ইলম শিক্ষা করার বিবরণ
ইলমের বর্ণনাঃ- ইলম দু-প্রকার। যথাঃ দুনিয়াবী ইলম ও দ্বীনী ইলম। এই ইলমের জ্ঞানীদের মহত্মের পরিচয় দিতে গিয়ে আল্লাহ তায়ালা কুরাআন শরীফে ইরশাদ করেছেন যে- يرفع الله الّذين امنوا منكم والّذين اوتوا العلم درجت
অর্থাৎ- আল্লাহ তায়ালা তোমাদের মধ্যে ইমানদারগণদের ও যাদেরকে জ্ঞান প্রদান করা হয়েছে তাদের মরজদা আল্লাহ সুভহান-তাআলা তাদেরকে সমুন্নত করবেন ।
এবং এই ইলমের বা জ্ঞানের বর্ণনা দিতে গিয়ে হাদিস শরীফে হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) ইরাশাদ করেছেন যে-
من يرد الله به خيرا يفقّهه في الدّين
অর্থাৎ- আল্লাহ তায়ালা যার মঙ্গল চান, তাকে দ্বীনের বোধ-বুদ্ধি দান করেন। এই পবিত্র হাদিশ দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে আল্লাহ তায়ালা যার মঙ্গল ভাল চান, তাকে দ্বীনের জ্ঞান গ্রহনের জন্য সুযোগ প্রদান করেন।
দুনিয়াবী ইলমঃ-
দুনিয়াবী ইলম অর্জন না করলে ইহকালিন উন্নতি হাছিল হয় না। ইহকাল হচ্ছে অস্থায়ী, এখন কার জামানাতে যদি দুনিয়াতে দেখা যায় মানুষ ইহকাল লাভের জন্য দুনিয়াবী ইলম লাভ করার নিমিত্ত হাজার হাজার টাকা খরচ করতে রাজি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু দ্বীনি ইলম বা জ্ঞান শিক্ষা করার জন্ন্য এক টাকাও পকেট থেকে বার হচ্ছে না। এখন কার জামানাতে দেখতে গেলে মানুষ বেশি দুনিয়াবী শিক্ষা অর্জন করছে এবং দ্বীনি ইলম থেকে বঞ্চিত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তারা বুঝতে পারছে না যে এই দুনিয়াবী ইলম শুধু আমাদের দুনিয়াতে কজে লাগবে দ্বীনে কোন কাজে লাগবে না কিন্তু আমরা যদি দ্বীনী ইলম অর্জন করি তাহলে আমাদের ইহকালিনে ও পরকালে দু-ই আমাদের জন্য কাজে লাগবে অর্থাৎ পরকালীনে ও ইহকালনিনে দু-ই উন্নত হবে। এবং এখন কার যে সব ছেলে-মেয়েরা দুনিয়াবী শিক্ষা অর্জন করছে তারা শুধু ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য। তাদের শুধু একটাই স্বপ্ন যে আমরা জাতে ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ার হতে পারি। কিন্তু তারা এটা ভাবে না যে আমরা যদি দ্বীনী ইলম শিক্ষা করি তাহলে আমাদের কত লাভ হবে।
দ্বীনী ইলমঃ-
দ্বীনী ইলম অর্জন না করলে পরকালীন উন্নতি হয় না। চিরস্থায়ী পরকালের মুক্তি লাভের জন্য দ্বীনী ইলম শিক্ষা করতে হাজার হাজার টাকা খরচ করতে মানুষ রাজি হয় না। সমাজের এ অবস্থার কারণ দ্বীনী শিক্ষা অজ্ঞতা এবং পরকালের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস না থাকে। অথচ দ্বীনী ইলম অর্জন করার ব্যাপারে হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন—প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উপর দ্বীনী শিক্ষা অর্জন করা অপরিহার্য (ফরয)। এই ফরয ত্যাগ করলে আমরা সকলে পরকালে কঠিন আজাব ও শাস্তির সম্মখিন হতে পারি। অপরের উপকারের জন্য প্রয়োজনের বেশি শিক্ষা অর্জন করা ফরযে কিফায়া, বিদ্যার সাগর হওয়া মুস্তাহাব। একশত জনের মধ্যে একশত জন মুসলমান নর-নারির উপরেয় দ্বীনী ইলম অর্জন করা ফরয। এই ইলম অর্জন করা প্রথম প্রকারের ইবাদাত।
