নবী (সাঃ) প্রিয় খাবার খেজুর
পূর্ব যুগের ঐতিহ্য খাদ্য হচ্ছে খেজুর। খেজুর সম্পর্কে বিভিন্ন জাগায় বর্ণনা করা হয়েছে এ ছাড়া কুরআন শরীফে ১১বার খেজুর সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন, এবং এটাও বলা যায় যে সর্ব প্রথম কুরআন শরীফ লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল খেজুর পাতায়। ইসলাম ধর্মে অন্যান্য ফলের তুলনায় খেজুরের মর্যাদা বেশি কেননা প্রিয় নবী হজরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর প্রিয় খাবার ছিল খেজুর ও জোয়ের আটার রুটি শুধু খেজুরি খেতেন না অথচ খেজুরের আঁঠির রস বানিয়ে নবী (সাঃ) পান করতেন।
বিভিন্ন হাদিসেও খেজুর সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে যেমন "প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে বাড়িতে খেজুর নেই, সে বাড়িতে কোনো খাবার নেই। ’ এমনকি প্রিয় নবী (সা.) সন্তান প্রসবের পর প্রসূতি মাকেও খেজুর খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন"। অৰ্থাৎ প্রত্যেক বাড়িতে খেজুর রাখা অপরিহার্য কেননা খেজুর হচ্ছে বিভিন্ন রোগের প্রতিরোধকারী, শুধু তাই নয় বাড়িতে খেজুর রাখাও নবী সাঃ এর সুন্নাত। প্রিয় নবী গর্ববতী মায়েদেরও আদেশ দিয়েছেন যে তিনারা যেন গর্ববতী অবস্থায় বেশি আজেবাজে খাবার না খেয়ে খাবারে খেজুর ব্যবহার করুক কারণ খেজুর ছেলে কে স্বাস্থকর করে রাখে। খেজুর কে রাসূলের প্রিয় সালুন বা তরকারি গণ্য করা যায় কেননা "আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল (সা.)-কে বার্লির এক টুকরো রুটির ওপর একটি খেজুর রাখতে দেখেছি। তারপর বলেছেন, ‘এটিই সালন-মসলা" (সুনানু আবু দাউদ)।
খেজুর আমাদের শরীরের পক্ষে খুব উপকারিত বিভিন্ন রোগ হতে মুক্তি প্রদান করে ও আমাদের শরীরে পুষ্টিগুন বাড়ায়। এই ফল টি খুবই সুস্বাদ ও তৃষ্ণা দূরত্ব বজায় রাখে। নবী সাঃ প্রাতঃরাশা (ব্রেকফাস্ট) করতেন খেজুর দিয়ে কেননা খালি পেটেখেজুর খেলে আমাদের শরীর স্বাস্থ্যকর হয়ে থাক। খেজুর সুস্বাদু আর বেশ পরিচিত একটি ফল, যা ফ্রুকটোজ ও গ্লাইসেমিক উচ্ছাসিত। এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি করে। খেজুর ফলকে চিনির বিকল্প হিসেবে গণ্য করা হয়। খেজুরের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে বলা হয় চারটি বা ৩০ গ্রাম পরিমাণ খেজুরে আছে ৯০ ক্যালোরি, এক গ্রাম প্রোটিন, ১৩ মিলি গ্রাম ক্যালসিয়াম, ২.৮ গ্রাম ফাইবার এবং আরও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। খেজুরে আছে প্রচুর ভিটামিন বি, যা ভিটামিন বিসিক্স মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্যকর । খেজুর সাস্থের একটি ভালো উৎস। তাই খেজুর খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শরীরের ক্লান্তিভাব দূর হয়।
দুনিয়া তে সর্ব প্রথম গাছ হচ্ছে খেজুর গাছ যা বলা হয় যে যখন আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করা হয় সৃষ্টি পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পরে কিছু মাটি বেঁচে যায় এবং সেই মাটি দিয়ে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত খেজুর গাছ কে তৈরী করেন। এই ঘটনা থেকে বলা হয় যে আমাদের আদি পিতা আদম (আঃ) আর আমাদের ফুফি হচ্ছেন খেজুরের গাছ কেননা খেজুরের গাছ সৃষ্টি আদম (আঃ) এর বেঁচে থাকা মাটি দিয়ে।
খেজুর খাওয়ার উপকারিতা :
১.যারা চিনি খান না তারা খেজুর খেতে পারেন। চিনির বিকল্প খেজুরের রস ও গুড়।
