দাতাবাবা মেহেবুব শাহ (রাহ:)-এর সংক্ষিপ্ত জীবনী
পাথরচাপুড়ি পশ্চিমবঙ্গের একটি অন্যতম দর্শনীয় ধর্মপ্রাণ স্থান। যেখানে প্রচুর পরিমাণের সংখ্যক লোকজন তীর্থযাত্রা করতে আসেন। এই গ্রামটি পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার সিউড়ি থানা থেকে মাত্র 12 কিমি দূরে অবস্থিত।
প্রাচীন কালে পাথরচাপুড়ি ছিল একটি আরামদায়ক ও মনোরম গ্রাম, যা বেশিরভাগি ছিল ঘনবন দ্বারা অনচ্ছাদিত। এবং পর্যটকদের প্রচালিত শিক্ষ্যা ও সাধারণ পেশায় অতি সংক্ষিপ্ত লোকজন সেখানে বসবাস করত। সময়ের সাথে সাথে গ্রামটি মুসলিম সম্প্রদায়ের অধীনে পরিণত হয় এবং সেটা হয় বিখ্যাত সুফি মেহেবুব সাহেবের আগমনে। তিনি বাংলার একজন আল্লাহর ওয়ালি, ইসলাম প্রচারক ও মহান আধ্যত্মিক পুরুষ ছিলেন। তিনি বহু দেশ- বিদেশ, গ্রাম-অঞ্চল যাত্রা করেছেন। অবশেষে দাতাবাবা মেহেবুব শাহ প্রবেশ করেন এই ক্ষুদ্রতম অতির্যময় পাথরচাপুড়ি গ্রামে। এই গ্রামে প্রথম প্রবেশের সময় তিনি ছিলেন মানুষের কাছে অপরিচিত। তাঁর সম্পর্কে লোকজন বিভিন্ন ধরণের কথা বলতে থাকে কিন্তু এটা স্পষ্ট যে দাতাবাবা মেহেবুব শাহ ছিলেন এক মহান ওয়ালি। এবং তিনার আধ্যাত্মিক কর্ম-কাজের কারণে লোকজন তাঁকে সম্মান করত ও তিনাকে ভালোবসত। তিনার দরবারে বিভিন্ন ধর্মের লোক তাদের সমস্যার সমাধান এর জন্য হাজির হত। কিন্তু তিনি কখনো তাদের মধ্যে কোন রকমের ভেদাভেদ করতেন না, বরং সমাস্যার সমাধান করে দিতেন। সবাইকে সমান অধিকার দিয়ে বিচার করতেন। এবং মানুষকে সুভ্যাচারের সহিত সম্মান দিতেন। যার ফলে ধর্মীয় ও বিধর্মির জ্ঞানীগুনি ব্যক্তিগণ তিনার প্রতি ভালোবাসা দিয়ে তিনাকে গ্রহণ করে। এবং তিনার ভালো কাজে একত্ম হয়।
হযরত দাতাবাবা মেহেবুব শাহ আল্লাহর তরফ থেকে পাওয়া অলৌকিক শক্তির দ্বারা বিপদজনক রোগ নিরাময়ে মানুষগণের সেবায় লিপ্ত থাকতেন। অভাবী লোকদের সাহায্য ও ভালোবাসার জন্য তাঁর হাত প্রসার করে দিতেন, যতক্ষণ না তিনি তাদের মধ্যে প্রিয় মানুষ হয়ে উঠেন। এইভাবে তিনার জীবনকাল মানুষের সেবায় ও আল্লাহর রাস্তায় চলতে থাকে। একদিন হঠাৎ দাতাবাবা মেহেবুব শাহ তিনার দেহ মুবারক তিনার অনুসারী ও শিষ্যদেরকে রেখে এই পৃথিবী থেকে বিদায় জানান।
যদিও আমরা এই পৃথিবীতে একজন পথিকের মতো যে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নেয় এবং তারপর চলে যায়। কেউই অমর নয়, সবাইকে সেই মহান রাব্বুল আলামিন এর কাছে ফিরে যেতে হবে, কারণ প্রতিটি বস্তুর শেষ আছে। তিনিও ইহা কাল ছেড়ে পরকালের দিকে রওনা দেন। হযরত দাতাবাবা মেহেবুব শাহ বাংলা ক্যালেন্ডার ১২৯৮ সালের ১০ চৈত্র ( 