হুজুর (সাঃ)-এর প্রতি প্রেম কেন?
প্রেম হল কমিটমেন্ট বা হৃদয়ের একটি অনুভূতি। একজনের কাছে আরেকজনের দায়বদুতা, যা অদৃশ্য কেবলমাত্র অনুভব করা যায়। ভালোবাসা মানবজাতিকে সহনশীল এবং নিঃস্বার্থ করে তোলে। এটি এক অপরের ক্ষেত্রে আত্মসমর্পণের বার্তা প্রদান করে। এটা জানার সত্ত্বেও যে, বেতি নিজেই অগ্নিখণ্ডে জ্বলবে। এবং তার সঙ্গে মোমকেউ জ্বালিয়ে ফেলবে। শেষ পর্যন্ত মোমটি মৃত্যুকে নিজের লক্ষ্য হিসেবে নির্বাচন করে। কারণ আত্মসমর্পণের মধ্যেই একজন পরিপূর্ণ ভালবাসার সন্ধান পায়। এখন প্রশ্ন জেগে উঠে যে, আমাদের আল্লাহুর নবীর প্রতি প্রেম-মমতা, ভালবাসা আত্মসমর্পণের এর অর্থের পর্যায়ে কি দৃষ্টান্ত?। আমরা কি নবীর বাস্তবেই আশিকে রাসুল?।আর আমরা নবীকে ভালোবাসিই বা কেন?
প্রেমের উৎস
প্রেমের মূল অবলম্বন হচ্ছে আবেগ। ভালোলাগা থেকে প্রেম-ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। আমাদের অন্যের প্রতি প্রেম-মমতা, ভালবাস, মায়া-টান বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। কারণ কোন উদ্দেশ্য ছাড়া বস্তুর স্থায়িত্ব নেই। এই সময়ে ভালোবাসার প্রভাবিত হওয়ার পেছনে অনেক ক্ষেত্রে দুটি উৎস নজরবন্দী হয়:- ১) সৌন্দর্যতা ২) সৎ ব্যবহার। একজন প্রেমিক তার প্রেমিকার মধ্যে রূপের, দেহের এবং ব্যবহারর উদ্যান চক্ষুতে আড়ালে সেই প্রেমিকের জীবনে ভালবাসার ফুল প্রস্ফুটিত হয়।
প্রেমের প্রকারভেদ
আসলে প্রেম ভালোবাসার কোন নির্দিষ্ট দিক নেই । এটি হতে পারে পরিবার পরিজনের সঙ্গে, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে, জীবজন্তুর সঙ্গে, প্রকৃতির সঙ্গে, কিংবা স্রষ্টাচারের সঙ্গে। প্রেমকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে:-১) রূপক প্রেম ২) বাস্তব প্রেম। রূপক প্রেম হলো ধর্ম-নিরপেক্ষ বা দুনিয়াবীর প্রেম।এটি বর্তমান সমাজে প্রায় আমরা দেখে থাকি। আধুনিক যুগে আধুনিক প্রজন্মের আগমনে এটি বাস্তবতার শৃঙ্খলতাকে ভেঙে মানসিক চাহিদার উপর ভিত্তি করে যুগ যুগান্ত ধরে চলে আসছে। যেমন একটি ছেলের অন্য আরেকজন রমণীর প্রতি মায়া বা টান। এটি একটি রঙিন গোলাপ ফুল যা ঝড় বাতাসে, অকাল বাসন্তে ঝরে পড়ে। এখানে সুখের হারের চেয়ে বেশি বেদনায় ভরা দুঃখের হার বেশি, খুশির চেয়ে গলায় ফাঁসির হার বেশি। এখানে অবহেলা, ব্যর্থতা, ব্যথা, লাঞ্ছনা ও অসম্মানের হার বেশি। কারণ এই নদীর স্রোত পরভাষা ও ভালোলাগার সাগরে গিয়ে মিশ্রিত হয়। রূপ সৌন্দর্যময় চেহারা ও দেহের ঢেউয়ে একজন প্রেমিক হাবুডুবু খায়। কবি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় লেখেন:-
যদি রুপ দেখে কাউকে ভালোবাসো সেটা-
ভালোবাসা নয় - সেটা বেছে নেওয়া।
