নবীর প্রকৃত প্রেমিক
বর্তমানে পৃথিবীতে বিভিন্ন প্রকার ক্যালেন্ডার রয়েছে আর প্রত্যেকটি ক্যালেন্ডারেই একটি বছর গড়ে ওঠে বারোটি মাসের সমষ্টি নিয়েই। সেই সকল ক্যালেন্ডারের মধ্যে একটি অন্যতম ক্যালেন্ডার হল হিজরি ক্যালেন্ডার। এটি ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর(রাঃ) আরম্ভ করেন।এই ক্যালেন্ডারটির শুভ যাত্রা শুরু হয় মুহাররম মাস দিয়ে এবং সমাপ্ত হয় মুলহিজ্জা মাস দিয়ে আর এরই মধ্যে রয়েছে হিজরী ক্যালেন্ডার এর তৃতীয়তম মাস রবিউল আওয়াল। যেই মাসটিতে ঘটেছিল ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। সেই ঘটনাটি এই যে, এই মাসেই আল্লাহর প্রিয় রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)এর ভূপৃষ্ঠে আগমন হয়। এই মাসের ঠিক ১২ই রবিউল আওয়াল সোমবারের দিন ফজর নামাজের পূর্বে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) মা আমিনার পেট হইতে ভূমিষ্ঠ হয়ে এই ছন্দময় পৃথিবীর বুকে মানুষের জন্য অগ্রদূত হিসাবে আবির্ভাব হন।আর কোরআনে উল্লেখিত রয়েছে যে, “নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশ্বাসীগনের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, তিনি তাদের নিজেদের মধ্যে হইতে রাসূল প্রেরণ করেছেন, যে তাদের নিকট তার নির্দেশনাবলি পাঠ করে ও তাদেরকে পবিত্র করে এবং তাদেরকে গ্রন্থ ও বিজ্ঞান শিক্ষা দান করে এবং নিশ্চয়ই তারা এর পূর্বে প্রকাশ্য ভ্রান্তির মধ্যে ছিল।”(আল ইমরান: ১৬৪) যার ফলে এই দিনটিতে নানা রকম অলৌকিক ঘটনা সমূহও ঘটে থাকে। যেমন-পারস্য সম্রাট নওশের ওয়ার রাজমহল ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, পারস্যদের এক হাজার বছর প্রাচীন অগ্নিকুণ্ড যার পূজা করা হতো তা নিভে গিয়েছিল ইত্যাদি।
বর্তমানে এই দিনটিকে অধিকাংশ মুসলমান বিশ্ব নবীর জন্মদিবস হিসেবে পালিত করছে। যার ফলে আমরা বিশাল জুলুস বের করছি, তীব্র আওয়াজে ডিজে তেনাড়া লাগিয়ে নাত বাজিয়ে পতাকা উড়িয়ে নবীর আশিক বলে দাবি করছি কিন্তু আপনাদের প্রশ্ন করি যে শুধুমাত্র কি একটি দিন টাকা ব্যয় করে ডিজেতে নাড়া লাগিয়েই নবীর আশিক হওয়া যায়? এই প্রশ্নের উত্তর হবে “না”। তাহলে আমাদের নবীকে কিভাবে ভালবাসতে হবে?
প্রথমত আমাদের উচিত যে আমরা সেই মহান আল্লাহ তায়ালার হুকুমগুলিকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করি এবং নবীর সুন্নত গুলিকে অনুসরণ করি আমলে নিয়ে আসি তবেই আমরা সেই মহানবীর আশিক হতে পারব। সেই কারণেই তো আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে ঘোষণা করেছেন যে, “হে নবী আপনি বলে দিন: যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো তাহলে আমার অনুসরণ করো যাতে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসেন ও তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করেন, এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুনাময়।”(আল ইমরান:৩১) অতএব এই আয়াতটি থেকে বোঝা যায় যে, যদি আমরা আল্লাহ তালাকে ভালবাসতে চাই তবে প্রথমত আমাদের নবীকে অনুসরণ করতে হবে নবীকে ভালবাসতে হবে। তাই আমাদের উচিত যে আমরা নবীর সুন্নত গুলিকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করি। নবী যেভাবে তিনার সম্পূর্ণ জীবন কাটিয়েছেন সেইভাবে আমাদের জীবনকেও কাটাতে হবে। চাই সেটা উঠতে হোক কিংবা বসতে। শুধু জুলুস বের করলেই চলবে না।
