বিশ্ব মানবতার মহান আদর্শ শিক্ষক হযরত মুহাম্মাদ সাঃ
শিক্ষাদান প্রক্রিয়াটি হল আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সবচেয়ে ব্যবহারিক কার্যগুলির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা মূলত ২৪ ঘণ্টায় চলন্ত। কখনো শিক্ষক হিসেবে আবার কখনো এক আদর্শ মাতা পিতা হিসেবে । আর একজন আদর্শ শিক্ষক হওয়ার জন্য জরুরি হয় তাদের সর্বোচ্চ মূল্যবান প্রচেষ্টা চালানো এবং মূল্যবান সময় ব্যায় করা , নিজের সাহায্যের হাত প্রসারিত করা । কারণ শিক্ষাদান হল শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর মধ্যে একটি যোগাযোগ প্রক্রিয়া যা সহজেই বন্ধন বাঁধে না । আধুনিক প্রযুক্তির আবির্ভাব এবং বৈজ্ঞানিক প্রণালীর বিকাশের সাথে সাথে বর্তমান যুগে শিক্ষাদান প্রক্রিয়াটি বৃদ্ধি পেয়েছে, সমস্যা মোকাবেলা এবং দ্বিধাগুলির সমাধানে উদ্ভাবন হয়ে উঠেছে, যা সকল বিশ্ববাসীর সামনে চ্যালেঞ্জের রুপ ধারণ করেছে।এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়ে দাঁড়ানো সম্ভব ? ।
আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা:) এর কাজ ছিল শিক্ষাদান ও উম্মাতকে লালন-পালন করা, যেহেতু আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই প্রকাশ্য বলেন যে :“নিশ্চয় আমি শিক্ষকরূপে প্রেরিত হয়েছি” (সুনানে ইবনে মাজাহ : ২২৯) অন্য স্থানে বর্ণনা করেন যে : “ মহান আল্লাহ তাআলা আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য পাঠাননি, বরণ তিনি আমাকে একজন শিক্ষক এবং সাহায্যকারী হিসাবে পাঠিয়েছেন।“। এই ক্ষেত্রে আমাদের নবী সাঃ ছিলেন জ্ঞানের ভান্ডার এবং এক আদর্শ শিক্ষক। নবীজির দ্বারা আবিষ্কৃত শিক্ষার পদ্ধতিগুলি এই আধুনিক যুগের শিক্ষার চ্যালেঞ্জের সমাধান হয়ে উঠেছে ।
ইতিহাসের উজ্জ্বল পাতা থেকে লিপিবদ্ধ বিষয়গুলির মধ্যে একটি বিষয় হল যে পৃথিবীতে আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ সা্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একজন আদর্শ শিক্ষক এখনও জন্মগ্রহণ করেনি এবং আগামীকাল হবেনাও কারণ তিনিই ছিলেন সমস্ত দিক থেকে একজন পূর্ণ ব্যাক্তি । মহানবী সাঃ এর ঘর ছিল সকল প্রতিভা এবং শিল্পকলা প্রসারণের ভান্ধার । নবীজির শিক্ষাদানের পদ্ধতি ছিল বিশুদ্ধ মৃত রূপালী প্রশংসনীয় পদ্ধতি । যা পরিচিতি, যোগদান, সহানুভূতি, ভ্রাতৃত্বতা, সম্প্রীতি, ভালবাস , শান্তির বার্তা এবং শিক্ষার্থীর সাথে কোমলতার একত্রিত । তেইশ বছর; এই সংক্ষিপ্ত সময়ে মধ্যে মক্কাবাসী দেখতে পায়, যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনার বরকতময় হাতে পবিত্র আরবের শুকনো জমিতে শত বীজ রোপণ করেছিলেন সেগুলো আজ অঙ্কুরিত হয়েছে , এবং সমাজের জন্য উপকারী ফলদায়ক গাছ এবং রংবেরঙের ফুলে রূপান্তরিত হয়েছে। এই জ্ঞানের বাগিচা থেকে উত্তিন্য হয় লক্ষ লক্ষ চিকিত্সক ; তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হরিস