যদি কারো দেহ দেখে ভালোবাসো- সেটা
ভালোবাসা নয় - সেটা লালসা।
তাহলে ভালোবাসা কাকে বলে,
যদি কারো মন দেখে ভালোবাসো তাহলে-
সেটাই ভালোবাসা।
২) বাস্তব বা আসল প্রেম। এটি হলো সৃষ্টিকর্তার এবং তিনার প্রেরিত দূত বা নবীর প্রতি প্রেম। এই সাগরের স্রোত কেটে যে প্রেমিক ডুবকি লাগাবে সে সফল্লতার উচু স্থানে স্থির হবে। এটি হলো প্রেম, ভালোবাসার এমন এক বন্ধন যা আপনাকে ক্ষতিগ্রস্থ থেকে রক্ষা করবে। অবহেলা, লাঞ্ছনা, বেঞ্চনার বিশৃঙ্খলা থেকে মুক্তি প্রদান করবে। আপনার চক্ষু থেকে অশ্রু ঝরতে বাধা দিবে। এটি অত্যাচার এবং নিষ্ঠুরতা থেকে দূরে রাখবে। এই ভালবাসার একটি অন্তরালে লুকিয়ে থাকা বৈশিষ্ট্য হলো, যদি কেউ একবার এই ফলের স্বাদ পাই তাহলে ইহকাল এবং পরকালের সাফল্যতা তার অধীনে নিযুক্ত হয়ে যাবে।
নবীর প্রেম কি ?
নবীর প্রেম হলো ভিন্ন। অন্যের প্রতি প্রেমের সমতুল্য নয়। নবীর ভালোবাসা হলো বাস্তব ভালোবাসা। এটি হচ্ছে একটি উপাসনা। যার দ্বারা আমরা মহান আল্লাহ তা’আলার উপাসনা করি এবং তার নৈকটবর্তী লাভ করি। একজন মুসলমানের হৃদয় আল্লাহর নবীর হজরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দিকে ঝুকে যাওয়া এমন একটি প্রবণতায় যা তার পছন্দকে সমস্ত প্রয়োজনের উপরে প্রকাশ করে এর নামিই হলো নবী প্রেম। এটি হলো সর্বশক্তিমান ইসলাম ধর্মের ভিত্তি সমূহের মধ্যে একটি অন্যতম বিশেষ ভিত্তি। এই ভিত্তিকে প্রাধান্য দিয়েছেন মহান আল্লাহ তা’আলা সুতরাং কোরআন শরীফের এরশাদ করেন:-
النبي اولى بالمؤمنين من انفسهم
অর্থাৎ:- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুমিনদের নিকটে তাদের নিজেদের চেয়ে বেশি হকদার এবং প্রিয় জন।
নবীর প্রেম ঈমানের নিদর্শন
সহি বুখারী হাদিস নাম্বার ১৬ এবং সহি মুসলিমে হাদিস নম্বর ৪৪-এ প্রমাণিত, হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বর্ণিত করেন:- যে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:- لا يؤمن احدكم حتى اكون احب اليه من والده وولده والناس اجمعين
অর্থাৎ:- তোমাদের কেউ পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার কাছে তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সকল মানুষের চেয়ে অধিক প্রিয় না হই।
অতএব মুমিনদের জন্য অপরিহার্য কর্তব্য হলো নবী পাক মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি তার সর্বোচ্চ প্রেম, ভালোবাসা যা হবে সকল বস্তুর উর্ধ্বে। পরিজন, আত্মীয়-স্বজনের এমনকি নিজের জানের থেকে বেশি। এখানে নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি সর্বাধিক ভালোবাসা পোষণের কথা বলা হয়েছে ।
নবীপ্রেমিক কারা?
