভাই কিংবা ছেলে, কাদের সাথে মিশছে ! নিজেকে ও এ বিষয়ে বিশেষ ভাবে সতর্ক রাখতে হবে। কারণ শয়তান সব সময় মানুষের পিছনে লেগে আছে তাকে বিপথগামী করার জন্যে। সঙ্গটাই এই খানে সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ন।

একটা ছেলে আর একটা মেয়ে কখনো বেস্ট ফ্রেন্ড হতে পারে না ।একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তারা খুব ভালো বন্ধু থাকতে পারে ।এরপরেই আর পারে না ।দুজনের যে কোন একজন আরেকজনের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে,দুজনেই হয় না !অধিকাংশক্ষেত্রে ছেলেটা মেয়েটার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে ।ছেলেরা এমনই একটুতেই দুর্বল হয়ে পড়ে,একটুতেই ভালোবেসে ফেলে। 

কোনো মেয়ে তার প্রতি একটু কেয়ারিং হলেই সে মনে করে মেয়েটা বুঝি তাকে ভালোবাসে । তার সবচেয়ে কাছের মেয়ে বন্ধুটা যখন দিনের পর দিন তার কেয়ার নেয়,খোঁজখবর নেয়,কারণ অকারণে ঝগড়া করে.যখন আবেগ দেখায় তখন ছেলেটা ধরেই নেয় মেয়েটা তাকে প্রচন্ড ভালোবাসে !! ছেলেটা মনে ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করতে করতে আর মেয়েটার অতি কেয়ারিং আচরণের কারণে ছেলেটা নিজের অজান্তেই মেয়েটাকে ভালোবেসে ফেলে !! ...অথচ মেয়েটা কখনোই ছেলেটাকে ভালোবাসে নি । শুধুমাত্র বন্ধু হিসেবেই দেখে এসেছে !মেয়েরা তার ভালোবাসার মানুষ আর বন্ধু এই দুজনকে সম্পূর্ণরুপে পৃথক করতে পারে! যে মেয়েটা একটা ছেলেকে বন্ধু ভাবে সে সবসময় তাকে বন্ধুই ভাবে,ভালোবাসার মানুষ ভাবে খুব কমক্ষেত্রেই! ছেলেরা সেটা পারে না ! তারা একটা মেয়ের কাছে বন্ধুর চেয়েও বেশি কিছু হতে চায় ।

উপসংহার 

অবশেষে বলা যেতে পারে যে,বন্ধুত্ব আর প্রেম দুটোই এক না কিন্তু উভয়ে ভালোবাসা ও কেয়ারিং পাওয়া যায়। প্রেমকে করতে ইসলাম উৎসাহ করেনা কিন্তু হয়ে গেলে তাকেই বিয়ে করার নির্দেশ দিয়েছে। নচেৎ তার পূর্বে কোনো ধরণের মেলামেশার অনুমতি দেয় না। বলা হয় প্রেম হল এক পবিত্র জিনিস কিন্তু লোকে তার ভুল পথে ব্যবহার করে তার মান ঘাটিয়ে দেয়।  

একটা মেয়ে যখন "বন্ধু" হিসেবে একটা ছেলের প্রতি অনেক বেশি কেয়ারিং হয় তারমানে এটা না কখনোই না যে মেয়েটা ছেলেটাকে ভালোবাসে ! বরং মেয়েরা জন্মগতভাবেই কেয়ারিং হয় ।তার আশেপাশের খুব কাছের মানুষদের জন্য সে অনেক বেশি কেয়ারিং হয় ! তাই যখন ছেলেটা তার খুব কাছের মেয়ে বন্ধুর কেয়ারিং এর কারণে তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ভালোবাসার জন্য তার সামনে দাড়ায় মেয়েটার মাথায় তখন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে ! ছেলেটাও ভাবতে পারে না মেয়েটা তাকে ভালোবাসে না বরং শুধুমাত্র বন্ধু হিসেবে দেখে ! এরপর তারা দূরে সরে যায় ।মেয়েটা কষ্ট পায় সে খুব কাছের একজন বন্ধুটাকে হারালো সেজন্য । ছেলেটা কষ্ট পায় যখন হঠাত কেয়ারি মেয়েটা তার জীবন থেকে হারিয়ে যায় ।বন্ধু হিসেবেও তাকে পায় না,ভালোবাসার মানুষ হিসেবেও না তারপর শুরু হয় এভয়েড করা । সমাপ্তি হয় একটা সুন্দর সম্পর্কের। 

বর্তমানে ছেলে ও মেয়ের অবৈধ মিলনের দিক দিয়ে প্রেমের নামও বদনাম। আসুন না! সকলে ইসলাম বিরোধী পথ ত্যাগ করি আর বেছে নেই হেদায়াতি ও জান্নাতি পথ। 

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter