ইসলাম ও ধর্মাবমাননা
ইসলাম ধর্মে ধর্ম- অবমাননা বা ধর্মাবমাননা বলতে আল্লাহকে গালি- গালাচ দেওয়া, তিনার সম্বন্ধে অশুভ কথা বলা বা শরিয়ার কোনো মূল বিষয় কে অস্বীকার বা অমান্য করার কাজকে বুঝায়। উদাহরণস্বরূপ, আল্লাহর অংশীদার বা পুত্র আছে বলে মানা, নবীগণেদের মধ্যে যে কোনো একজন নবীর নবুওয়াত কে অস্বীকার করা বা কুরআন ও এর সাথে আরও তিনটি আসমানী গ্রন্থ ঐশ্বরিকভাবে অবতীর্ণ হয়েছে তা অস্বীকার করা ইত্যাদি।
যারা এই ধর্মাবমাননা করে, তাদেরকে কুরআন অভিশাপ দেয় এবং পরকালে তাদের লাঞ্চনার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। আর এরই মধ্য দ্বারা একটি আয়াত হচ্ছে যাতে সরাসরি ধর্ম অবমাননা (গাল) শব্দের দ্বারা উল্লেখ রয়েছে তা হল-- আর তোমরা গালমন্দ করো না তাদের যারা আল্লাহ ব্যতীত আর কাউকে উপাসনা করে, বিপরীতে তারা শত্রুতাবশতঃ আল্লাহকে গালমন্দ করবে কোনো জ্ঞান ছাড়াই। এভাবেই আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য তাদের কাজকে মনোরম করে দিয়েছি। অতঃপর তাদের প্রভুর কাছেই তাদের প্রত্যাবর্তন স্থল, এবং তারা যা করত সে সম্পর্কে তিনি তাদেরকে অবহিত করবেন।
এই আয়াতে মুসলমানদেরকে অন্য ধর্মের দেবী- দেবতাদের বিরুদ্ধে নিন্দা না করার আহ্বান জানানো হয়। কেননা যদি তাদের ধর্মের দেবী- দেবতাদের বিরুদ্ধে মুসলমান নিন্দা করে। তবে তারাও এর প্রতিশোধে আল্লাহ তাআলা কে নিন্দা করবে। তবে নিশ্চয় আল্লাহ এই কর্মের প্রতিশোধে তাদেরকে জাহান্নামের ভয়ঙ্কার আগুনে হাবু ডুবু খাওয়াবেন।
কুরআনের বেশ কিছু আয়াত ধর্মাবমাননা সম্পর্কিত। এই আয়াতগুলিতে আল্লাহ অভিশাপ করেছেন বা লাঞ্চনা জানিয়েছেন ধর্ম অবমাননাকারীদের। কেউ কেউ কিছু আয়াতকে প্রমাণ হিসাবে উদ্ধৃত করে বলেন যে, কুরআনে ধর্মাবমাননা জন্য শাস্তি নির্ধারণকরা হয়নি, অথচ অন্যান্য আয়াতগুলি স্পষ্ট প্রমাণ দেয় যে তাদের জন্য আখিরাতে ও দুনিয়ায় কী রকম ধরণের শাস্তি রয়েছে। আর একটি আয়াতে আছে এই ধর্ম নিন্দার ব্যাপারে যে-- নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টির চেষ্টা করে তাদের একমাত্র শাস্তি হলো তাদেরকে হত্যা করতে হবে, কিংবা শূলে চড়াতে হবে কিংবা পশ্চাৎ থেকে তাদের হাত ও পা কেটে দিতে হবে অথবা কারারুদ্ধ করতে হবে। ইহা তাদের জন্য দুনিয়ার লাঞ্ছনা এবং পরকালে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। কিন্তু তারা ব্যতীত যারা তওবা করে পূর্বে তোমাদেরকে তাদের উপর পরাভূত করবে; সুতরাং জেনে রাখ যে, আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়।
এই ধর্মাবমাননার ব্যাপারে বা নবীকে গালি- গালাচ করার ব্যাপারে একটি হাদিসে উল্লেখ আছে যে— হত্যা কর তাদেরকে যারা নবীকে গালি- গালাচ করে।
যেহেতু ইসলামে ধর্মাবমাননা ভেতর জরুরিয়্যাতে দীনের প্রত্যাখ্যানও অন্তর্ভুক্তর্ভু, তাই ধর্ম অবমাননা কে ঐতিহাসিকভাবে ইসলাম ত্যাগের প্রমাণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে, অর্থাৎ মুরতাদ হওয়ার অপরাধ এবং এই মুরতাদের শরীয়াতে হুকুম, কাফেরের থেকেও খারাব। ফকিহগণ বিশ্বাস করেন যে, একজন মুসলিম যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজেকে মুসলিম সূচিত করে, এমন ব্যাক্তি ধর্ম অবমাননা করার দ্বারা দায়েরায়ে ইসলাম থেকে বের হয়ে যায়। কিছু কর্ম বা আচরণের ভিত্তিতে কোনো মুসলিম কখনও কখনও নিজেই ধর্ম অবমাননার দোষে দূষ্ট হতে পারেন, একইভাবে একজন মুরতাদও। সমস্ত ধর্ম অবমাননাই ধর্মত্যাগ নয়, অবশ্যই, যেমন একজন অমুসলিম যে ইসলামের বিরুদ্ধে অবমাননাকর কিছু করে তাকে ধর্মত্যাগ বলা চলে না।
এখন বর্তমান পরিস্তিথিতে এরকম অনেক মুসলমানের নিজের নিজের দল বা ফিরকা বের হয়েছে, যারা বোধহয় মনে করে থাকেন যে তাদের যেই ফিরকাটি যেটা তারা বের করেছেন, সেটা একদমই ঠিক। কিন্তু তাদের এই ভাবনাটি একেবারেই ভুল। তারা কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করে থাকে, অথচ তারা জানে যে অবমাননার ফল কী হতে পারে।