কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকী (রাহঃ)
কুতুবুল আকতাব হজরত খাজা সৈয়দ মুহাম্মাদ কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকী (রাহঃ) আরেকটি নাম মালিক উল মাশায়খ। তিনি ইসলামিক ইতিহাসের একজন মহান সুফি সাধক ছিলেন। তিনি এয়োদশ শতাব্দীর শুরুর দিকের চিশতিয়া তরিকার একজন বিশাল বড় ওলি ছিলেন। তিনার নামে দিল্লির বিখ্যাত কুতুব মিনার তৈরি করা হয়। আগে আজমির ও নাগাউর এই সব যায়গায় চিশতিয়া তরিকা সিমাবদ্ধ ছিল কিন্তু তিনার চিশতিয়া শিষ্যত্ব গ্রহনের পরে চিশতিয়া তরিকা দিল্লি ও নানা স্থানে ছড়ে যায়। তিনার বিখ্যাত শিষ্য হজরত ফরিদউদ্দিন গাঞ্জেসাকার।
জন্ম
কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকী (রাহঃ) ১১৭৩ সালে গিরিস্তানের উশ নামক এক স্থানে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনার পিতার নাম কামালউদ্দিন তিনি খাজা বখতিয়ার কাকি (রাহঃ)। এর যখন দেড় বছর বয়স ছিল তখন তিনি মৃত্যু বরণ করেন। তিনার নাম বখতিয়ার এবং কাকী ও কুতুবুদ্দিন তিনার উপাধি হিসাবে দেওয়া হয়। তিনি সৈয়দ অর্থাৎ প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর বংশের। তিনি হুসাইন ইবনে আলী হয়ে মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর বংশে মিলিত হন।
দিল্লির দিকে আগ্রসর দিল্লির সালতানাতের প্রতিষ্ঠার পর তিনি তিনার পীর খজা মাইনুউদ্দিন চিশতী (রাহঃ)-এর আদেশ পেয়ে দিল্লির দিকে রওনা হন। তিনি সেখানেই বসবাস করতে থাকেন। সেখানে তিনি অসহায় মানুষদের পাসে দাড়িয়ে সাহায্য করতেন। তিনার কাছে প্রতিনিয়ত অনেক লোকের ভিড় হত। তিনি সাধারণ মানুষদের বায়াত দানও শুরু করেন । তিনি তাবিজ দিতেন সেই তাবিজের ব্যাপারে তিনকে একদা ফরিদুউদ্দিন গঞ্জে সাকার জিজ্ঞাসা করেছিলেন। এই তাবিজ কবজ ইসলাম ধর্মে মূর্তি পূজা হিসাবে একটা সমস্যা দেখা দিতে পারে? এর উত্তরে হজরত কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকী (রাহঃ) বললেন যে এই তাবিজ কবজে আল্লাহর নাম ও আল্লাহর বানি ছাড়া আর অন্য কিছু থাকেনা এতে মানুষের কোন সমস্যা হবেনা এটা ব্যাবহার করা যেতে পারে।
উপাধির ঘটনা
কাকি মানে রুটি। এটা তিনার একটা উপাধি। এর পিছনে একটা বড় ঘটনা রয়েছে। কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকী (রাহঃ) কঠিন দরিদ্র ছিলেন তাই তিনাকে প্রতিদিন এক রুটি ওয়ালার কাছ থেকে তিনাকে রুটি ধার নিতে হত। রুটি ওয়ালা খুব আহংকার দেখাত ও খুব কথা সুনাত। হজরত কুতুবউদ্দিন কাকি (রাহঃ) একদা তিনার স্ত্রীকে বললেন: তোমাকে আর রুটি ধারে নিতে যেতে হবে না। তুমি এই তাকে বিসমিল্লাহ বলে হাত দিবে আল্লাহ তোমাকে রুটি দান করবে। এই ভাবে চলতে থাক। তিনার স্ত্রী যখন তাকে রুটির আসায় হাত দিতেন আল্লাহর ইছাতে রুটি পেয়ে যেতেন। অনেক দিন কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকী (রাহঃ) সেই দোকানির কাছে যায় না। দোকানি কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকীর তার দোকানে না আসা যাওয়া দেখতে পেয়ে সে অনেক চিন্তিত হয়ে পরে। সেই দোকানি কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকী (রাহঃ)-এর সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করতে থাকে। সে তার স্ত্রীর কাছে জিজ্ঞাসা করে তিনার স্ত্রী সম্পূর্ণ ব্যাপারটিকে তার সামনে আলোকপাত করেন। সেই কথাটি জানার পরে তিনার নামের শেষে কাকি উপাধি রাখা হয়।তিনি এই নামে পরিচিত।