এছাড়াও আমাদের প্রয়োজন যে আমরা আমাদের ঈমানকে পরিপূর্ণ করি। যেমন কি রাসুল (সাঃ) বলছেন যে,তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারে না যতক্ষণ না পর্যন্ত সে তার বাবা, মা, ছেলে, মেয়ে এমন কি পৃথিবীর সকল মানুষ থেকে আমাকে বেশি ভালোবাসবে। অতএব এই হাদীসটি থেকে বোঝা যায় যে,আমাদের নবীকে পৃথিবীর সকল মানুষ থেকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসতে হবে তবেই আমাদের ঈমান পরিপূর্ণ হবে। নিজের জান মালের পরোয়া না করে নবীকে ভালবাসতে হবে। আর এইরকম ভালোবাসার উদাহরণ আমরা নবীর সাহাবাদের মধ্যে দেখতে পায়।
ওহুদ যুদ্ধের পর যখন মদিনায় মিথ্যা খবর ছড়িয়ে পড়ে যে নবী (সাঃ) ইন্তেকাল করেছেন। সেই সময়ই সালিম বংশের এক মহিলাযুদ্ধের ময়দানের দিকে ছুটতে শুরু করে এবং চেঁচাতে চেঁচাতে বলতে থাকে আমার নবী আমার রাসূল। কিছুক্ষণ পর রাস্তায় কয়েকজন সাহাবীর সঙ্গে দেখা হয় তখন তারা বলে, তোমার স্বামী ও ছেলে শহীদ হয়ে গেছে কিন্তু তিনি এতে ধ্যান না দিয়ে প্রশ্ন করেন আমার রাসূল কেমন আছেন? তারা উত্তরে বলে ভালো আছেন।কিন্তু তিনারমনে শান্তি হলো না এবং তিনি সামনের দিকে দৌড়াতে লাগলেন আবার কিছু সাহাবীর সঙ্গে দেখা হয় তখন তারা বলে তোমার ভাই শহীদ হয়েছে।আবারও তিনি একই প্রশ্ন করেন আমার নবী কেমন আছেন? তিনারা উত্তরে বলেন ভালো আছেন। কিন্তু এখনো তিনার মনে শান্তি হয় না এবং সামনের দিকে দৌড়াতেই থাকে। পরিশেষে তিনি আপন চোখে নবীকে দেখে এবং বলে হে নবী আপনার চেয়ে বড় আমার কাছে কিছুই নই। অতএব এই থেকে বোঝা যায় যে সাহাবীগণ নবীকে কতটা ভালবেসেছিল।
এছাড়াও যখন নবী (সাঃ) মদিনায় হিজরত করেছিলেন। সেই সময়ই অনেকেই মদিনায় হিজরত করতে পারেনি। সেই সময় কোরাইশরা তাদের উপর অত্যাচার করতে শুরু করেছিল, তাদের জেল বন্দি করেছিল আর তাদের মধ্যেই অন্যতম একজন ছিলেন সোহাইব (রাঃ)। তিনি ছিলেন একজন রোমের ধনী ব্যবসায়ী। পরে নবীর নিকট ইসলাম কবুল করেন। কুরাইশরা যখন তাকে বন্ধ করেছিল সেই সময় তিনি জেল থেকে পালিয়ে যান কিন্তু তিনাকে কুরাইশরা রাস্তায় ঘিরে ফেলে যার ফলে পরিশেষে তিনার সমস্ত ধন-সম্পদ তাদেরকে দিয়ে দেয় এবং নিজেকে বাঁচিয়ে নবীর কাছে গিয়ে পৌঁছায়।তাহলে লক্ষ্য করুন যে শুধুমাত্র নবীকে পাওয়ার আশায় তাদের সমস্ত ধন-সম্পদকে কিছুই মনে করেননি।
অতএব আমাদেরও উচিত যে আমরাও আমাদের মহানবীকে তেমনভাবেই ভালোবাসার চেষ্টা করি। পরিশেষে আল্লাহর কাছে এটাই কামনা যে, আমরা যেন নবীর সুন্নতকে অক্ষরে অক্ষরে অনুসরণ করে নবীকে ভালবাসতে থাকি।
 
  
             
            
                     
            
                     
            
                                             
            
                                             
            
                                             
            
                                             
            
                                             
            
                                             
            
             
            
             
            
             
            
            