বুখারী শরীফে একটি হাদিসে আছে, রাসুলে কারিম (সঃ) ইরশাদ করেন- সমস্ত রাত জেগে থেকে নফল ইবাদাত করার চেয়ে এক ঘণ্টা কাল ইলম শিক্ষা করা উত্তম। বর্তমান সমাজের মুসলমান সমাজ দ্বীনী ইলম অর্জনের ফরয ছেরে নিজের জীবনটাকে নষ্ট করে ফেলছে এবং তাদের সন্তান-সন্তনিদেরকে দ্বীনী ইলম অর্জন করতে অনিচ্ছুক হয়ে যাচ্ছে। মোটকথা নিজেরাও ফরয ইলম শিক্ষা করা থেকে বিরত থেকে জীবনটা নষ্ট করছে, এবং সন্তান-সন্তনিদের জীবনটাও নষ্ট করে ফেলছে।
দ্বীনী ইলম শিক্ষা করার ফযিলাতঃ-
পরকালের শাস্তি হতে মুক্তি পেতে হলে নিজেদেরকে দ্বীনী ইলম অর্জন করে ফরয আদায় করতে হবে। সন্তানদেরকে দ্বীনী ইলম অর্জন করাতে ও ফরয আদায় করাতে হবে। সন্তানদেরকে দ্বীনী ইলম শিখালে তারা মৃত্যুর পর কবরে থেকে দোয়া পেতে থাকবে এবং হাশরের মাঠে পুরস্কার স্বরূপ নূরের টুপি এবং রুমাল পাওয়ার আশা আছে। দ্বীনী ইলম অর্জন করতে গিয়ে যদি কেউ মারা যায় তাহলে তাদের মরজদা খুবি উচ্চস্তরে হবে, এই ব্যাপারে পবিত্র হাদিস শরীফে ঘোষণা হয়েছে। হযরত রাসুলে কারিম (সঃ) ইরশাদ করেন –
যে ব্যাক্তি দ্বীনে ইসলামকে তাজা করার জন্য দ্বীনী ইলম অর্জন করে, আর সে এই অবস্থায় মারা যায়, তাহলে বেহেশতের মধ্যে তার এবং নবীদের মধ্যে কেবল একটি মাত্র স্তরের ব্যবধান হবে। অর্থাৎ নবুওয়াতের স্তর ব্যবিত সে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
এবং আরেকটি হাদিশ শরীফে হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) ইরশাদ করেছেন, আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
طلب العلم فريضة على كلّ مسلم
অর্থাৎ- ইলম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরজ। এই হাদিশ দ্বারা আমরা বুঝতে পারলাম যে আমাদেরকে ইলম শিখতেই হবে না হলে কিন্তু আমাদের সুন্দর জীবন গরে তোলা অসম্ভব হয়ে যাবে, এবং এই ইলম অর্জন করা আমাদের উপর অর্থাৎ মুসলমানদের উপর অপরিহার্য।
দ্বীনি ইলম অর্জনের গুরুত্ব সম্পর্কে রাসুলে কারিম (সঃ) আরও ঘোষণা করেন – দ্বীনী ইলম অর্জন করতে যদি তমাদেরকে সুদূর চীন দেশেও যেতে হয় তবুও তোমারা সেখানে যাও এবং সেখানে গিয়ে দ্বীনী ইলম অর্জন করো। তাহলে বুঝা যাচ্ছে যে আমাদেরকে ইলম অর্জন করতে হবে সেটা যেখানে হকনা কেন সেখানে গিয়ে আমাদেরকে ইলম অর্জন করতে হবে আমাদের উপর ইলম অর্জন করা অপরিহার্য এবং ইলম অর্জন করে আমাদেরকে তার উপর আমল করতে হবে। এবং ইলম অর্জন করে মানুষদেরকে আল্লাহর তায়ালার সঠিক রাস্তাতে দাওয়াত দিতে হবে, আল্লাহর খিদমত করতে হবে।