মাফাতিহুল গায়েব: অজ্ঞেয়বাদী জ্ঞানের চাবিকাঠি শুধু আল্লাহর হাতে

ইসলাম একটি পরিপূর্ণ ও ভারসাম্যপূর্ণ জীবনব্যবস্থা, যার ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে আল্লাহর অবতীর্ণ কিতাব আল-কুরআন এবং তাঁর প্রেরিত রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাহর ওপর। এই দ্বীনের প্রতিটি নির্দেশনা মানুষের জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করে, পার্থিব ও পরলৌকিক মুক্তির পথ দেখায়।ইসলামের অন্যতম মূল আকীদা বা বিশ্বাসের স্তম্ভ হলো—ঈমান বিল গায়েব, অর্থাৎ অদৃশ্য বিষয়ে ঈমান আনা। গায়েব বলতে বোঝানো হয় এমন সব বিষয়, যা মানুষের ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতার বাইরে—যেগুলো মানুষ অনুভব করতে পারে না, কিন্তু যেগুলোর অস্তিত্ব ও সত্যতা কুরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। যেমন—আল্লাহর অস্তিত্ব, ফেরেশতাগণ, আখিরাত, জান্নাত-জাহান্নাম, তাকদীর ইত্যাদি।

মানুষের জ্ঞান সীমিত, আংশিক এবং কালিক। মানুষ কেবল তার চারপাশের দৃশ্যমান জগৎ নিয়ে কিছুটা জ্ঞান অর্জন করতে পারে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, গবেষণা—সবকিছুর অগ্রগতির পরেও কিছু বিষয় রয়ে যায়, যেগুলো মানুষের জ্ঞানের সীমার বাইরে। কারণ মানুষের বুদ্ধি ও ইন্দ্রিয়শক্তি সৃষ্টিগতভাবেই সীমাবদ্ধ। পক্ষান্তরে, আল্লাহর জ্ঞান অসীম, পরিপূর্ণ এবং চিরস্থায়ী। তিনি চিরন্তন, সর্বজ্ঞ, প্রত্যেকটি বিষয় সম্পর্কে পূর্ণ অবগত—তা দৃশ্যমান হোক কিংবা অদৃশ্য।এই দুনিয়ার বহু রহস্য আছে যেগুলো মানুষের কাছে চিরকাল অজানা থাকবে। কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তাআলা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন এমন পাঁচটি বিষয়, যেগুলো সম্পর্কে নির্ভুল ও পূর্ণ জ্ঞান কেবলমাত্র আল্লাহ তাআলার কাছেই রয়েছে। মানুষ, যতোই বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে এগিয়ে যাক না কেন, এই পাঁচটি অদৃশ্য বিষয় কখনোই পরিপূর্ণভাবে জানতে বা নির্ধারণ করতে পারবে না।এই পাঁচটি অজানা বিষয়কে ইসলামের পরিভাষায় বলা হয় মাফাতিহুল গায়েব বা গায়েবের চাবি। এগুলো এমন রহস্য যা আল্লাহ তাআলা তাঁর একচ্ছত্র জ্ঞান দ্বারা সংরক্ষিত রেখেছেন। হাদীসে রাসূল (সাঃ) পরিষ্কারভাবে বলেছেন, এ পাঁচটি বিষয়ে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ কিছুই জানে না।তাই এই বিশ্বাস একজন মুসলমানকে নিজের সীমাবদ্ধতা উপলব্ধি করতে শেখায়, তাকে আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা ও তাওয়াক্কুলে উদ্বুদ্ধ করে, এবং কুসংস্কার ও মানবঘটিত অন্ধ বিশ্বাস থেকে মুক্ত রাখে।

গায়েবের চাবি: কুরআন ও হাদিস থেকে প্রমাণিত:

