ইসলামে জিহাদ
জীবনে কোনোদিনও ভাবতে পারিনি যে আমি মুসলিম হব। সর্বদা ইসলাম ধর্মকে এক অশান্তি ও নির্যাতনের ধর্ম মনে করতাম, কিন্তু আজ আমি ইসলাম ধর্মের সব থেকে বড় ফ্যান হয়ে গেলাম। আমার নাম জাসুস, অ্যামেরিকায় আমার জীবনযাপন, মা বাবা ও দুই ভাই এবং এক বোন নিয়ে আমার পরিবার। আমি পরিবারের বড় ছেলে, তাই পরিবারের দেখাশোনা ও পরিচালনার ভার আমার কাঁধেই ছিল, আমি কোনো বৃহৎ চাকরীজীবী না, একজন সাধারন ড্রাইভার, একটি ছোটো টেম্পু গাড়ি চালিয়ে পরিবার চালায়। আমি একজন নাস্তিক ও বেধর্মী কখনও কোন ধর্মে গ্রহণ করার কথা জীবনের কোন মুহূর্তে ভাবিনি। আর ইসলাম ধর্ম তো কক্ষনই না। কারন, ছোটো থেকেই আমি ইউরোপীয় ফিল্ম দেখি। আর সেই সব ফিল্মে বারংবার ইসলাম ধর্মের নিষ্ঠুরতা পদর্শন করা হয়। ওয়েস্টেন মুভির ৭৫% সিন ইসলাম ধর্মকে অশান্তি ও জীহাদের ধর্ম বলে প্রকাশ করে থাকে। আমার আজও মনে পরে যে যখন আমি মাত্র ৬ বছরের শিশু ছিলাম তখন জ্বিহাদ শব্দটি প্রথমবার শুনেছিলাম। আর এটাও প্রকাশ্য যে জ্বিহাদের আভিধানিক অর্থ হল মারামারি ও কাটাকাটি, এটা আমাকে আমার সপ্তম ক্লাসের শিক্ষক শিখিয়েছিলেন। তার সঙ্গে এটাও বলে ছিলেন যে ইসলাম ধর্মে একটি গ্রহনযোগ্য গ্রন্থ আছে, মুসলিমরা সেটাকে কোরআন বলে। এই বইটি সম্পূর্ণ যুদ্ধ শিক্ষা প্রদান করে।
শিক্ষকের এই বার্তা ও প্রাচ্য দেশের এই ধরনের ফিল্ম দেখে আমি নিশ্চিত ছিলাম যে জীবনের যদি কখনও কোন ধর্মে যেতেই হয় তাহলে ইসলাম ধর্মে কক্ষনও না। ইসলাম ধর্মকে অনেক ভয় করতাম, আর মনে মনে সমস্ত মুসলিমদের হত্যা করার ভাবতাম। এমত অবস্থায় একদিন আমার বাবা এসে আমাকে বলল যে আমাকে নাকি বেশি টাকাপয়সা অর্জন করার জন্যে তারা আফগানিস্তানে পাঠাবে। যেহেতু সেই সময় আফগানিস্তানকে জ্বিহাদীদের ঠিকানা বলা হত, সেহেতু আমি প্রথমে যেতে রাজি হলাম না কিন্তু পরিবারের এই অবস্থা দেখে অবশেষে যেতে রাজি হয়ে গেলাম। পাসপোর্ট ও ভিসা নিয়ে আফগানিস্তানের তরে রওয়ানা দিলাম। পরিবারের সকলকে শেষ বারের মত দেখে আমি এইরপোর্ট এলাম। এবং তারপর কিছুক্ষণের মধ্যেই জিহাদিদের দেশে পদার্পণ করলাম।
কিন্তু, যখন এইরপোর্টে নামলাম, তখন সব আফগানীয় প্রবাসীদের দেখলাম যে তারা আমাকে তাদের দেশে স্বাগতম জানাচ্ছে। সবাই একে অপরকে শান্তি বার্তা দিচ্ছে, আমি যখন তাদেরকে এই প্রথার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম তারা বলল যে এটা নাকি তাদের ধর্মের নিয়ম যে যখন কেউ দূরদূরান্ত থেকে আসবে তাকে সালাম জানাবে ও সবাই নাকি সেই সালামের উত্তর প্রদান করবে। আমি হতভঙ্গ হয়ে গেলাম। ইউরোপীয় মুভিতে যা দেখতাম যে ইসলামী রাষ্ট্রে সর্বদা মারামারি ও কাটাকাটি হয়ে থাকে, সবায়ের কাছে গান, তালওয়ার বা হত্যা করার যন্ত্র থাকে, সবটিই মিথ্যে। সত্যটা একদম প্রকাশ্য। এইরপোর্ট থেকে আমার বাসভবনে এলাম, এসেই দেখি যে সবাই আমাকে পৃ্তি ও ভালোবাসার সহিত বরণ করিতেছে। আমার জন্যে বিভিন্ন রকমারির খাবার, কোল্ড্রিঙ্কস তৈরি করা হয়েছে। আমি তখন এটি ভাবতে শুরু করলাম যে আমি একজন ড্রাইভার নাকি কোন বড় অফিসার! খাওয়া দাওয়া করে আমি রুমে গেলাম তারপরের দিন সকালে জানতে পারলাম আমাকে এখানে একটি বড় কোম্পানির ট্রেশারারের পদ প্রদান করা হয়েছে।
প্রথম দিন কাজ করতে গিয়েই আমার রুমের চাবি, ও অফিসের পঞ্চাশ হাজার টাকা হারিয়ে যায়। আমি অনেক খোঁজাখোঁজির পরেই না পেয়ে দুঃখ করে বসে আছি, এমন সময় একজন আফগানী এসে আমাকে বলল যে স্যার আপনার নামে একটি পার্স পাওয়া গেছে। সেই ভদ্রলোকটি আমাকে আমার পার্স এনে দিল। আমি পার্সে দেখলাম যে আমার রুমের চাবি ও কোম্পানির পঞ্চাশ হাজার টাকা হেফাজতে আছে। এদের ব্যবহার ও চালচলন আমাকে অনেক প্রভাবিত করল। আমি প্রত্যেক দিনই ইসলাম ধর্মের ব্যাপারে কিছু শিখতে আরম্ভ করলাম। উক্ত ধর্মের ব্যাপারে আমার জ্ঞ্যান ও পুরনো ধারণা একদম বিপরীত ছিল। আফগানীরা যখনই কিছু বলতো মোহাম্মাদে সাহেব ও কোরআনের নাম নিয়ে প্রকাশ করত। আমি চমকে গেলাম যেই গ্রন্থে শুধু যুদ্ধকে প্রোমোট করে সেই গ্রন্থে এই ধরনের কথা কিভাবে হতে পারে। আমার মন না চাইলেও আমি কোরআন শরিফ পড়া শুরু করলাম। কিন্তু আমি এইসব কি দেখছি, যেই গ্রন্থকে আমার শিক্ষকরা যুদ্ধের গ্রন্থ বলত সেই গ্রন্থে শুধু শান্তির বার্তা, ভালোবাসার কথা আর সৎ কর্মের নির্দেশ ও কুকর্ম থেকে নিষেধ করছে। কয়েকদিনের মধ্যেই আমি এই পবিত্র গ্রন্থটি পাঁচ বারের বেশি শেষ করি। তারপর এই ধর্মের নবী মোহাম্মাদ সাহেবের ব্যাপারে পড়তে শুরু করি। অবশেষে আমি জানতে পারি যে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানব ছিলেন এই মহান ব্যাক্তি। পরস্পর আমি তিনবার এই মহান চরিত্রের ব্যাপারে পড়লাম। শেষে থাকতে না পেরে আমি এই মহান চরিত্র অধিকারীর উপর সালাম জানায় এবং আফগানিস্তানের একটি জুম্মা মসজিদে গিয়ে শাহাদাতের কালিমা পড়ে মুসলিম হবার সৌভাগ্য পাই, এবং আমি নিজেই মোহাম্মাদ নাম বেছে নিই। আলহামদুলিল্লাহ।
বলা বাহুল্য যে জ্বিহাদের যেই অর্থাৎ আমি প্রথমে মনে করতাম তাতে তো ইউরপীয় দেশ গুলিই লিপ্ত। আর মুসলিম সমাজে এর অর্থাৎ তো নিজের কুচিন্তা থেকে নিজেকে রক্ষা করা। এবং নিজের আন্তরিক ও বাহ্যিক বৈশিষ্ট ঠিক রাখা। আলহামদুলিল্লাহ এখন আমি একজন মুসলিম। আল্লাহর রহমতের নিচে জীবনযাপন করছি।