1891 খ্রিস্টাব্দে 23 মার্চ)-এ ইন্তেকাল করেন। যার প্রতিফলে তিনার স্মরণীয় ভক্তগণ প্রতি বছর ১০-ই চৈত্র, তিনার মৃত্যুবার্ষিক উদযাপন অর্থাৎ উরুস পালন করে। উরুসের সময় হাজার হাজার (মুর্শিদাবাদ,পুরুলিয়া, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর ইত্যাদি) রাজ্য থেকে ভক্তগণ তিনার সমাধি দেখতে আসেন। এবং সেখানে অনেকেই তাদের ইচ্ছা প্রকাশ করে এবং সেটা পূরণ হলে তাদের আশা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকে। যেমন কেউ দাতাবাবার প্রবিত্র সমাধিতে চাদর চড়িয়ে দেয়। কেউ ফকির ও মিসকিনদের কে খাবার দিয়ে সাহায্য করে। এবং অনেকেউ পশু ও দান করে থাকে।
হযরত মেহেবুব শাহ যিনি দাতাবাবা নামে মানুষগণের কাছে জনপ্রিয় ও সাধারণভাবে পরিচিত। এই মহান আল্লাহর ওয়ালি দাতাবাবা নামে জনপ্রিয় হওয়ার কারণ, তিনি ছিলেন অনেক দয়ালু। তিনার ভক্তগণ বলে থাকে দাতাবাবার কাছে আসা অসহায় বিশ্বাসকারী ভক্তগণদের কে কখনো ফিরিয়ে দিতেন না। বরং তাদের সাথে বসে হাতে হাত রেখে সমস্যার সমাধানের উপায় বলে দিতেন। বিভিন্ন বালা ও মুসিবাতে লোকজনের পাশে থাকতেন ও তাদেরকে সাহায্য করতেন।
_মাযার_ :
দাতাবাবার মাজারটি খুবিই চমৎকার ও সু্ন্দর্যময় আকর্ষণীয়। যেখানে ভারতবর্ষের বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের লোকজন প্রায় পরিদর্শন করে থাকে। অন্যান্য মাজারের মত এই মাজারটির গঠন মানুষজনকে আকৃষ্ট করে তোলে। এখন এই পাথরচাপুড়ির মাজারটি অনেক পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এখানে মসজিদ, মা হাজেরা ও অন্যান্য নির্মিত ঐতিহাসিক ভবন দেখতে পাওয়া যায়। তাছাড়া মাজারে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য তিনটি দ্বার রয়েছে। তিনার ভক্তগণ বিভিন্ন জায়গা থেকে তিনার আশীর্বাদ নেওয়ার জন্য আসে। এবং সেখানে তারা একে অপরকে খাবার পরিবেশন করে।
_ঝর্ণা বা কূপ_
দাতাবাবার মাজার থেকে ১ কিমি দূরে জঙ্গলের মধ্যে অবস্থিত এই কূপ। এই কূপের পানি খুবিই পরিষ্কার ও পরিচ্ছিন্ন। গ্রামের বসবাসকারী লোকজন ও দাতাবাবার ভক্তগণ এই কূপের জলকে জমজম বলে বিশ্বাস করে। এবং তারা এই জলকে ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করে থাকে। বিভিন্ন জাগা থেকে আসা দাতাবার ভক্তগণ এই কূপের জল বরকতের জন্য নিয়ে যায়। এবং অনেকেই এই জলকে বহু দিন ধরে সংরক্ষন করে রাখে। পাথরচাপুড়ির বাসিন্দাগণ ও দাতাবাবার ভক্তগণ বিশ্বাস করেন যে, এই কূপটি তৈরি হয়েছিল দাতাবাবার পা বা লাঠি দিয়ে জমিনের উপর মারার কারণে। যা দর্শকদের জন্য অন্যতম একটি পর্যটন স্থান হয়ে উঠে।