নবী সাঃ-এর নাবুওয়াতের পর

যখন নবী (সাঃ)-এর  ৪০ বছর বয়স হয়ে যাই। তখন নবী (সাঃ) একা  থাকতে পছন্দ করেন। এই বছরটা  এক খুসির বছর কেননা এই সময় আল্লাহ্ তায়ালা তিনাকে নবুয়াত প্রদান করেন। সব থেকে বেশি নবী (সাঃ) একাকী থাকতেন। তিনি মক্কা থেকে বের হয়ে বাড়ি থেকে কোনো এক দূর জাইগায় পাহাড়ে গিয়ে আল্লাহ্কে স্বরণ করতেন। নবী (সাঃ) এমন এক মানুষ ছিলেন যিনি প্রথম ভালো স্বপ্ন  দেখেন। তিনি   হিরা গুহায় বেশির ভাগ থাকতেন। সেখানে তিনি আল্লাহ্ তায়লার ইবাদাতে এবং তরিকায়ে ইব্রাহিমে মানুষকে ডাকতেন ।


নাবুয়াত অর্জন
সময়টি ছিল ১৭ রামযান ৬১০ সালে, যখন নাবী (সাঃ) হীরা গুহার ভীতরে বসে ছিলেন তখন জিব্রাইল (আঃ) নবীর দিকে আসেন এবং বলেন: ইয়া নবী পরেন। নাবী (সাঃ) উত্তর দেন: আমি পড়িনি।  তখন জিব্রাইল (আঃ) তিনাকে কোষে ধরেন এবং আবার পরতে বলেন। তারপর তিনি মনে করেন। জিব্রাইল (আঃ) নবী (সাঃ)-কে পড়ার জন্য জোর করেন। নবী (সাঃ)-কে কোষে ধরেন এবং  পরতে বলেন কিন্তু একই ব্যাপার। এরপর জিব্রাইল (আঃ) নবী (সাঃ)-এর উপর কিছু আয়াত পড়েন। সূরা আলাকের প্রথম পাঁচ আয়াত অবতীর্ণ হয়।


খাদিজার ঘরে
এই সব ঘটনা হওয়ার পর নবী (সাঃ) নিজের প্রতি অনেক ভয় পান। তিনি তাড়াতাড়ি হিরা গুহা থেকে বাড়ি ফিরে আসেন এবং সমস্ত ঘটনা খাদিজা (রাঃ)-কে শুনান। তখন খাদিজা (রাঃ) নবী (সাঃ)-কে চাদর দিয়ে ঢেঁকে দেন। খাদিজা (রাঃ) ছিলেন এক বুদ্ধিমতী মহিলা। তিনি জানতেন নাবুয়াত কী? তিনি নবী (সাঃ)-কে ওরাকাহ বিন নাওফালের কাছে নিয়ে যান। তখন নবী (সাঃ) তিনাকে পুরো ঘটান বলেন। সব কিছু শুনার পর ওরাকাহ বলেন: আমার নাফস যার হাতে আছে তার কসম, নিশ্চয় তিনি আপনাকে এই উম্মতের  নবী হয়ে প্রেরণ করেছেন। আপনার কাছে যে এসেছিলেন তিনি নামুস (জিব্রাইল আঃ ) ছিলেন। আপনার এই উম্মত আপনাকে মিথ্যা বলবে, আপনাকে হত্যা করার প্রয়াস করবে। এইসব শুনে নবী (সাঃ) হতবম্ব হয়ে যান এবং বলেন যে উম্মত আমাকে সদিক আর আমিন বলে সেই উম্মত নাকি আবার আমার সঙ্গে ধোঁকা দিবে এবং আমাকে মিথ্যাবাদী বলে গণ্য করবে।
ওরাকাহ বলেন: হ্যাঁ, তারা আপনার সঙ্গে এই রকম আচরণ করবে। আমি যদি জিন্দা থাকি তবে নিশ্চয় আমি আপনাকে সাহায্য করবো। এরপর খাদিজা (রাঃ) আল্লাহ্ এবং আল্লাহর রাসুলের উপর ঈমান নিয়ে আসেন।


