ইয়াতিমের প্রতি সহানুভূতি

ইসলাম এমন একটি ধর্ম যেখানে সবাইকে সমান অধিকার দিয়ে বিচার করে থাকে। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধানের নাম, ধ্বনি-গরীব এর মধ্যে পার্থক্য করে না। সবাইকে সমান অধিকারের সহিত এগিয়ে নিয়ে চলে। একে উপরের প্রতি সহানুভূতি গড়ে তোলে।        
আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছে যারা ইয়াতীম (অনাথ)। তাদের কাছে না আছে ঘর-বাড়ি, না আছে আহারের জন্য পয়সা। আর না আছে ভালো একটা পোশাক পরিধান করার ক্ষমতা।তাদের জীবনটাকে রাস্তা-ঘাটে নিঃস্ব হয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখি। এই সমাজে বসবাসকারী সর্মর্থক ব্যক্তিগণ তাদেরকে প্রায় দেখে থাকে কিন্তু তাদের জন্য সহায়তার হাত এড়িয়ে দিবার বদলে তাদেরকে তুচ্ছ বলে মনে করে এবং তাদের দিকে ঘৃণা দৃষ্টিতে দৃষ্টিপাত করে। কিন্তু কোরআন ও হাদিস এই তুচ্ছু ইয়াতীমের ওপরে  বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে, বিভিন্ন জায়গাতে বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের সম্পর্কে বলে থাকে । 
আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে যে ইয়াতীম কে? 
ইয়াতীম শব্দটি একটি আরবি শব্দ যার অর্থ নিঃসঙ্গ। ইবনু মনজুর লিসানুল আরব বর্ণনা করেছেন 
اليتيم الذي يموت ابوه حتى يبلغ الحلم فاذا بلغ زال عنه اسمه اليتيم واليتيمة ما لم تتزوج فاذا تزوجت زال عنها اسم اليتيم
অর্থাৎ এমন বাচ্চাকে বলা হয় যার পিতা মারা গিয়েছে। বলেগ (সাবালোক) হওয়া অবধি সে ইয়াতীম হিসাবে গণ্য হবে, বালেগ (সাবালক) হবার পর ইয়াতীম নামটি তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। আর মেয়ে বাচ্চা বিয়ের পূর্ব পর্যন্ত ইয়াতীম বলে গণ্য করা হবে। তার বিয়ের পর আর এতিম বলে গণ্য করা হবেনা। যে সন্তানের বাল্যকালে তার মাতা (মা) মারা যায়, কিন্তু পিতা বেঁচে থাকে তাকে ইয়াতীম বলা হবে না।
যদি আমরা আমাদের মহান রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই-হি অ-সাল্লাম এর দিকে দৃষ্টিপাত করি তাহলে তিনার জীবনে দেখতে পাবে সেও একজন ইয়াতীম ছিলেন। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাই-হি অ-সাল্লাম  মাতৃগর্ভে থাকার অবস্থায় তিনার পিতা আব্দুল্লাহ ইন্তেকাল করেন। এবং ৬ বছর বয়সে মা আমিনা কেও হারান। তারপর তিনার লালন-পালন করন, তিনার দাদা আব্দুল মুত্তালিব। কিন্তু তিনিও এই দুনিয়া থেকে বিদায় জানান মাত্র দুই বছর পর। সে হিসেবে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাই-হি অ-সাল্লাম সর্বদিক থেকেই এতিম ছিলেন। 
তাই আল্লাহ তা'আলা তাঁর পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করে যেঃ-   
الم يجدك يتيما فئاوى, ووجدك ضآلّا فهدى, ووجدك عآئلا فأغنى, فأما اليتيم فلا تقهر 
অর্থাৎ তিনি কি আপনাকে ইয়াতীম রূপে পাননি? অতঃপর আশ্রয় দিয়েছেন। তিনি আপনাকে পেয়েছেন পথহারা, অতঃপর পথ প্রদর্শন করেছেন। আপনাকে পেয়েছে নিঃস্ব অতঃপর অভাব মুক্ত করেছ। সুতরাং আপনি ইয়াতীম প্রতি কঠোর হবেন না।
ইয়াতীম-এর প্রতিপালন ও সু-ব্যবহার সম্পর্কে:-   
لَا تَعْبُدُونَ الا الله وبالوالدين احسانا وذي القربى واليتامى والمساكين
"তোমরা আল্লাহ ব্যতীত কার দাসত্ব করোনা এবং পিতা মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম ও অভাবগ্রস্তদের সাথে সদ্য-ব্যবহার করবে। (বাকারাহ-৮৩) 
আর একটি আয়াতে রয়েছে-  
يسألونك ماذا ينفقون قل ما أنفقتم من خير فللوالدين و الأقربين و اليتامى و المساكين و ابن السبيل
 হাদিসে রয়েছে- 
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: كافل اليتيم له او لغيره أنا وهو كهاتين في الجنة واشار مالك بالسبابة والوسطى (روى مسلم)
অর্থাৎ:- আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই-হি অ-সাল্লাম  বলেছেন:- আমি ও ইয়াতীম প্রতিপালনকারীর অবস্থান জান্নাতে এই দুই আঙ্গুলের ন্যায় পাশাপাশি হবে। চাই সেই ইয়াতীম তার নিজের হোক অথবা অন্যর। (বর্ণনাকারী) মালিক বিন আনাস (রাঃ) তর্জনীয আঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করলেন।
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, যে ব্যক্তি আখিরাতে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাই-হি অ-সাল্লাম-এর সঙ্গে জান্নাতে থাকতে চাই। সে যেন এই হাদিসের ওপর আমল করে। এবং ইয়াতীম প্রতিপালনের প্রতি ব্রতী হয়। ইয়াতীমের প্রতি সহনুভূতিশীল হয়।
عن أبى هريرة رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: خير بيت في المسلمين بيت فيه يتيم يحسن إليه و شر بيت فى المسلمين بيت فيه يتيم يساء (سنن ابن ما جاء)
অর্থাৎ:- আবু হুরায়রা (রাঃ)হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাই-হি অ-সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যেঃ- হুজুর (সা:) বলেছেনঃ মসলমানদের ঘরের মধ্যে সেই ঘোরটি উত্তম, যে ঘরে ইয়াতীম রয়েছে এবং তাদের সাথে ভালো আচরণ করা হয়। আর মসলমানদের ঘরের মধ্যে সেই ঘরটি অতি নিকৃষ্ট, যে ঘরে ইয়াতীম রয়েছে কিন্তু তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়।     
হালিমা (রাঃ) তিনি ছিলেন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাই-হি অ-সাল্লাম-এর দুধমাতা, তিনি বর্ণনা করেন, হুজুর (সাঃ) ইয়াতীম হওয়ার কারণে আমার গোত্রের  লোকজন তাকে গ্রহণ করেনি। আর আমার উট অনেক দুর্বল ছিল সেই কারণে আমি সবার শেষে গিয়ে পৌঁছি। এরপর কোন উপায় না পেয়ে এই এতিম ছেলেকে গ্রহণ করি। যার ফলে আমার উট সবল হয়ে উঠে। আমি আমার গোত্রের সবার আগে পৌঁছে গেলাম। শুধু তা নয় আমার স্তনের দুধ, বকরি ও অন্যান্য

সকল বস্তুতে এই ইয়াতীম বালকের কারণে কল্পনাতীত বরকত ও রহমত নাযিল হতে থাকে।  
ইয়াতীমের সম্পদ অন্যায় ভাবে গ্রাস করার বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন-  
 واتوا اليتامى أموالهم ولا تتبدلوا الخبيث بالطيب ولا تأكلوا أموالهم إلى أموالكم انه كان هوبا كبيرا
ইয়াতীমকে তাদের মালামাল বুঝিয়ে দাও। এবং মন্দকে ভালো দ্বারা বদল করো না। আর তোমাদের মালের সাথে তাদের মাল ভক্ষণ করো না, নিশ্চয়ই এটি গুরুতর পাপ। (নেশা- ৮/২)
উপসংহার
ইয়াতীমের সম্পর্কে কোরআন ও হাদিস বিশেষ গুরপ্ত দিয়েছে। এবং তাদের সাথে সৎ ব্যবহার করার ও আদেশ দিয়েছে। সুতরাং আমাদের উচিত যে আমরা এই ইয়াতীমের প্রতি ভালো ব্যবহার করি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকেই যেন এই ইয়াতীমদেরকে সাহায্য করার তৈওফিক দেয় (আমিন)।

Related Posts

Leave A Comment

Voting Poll

Get Newsletter