ইসলামের মৌলিক শিক্ষাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, গায়েব বা অদৃশ্য বিষয়ে ঈমান রাখা। এই অদৃশ্য জগৎ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান সীমিত। কিন্তু আল্লাহর জ্ঞান সীমাহীন, নিখুঁত ও অনন্ত। এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের একাধিক স্থানে স্পষ্ট ভাষায় বর্ণনা দিয়েছেন। তবে সবচেয়ে সুস্পষ্ট ও প্রসিদ্ধ আয়াতটি হলো সূরা লুকমানের ৩৪ নম্বর আয়াত, যা ‘মাফাতিহুল গায়েব’ তথা গায়েবের চাবি নামে প্রসিদ্ধ। তাই এই স্থানে আল্লাহ তায়ালা বলেন:

নিশ্চয়ই কিয়ামতের জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর নিকটেই রয়েছে। তিনিই বর্ষণ ঘটান,তিনি জানেন যা মাতৃগর্ভে রয়েছে,কেউ জানে না আগামীকাল সে কী উপার্জন করবে,কেউ জানে না কোন ভূমিতে তার মৃত্যু হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত।এই একটি আয়াতেই গায়েবের এমন পাঁচটি বিষয়ে আল্লাহর একচ্ছত্র জ্ঞানের ঘোষণা রয়েছে। যেগুলো মানবজাতির ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। এই আয়াতে গায়েবের পাঁচটি বিষয়কে এমনভাবে তুলে ধরা হয়েছে, যা মানুষকে তার জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা স্মরণ করিয়ে দেয় এবং একমাত্র আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল (ভরসা) করার শিক্ষা দেয়।

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীসের মাধ্যমে আরও স্পষ্টভাবে এই পাঁচটি গায়েব নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যেমন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত একটি সহীহ হাদীসে এসেছে: গায়েবের চাবিগুলো পাঁচটি, যা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না।-সহীহ বুখারী, 

এই হাদীসটি মূলত সূরা লুকমানের উক্ত আয়াতের তাফসির হিসেবে বিবেচিত হয়। রাসূল (সাঃ) এই হাদীসের মাধ্যমে মানবজাতিকে অত্যন্ত স্পষ্ট ও সরলভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, এ পাঁচটি গায়েবের চাবি এমন এক রহস্যময় জ্ঞান, যা কেবল আল্লাহর গোপনভাণ্ডারে সংরক্ষিত। এই পাঁচটি বিষয় এমন নয় যে এগুলো বিজ্ঞান বা অভিজ্ঞতার মাধ্যমে জানাজানা সম্ভব।বরং এগুলোর প্রকৃত জ্ঞান কেবল আল্লাহর কাছেই সীমাবদ্ধ এবং কিয়ামত পর্যন্ত তা মানুষের অজানাই থাকবে।

এছাড়াও অন্যান্য আয়াত ও হাদীসেও গায়েব বিষয়ে মানুষের অজ্ঞতা ও আল্লাহর সর্বজ্ঞতার স্পষ্ট দিকনির্দেশ পাওয়া যায়। যেমন: আল্লাহ বলেন: 

আসমান ও জমিনের গায়েব কেবল আল্লাহরই জ্ঞানভুক্ত।- সূরা নাহল,

আরেক স্থানে বলেন: 

তিনি গায়েব সম্পর্কে কাউকে অবগত করেন না, তবে যাকে তিনি রাসূলরূপে মনোনীত করেন।- সূরা আল-জিন,

এই আয়াতগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা গায়েবের ব্যাপারে একাধারে দুটি মৌলিক কথা বুঝিয়ে দিয়েছেন যেমন- প্রথম গায়েব শুধু আল্লাহর জ্ঞানে সীমাবদ্ধ। দ্বিতীয়- আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাঁর নির্বাচিত রাসূলদের কিছু অংশ বিশেষ গায়েব জানাতে পারেন, কিন্তু তা সর্বজ্ঞতার দাবি নয়।