প্রেম হল গোপনীয় বিষয়। কে কাকে অল্প বা বেশি ভালোবাসে তা জানা অসম্ভব। কিন্তু কিছু নিদর্শন বা চিহ্ন দ্বারা আমরা অনুমান করে থাকি, যে একটি প্রেমিক তার প্রেমিকাকে কতটা ভালোবাসে। নবী প্রেমিকদের কাজ হবে তিনার অনুসরণ ও অনুকরণ করা আর শ্বাস-প্রশ্বাস হবে তিনার প্রতি দরুদ পাঠন। এই প্রসঙ্গে আল্লামা ইবনুল কাইয়ুম রহমাতুল্লাহ আলাইহি বলেন “দরুদ পাঠ হলো রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রেমের স্থায়িত্ব ও প্রবৃদ্ধির কারণ”। নিম্নলিখিত কিছু নিদর্শন দেওয়া হল:-
১) মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নতের পথিক হওয়া। তিনার অনুসরণ করা এবং তা থেকে মুখ ফিরিয়ে না নেওয়া।
২) মানুষের মধ্যে নবীজীর জীবন কাহিনী কে তুলে ধরা। এবং বেশি বেশি করে সমালোচনা করা। অতএব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:- (من احب شيئا اكثر ذكره) যে যাকে ভালোবাসে সে তার কথা বেশি বলে, বারবার তার আলোচনা করে।
৩) গুনাহের কাজ পরিত্যাগ করা এবং নেক আমলের দিকে এগিয়ে আসা।
৪) পৃথিবীর সমস্ত বস্তুর উপরে শুধু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া।
৫) আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে যারা ঘৃণা করতো তাদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করা ইত্যাদি।
নবীপ্রেমিকদের জন্য সুসংবাদ
হযরত মুহাম্মদ মোস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি প্রেম ভালবাসার উপকারিতা অফুরন্ত। এবং নেকি অগণিত। প্রত্যেক প্রেমিকদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ যা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই প্রদান করেছেন:- “মানুষের হাসর নাসর ওর সঙ্গে হবে যাকে ও ভালোবাসে”। সুতরাং হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত:- একটি সাহাবী নবীজীর দরবারে উপস্থিত হলো এবং জিজ্ঞাসা করে ইয়া রাসুললা আল্লহ কেয়ামত কবে সংঘটিত হবে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতে চাইলেন তুমি এর জন্য কি রকম প্রস্তুতি নিয়েছো? সাহাবী বলল আমি বেশি পরিমাণে নামাজ রোজা আদায় করি। যাকাত সর্বদা দান করি। আর কোন প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি। কিন্তু আল্লাহ ও তাঁর রাসুল কে মন প্রাণ দিয়ে আমি ভালোবাসি। একথা শুনে এরশাদ করলেন, “কাল হাশরে তুমি তার সঙ্গে থাকবে যাকে তুমি ভালোবাসো”।
অন্য একটি হাদিসে বর্ণিত আছে একদা সাফওয়ান বিন খুদামা বলেন:- আমি হিজরত করে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর দরবারে উপস্থিত হলাম ও তিনাকে ঘিরে বললাম আপনার হাতটি দেন আমি বয়আত গ্রহণ করব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনার হস্ত মোবারক বাড়িয়ে দিলেন। আমি বললাম ইয়া রাসুল আল্লাহ আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন মানুষ যাকে ভালোবাসে তার সাথেই সে থাকবে।
আমরা নবীপ্রেমিক কেন?
আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্ব যুগের শ্রেষ্ঠ মহামানব। তিনার গুনগানে আজ বিশ্ব জাহান আলোকিত। তিনার দৈহিক এবং চারিত্রিক গুণাবলীর দিক থেকে আদর্শ বাস্তবায়নে ত্যাগের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। তিনি ছিলেন এই মাতৃভূমির বুকে একজন সম্পূর্ণ মানষী। আমরা নবীপ্রেমিক কেন এই প্রশ্নের অধিক কারণ রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:-
নবী (সাঃ)-এর সৌন্দর্যময় চেহারা
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন একজন উজ্জল নক্ষত্র। যিনার নূরের আলোতে সকল বস্তু চমকিত। তিনার সৌন্দর্যময় চেহারা বর্ণনা দিতে গিয়ে শা`ইরে রাসুল কবি হাসান বিন সাবিত রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু লেখেন:-
وَأَحسَنُ مِنكَ لَم تَرَ قَطُّ عَيني وَأَجمَلُ مِنكَ لَم تَلِدِ النِساءُ
خُلِقتَ مُبَرَّءً مِن كُلِّ عَيبٍ كَأَنَّكَ قَد خُلِقتَ كَما تَشاءُ
তার চেয়ে সুন্দরতম দেখিনি কভু নেত্রমম,
দেয়নি জনম মাতৃকুলে অব অধিক সুন্দরতম।
সকল ঊর্ধ্বে রেখে তোমার হয়েছে সৃজন
সৃষ্টি তোমায় হয়েছে করা তেমনি রূপে চেয়েছো যেমন।
আল্লামা কুরতুবি (রা:) বলেন:- নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্পূর্ণ সৌন্দর্যের বিকাশ ঘটানো হয়নি, নইলে মানুষ তার সৌন্দর্যের তেজস্ক্রিয়তা সহ্য করতে পারত না। উম্মুল মোমেনীন হযরত মা আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা বলেন:- যদি মিশরের রমণী, জুলেখার বান্দিরা আমার নবীর রূপ লাবণ্য প্রদর্শন করত, তাহলে তারা তাদের আঙ্গুল কাটার বিনিময়ে তারা হৃদয় কেটে ফেলতো। মা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা সুন্দরভাবে কবিতার মাধ্যমে তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রূপের বর্ণনা দেন-
لنا شمس و للآفاق شمس و شمسي خير من شمس السماء
فإن الشمس تطلع بعد فجر و شمسي طالع بعد العشاء
নিন নীলিমার দূর কিনারে এক যে আছে এক যে আছে দীপ্ত অরণ,
মেঘে গগনে রয়েছে রবি তার চেয়ে যার অধিক কিরণ।
হয় যে উদয় আকাশ রবি পূর্ব কিনারে ফজর পরে
উদয় ঘটে মোর ছবি তার নৃত্য রাতে এশার পরে ।
হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বর্ণিত করেন:- নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গাত্রবর্ণ ছিল দুধের আলো তা মিশ্রিত ভরক্রিম, গায়ের ঘামের ফোঁটাকে মনে হতো মুক্তোর দানা।
নবী (সাঃ)-এর মহান চরিত্র
মানুষের সুন্দর ব্যবহার চরিত্র ও আচরণ সমাজে স্থান লাভ মানে একটি মূল ভূমিকা পালন করে। এই সুন্দর চরিত্রের প্রতিচ্ছবি নবী (সাঃ) এর শৈশবকাল থেকেই দেখতে পাওয়া যায়, যার ফলে আরব বাসীরা তিনাকে আল আমিন উপাধি প্রদান করেছিলেন। সুতরাং আল্লাহ তা’আলা কোরআন শরীফে এরশাদ করেন:- “নিশ্চয়ই আপনি উত্তম চরিত্রের অধিকারী” (সূরা আল-কালাম,আয়াত-৪)। আজ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন সকল বিশ্ববাসীর জন্য একটি আদর্শ বা নমুনা। নবী করিম সাল্লাল্লাহু ওয়াসাল্লাম সদা সবার সঙ্গে সদচারণ এবং নরমভাবে এগিয়ে আসতেন। কখনো কাউকে ছোট নজরে দেখেননি। সবার হক আদায় করতেন। “অতএব নবী (সাঃ) নিজেই বলেন, আমি প্রেরিত হয়েছি সর্বোত্তম চরিত্রের পূর্ণতা দানের জন্য”। তাই দেখা যায় তিনি ছিলেন সহনশীলতা, সাহস, দয়া ও সহমর্মিতা, পরোপ্রকার, লজ্জা ও ক্ষমাশীলতা, প্রভৃতি অন্যান্য গুণবাদের জীবন্ত প্রতীক।
তিনার মহান চরিত্রের উদারণ মক্কা বিজয়ের দিনে দেখতে পাই। নবী (সাঃ) মুরশিকদের সম্মুখীন হলেন। জিজ্ঞাসা করেন, তোমরা আজকে কি ভাবছো? আমি তোমাদের প্রতি কিরূপ আচরণ করব। মুশরিকেরা উত্তরে বলে আপনি এক মোহনবভূতা মেহেরবান ভাইয়ের মতন হবেন। এ কথা শুনে আরজ করেন (لا تثرب عليكم اليوم اذهبوا انتم الطلقاء) আজকে তোমাদের প্রতি কোন ধরনের নিষ্ঠুরতা এবং অত্যাচার করা হবে না। তোমরা চলে যাও আজকে, তোমরা স্বাধীন হয়ে গেছো। এই ছিল আমার নবী মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্য ধর্মের প্রতি আচরণ। হযরত বারাআ (রা) বর্ণনা করেন:- আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারা ছিল সমস্ত মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সৌন্দর্যময় এবং তিনি ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী (বুখারী শরীফ)।
নবীজির উম্মতের প্রতি নিঃস্বার্থ প্রেম
নবী কারীম মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মহানুভতা দয়া মমতার সাগর। উম্মতের প্রতি ছিল সীমাহীন মমতা। তিনি আমাদের নিঃস্বার্থে ভালোবেসেছেন। কখনো তিনি কৃতজ্ঞতা কামনা করেননি। কোন প্রতিদান চাননি। আল্লাহর দরবারে আমাদের সাফল্য তার জন্য দোয়া করবেন যে, যেন এই উম্মত সর্বদা সঠিক পথের সৎপথে চলন চলাফেরা করে এবং সৎকাজের দিকে এগিয়ে চলে। সহিহ মুসলিম হাদিস নাম্বার ২২৮৫ থেকে স্পষ্ট ভাবে বুঝতে পারা যায় যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতের প্রতি কেমন দরদী ছিলেন। অতএব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই বললেন:-
مثلي ومثلكم كمثل رجل اوقد نارا فجعل الجنادب والفراش يقعن فيها وهو يذبهن عنها وانا أخذ بحجزكم عن النار وانتم تفتلون من يدي
অর্থাৎ আমারও তোমাদের দৃষ্টান্ত সেই ব্যক্তির দৃষ্টান্তের মতন, যে আগুন জ্বালালো, ফলে ফড়িং দল পতঙ্গ তাতে পড়তে লাগলো। আর সেই ব্যক্তি তাদের তা থেকে তাড়াতে লাগলো। অনুরূপ আমিও আগুন থেকে রক্ষার জন্য তোমাদের কোমর ধরে টানছি। আর তোমরা আমার হাত থেকে ছুটে যাচ্ছো।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে রূপ দুনিয়াতে স্নেহ মমতা, ভালোবাসা এই উম্মতের প্রতি অভিভাবক হিসাবে দাবিদার ছিলেন। ওই রূপ কাল আখেরাতে কঠিন মুহূর্তেও অসহায় উম্মতের জন্য মুক্তির সুপারিশ করবেন। এই প্রসঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন
لكل نبي دعوة مستجابة يدعو بها فاستجاب له فيؤتاها وإني اختبأت دعوتي شفاعة لأمتي يوم القيامة
অর্থাৎ প্রত্যেক নবীকে এমন একটি বিশেষ দোআর অধিকার প্রদান করা হয়েছে যা প্রতিক্রিয়াশীল তারা সে দোয়া করেছেন। এবং কবুল করাও হয়েছে। আর আমি আমার দোয়া কাল কেয়ামতের দিন আমার উম্মতের শাফায়াতের উদ্দেশ্যে মুলতাবি রেখেছি (সহীহ মুসলিম হাদিস নম্বর ১৯৯)
উপসংহার
হযরত মুহাম্মাদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সৌন্দর্যময় দৈহিক গঠন এবং বৈশিষ্ট্যময় চরিত্র, আচার-আচরণ এই আধুনিক যুগের আধুনিকবাদ রৈখিক প্রেমিকদের প্রতি একটি আদর্শ জীবন্ত দৃষ্টান্ত। নবীর প্রেম কোন সাধারণ বিষয় নয় এটি মুমিন মুসলমানদের সম্পন্ন ঈমানদার হওয়ার অগ্নিপরীক্ষা। এই পরীক্ষায় সফলতা অর্জন করা ও তিনার সুন্নত সমূহকে সামনে রেখে জীবন বাস্তবায়ন করা হবেই মমিন মুসলমানের প্রধান লক্ষ। আর নবীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রেম-ভালোবাসার দ্বারাই ইহকাল এবং পরকালের সাফল্যতা অর্জন করা সম্ভব। আল্লাহ তাআলা যেন আমাদের তিনার নবীর প্রেম-ভালোবাসার
মাধ্যমে জীবন অতিবাহিত করার তৌফিক দান করেন। আমিন