রিয়ার ভাব মহা পাপ
রিয়া কথাটির অর্থ হচ্ছে স্বিয় ইবাদতের দ্বারা অপরের মনে আধিপত্য বিস্তার আশা করা, যা ইবাদাতের আসল উদ্দেশ্যের বিপরীত। ইবাদত করার মূল উদ্দেশ্য একমাত্র আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অর্জন করা। রিয়ার ভাব আসে মানুষের সন্তুষ্টির কামনায় তাই রিয়াকে ছোট শিরক হিসেবে গন্য করা হয়। আল্লাহ্ পাক কুরানে বলেনঃ
সেই সমস্ত নামাযীদের জন্য ধ্বংস যারা নামাজের প্রতী অমনোযোগী এবং যারা লোককে দেখানোর উদ্দেশ্যে ইবাদত করে। (কুরআন)
হাশরের দিনে আল্লাহ্র পথে জিহাদকারী, দাতা, আলিম, প্রভৃতি সকল দল আল্লাহ্র দরবারে দাঁড়িয়ে নিজের পুণ্য কাজের পুরুস্কার চাইবে, তখন আল্লাহ্ পাক তাদেরকে বলবেনঃ তোমরা জিহাদ করেছো, দান করেছো, ইল্ম অর্জন করেছো কিন্তু আমার সন্তুষ্টি অর্জন করার উদ্দেশ্যে নয় বরং এইজন্যই যে লোকেরা তোমাদের “গাজী”, “দাতা”, “আলিম” বলে ডাকে। তোমাদের উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়েছে। পৃথিবীতে তোমাদের সুনাম হয়েছে কিন্তু এখন আমার কাছে কোন প্রাপ্য নায়। সুতারং তোমাদের অবস্থান হচ্ছে জাহান্নাম।
হুজুর (সাঃ) বলেছেন কোন কাজে সামান্যতম রিয়া থাকলেও তা আল্লাহ্ তায়ালা গ্রহন করবেন না।
রিয়া হারাম হাওার কারণসমূহঃ
- প্রথমত, রিয়ার মাধ্যমে আল্লাহ্র বান্দাদের পরিষ্কার ধোকা দেওয়া হয় এবং ধোকা শরীয়তে পরিপূর্ণ হারাম। পীর ও সূফী সেজে মানুষের কাছ থেকে হাদিয়া বা সদকা খাওয়ার নিয়ত থাকলে তা যে কত বড় ডাকাতি তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
- দ্বিতীয়ত, রিয়া করে আল্লাহ্ পাকের সাথে স্পষ্ট বেয়াদবি করা হয়। কোন এক ব্যাক্তি যদি রাজার দরবারে তার সেবক রূপে যায় কিন্তু তার উদ্দেশ্য মাত্র রাজার সুন্দরী বাঁদির দর্শন লাভ করা তাহলে রাজা যখনই তার উদ্দেশ্য জানতে পারবে তখনই তাকে কঠোর দণ্ড দিবে। সুতারং আল্লাহ্ পাক তো আলিমুল-গায়েব! তবে তিনি যখন দেখেন যে কোন বান্দা তাঁর দরবারে দাঁড়িয়ে গাইরুল্লাহর দিকে মন দিচ্ছে তখনই তার ঠিকানা আগুনে করে দেবে।
রিয়ার কিছু প্রকারভেদঃ
- অঙ্গ-প্রতঙ্গের মাধ্যমে রিয়াঃ দেহের দুর্বলতা দেখিয়ে নিজের রোজার বা রাত জাগার ভাব প্রকাশ করা।
- আকার-আকৃতি ও বেশভূষায় রিয়াঃ লোকজন সুফী ভাববে সেই আশায় নিজের পশাক-পরিধন সুফীদীর মত করে নেওয়া। এর উদ্দেশ্য হল উলামা ও মাশাইখদের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করা বা ধনী ব্যাক্তিদের মন জয় করা।
- ইবাদতে রিয়াঃ যেমন নামাযের কিয়াম, রুকু, সেজদা, ইত্যাদিতে বেশ দেরি করা যাতে লোক ভাবে সে অনেক মনোযোগ সহকারে নামায পড়ছে।
- ঈমানে রিয়াঃ ঈমানে যদি কেউ রিয়া করে অর্থাৎ অন্তরে কুফর রেখে লোক দেখানো ভাবে মুসলমান হয় তাহলে সে হল মুনাফিক। যদিও সে আমাদের নজরে নিজেকে লুকিয়ে রাখে কিন্তু আল্লাহ্র দৃষ্টিতে সে সম্পূর্ণরূপই কাফির।
রিয়া দূর করার উপায়ঃ
প্রশংসা জনিত রিয়া থেকে বাঁচার জন্য একটা কথা মনে আনতে হবে যে, আজকে যারা আমার সুনাম করছে তারাই কাল আমাকে এই বলে অপমানিত ও লজ্জিত করবে যে তুমি দুনিয়াতে আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছ এবং আমায় পাপী বলে সম্বোধন করবে। আমার সমস্ত ইবাদাতও বেকার হয়ে যাবে। তাহলে আমি নিজের ক্ষতি নিজেয় কেন করছি? এরকম রিয়া থেকে বাঁচার অন্যতম উপায় হল এই কথা ভাবা যে, যারা আজ পৃথিবীতে আমার প্রশংসা করছে আল্লাহ্ চাইলে তারা আমার ব্যপারে মন্দ কথাও বলতে পারে।
অপবাদ আশাঙ্কাযুক্ত রিয়া অর্থাৎ লোকে খারাপ ভাববে সেই ভয়ে ইবাদত করাও একধরনের শিরক। ইহা থেকে বাঁচতে হলে নিজের মনে ভাবতে হবে যে, আমি যদি আল্লাহ্র নিকট প্রিয় হই তাহলে লকের মন্দ বলায় আমার কোন ক্ষতি হয় না। লোকের অপবাদের ভয়ে আল্লাহ্কে নারাজ করে আমি যে ইবাদত করছি আপাততঃ হয়তো কোন অসুবিধে হবেনা কিন্তু যেদিন আমার ভণ্ডামির মুখোশ খুলবে সেদিন পুনরায় আমি অপমানিত হবো এবং এই সমস্ত আমলও নষ্ট হয়ে যাবে।
ধন লিপ্সা জনিত রিয়া অর্থাৎ ধন-সম্পদ লাভের আশাঙ্কাও যে রিয়া হয় তা থেকে বাঁচার জন্য অন্তরে চিন্তা করে দেখতে হবে যে, আমি যার লোভে এই ভণ্ডামি করছি তা লাভ হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে। কিন্তু এর কারনে আমি আল্লাহ্র অসন্তুষ্টি অর্জন করছি তা নিশ্চিত।অতএব একটি অনিশ্চিত বিষয়ের জন্য একটি নিশ্চিত বিপদকে কেন ডেকে আনবো?
এটি হচ্ছে হৃদয়ের একটি বিপজ্জনক ব্যাধি। তাই আমাদের একান্ত কর্তব্য যে আমরা এই জিনিসটি থেকে দূরে থাকি ও ইখলাসের সঙ্গে সব কাজ করি তহলে আমাদের আমল আমাদের প্রতি উপকারী হবে।