গায়েবের পাঁচ চাবির বিস্তারিত বিশ্লেষণ

কুরআনুল কারীম ও সহীহ হাদীসে বর্ণিত গায়েবের পাঁচ চাবি বা “মাফাতিহুল গায়েব” এমন পাঁচটি বিষয়কে নির্দেশ করে। যেগুলোর সুনির্দিষ্ট জ্ঞান কেবলমাত্র আল্লাহ তাআলার কাছে আছে। মানুষ তার ইন্দ্রিয়, অভিজ্ঞতা, বিজ্ঞান, কিংবা প্রযুক্তির মাধ্যমে এই বিষয়গুলোর কোনোটি সম্পর্কে অনুমান করতে পারলেও, ভুল জ্ঞান কখনোই অর্জন করতে পারে। 

প্রথম: মাতৃগর্ভে কী রয়েছে – (مَا فِي الْأَرْحَامِ)

আল্লাহ তায়ালা বলেন:তিনি জানেন যা মাতৃগর্ভে রয়েছে। -সূরা লুকমান, আয়াত: ৩৪

আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে যেমন আল্ট্রাসাউন্ড বা ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে সন্তান লিঙ্গ বা কিছু শারীরিক বৈশিষ্ট্য অনুমান করা সম্ভব হলেও, এটি পুরো সত্য নয়। বাস্তবিক অর্থে গর্ভে থাকা অনাগত সন্তান কী চরিত্রের হবে?সে ঈমানদার না কাফের হবে?তার রিজিক কোথা থেকে আসবে?

সে কবে মারা যাবে বা কীভাবে?সমাজে তার ভূমিকা কী হবে?এই সব জ্ঞান মানুষের কাছে অস্পষ্ট কিন্তু মহান আল্লাহর কাছে স্পষ্ট।

দ্বিতীয়: আগামীকাল কী হবে – (مَاذَا تَكْسِبُ غَدًا)

আল্লাহ তায়ালা বলেন:কেউ জানে না আগামীকাল সে কী অর্জন করবে।-সূরা লুকমান, আয়াত: ৩৪

মানুষের জীবন পরিকল্পনা, স্বপ্ন ও প্রত্যাশায় ভরপুর হলেও ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণ অজানা। আজ সকালের মানুষ বিকেলে পৃথিবীতে থাকবে কি না, এই সম্পর্কেও নিশ্চয়তা কারো নেই। অনেকেই কাল কিছু বড় কিছু করতে চায়, কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছা ভিন্ন হলে কিছুই সম্ভব নয়।তাই একজন প্রকৃত ঈমানদারের উচিত প্রতিটি কাজ ‘ইন শা আল্লাহ’(আল্লাহ যদি চাই) বলে শুরু করা, এবং আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখা অপরিহার্য।

তৃতীয়: কখন বৃষ্টি হবে – (يُنَزِّلُ الْغَيْثَ)

আল্লাহ তায়ালা বলেন:তিনি বর্ষণ ঘটান।

-সূরা লুকমান, আয়াত: ৩৪

আবহাওয়ার অধিদপ্তর কখনো কখনো বৃষ্টির পূর্বাভাস দিতে পারে, কিন্তু প্রকৃত অর্থে কখন, কোথায়, কী পরিমাণ বৃষ্টি হবে এবং তা মানুষ বা প্রকৃতির জন্য আশীর্বাদ হবে নাকি বিপর্যয়! তা কেউই নিশ্চিতভাবে বলতে পারে না।তাই অনেক সময় দেখা যায়, যেখানে বৃষ্টি হবে বলে ধারণা করা হয়েছিল, সেখানে এক ফোঁটাও বৃষ্টি হয় না। আবার কোথাও অপ্রত্যাশিতভাবে ঝড়বৃষ্টি বা প্লাবন ঘটে। এর দ্বারা স্পষ্ট হয়, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ কেবল আল্লাহর হাতে।

চতুর্থ: কে কোথায় মারা যাবে- (فِي أَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ)

আল্লাহ তায়ালা বলেন:কেউ জানে না কোন ভূমিতে তার মৃত্যু হবে। সূরা লুকমান, আয়াত: ৩৪