এ ছাড়া আরেকটি ঘটনা এই নামের পিছনে আছে বলা যায়। কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকী (রাহঃ) জখন খুব ছোট্ট ছিলেন তখন কার কথা। কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকী (রাহঃ)-এর আম্মা জান একজন খুব পরহেজগার নারি ছিলেন। তিনি যখন কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকী (রাহঃ)-কে কিছু খাবার দিতেন তখন তিনি বলতেন: তুমি তোমার চোখ বন্দ কর আল্লাহ তোমাকে খাবার দিবেন। আর কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকী (রাহঃ) যখন চোখ বন্দ করতেন সেই সময় তিনি থালায় করে খাবার তাঁর সামনে রেখে দিতেন। সেটাকে তিনি খুব মজা করে খেতেন। একদা তিনার আম্মা জান অন্য এক কাজে বাস্ত ছিলেন তখন কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকী (রাহঃ) পাটিতে চোখ বন্দ করে বসে পড়লেন। আম্মা জান দেখে আবাক হয়ে যান ও আল্লাহর দরবারে দুয়া করেন: হে আল্লাহ আমার ছেলে যদি আজকে খাবার না পায় তবে তার মন ভেঙে যাবে। হে আল্লাহ তাকে তুমি সাহায্য কর। আল্লাহ তায়ালা তার দুয়া কবুল করেন ও কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকী (রাহঃ)-কে রুটি দান করেন। তিনার আম্মা জান ফিরে এসে দেখেন যে কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার (রাহঃ) রুটি চিবাচ্ছেন। তাই দেখে তিনার আম্মা জান কাকি বলে ডাকতে থাকেন।
মৃত্যু
তিনি ১২৩৫ খ্রিস্টাব্দে পরলোক গমন করেন। কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকী (রাহঃ)-এর নামে দিল্লিতে কুতুব মিনার দাড়িয়ে আছে। 'ওলামায়ে হিন্দ কা শানদার মাজি' কিতাবটিতে একটা ঘটনা লিখিত হয়েছে তিনি মৃত্যু কালে একটা কথা বলেন: আমার যে জানাজা নামায পড়াবেন তার মধ্যে এই চারটি গুন থাকবে। তোমারা এই চারটি শর্তের কথা বলবে এবং তার মধ্যে যে সামনে আসবে সেই হবে আমার জানাজার ইমাম। শর্তগুলি হল – ১) যে ব্যাক্তি কোনদিন জামাতে তাকবিরে উলা ব্যাতিত নামাজ আদায় করেননি, ২) যার জীবনে কোন দিন তাহাজ্জুদ কাজা হয়নি, ৩) যে ব্যাক্তি কোন পরনারী দারা গুনাহ কল্পনাও করেনি এবং ৪) যে ব্যাক্তি তার জীবনে কোনদিন আসরের সুন্নাত ও জুহরের সুন্নাত ছাড়েননি। জানাজা ময়দানে তিনার কথা মত বলা হল। কেউ সামনে আসেনা। সমস্ত লোকের হতবাক হয়ে উঠল ময়দানে চ্যাঁচামেচি শুর হল। লোকেরা সেই গুণবান বাক্তির দিক্ষা পাওয়ার জন্য আকাঙ্কিত হল। তিনার খলিফা ও ছেলে সহ তিনাকে বিনা জানাজা আবস্তায় দাফন করার সিদ্ধান্ত করে। তখন একজন ব্যাক্তি পা বাড়িয়ে আগের দিকে এলেন তিনি বললেন: থাম আমি জনাজা পড়াব। তিনি কোন সাধারণ মানব ছিলেন না, তিনি ছিলেন দিল্লির সুলতান হজরত শামসুদ্দিন আল-তামাশ (রাহঃ)। একজন বিক্ষাত আল্লাহর ওলি সুফি সাধক ছিলেন। তিনি কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকী (রাহঃ)-এর সামনে গেলেন ও কপালে চুমু খেয়ে বললেন: হে আল্লার ওলি তুমি তো নিজের ইবাদাত মানুষের সামনে লুকিয়ে রেখে চলে গেলে, কিন্তু আমার ইবাদাত এই দুনিয়াতে ফাঁস করে দিলে। আমি ভয় করি যেন আমি ধ্বংস না হয়ে যায়। আল্লাহ আমকে হিফাজত করুন। হজরত শামসুদ্দিন আল তামাশ (রাহঃ) কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকী (রাহঃ)-এর জানাজা নামায পড়ান। এমন ভবে কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকী (রাহঃ) এই দুনিয়া থেকে বিদাই নেয়।