ইসলাম ধর্মে শিক্ষার গুরুত্ব (দ্বিতীয় ভাগ)
হাদীসের আলোকে বিদ্যার গুরূত্ব
যেহেতু আমাদের নবী আখেরী নবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা স্বল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি সাল্লাম হলেন আল্লাহর প্রিয়তম নবী ও রসূল তথা শ্রেষ্ঠ দূত। এবং তাঁকে সমগ্ৰ জগতের কল্যাণের জন্য এই ধরার বুকে পাঠানো হয়েছে সেহেতু তিনিও নিজের মতো করে বিভিন্ন ভাবে বুঝিয়ে রকমারি ফযীলত ও নেকির শুভ সংবাদ শুনিয়ে মানুষকে জ্ঞান অর্জনের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন, উৎসাহিত করেছেন। বিদ্যা অর্জন করা সকলের জন্য অপরিহার্য করেছেন । এই সংক্রান্ত প্রচুর হাদীস, হাদীসের গ্ৰন্থাদিতে বিদ্যমান। লেখনীর কালেবর বৃহৎ হওয়ার আশঙ্কায় কেবল মাত্র মুখ্য মুখ্য মুষ্টিমেয় হাদীস তুলে ধরা হচ্ছে।
হাদীস শরীফ হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ স্বল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেন --- জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরজ।জ্ঞান অর্জন কারীর জন্য সমস্ত জিনিস মাগফেরাতের দুআ করে। এমনকি সমুদ্রের মাছেরাও তার জন্য মাগফেরাতের দুআ করে।( ইবনে আব্দুল বার)
হাদীস শরীফ এক মুহুর্ত জ্ঞান অন্বেষণ করা সারা রাত এবাদত করার চেয়েও বেশি উত্তম। এবং একদিন জ্ঞান অন্বেষণ করা তিন মাস রোজা রাখার চেয়েও বেশি ভালো।( মুসনাদুল ফিরদাউস)
হাদীস শরীফ হজরত সানজেরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত--- ওলামাগণ হচ্ছেন নবীদের উত্তরাধিকারী।( ইবনে মাজাহ)
হাদীস শরীফ হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত--- জ্ঞান অন্বেষণ কারী আল্লাহর পথেই থাকে যতক্ষণ না সে ( বাড়ি) ফিরে আসে।(আবু নুআইম)
হাদীস শরীফ তাঁর হতেই বর্ণিত--- জ্ঞান অর্জন কারীর জন্য ফেরেস্তারা নিজেদের পাখা বিছিয়ে দেন।( ইবনে আসাকির)
হাদীস শরীফ হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু হতে বর্ণিত--- আলেমের মজলিসে বসা এবাদত।( মুসনাদুল ফিরদাউস)
হাদীস শরীফ প্রতিটি জিনিস পাওয়ার একটি পথ রয়েছে আর জান্নাত পাওয়ার পথ হলো জ্ঞান অর্জন করা।(মুসনাদুল ফিরদাউস)
হাদীস শরীফ হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা থেকে বর্ণিত--- যে ব্যক্তি পা তোলে এই উদ্দেশ্যে যে, সে জ্ঞান অর্জন করতে যাবে তাহলে তার পা তোলার পূর্বেই তার গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। ( শিরাযী)
হাদীস শরীফ হজরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত--- তোমরা নিজে জ্ঞান অর্জন করো এবং অপরকে জ্ঞান শেখাও।( দার ক্বুতনী)
হাদীস শরীফ হজরত ইবনে ওমার রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমা হতে বর্ণিত--- একদা রসূলুল্লাহ স্বল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম দুটি মজলিসের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। মজলিস দ্বয় সম্পর্কে বললেন --- "দুটো মজলিসই ভালো ও নেকির কাজ করছে। অতঃপর (একটির দিকে ইশারা করে) বললেন এরা দুআ তথা মুনাজাতে লিপ্ত রয়েছে। আল্লাহ্ চাইলে দিতেও পারেন, আর নাও দিতে পারেন। আর ( অপরটির দিকে ইশারা করে বললেন) এরা ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনে এবং যারা জানেনা তাদেরকে শেখাতে মগ্ন আছে। সুতরাং এদের মর্তবা বেশি। আর আমাকে তো শিক্ষক করেই পাঠানো হয়েছে।"
এই বলে নবীজি এদের মজলিসে বসে যান।(মুসনাদ দারেমী)
হাদীস শরীফ হজরত জাবির বিন আব্দুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত---অজ্ঞতার পীড়া (অসুখ) থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় হচ্ছে অপরকে জিজ্ঞাসা করা।( আবু দাউদ)
ইসলামের ইতিহাসে প্রথম যুদ্ধ 'বদর যুদ্ধ' । এই যুদ্ধে আলহামদু লিল্লাহ মুসলিমরা জয়ী হন। বিরোধী খেমার ৭০ জনকে যুদ্ধোপরাধী হিসেবে বন্দি করা হয়। এদের মধ্যে যারা গৃহস্থ ছিল তারা ফিদিয়া (মুক্তি পণ) দিয়ে ছাড়া পায়। আর যারা গরীব ছিল,ফিদিয়া দেওয়ার সামর্থ ছিলনা নবীজি তাদেরকেও এই শর্তে মুক্তি দেন যে, তারা প্রত্যেকে দশ- দশ জন মুসলমানকে লেখা পড়া শিখিয়ে দিবে।
নবীজির এই মহান সিদ্ধান্ত আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে, লেখাপড়া 'প্রাণ তুল্য'। সুবহানাল্লাহ, সুবহানাল্লাহ