মৃত্যু মানুষের জীবনের সবচেয়ে নিশ্চিত অথচ সবচেয়ে অজানা ঘটনা। কেউ জানে না সে কোথায় মৃত্যুবরণ করবে!নিজ দেশে না বিদেশে, নিজ ঘরে না রাস্তার ধারে, বিছানায় না দুর্ঘটনায়।

অনেক সময় মানুষ এক উদ্দেশ্যে এক স্থানে যায়, অথচ সেখানেই তার কবর রচিত হয়। এটি আল্লাহর নির্ধারিত ফয়সালা, যা কেউ পরিবর্তন করতে পারে না। এ আয়াত আমাদেরকে আত্মমর্যাদা নয়, আত্মসমর্পণের শিক্ষা দেয়।

পঞ্চম: কিয়ামতের সময় – (السَّاعَةَ)

আল্লাহ তায়ালা বলেন:লোকেরা তোমার নিকট কিয়ামতের সময় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলো: কিয়ামতের জ্ঞান তো একমাত্র আমার প্রভুর নিকটেই রয়েছে।-সূরা আহ্‌যাব, আয়াত: ৬৩

এটি হল সব গায়েবের মধ্যে সবচেয়ে বড় ও গম্ভীর রহস্য। কিয়ামত কখন ঘটবে,তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। এমনকি মহান ফেরেশতা জিবরাঈল (আঃ), যিনি ওহি নিয়ে আসতেন, তিনিও জানেন না।

হাদীস শরীফে এসেছে, জিবরাঈল (আঃ) যখন কিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন, রাসূল (সাঃ) বলেন:জিজ্ঞাসক যেমন জানেন না, জিজ্ঞাসিতও তেমনই জানেন না।-সহীহ মুসলিম,

তাই কিয়ামতের পূর্বাভাস বা অনুমান করে সময় নির্ধারণ করার প্রচেষ্টা চরম বিভ্রান্তিকর এবং ইসলামী আকীদার পরিপন্থী।

আমাদের করণীয় ও শিক্ষা:

“মাফাতিহুল গায়েব” বা গায়েবের চাবি সম্পর্কিত আলোচনার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি যে, মানুষ হিসেবে আমাদের জ্ঞান সীমিত এবং আল্লাহর জ্ঞানই পরিপূর্ণ ও নিরঙ্কুশ। তাই এই বিশ্বাসের আলোকে একজন মুমিন হিসেবে আমাদের করণীয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক আছে।

১. আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা ও তাওয়াক্কুল রাখা

যেহেতু ভবিষ্যৎ সম্পর্কে একমাত্র আল্লাহই জানেন, তাই আমাদের উচিত আমাদের পরিকল্পনা, দুঃখ, আনন্দ, প্রয়াস—সবকিছুতেই আল্লাহর উপর নির্ভর করা এবং তাঁর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকা। এই ভরসা একজন মুসলমানের হৃদয়কে শান্ত রাখে এবং জীবনে স্থিতি আনে।

. ভবিষ্যতের অজানা বিষয় নিয়ে অহেতুক দুশ্চিন্তা না করা।আগামীকাল কী ঘটবে,এমন দুশ্চিন্তা আমাদের কর্মক্ষমতা নষ্ট করে। ইসলামের শিক্ষা হলো যে- বর্তমানকে সঠিকভাবে কাজে লাগাও, ভবিষ্যতের ব্যাপার আল্লাহর হাতে ছেড়ে দাও। কারণ দুশ্চিন্তা ভবিষ্যত বদলায় না, বরং বর্তমানকে নষ্ট করে।

. কুসংস্কার ও জ্যোতিষবিদ্যার মতো বিভ্রান্তি থেকে দূরে থাকা।হাত দেখা, রাশিফল, জ্যোতিষশাস্ত্র বা অন্য কোনো গায়েব জানার দাবি ইসলামি আকীদার পরিপন্থী। এগুলোর ওপর বিশ্বাস করা হারাম, এবং তা একজন মুসলিমকে ধীরে ধীরে ঈমান থেকে বিচ্যুত করে দিতে পারে। প্রকৃত ঈমান হলো গায়েবের চাবি কেবল আল্লাহর কাছেই আছে। এই বিশ্বাস ধরে রাখা।

