কুরবানীর বিবারণ
কুরবানী এটি একটি ইসলামের বৃহত্তম উৎসব বলে গননা করা হয়, যেমনকি কি ঈদুল ফিতর যেটি রমযান মাসের ঠিক পরেই আগমন হয়। তবই এই উৎসব শেষ হওয়ার প্রায় দুই মাস পরেই এই কুরবানী চাঁদ দেখা যায় যে কারণে আমরা মুসলিম ভাই সকল সব এক সাথে এই প্রিয় দিনটিকে আল্লাহ তায়ালার ইবাদাতের জন্য ব্যয় করি থাকি। যেমন সকল বেলায় আমরা গোসল করে পরিস্কার পরিছন্ন কাপড় পরধান করে আতর লাগিয়ে কুরবানীর নামাযের জন্য যায় এবং বাড়ি ফিরে এসে পশু জবাই করি। আল্লাহ তায়ালা কুরআনের শরীফের মধ্যে বলেছেন:
"فصل لربك وانحر"
কুরবানীর কারণ সমূহ:
কুরবানীটি হল হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম-এর সুন্নত। আল্লাহ তায়ালা হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে সপ্ন দেখিয়েছিলেন যে তিনি যেন তাঁর কলিজার টুকরাকে আল্লাহর নামে কুরবানী কর। আর এই স্বপ্নটি আর্শ্চযজনক ব্যাপার। কারণ এই স্বপ্নটি আল্লাহ তায়ালা হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে পরস্পর তিন দিন দেখিয়েছিলেন। তার জন্য হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এই স্বপ্নটিকে মেনে নিয়েছিলেন এবং আল্লাহর রাস্তায় তিনার প্রায় কলিজার পুত্রকে কুরবানী করার জন্য তৈরি করেছিলেন। তিনি বিবির হাজরাকে দাওয়াতের নামে পুত্র হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে নতুন পোশাক পরিধান করার আদেশ দেন। নতুন পোশাক পরিধান করার পরে রাস্তায় যাত্রা করতে শুরু করে দিলেন। তখন ইবলিশ শয়তান এসে ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে বলতে লাগলো যে – এ ইব্রাহিম তুমি যে স্বপ্ন দেখেছো সেটি মন গড়ান।কারণ ইবলিশ শয়তান কখনও সঠিক রাস্তা প্রদর্শন করে না। তার জন্য (رؤيا الأنبياء وحي) আম্বিয়া কেরামের স্বপ্ন এক প্রকার ওহী, মন গড়ানো না। এই সব হওয়ার পর ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম বুঝলেন এটি নিশ্চয় ইবলিশের কাজ। শয়তান তখন দূর পালিয়ে বিবি হাজরার পিছে যায় এবং বলতে থাকে যে:
এই বিবি হাজরা তুমি জানো যে তোমার পুত্রকে ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম কোথায় নিয়ে গেছে? তিনি দাওয়াতে নিয়ে যাননি, বরং তোমার প্রতিপালকের আদেশে তাকে কুরবানী করতে নিয়ে গেয়েছেন। তারপর বিবি হাজরা বললেন: যদি এটাই হয় আমার প্রতিপালকের আদেশ তাহলে আমার ইসমাইল কেন যদি হাজার ইসমাইল থাককেও কুরবানীর আদেশ হলে আমি রাজি।
স্বপ্নের দিন
যখন ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন তখন তিনি ভাবলেন যে এটি শয়তানের কর্ম হতে পারে তাই তিনি বেশি মনোযোগ দিলনে না, কিন্তু এই প্রথম দিনকে (يوم التروية) বলা হয়েছে। তিনি একই স্বপ্ন তার পরের দিনও দেখলেন। এই স্বপ্ন দেখার পরে তিনি ভাবলেন যে এই স্বপ্নটি শয়তানের দ্বারা না বরং আল্লাহর দ্বারাই হতে পারে তাই এই দিনটিকে (يوم عرفة) বলা হয়েছে। শেষ তিন দিনের দিনে তিনি অনুরূপ এই স্বপ্নটি দেখলেন তখন ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম নিশ্চিত হয়ে গেলেন যে এটি নিশ্চয়ই আল্লাহর তরফ থেকে। তাই এই দিনটিকে (يوم النحر) বলা হয়েছে ।
