অহংকার মানুষ কে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়

মহান রাব্বুল ইজ্জত আমাদের কে এই দুনিয়ায় সৃষ্টি করে যখন পাঠিয়েছিলেন সে সময় আমাদের হাতে না কোন সম্পদ ছিল না কোন ধনদাওলাত খালি হাতে এই দুনিয়া তে এসেছিলাম খালি হাতেই যেতে হবে শুধু মাত্র আমাদের হাতে আমাদের আমল নামাটি থাকবে তাতেও মানুষের মধ্যে অহংকার জেগে ওঠে যার পরকালে কোন অস্তিত্বই নেই। মানুষ নিজের ধনসম্পদ নিয়ে মানুষ কে তুচ্ছ করে অহংকার দেখায় । এই জন্যই আল্লাহ তায়ালা কুরআন শরীফের সূরা ইশারার ৩৭ আয়াতে এরশাদ করেছেন-وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا إِنَّكَ لَن تَخْرِقَ الْأَرْضَ وَلَن تَبْلُغَ الْجِبَالَ طُولًا অর্থাৎ পৃথিবীতে দম্ভভরে পদচারণা করো না। নিশ্চয় তুমি তো ভূ পৃষ্ঠকে কখনই বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না।   

অহংকার এমন এক মারাত্মক আচরণ যা একজন বিনয়ী ও সফল ব্যক্তিকে তার সফলতার উচ্চস্থান থেকে মুহূর্তের মধ্যে নিচে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। কোনো বক্তিকে গরিব বলে ছোট বললে অহংকার হবে না বরং তাকে হেয় করলেই তা অহংকার হিসেবে পরিগণিত হবে। পৃথিবীর প্রথম পাপ কাজ হলো অহংকার। এ অহংকারের কারণেই ইবলিস আল্লাহ তাআলার নির্দেশ অমান্য করে নজির স্থাপন করেছিল। আরবিতে এ অহংকারকে উম্মুল আমরাজ বা সব রোগের জননী বলা হয়। আল্লাহ তাআলা হজরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করার পর সব ফেরেশতাদেরকে সেজদার নির্দেশ দিলেন, সব ফেরেশতা সেজদা করলেও ইবলিস হজরত আদমকে সেজদা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। কুরআনের ভাষায় আল্লাহ বলেন-

وَاِذْ قُلْنَا لِلْمَلئِكَةِ اسْجُدُوا لِادَمَ فَسَجَدُٓوا اِلَّٓا اِبْليسَ اَبى وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرينَ

‘সে অস্বীকৃতি জানাল এবং অহংকার করল। আর সে কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ৩৪)।

এটাই হলো পৃথিবীর প্রথম অহংকারের সূচনা। শুধু তাই নয়, বরং পৃথিবীর প্রথম পাপের সূচনাও এটি। যে কারণে ইবলিসকে জান্নাত থেকে বিতাড়িত হতে হয়েছিল।সুতরাং আমাদের জানা দরকার। অহংকার কী? সহজ ভাষায় বলতে গেলে অহংকার হলো- কোনো বিষয়ে নিজেকে অন্যের তুলনা সম্মানিত বা বড় মনে করা। অর্থ-সম্পদ বা বয়সে বড় হয়ে ছোট কাউকে ছোট মনে করা আবার অহংকার নয়; বরং অহংকার হলো কাউকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা বা অবজ্ঞা করা বা হেয় করাই হলো অহংকার। রাসূল (সাঃ) এক হাদিসে ইরশাদ করেছেন হজরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত । এক মুসলমান পরস্পরের ৫টি হক রয়েছে । তা হল-সালামের উত্তর দেওয়া, অসুস্থ ব্যাক্তি কে দেখতে যাওয়া,জানাজা নামাজে শিরেক হওয়া,দাওয়াত গ্রহণ করা এবং হাঁচির উত্তর দেওয়া (বুখারী ও মুসলিম) ।  

 

অহংকারী ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন না। তিনি অহংকারী ব্যক্তিকে অনেক নেয়ামত থেকে বঞ্চিত রাখবেন। আল্লাহ তাআলা কুরআন শরীফে ইরশাদ করেছেন - ‘দুনিয়াতে যারা অন্যায়ভাবে অহংকার প্রকাশ করে, তাদেরকে আমি অবশ্যই আমার নিদর্শনাবলী থেকে বিমুখ রাখবো’ (সুরা আরাফ : আয়াত ১৪৬)। এ কারণেই প্রিয়নবি (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, ‘যার অন্তরে তিল পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর যার অন্তরে তিল পরিমাণ ঈমান রয়েছে সে জাহান্নামে যাবে না’ (তিরমিজি)।

মনের রাখতে হবে অহংকার একটি মারাত্মক ব্যাধি। পবিত্র কুরআন এবং হাদিসে এ অহংকারের বিভিন্নরূপ নানাভাবে চিত্রায়িত হয়েছে। তা থেকে হেফাজত থাকা মুসলিম উম্মাহর একান্ত প্রয়োজন। আল্লাহ নিজের বান্দাদের  ইবাদত করতে পৃথিবীতে পাঠিয়েছে। আল্লাহ একটি মানুষের দেহকে সৃষ্টি করেছেন আগে থেকেই এখন আমাদের অপরিহার্য যে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন হয়েআল্লাহ কে সন্তষ্টি বা আল্লাহর প্রশংসা করা কিন্তু তাতেও যদি আমরা আল্লাহর কথা না ভেবে মানুষের সামনে অহংকার দেখায় মানুষ তুচ্ছ ভাবি তবে আল্লাহ কখনো আমাদের ক্ষমা করবেন না অর্থাৎ আমাদের কে অহংকার থেকে সর্বদা বিরত থাকতে হবে। অহংকারী ব্যক্তি কোনোভাবেই জান্নাতে যেতে পারবে না। জান্নাতে যেতে হলে বা পরকালের চূড়ান্ত সফলতা পেতে হলে অবশ্যই তাকে অহংকারমুক্ত থাকতে হবে।

হাদিসে শরীফে জান্নাতের বিপরীতে যেভাবে জাহান্নামের কথা বলা হয়েছে তেমনিভাবে হাদিসে ঈমানের বিপরীতে অহংকারের কথা বলে মুমিন মুসলমানকে সতর্ক করা হয়েছে। যাতে মুমিন ব্যক্তি অহংকার ত্যাগ করে ঈমানকে মজবুত করতে পারে। অহংকার থেকে বেঁচে থাকতে পারে।

এ অহংকারের ফলেই যুগে যুগে বড় বড় নেতা তথা ফেরাউন, নমরুদ, আবু লাহাব, উতবা, শায়বা এবং আবু জাহেলরা সত্যকে মেনে নিতে পারেনি। ইসলাম গ্রহণ করতে পারেনি। তারা নিক্ষেপিত হয়েছে ধ্বংসের অতল গহ্বরে।

অহংকার হচ্ছে আল্লাহর চাদর। যে ব্যক্তি অহংকার নিয়ে টানাটানি করবে, আল্লাহ তাদের পছন্দ করেন না বরং ধ্বংস করে দেন। পক্ষান্তরে যারা আল্লাহ তাআলাকে বেশি বেশি ভয় এবং সম্মান করে তারাই হলো অধিক সম্মানিত ও সফল। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে সবচেয়ে সম্মানিত সেই ব্যক্তি, যে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুক্তাকি বা আল্লাহভিরু।’ (সুরা হুজরাত : আয়াত ১৯)

আল্লাহ তআলা মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়া ও পরকালের পতনের মুল অহংকার থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। তার ভয় এবং ভালোবাসার মাধ্যমে দুনিয়া ও পরকালে সম্মানিত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

অহংকার নিয়ে বিভিন্ন মতভেদ

  • বুদ্ধিকে অহংকার ভেবে কখনও ভুল করবেন না। – ডি.বি. হাররূপ
  • অহংকার হলো অন্যকে বোঝানোর চেষ্টা করা যে আপনি তারা যা জানেন তার চেয়েও বেশি। – বিয়ানকা ফ্রেজিয়ার
  • আপনার হৃদয় নম্রতার কেন্দ্রবিন্দু, আপনার মন অহংকারের উৎস হতে পারে। – তারিক রমজান
  • অহংকার জনসাধারণের কাছে নম্র দেখাতে পছন্দ করে। –  টোবা বিটা
  • যে ব্যক্তি অহংকার করে সে অন্যের অহংকারকে ঘৃণার চোখে দেখে। – ফ্র্যাংকলিন
  • অহংকার হচ্ছে, সত্যকে উপেক্ষা করা এবং মানুষকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা। – সহিহ মুসলিম
  • মানুষ যত ছোট হয় তার অহংকার ততই বড় হয়। – ভোল্টায়ার
  • যে ব্যক্তি অহংকার করে সে অন্যের অহংকারকে ঘৃণার চোখে দেখে। – ফ্র্যাংকলিন

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter