কুতুবুজ্জামান মামবুরাম তাঙ্গাল : এক মহান ব্য়াক্তিত্ব
এই বিশাল ভূপৃষ্ঠের মধ্য়ে এমন কিছু ব্য়াক্তিত্ব রয়েছে যাঁরা শুধুমাত্র নিজ ইচ্ছায় জীবন যাপন করেনা বরং আপন বংশের পূর্ব পুরুষদের জন্য়ে তাদের মূল্য়বান সময় অতিবাহিত করে I আমাদের এই ভূপৃষ্ঠে আল্লাহ তায়ালার অনেক প্রিয় এবং নীকটবর্তী মহান ব্য়াক্তিত্ব আছেন I তাদের মধ্য়ে একজন আমাদের নবীজির বংশধর যিনার নাম “ কুতুবুজ্জামান সায়েদিনা সায়েদ আলাবি বিন মুহাম্মাদ মাওলা আল দাওলিয়া আল হুসনি আল ইয়ামনি রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহু “ তিনি কেরালার মামবুরাম শহরে ইসলামিয় ও দ্বীনি বার্তা প্রদান করেন এবং ধার্মিক অবদানের তরে অগ্রসর হন I এবং সেখানকার সকল বেধর্মীদের মুখে আল্লাহ তায়ালার পবিত্র বাণী “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এবং সবার মনে আল্লাহর জন্য ভিরুতা এবং আখিরাতের ভয় ও আমাদের নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের প্রতি ভালোবাসা দ্ষ্টান্ত প্রদান করেছিলেন . অতঃপর সকল স্থানীয় ও অস্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে মননিবেশ করে I তারপর মানুষের স্বভাব ও চালচলনে পরিবর্তন এলো, সবাই আল্লাহর দিকে মননিবেশ করতে লাগলো I কুতুবুজ্জামান সায়েদ আলাবি মাওলা আল দাওলিয়া রাদি আল্লাহু আনহুকে ভালোবাসার সহিত “মামবুরাম তাঙ্গাল” বা “আরাবি তাঙ্গাল” বলা হয় I তাঙ্গাল মানে মালেয়ালামে সায়েদ বলা হয় আর সায়েদ মানে দলনেতা I তাঙ্গাল পদবি নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের বংশধরদের পদবি I তাই তিনাকেও তাঙ্গাল পদবি দেওয়া হয়েছে I জন্ম : হজরত কুতুবুজ্জামান মামবুরাম তাঙ্গাল 1166 হিজরী 26 যিলহিজ্জা মাসে হাজারেমোত এর “ তারিম” নামক একটি গ্রামে জন্মগ্রহন করেন I তিনার পিতার নাম মাজিদ সায়েদিনা মুহাম্মাদ বিন সাহাল মাওলা আল দাওলিয়া রাদি আল্লাহু আনহু I তিনি এক মহান পর্জাধারী ছিলেন I খোদার ভিরুতা এবং সময়ের মূল্যতা বুঝতেন এবং তিনি একজন বরিষ্ঠ মানুষও ছিলেন I তিনার মাতা এক নেক এবং সুন্দর মনের মহিলা ছিলেন I যিনি জিফরী পরিবার থেকে ছিলেন যেই গোত্রের নেত্রী ছিলেন হজরত মা ফতেমা বিনত মুহাম্মাদ I তাঙ্গাল সাহেব একজন ইমানদার ব্যক্তি ছিলেন এবং তিনার গণণা বড় বড় আলেমদের সঙ্গে করা হয় I
তিনার অসাধারণ চালচলন ও চরিত্র থেকে সর্বদা একটি সুন্দর্য প্রকাশ পায় I হজরত কুতুবুজ্জামান ইসলামের ইতিহাসের একজন এমন ব্যক্তি ছিলেন যিনি শুধুমাত্র আপন জাতি অর্থাত মুহাম্মাদি জাতির ব্যপারে ভাবেননি ইসলামের আরো অনেক জাতির ব্যপারে চিন্তা করেছেন I শিক্ষা ও লালন পালন : হুজুর কুতুবুজ্জামান তিনার পড়াশোনা নিজ বাড়ি থেকেই শুরু করেন I তিনি বাল্যকাল থেকেই পড়াশোনায় মনযোগ দিতেন এবং যথেষ্ট বুদ্ধিমান ও চতুর ছিলেন I তিনি প্রাথমিক বিদ্যা নিজ মাসির থেকে অর্জন করেন I তিনার মাসির নাম ছিল হজরত সায়েদিনা হালিমা বিবি রাদিআল্লাহু আনহা I তাঙ্গাল সাহেব নিজের প্রাথমিক শিক্ষার জন্য সমস্ত বইপত্র সেখানকার বড় বড় আলেমদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন I তারপর তিনি প্রাথমিক শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষা তিনার মামাব় কাছ থেকে সংগ্রহ করেন I তিনার মামার নাম ছিল সায়েদিনা হাসান জফরী রাদিআল্লাহু আনহু I তিনি বুদ্ধির ভান্ডার ছিলেন তাই তিনি মাত্র আট বছর বয়সেয় হাফিয এ কুরআন হয়ে গিয়েছিলেন I হজরত আমদাত আল অসলিন সায়েদিনা হাসান জফরি রাদিআল্লাহু আনহু নিজের এই বুদ্ধিমান ভাগিনার খুব অল্প সময়ের জন্য় তিনার লালন পালন করতে সক্ষম হন এবং তিনাকে পরবর্তী সময়ে চলার জন্য তৈরি করেন I জফরী বংশের নুর সেই বংশের প্রদ্বীপ কুতুবুজ্জামান মামবুরাম দীন ইসলামের বাণী ছড়াবার জন্য তিনি 1159 হিজরী তে মালবারের ভূমিতে পা রাখেন I তিনার সমপূর্ণ জীবন ইসলামের খিদমত ও গরীব মিসকিনদের দান খাইরাত করে কাটিয়েছিলেন I তার কিছু বছর পর 1168 হিজরী তে তিনি কেরালার দিকে রওনা হন তার পূর্বে মালবারকে তিনার বুদ্ধির সাগরে ডুবিয়ে দিয়ে যান I তিনি বুদ্ধি আর মেহেরবানি দুটোতেই একজন পরিপুক্ত মানুষ ছিলেন I হজরত কুতুবুজ্জামান মামবুরাম মালবারোর বাসিন্দাদের তোহিদ অর্থাত আল্লাহ এক এই কথাটি মানাবার জন্য তাদেরকে একটি বড় নৌকায় করে রওনা দিলেন ও 19 রমজান 1180 হিজরীতে তিনি কালিকট শহরে পৌঁছালেন ইসলামকে ছড়াবার জন্য I হুজুর কুতুবুজ্জামান এক মহান ব্যাক্তিত্বের অধিকারী ও মুরব্বি ছিলেন I তাই সেই সুতরাং তিনি একজন ফাতওয়ার লেখক ছিলেন এবং তখনকার খালিফার থেকে সেটা লোকেদের কাছে পৌঁছাতেন I তিনার উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে আল সাইফ আল আখতার লিমান ইুয়ালি আল কাফ্ফার ওয়া ই্যাত্তাহাদ ওয়ানহুম মিন দুনিল্লাহি ওয়া রাসূলী ওয়া মুমিনিনা আনসার I আসলে এই বইটি তাকে প্রশ্ন করা আট টি প্রশ্নের উত্তর হিসাবে লেখা হয়েছিল I এই বইটিই হল সেই বই যেই বইটির দ্বারা মালবারের লোকেদের মনে ইংরেজদের প্রতি তেজ ও তাদের বিরোধ করার জন্য উত্তেজিত করেছিল I তাই মালবারের বাসিন্দারা দেশকে ইংরেজ মুক্ত করার জন্য তাদের সবকিছু ত্যাগ করে দিয়েছিল I আমাদের এই ভারতবর্ষকে মুক্ত করার জন্য তারা সমস্ত কিছু করতে রাজি ছিল I এই যুদ্ধে মালাপ্পুরাম থেকে শুরু করে চিরুবাজার সমস্ত জন রক্ততে রক্তময় হয়ে গেলেন I শহরে জায়গায় জায়গায় ফাসির দড়ি লাগানো হল I হাজার হাজার মালবারের বাসিন্নদাদের মাথা ধড় থেকে নামিয়ে দেওয়া হল I এই যোদ্ধাদের মধ্যে কিছুদের এখনও সোনার অক্ষরে নাম লেখা রয়েছে I তাদের মধ্যে যিনি সর্বদা ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়তে ছিলেন তিনি এই মামবুরাম তাঙ্গাল. তিনি নির্ভয়ে এবং সাহসের সঙ্গে ইংরেজদের সঙ্গে লড়তে ছিলেন । আল – সয়িফ আল বাত্তার ছাড়া তিনার ইদ্দাতুল ইসরা ও তারিখুল আরাব ও আরাবিয়া তিনার বিখ্য়াত বইয়ের মধ্য়ে নথিভুক্ত রয়েছে ।মৃত্য় : অবশেষে এল সেই দিন যেই দিন ছিল একজন মহানত্বদের একটি হৃদয়বিদারক দিন যেই দিন সূর্যের আর উদার করে থাকা হল না সেই দিন সূর্যও সেই হৃদয় বিদারক দিনের একজন সদস্য়া যিনি একজন মহান ব্য়াক্তিত্বের গমন দেখছিলেন । সেই দিন সূর্য নিজেকে মেঘের পিছনে লুকিয়ে ফেললো এবং সন্ধ্য়াবেলায় সাদা-লাল আকাশের যে এক সুন্দর্য থাকে সেদিন সেই সুন্দর্যটাও হারিয়ে গেল । অতঃপর এল সেই দিন যেই দিন তিনার হাজার হাজার তিনার মুরিদদের হৃদয় চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেল অতঃপর এল এল সেই দিন যেই দিন মহানত্বের এক বিশাল হার হয়েছিল । অতঃপর রবিবার ৭ মুহার্রাম ১২৬০ হিজরী সন্ধ্য়াবেলা এই দুনিয়ার একজন মহান নেতা তিনার জীবনের ৯৪ বছর কাটিয়ে এহকাল থেকে পরকাল গমন করেন । মামবুরামের জামিয়া মসজিদের পাশে তিনার কবর মুবারক বানানো হয় । এই সব প্রক্রীয়া দ্বারাই তিনি মালবারে একটি ছাপ ছেড়ে গেলেন । এখনও তিনার মাযার যিয়ারত করার জন্য় হাজার হাজার লোক আসে এবং তিনার মাযার শরিফে এসে তিনাদের অশ্রু ঝরান । কেরালার বিখ্যাত মাযার শরিফগুলির মধ্য়ে তিনার মাযার শরিফটি অনেক বেশি খ্য়াতি লাভ করেছে . যেখানে সর্বদা জনগণের এক প্রচুর পরিমানে অপস্থিতি থাকে এবং সেখানে সেই মহান মানবের কবর মুবারক দেখে আল্লাহু তায়ালার প্রতি মননিবেশ করে।