ইসলাম গ্রহন
আলী বিন আবি তালিব এবং যায়িদ বিন হারিস ইসলাম গ্রহন করেন। মানুষেরা ইসলামকে চিনতে পারে এবং আবু বাক্কার বিন কুহাফা তিনি ইসলামের দিকে আগ্রসর হন । তিনি ছিলেন কুরাইসের এক মান্য লোক। তিনি ইসলাম কুবুল করার পর আল্লাহ্ এবং আল্লাহর রসুলের পথে দাওয়াত শুরু করেন।                                                                       ইসলাম-এর দাওয়াত পাওয়ার পর কুরাইসের লোকেরা ইসলামের দিকে আগ্রসর হন। যেমন উসমান বিন আফফান , যুবের বিন আউম, আব্দদুর রহমান বিন আওফ, থাল্লহা বিন উবেয়দুল্ললা প্রমুখ সব লোকেরা ইসলামের দিকে  আগ্রসর হন।
উবেইদাত বিন যারাহা, সাইদ বিন যায়দ, আরকামু বিন আবি আরকাম  সব লোকেরা ইসলামের দিকে  আগ্রসর হন। আস্তে আস্তে ইসলাম পুরো মক্কাতে প্রসারন হতে লাগে।


সাফা পাহাড়ে নবী (সাঃ)-এর  দাওয়াত
সে সময়ই নবী (সাঃ) মক্কাতে গুপ্তভাবে ইসলাম -এর দাওয়াত দিতে শুরু করেন। এইরকম করে প্রথম তিন বছর অতিবাহিত হয়ে গেল। তারপর আল্লাহ্ তায়ালা তিনাকে  ইসলামের দাওয়াত সবার সামনে প্রকাশ করতে বলেন।
আল্লাহ্ তায়ালা নবী (সাঃ)-কে হুকুম দেন যে, হে নবী আপনাকে যা হুকুম দেও হচ্ছে তা পালন করুন এবং সমস্ত মুসরিকগনদের বিরোধিতা  করুন। আর আপনার উম্মাতকে আপনি ভয় দেখান এবং আপনি তাদেরকে সাবধান করেন।  তার জন্য নবী (সাঃ)  সাফা নামক পাহাড়ে চেপে তিনার উঁচু আওয়াজে সমস্ত লোককে ডাকেন: এ  বানি আব্দুল মুত্তালিব, এ বানি ফাহার, এ বানি কাব! তোমাদের কে আমি যদি বলি যে পাহারের ওই পার থেকে শত্রুগন তোমাদের উপর আক্রমন করতে আসছে তোমরা কি আমার উপর বিশ্বাস করবে?  মক্কাবাসীরা জানতো যে মুহাম্মাদ একজন সত্যবাদী, তিনি কাওকে মিথ্যা কথা বলেনা। তার জন্য তারা বলে: নিশ্চয় আমরা আপনার উপর বিশ্বাস করবো।  তারপর নবী (সাঃ) বলেন তাহলে আমি তোমাদেরকে সাবধান করে দিচ্ছি সেই ভয়ানক আযাব থেকে, যা তোমাদের উপর আসতে  চলেছে । তোমরা সে এক আল্লাহ্ তায়ালার ইবাদাত করো যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি ছাড়া আর মাবূদ নাই, তিনিই  মহান।


এইসব   কিছু বলার পর , তাদের মধ্যে থেকে আবু লাহাব বলে উঠে:  তোমার ধ্বংস হোক, এই মুহাম্মাদ। তুমি আমাদের কে এইসব বলার জন্য ডেকেছো। আর ধিরে  ধিরে নবী (সাঃ) ইসলামের প্রচারের কাজে লেগে যান এবং আল্লাহ্ তায়ালার  হুকুম নিজের উম্মতকে বোঝাতে থাকেন। নবী (সাঃ) মক্কায় ইসলামের দাওয়াত দিতে থাকেন; তার সাথে সাথে তিনার শত্রুর সংখ্যা বারতে থাকে।  তার জন্য কুরাইশরা তিনার চাচার কাছে গিয়ে নালিস করেন যে মুহাম্মাদ আমাদের পূর্বপুরুষদের অপমান করেছেন। তখন তিনার চাচা আবু তালিব নবী (সাঃ)-কে এইসব কাজ করতে মানা করেন। নবী (সাঃ) বলেন: এ আমার চাচা যদি তারা আমার ডান হাতে সূর্য এবং বাম হাতে চাঁদ রেখে দেয়, তবুও আমি আমার কথা থেকে সোরে যাবনা।