মিনা পাহারের দিকে যাত্রা
তারপর ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম মিনার দিকে চলে যান, কিন্ত হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর ব্যাপারে কিছুই জানতেন না। তিনি শুধু এটাই জানতেন যে আমাকে দাওয়াতে নিয়ে এসেছেন। তারপর যখন সব কিছু জেনে নিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন কেন আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন? তখন তিনি সব কিছু বলেন যে আমি আল্লাহর তরফ থেকে তিন দিন পরস্পর স্বপ্ন দেখেছি যে আমি তোমাকে কুরবানী করছি তাহলে তুমি বল তোমার পরামর্শ কি? তার পরে তিনি বলেন: আপনাকে যে জিনিসের জন্য আদেশ দিয়েছেন আপনি করেন। আপনি আমাকে সহনশীলতার অবস্তায় পাবেন। তখন এই কাজের ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম ও তাঁর পুত্র ইসমাইল আলাইহিস সালাম তৈরি হয়ে যায়। এই সত্যতার জন্য আল্লাহ তায়ালা তিনাদের কর্মকে কবুল করেন। কুরআনের আয়াত অবর্তীন হয়ে যে:
(يا إبراهيم قد صدقت الرؤيا إنا كذلك نجزي المحسنين)
আর জিবরাইল আলাইহিস সালাম আল্লাহর নিকটে দুআ করেন:
(ربنا ارحم هذا الشيخ الكبير و أفد هذا الطفل الصغير)
কুরবানীর সময়
যখন ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম তৈরি হয়ে গেলেন যে তাঁর পুত্রকে কুরবানী করবে তখন হাযরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে তিনটি কথা বলেছিলেন। ১- যখন আপনি আমাকে কুরবানী করবেন তখন যেন আমাকে একবারে কুরবানী করেন। তার জন্য চাকুটা ধারালো করে নেন। ২- আর যখন আমাকে কুরবানী করবেন তখন আপনার চোখকে বেঁধে নিবেন, কারণ যখন আমাকে কুরবানী করবেন তখন যেন আমার ওপর দুঃখিত হয়ে থেমে না যান। ৩- (সাদা কাপড় খুলে) এই কাপড়ে আমাকে কাফন দিবেন।
আল্লাহ তাআলা যে স্বপ্নটি ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে দেখিয়েছিলেন সেটি তিনি আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করেন। এই বিশ্বাসের কারণে আল্লাহ তাআলা তিনার এই কর্মটিকে গ্রহণ করেন। আল্লাহ তায়ালা আয়াতে বলেন (ومن يتوكل على الله فهو حسبه)।
জিবরাইল আলাইহিস সালাম এর মাধ্যমে তারপর আল্লাহ তায়ালা আসমান থেকে একটা জান্নাতের দুম্বাকে পাঠিয়ে দেন এবং হাযরত ইসমাইল আলাইহিস সালামকে জায়গায় দুম্বা কুরবানী হয়। আর এখান থেকে এই কুরবানী হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের সুন্নত হয়ে গণনা করা হয়। প্রতি বছর শুধুমাত্র এই সুন্নতের ওপর আমল করে আজকের মুসলমানরাও কুরবানী করে। শেষে আমি আটাই বলতে চাই যে এবছরও আমাদের সামনে কুরবানীর আসতেছে আল্লাহর কাছে আটাই দুয়া করবো যেন আমরা ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর সুন্নত আনুযায়ি কুরবানী করতে পারি । আমিন