বিন কালদাহ রাযিয়াললাহু আনহু জিনাকে “আরবের ডাক্তার” নামে আক্ষরিত জানা যায়। উত্তিন্ন হয় হাজার হাজার কবী ও সাহিত্যিক; তাদের মধ্যে অন্যতম হজরত আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা, আলী বিন আবি তালিব, এবং হাসান বিন সাবিত, যাকে “রসূলের কবি” বলা হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয় অনেক বৈজ্ঞানিক ও ঋষি ; তাদের মধ্যে বিখ্যাত হজরত আবু দারদা রাজিআলহু আনহু যিনি “জাতির ঋষি বা জ্ঞানী” হিসাবে পরিচিত। সেই বিদ্যালয় থেকে বের হয়ে আসে দক্ষ, মেধাবী এবং গৌরবময় পণ্ডিতরা যারা বিভিন্ন সাহিত্য বৈজ্ঞানিক ক্রিয়া কলার জন্য বিখ্যাত, যাদেরকে ঘিরে নবী করীম সাঃ ইরশাদ করেছেন: “আমার উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে দয়ালু হলেন আবু বকর আল-সিদ্দিক , আল্লাহর দ্বীনের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হলেন উমর ইবনে আল খাত্তাব, তাদের মধ্যে সবচেয়ে সত্যবাদী ও লজ্জাশীল ছিলেন ওসমান বিন আফফান, তাদের মধ্যে সবচেয়ে সৎ ছিলেন আলী বিন আবি তালিব, তাদের মধ্যে সবচেয়ে হারাম হালালের জ্ঞানী ছিলেন মুআদ বিন জাবাল , তাদের মধ্যে উত্তম কারি ছিলেন য উবাই ইবনে কাআব, এই উম্মতের আমানতদার ছিলেন আবু উবাইদা ইবনে আল-জাররাহ এবং আবু হুরায়রা ছিলেন জ্ঞানের পাত্র” । আমার নবী সাঃ তিনার এই মহৎ জ্ঞানী সাহাবীদেরকে উদ্দেশ্য করে গর্বিতভাবে বলেন : “আমার সঙ্গীরা নক্ষত্রের মত, সুতরাং তুমি তাদের মধ্যে যেটিকে অনুসরণ করবে, সেটির দ্বারা হিদায়াত প্রাপ্ত হবে “ ।
হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন শিক্ষার আলোয় আলোকিত এবং সু-শিক্ষার ধারক ও বাহক । তিনি তার সুন্দর কার্যকর ও বাস্তবমুখী শিক্ষানীতি ও পদ্ধতির মাধ্যমে আরবের মূর্খ জাতিকে সুশিক্ষিত করে তোলেন । তাদের মধ্যে জেগে ওঠে শিক্ষা ও শিক্ষার প্রতি আবেগ ও অনুভূতি, সৃষ্টি হয় আরব দেশে শিক্ষার এক নতুন অধ্যায়। সুতরাং তিনার শিক্ষানীতি ও পদ্ধতিতে মুগ্ধ ছিলেন তার পুণ্যাত্মা সাহাবি ও শিষ্যগণ। রাসূল (সা.) পতন্মুখ একটি জাতিকে তার কার্যকর শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে পৃথিবীর নেতৃত্বের আসনে সমাসীন করান এবং উচুঁ স্থানে সমাজে স্থান প্রদান করান। তিনার এই শিক্ষা শুধু ইহকালীন সাফল্য বয়ে আনেনি; বরং তার পরিব্যপ্তি ছিলো পরকালীন জীবন পর্যন্ত তাদেরকে আলোর পথ দিখান। সুতরাং আজ মুসলিম সমাজ শিখায় পিছিয়ে থাকার একটি মূল কারণ হলো নবীজির শিক্ষাদানের পদ্ধতি ভুলে যাওয়া, যার ফলে শিক্ষকরা আধুনিক শিক্ষার পদ্ধতিগুলির সম্মুখীন হয়ে উঠতে সক্ষম হয়না, হেরে যাচ্ছে শিক্ষা ব্যাবস্থার চ্যালেঞ্জের সামনে। যদি তারা আজ এই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে চাই তবে অবশ্যই রাসূল (সা.)-এর শিক্ষাদান পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। কারণ তিনিই হলেন বিশ্বমানবতার মহান আদর্শ শিক্ষক ।