২.খেজুরে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন, খনিজ, ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম। খেজুরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৩.খেজুরে ফাইবারও পাওয়া যায়। তাই এই ফলটিকে ডায়েটের জন্য খুবই অপরিহার্য।
৪.প্রতিটি খেজুরে রয়েছে ২০ থেকে ২৫ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম, যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
৫.রক্তস্বল্পতায় ভোগা রোগীরা প্রতিদিন খেজুর খেলে রক্তসল্পতা ঠিক হয়ে যায়। একজন সুস্থ মানুষের শরীরে যতটুকু আয়রন প্রয়োজন, তার প্রায় ১১ ভাগ পূরণ করে খেজুর।
৬.কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় রাতে পানিতে খেজুর ভিজিয়ে রাখুন। পর দিন সকালে খেজুর ভেজানো পানি পান করুন। দূর হবে কোষ্ঠকাঠিন্য।
৭.খেজুরে থাকা নানা খনিজ হৃদস্পন্দনের হার ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
৮.খেজুরে লিউটেন ও জিক্সাথিন থাকায় তা রেটিনা ভালো রাখে।
৯.খেজুর শারীরিক ও মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করে,হজম শক্তি বৃদ্ধি করে,রোগ প্রতিরোধ ও যৌন দুর্বলতাও দূর কর।
১০.গরম জলে খেজুর সিদ্দ করা জল পান করলে গলার ক্ষত ও ঠান্ডা দূর কর।
১১.খেজুরের আঠি গুঁড়ো করে খেলে কলিজা নিরাময় কর।
১২.খেজুরের রস খেলে কির্মি দূর কর।
খেজুরের আহারে রোগ প্রতিরোধ :
ক) দুর্বলর্বতা কাটাতে অনেক সাহায্য করে খেজুর এবং ডেলিভারীর পর মায়েদের অতিরিক্ত রক্তপাত বন্ধ করতেও খেজুর সাহায্যের ভূমিকা পালন করে। এবং ডেলিভারীর পরবর্তী সময়ে শিশুর প্রয়োজনীয় পুষ্টির জন্য মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে খেজুর খুব কার্যকরর্য
খ) ফুসফুসের সুরক্ষার পাশাপাশি মুখগহ্বরের ক্যান্সার রোধ করে।
গ) অন্তঃসত্ত্বা নারীর সন্তান জন্মের সময় খেজুর খেলে জরায়ুর মাংসপেশির দ্রুত সংকোচন-প্রসারণ ঘটিয়ে, প্রসব হতে সাহায্য করে। ৭/৮ মাস সময় থেকে গর্ভবতি মায়েদের জন্য খেজুর একটি ভাল খাদ্য।
ঘ) প্রসব-পরবর্তী কোষ্ঠকাঠিন্য ও রক্তক্ষরণ কমিয়ে দেয়।
জ) মুখের অর্ধা ঙ্গর্ধা রোগ, পক্ষঘাত এবং সব ধরনের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অবশকারী রোগের জন্য উপকারী। খেজুরের আঠিও রোগ নিরাময়ে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
ঝ) পাতলা পায়খানা বন্ধ করে।
ঞ) খেজুর পেটের গ্যাস, শ্লেষ্মা, কফ দূরত্ব করে, শুষ্ক কাশি এবং এজমায় উপকারী। উচ্চমাত্রার শর্করা, ক্যালরি ও ফ্যাট সম্পন্ন খেজুর জ্বর, মূত্রথলির ইনফেকশন, যৌনরোগ, গনোরিয়া, কণ্ঠনালির ব্যথা বা ঠান্ডাজনিত সমস্যা, শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধে বেশ কার্যকারী ।
ঞ) নেশাগ্রস্তদের অঙ্গক্ষয় প্রতিরোধ করে খেজুর। স্বাস্থ্য ভালো করতে বাড়িতে তৈরী ঘিয়ে ভাজা খেজুর ভাতের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। খেজুর মস্তিষ্ককে প্রাণবন্ত রাখে খেজুর। ক্লান্ত শরীরে যথেষ্ট পরিমাণ শক্তির যোগান দেয় খেজুর। সুস্থ হৃদপিন্ডে দেহযন্ত্রে স্বাচ্ছন্দ এবং সতেজ বিধান করে এমন শক্তিদায়ক বা বলবর্ধকর্ধ ঔষধ হিসেবে খেজুরের জুড়িজু নেই। যাদের হার্টের সমস্যা আছে তাদের জন্য খেজুর খুবই উপকারী। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেজুর ব্লেন্ড করা জুস খেলে হার্টের সমস্যায় ভুক্তভোগী ব্যক্তি ভাল সমাধান পাবেন।