মুসলমানদের উপর কুরাইশদের অত্যাচার
রসুল (সাঃ) ইসলামের দাওয়াত দিতে থাকেন। যার ফলে কাফের কুরাইশরা তিনার উপর রাগান্বিত হয়।  তাদের পরিবারের মধ্য যারা ইসলামের দিকে অগ্রসর হয়েছে তাদের উপর তারা খুব রাগান্বিত হয়। যারা ইসলাম গ্রহণ করে তাঁদেরকে শাস্তি দেয়; তাদেরকে মেরে অথাবা না খাওয়ে রেখে বিভিন্ন দিক থেকে তারা মুসলিমদের উপর অত্যাচার শুরু করে।                                                            এক উদাহরণ স্বরূপ আমরা বলতে পারি যে, বেলাল হাবসি (রাঃ) যিনি উমাইয়া বিন খালফের গুলাম ছিলেন। তিনি সময় ইসলাম গ্রহণ করেন। তার জন্য তিনাকে মূরুভুমি উপর ফেলে দিয়ে তিনার শরীর থেকে কাপড় খুলে তার পেটের উপর গরম বালি নিক্ষেপ করা হয়। তাকে কুরাইশ নবীর সঙ্গে কুফুর করতে বলে কিন্তু বেলাল হাবসি (রাঃ) তাদের কথা শুনেনি। এই দেখে আবু বাক্কার (রাঃ) বেলাল হাবসি (রাঃ)-কে কাছ থেকে ক্রয় করে মুক্ত করেন। আস্তে আস্তে মক্কাবাসীরা যত ইসলামের দিকে অগ্রসর হতে লাগলো; কুরাইশরা তাঁদেরকে ইসলামের রাস্তা থেকে সরাতে অক্ষম হয়। এই সময় তারা নবী (সাঃ)-এর প্রতি যুদ্ধ ঘোষণা করে। তারা নবীকে খারাপ বাক্য দিয়ে অপমান করে। তারা বলে যে মুহাম্মাদ এক মিথ্যাবাদী লোক, জাদুগর, জ্যোতিষী, পাগল ইত্যাদি কিন্তু নবী (সাঃ) তাঁদের কথাই কান না দিয়ে ইসলামের  প্রসারনে কাজ করতে থাকেন। কুরাইশগরা নবী (সাঃ)-কে হত্যা করার জন্য নানা রকমের ষড়যন্ত্র করতে থাকে কিন্তু আল্লাহ্ তায়ালা নবী (সাঃ)-কে সমস্ত বিপদ থেকে রক্ষ্যা করেন।


শেষ বাক্য
হযরত মুদাম্মাদ (সাঃ) এবং তিনার সাহাবাগনেরা ইসলামকে মক্কা থেকে নিয়ে শুরু করে পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করতে লাগেন। আরব কুরাইশরা মক্কার মুসলিমদের উপর আত্যাচার দিগুণ করে, যার ফলে মুসালিমদের মক্কায় থাকা খুব কষ্টকর হয়ে যায়। নবী (সাঃ) মুসলমানদের মক্কা থেকে  হাবসা নামক জাগায় প্রথম হিজরত করার আদেশ দেন এবং সেখানেও ইসলামের কাজ আরম্ভ হয়। নবী (সাঃ) আমাদের জন্য নিজের রক্ত প্রবাহিত করেছেন। আমাদের উপর এটা দরকার যে আমরা আল্লাহ্ এবং নবী (সাঃ) যা আদেশ দিয়েছেন তা মান্য করা এবং একসঙ্গে ইসলামের জন্য কাজ করা।    

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter