নারী সুরক্ষার প্রতিজ্ঞায় সরকার মিথ্যাবাদী (পর্ব ১)
২০১৪ সালে নারী শক্তি স্লোগান দিয়ে সরকার গঠন করেন ভারতীয় ১৪তম প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ক্ষমতায় আসার পর নারীদের নির্যাতন ও সম্নান উলঙ্ঘন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিভিন্ন প্রকল্প জনসমক্ষে প্রচার করেন। নিরভয়া ফান্ড, অন স্টেপ সেন্টার, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি থেকে নারীদের সুরক্ষা আইন ২০১৩, মহিলা পুলিস স্বেচ্ছাসেবক, বেটি বাচাও বেটি পাড়াও, বালিকা সমৃদ্ধি পরিকল্প, প্রমুখ স্কিম আরম্ভ করে। ২০১২ সালে নির্ভয়ার বর্বর গনধষর্ণের কারনে দেশ বিদেশে সমালচানার বেশ থেকে রক্ষ্যা পাওয়ার জন্য ভারতীয় জনতা পার্টি মহিলা সুরক্ষা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দেশে ১৫০-এর অধিক নারী সুরক্ষা সংগঠন আরম্ভ করে ।
কিন্তু এইরকম বললে কেমন হবে যে এতোগুলো সংগঠন শুধুমাত্র তাদের সংসদ সদস্যদের নারী নির্জাযন কেস থেকে রক্ষ্যা করার জন্য ছিল ?
আসলে সব এই রকমই । আসুন বিষয়টি বিস্তারিত ভাবে দেখি:-
বিলকিস বানু মামলা
২০০২-এ বিজেপি হোম গ্রাওন্ড গুজরাট দাঙ্গা চলাকালীন বিলকিস বানু নামক এক মুসলিম গর্ভবতী মহিলাকে ১১ জন বেজিপি সমর্থক গনধর্ষন করে ও তার পরিবারের সাত জন সদস্যকে হত্যা করে, সেই বছরই পাবলিকের অতিরিক্ত নিন্দার চাপে গুজরাত সরকার ধর্ষনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে । ২০০৩-এ সুপ্রিম কোর্ট মামলাটি CBI কে স্থানন্তর করে, ২০০৪-এ উক্ত মামলাটি সুপ্রিম কোর্ট থেকে মহারাষ্ট্র হাই কোর্টে যায়, তারপর ২০০৮ সালে সকল গনধর্ষনকারীদের জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তি ঘোষণা করা হয়, কিন্তু ২০১৪ তেই গুজরাট সরকার তাদেরকে রেহায়ের তলবে আবেদন যানায়। এমনকি ২০২২ সালের অগাস্ট মাসে তাদেরকে ছেড়েও দেওয়া হয়। কিন্তু ২০২৪ এর জানুয়ারি মাসে ভারতীয় প্রধান বিচারপতি ধনঞ্জয় যশবন্ত চন্দ্রচূদ তাদের রেহায়ের আবেদন খারিজ করেন এবং আবার সেই গনধর্ষনকারীদের জেলে বন্দী করে রাখার নির্দেশ দেয়। এবার, এই মামলায় কোন সরকারী বা বেসরকারী সংস্থা এগিয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়নি, কারণ ধর্ষনকারী সকলেই বিজেপি আধিকারিক।
নির্ভয়া গনধর্ষন মামলা
ভারতীয় ১৩ তম প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের মেয়াদকালীন ২০১২ সালের ৬ ডিসেম্বরে জ্যোতি সিংহ নামক এক সাইকোথেরাপিস্টের সঙ্গে মর্মান্তিক গনধর্ষনের ঘটনা ঘটে। উক্ত দিনে ডঃ জ্যোতি সিংহ নিজের সহকর্মী অরবিন্দ প্রতাব পাণ্ডের সঙ্গে একটি প্রাইভেট বাসে ভ্রমণ করাকালীন সেই বাসে বসে থাকা ড্রাইভার সহ পাঁচজন ব্যাক্তি সেই মানুষটির উপরে হামলা করে এবং জ্যোতি সিংহকে সকলেই মিলে গনধর্ষন করে। অবিলম্বে মেয়েটি বাস থেকে রক্ষ্যা পেয়ে পার্শবর্তী সারদার্জাং হসপিটালে নিজের চিকিৎসার জন্য ঢুকে পড়ে, কিন্তু নির্যাতনের ১১ দিন পরেই তাকে সিঙ্গাপুর হসপিটালে ট্রান্সফার করা হয় এবং সে সেখানেই মারা যায়।
এই ঘটনাটি দেশ-বিদেশের নজর কাড়া মর্মান্তিক গণধর্ষণের ঘটনা হয়ে থাকে, যার কারণে ভারত এবং অন্যান্য দেশেও চরমভাবে এর নিন্দা করা হয় এবং সরকার ধর্ষিতা মেয়েটির নাম মিডিয়ার সামনে আনা থেকে বাধা দেয়। এই জন্যেই সংগ্রামকারীরা তার নাম নির্ভয়া রাখে যার অর্থাৎ এমন এক নারী যার কোন ভয় নেই।
নির্যাতনের ছয় দিন পর সিবিআই অন্বেষণে সেই ছয়জন ধর্ষণকারীদের নাম সামনে আছে। মুকেশ সিং, বিনয় শর্মা, পাওয়ান গুপ্তা, অক্ষয় ঠাকুর, রাম সিং এবং মোহাম্মদ আফরোজ । রাম সিং মৃত্যুদন্ডের বিচার আসার পূর্বেই নিজেকে ফাঁসি লাগিয়ে জেলেই আত্মহত্যা করে, বাকি চারজন হিন্দুকে ২০১২ সালেই জেলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং দুই হাজার কুড়িতে তিহার জেলে তাদের সকলকে ফাঁসি দেওয়া হয়। এবং মোহাম্মদ আফরোজকে তিন বছরে সাজা দেওয়া হয় ।
এই ঘটনার পরে তখনকার রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ৮০ হাজার মানুষের পরামর্শ নিয়ে নারী নির্যাতন রক্ষা নিয়মকে অনেক কঠোর ভাবে তৈরি করেন, যার কারণে কংগ্রেসের পরবর্তী ২ বছরে কোন নারীর নির্জাতনের মামলা দায়ের হয়নি।
কংগ্রেসের আমলকালীন সেই নির্যাতিত নেয়েটিকে আপন ন্যায়বিচারের জন্য প্রতিবাদ করতে হয়নি, বরং সরকার নিজেকে দোষী মেনে মেয়েদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে জনতার সঙ্গে চর্চা করে নানান বিধি তৈরি করেন ।