. প্রত্যেক দিনকে আখিরাতের প্রস্তুতির দিন হিসেবে মূল্যায়ন করা।যেহেতু আমরা জানি না কখন মৃত্যু আসবে বা কবে কিয়ামত ঘটবে, তাই প্রতিটি দিনকে যেন আমাদের জীবনের শেষ দিন মনে করে চলা উচিত। আমাদের আমল, ইবাদত ও আখলাক যেন সবসময় এমন হয় যেন আজই হিসাব দেওয়া লাগতে পারে।

. যেকোনো জ্ঞান ও পরিকল্পনার আগে ‘ইন শা আল্লাহ’ বলা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করা

ভবিষ্যতের ব্যাপারে কথা বলার সময় 'ইন শা আল্লাহ' (আল্লাহ চাইলে) বলা শুধু একটি বাক্য নয়, বরং এটি আমাদের ঈমান ও বিনয়ের প্রকাশ। কুরআনে বলা হয়েছে:কোনো বিষয়ে বলো না, যে- আমি এটা আগামীকাল করব’, যদি না তুমি ‘ইন শা আল্লাহ’ বলো।- সূরা কাহফ,

এই পাঁচটি দিক শুধু গায়েব বিশ্বাসের কল্পনা শিক্ষা নয়, বরং একজন মুমিনের বাস্তব জীবনযাপনের নীতিমালাও বটে। এসব শিক্ষা আমাদের হৃদয়কে আল্লাহর প্রতি আরও নত, চিন্তাকে পরিপক্ব, ও কর্মকে অধিক সুশৃঙ্খল করে তোলে।

উপসংহার:

এই পাঁচটি গায়েবের জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর হাতে থাকায়,আমাদের উচিত হলো যে- অহংকার পরিহার করে নিজের সীমাবদ্ধতা মেনে নেওয়া,

সব কাজে আল্লাহর ওপর নির্ভর করা,ভবিষ্যতের বিষয়ে আতঙ্ক না হয়ে আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী প্রস্তুতি গ্রহণ করা,কুসংস্কার ও গায়েব জানার ভণ্ড দাবি থেকে বেঁচে থাকা।এই চাবিগুলো এমনই শক্তিশালী যে, এগুলোর সামনে মানুষ নামক সৃষ্টি নিজেকে অসহায় এবং ক্ষুদ্র অনুভব করে। এতে একজন মুমিনের ঈমান আরও দৃঢ় হয় এবং অন্তরে আল্লাহর প্রতি ভয়, ভালোবাসা ও ভরসা সৃষ্টি হয়।তাই মাফাতিহুল গায়েব আমাদের ঈমান, বিনয়, আত্মসমর্পণ ও বিশ্বাসের অন্যতম স্তম্ভ। এই শিক্ষা মানুষকে তার সীমাবদ্ধতা বুঝতে শেখায় এবং একমাত্র আল্লাহর সর্বজ্ঞতা ও সর্বক্ষমতার সামনে নিজেকে সঁপে দিতে উৎসাহিত করে।আমরা যেন গায়েব সম্পর্কে সত্য জ্ঞান অর্জন করে কুসংস্কার ও গোমরাহি থেকে বাঁচতে পারি। আমিন

ওবাইদুর রাহমান একজন ডিগ্রি শেষ বর্ষের ছাত্র, যে বর্তমানে দারুল হুদা বেঙ্গল ক্যাম্পাসে অধ্যয়নরত। ইসলামী জ্ঞানচর্চা ও নৈতিক উন্নয়নের প্রতি গভীর অনুরাগী ওবাইদুর শিক্ষাজীবনে অধ্যবসায় ও নিষ্ঠার পরিচয় দিয়ে চলেছে।



Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter