রমজান মাসের এক বিশেষ আমল দুরুদ শরীফ
রমজান মাসের এক বিশেষ আমল হল নবীর উপর দুরুদ ও সালাম পড়া। নবী (সা:) হতে বর্ণিত রয়েছে যে, তোমাদের মধ্যে যে ব্যাক্তি রমজান মাসে একটি নেক আমল বা কাজ করবে, তার পরিদান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন বাকি মাসের চেয়ে সাতশো গুন বাড়িয়ে দিবেন। আর দুরুদ পড়া এক সর্বপ্রিয় আমল। আল্লাহর নবী ইরশাদ করেছেন من صلى علي صلاة صلى الله به عشرا অর্থাৎ যে ব্যাক্তি নবীর উপর একবার দুরুদ পড়ল আল্লাহ্ রাব্বুল ইজ্জাত তার আমল নামায় দশ নেকী লিখে দেন। বাকী মাসে যদি একবার দুরুদ পড়ার কারণে দশ নেকী পাওয়া যায়, তাহলে এই পবিত্র রমজান মাসে একবার দুরূদ পড়লে কত নেকী হতে পারে নিজেরাই ভাবুন! আল্লাহ্ আকবর!
আজ আমরা বাড়ি তৈরি করছি। ইট গাঁথা ও পলোস্তর করার পর রং করি। যাতে সেই বাড়িটি দেখতে বেশ সুন্দর লাগে। বাড়িতে যত বেশি জিনিস দিয়ে সাজানো হয় তার সৌন্দর্য ততই বৃদ্ধি পায়। ঠিক সেইরকম রোজা রাখার সঙ্গে সঙ্গে দুরুদ শরীফ পড়লে আমাদের এই রোজার সৌন্দর্য ততই বৃদ্ধি পাবে। আসুন সকলে মিলে আমাদের রোজার সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলি।
একটি ক্রিয়ার প্রতিফলনের নিমিত্তে একজন কর্তার প্রয়োজন হয়। কর্তা না থাকলে কর্ম ঘটে না যিকির যেহেতু একধরনের কর্ম, তার প্রতিফলনের জন্য যাকিরের (যেসব ব্যক্তি যিকর করে) প্রয়োজন হয়। জাকির ব্যতিত যিকর অসম্ভব। যিকর হতে গেলেই যাকিরের উপস্থিত থাকা আবশ্যক। যিকর আবার দুই ধরনের; এক জিকরুল্লাহ (ذكر الله) আর অপরটি হচ্ছে জিকরুন্নাবী (ذكر النبي)। তথা, আল্লাহর যিকরকারীদের মধ্যে আপনিও রয়েছেন আমিও রয়েছি এছাড়া আল্লাহর বিভিন্ন মাখলুক। সকলে কিন্তু মাখলুক। এরমধ্যে কেউ খালিক নন। কারণ আল্লাহ এক অদ্বিতীয়। আল্লাহ তাআলা কুরআন শরীফে ঘোষনা করে দিয়েছেন هو الله الذي لا إله إلا هو আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মাবুদ নাই। এতদ্বারা বুঝা গেল যারা আল্লাহর যিকির করে সকলে মাখলুক। আর كل من عليها فان অনুযায়ী সমস্ত জিনিস এক দিন ধ্বংস হয়ে যাবে। তাহলে এমনও এক সময় এসে দাঁড়াবে যখন আল্লাহর যিকির করার জন্য কেউ থাকবে না। আর সেটি হবে কিয়ামতের সময়। আল্লাহর রাসূল ইরশাদ করেছেন: لا تقوم الساعة حتى لا تقالَ في الأرض الله الله.
কিয়ামত ততক্ষন পর্যন্ত আসবে না যতক্ষণ না ভূমিতে আল্লাহর নাম নেওয়ার জন্য কেউ বাকি না থাকে। বোঝা গেল আমাদের সামনে এমন এক সময় এসে পৌঁছাবে যখন আল্লাহর যাকির এই পৃথিবীতে বাকি থাকবে না
কিন্তু যিকরুন্নবি এতই মূল্যবান সম্পদ যে কখনই শেষ হয়ে যেতে পারে না। নবীর যিকর আমি এবং আপনার মতো মাখলুকও করে। এমন কি আল্লাহ স্বয়ং নবীর যিকর করে। কুরআন শরীফে বর্ণিত রয়েছে যে, إن الله وملائكته يصلون على النبي অর্থাৎ অবশ্যই আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেশতারা নবীর উপর দুরূদ পড়ে। অতএব খালিক এবং মাখলুক দুজনই নবীর উপর দুরুদ পড়ে। আর كل من عليها فان অনুযায়ী সবে শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা যিনি অতীতে যেমন ছিলেন বর্তমানে তেমন আছেন এবং ভবিষ্যতেও একই রকম থাকবেন। না কখনও ধ্বংস হবে। বুঝা গেল না আল্লাহ ধ্বংস হবে, আর নাই বা জিকরে-মুস্তাফা শেষ হবে।
আসুন সকলে মিলে সেই নবীর উপর ভক্তি ভরে প্রাণ খুলে দুরুদ ও সালাম জানাই اللهم صل على سيدنا مولانا محمد وعلى آل سيدنا مولانا محمد حبيبنا شفيعنا سيدنا مولانا محمد صلى الله عليه وسلم.
সেই নবীর উপর দুরুদ পড়তে কিসের কৃপণ। যেই নবী আমাদের এমন শিক্ষা দিয়েছেন যার উপর আমল করলে আমরা সমস্ত কষ্ট ও অশান্তি থেকে বঞ্চিত থাকতে পারি। যেই নবী এই গুনাহগার উম্মতের এক বিন্দু মাত্র কষ্ট সহ্য করতে পারে না।
দেখুন নবীদের সরদার নিজের উম্মতের জন্য কতই না চিন্তা করেন। রোজা অর্থাৎ সূর্য উদয়ের পূর্ব থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সমস্ত ধরনের পানাহার থেকে বঞ্চিত থাকা। সেহরী না খাওয়া হলে রাতের খাবার খেয়েই রোজা রাখতে হবে। এই পরিস্থিতি দেখে উম্মতের দরদী নবী ইরশাদ করলেন تسحروا فأن في السحر بركة অর্থাৎ তোমরা সেহরি খাও, সেহরি খাওয়াই বরকত রয়েছে। দেখুন উম্মতের জন্য নবীর ব্যাথা।
এইটুকুই শেষ নই, সেদিকে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন হাদিসুল কুদসীতে ইরশাদ করেছেন أحب عبادي إلي أعجلهم فطرا অর্থাৎ আমার নিকট সবথেকে প্রিয়তম বান্দা হচ্ছে যারা তাড়াতাড়ি ইফতারি করে।
এই হচ্ছে নবীর মায়া উম্মতের জন্য। একদিকে সেহরি করালেন আর একদিকে ইফতারি তাড়াতাড়ি করালেন। আসুন সকলে মিলে সেই উম্মতের কান্ডারী নবীর উপর দুরুদ পড়ার চেষ্টা করি এবং জাহান্নাম থেকে বাচি।