সংশোধিত NCERT পাঠ্যপুস্তকের নতুন সংস্করণে 'বাবরি মসজিদ' এর র নাম মুছে ফেলে সেটিকে 'তিন-গম্বুজ কাঠামো' হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে
গত সপ্তাহে প্রকাশিত এন.সি.ই.আর.টি ক্লাস 12 পলিটিকাল সায়েন্সের সংশোধিত পাঠ্যপুস্তকে বাবরি মসজিদের নাম মুছে দিয়ে এটিকে "তিন গম্বুজ কাঠামো" বলে উল্লেখ করেছে। এছাড়া সংশোধিত পাঠ্যপুস্তকে অযোধ্যা পর্বের চার পৃষ্ঠা সম্পন্ন বিবরণকে দুই পৃষ্ঠাই সংক্ষিপ্ত করে মসজিদ ধ্বংসের একাধিক উল্লেখ মুছে ফেলা হয়েছে।
মিম পার্টির সুপ্রিমো আসাদুদ্দিন ওয়েসি বলেন যে, " এন.সি.ই.আর.টি বাবরি মসজিদকে "তিন গম্বুজযুক্ত কাঠামো" শব্দ দিয়ে বদলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি অযোধ্যা রায়কে ঐকমত্যের একটি উদাহরণ বলারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৷ ভারতীয় প্রত্যেকটি শিশুদের জানা উচিত যে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বাবরি মসজিদ ধ্বংসকে একটি "গুরুতর অপরাধমূলক আইন" বলে অভিহিত করেছে ৷ ভারতের প্রত্যেকটি শিশুদের জানা উচিত যে 1949 সালে একটি কার্যকরী মসজিদ অপবিত্রকরণ করা হয়েছিল এবং তারপর 1992 সালে হিন্দু মব দ্বারা ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছিল। শিশুরা যেন সত্য কে ভুলে এই অপরাধমূলক কর্মের প্রশংসা করে বড়ো না হয়। "
নতুন সংস্করণটি 2014 সাল থেকে হয়ে আসা NCERT-এর চতুর্থ পর্যায়ের সংশোধন এবং আপডেটের একটি অংশ। এন.সি.ই.আর.টি অযোধ্যা অধ্যায়কে ঘিরে পরিবর্তনের বিষয়ে বলে যে, “রাজনীতির সাম্প্রতিক ঘটনাবলী অনুসারে বিষয়বস্তু আপডেট করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় এবং জনগণের ব্যাপক স্বাগত অভ্যর্থনা দ্বারা আনা সর্বশেষ পরিবর্তনের কারণে অযোধ্যা মামলাটির পাঠ্যটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সংশোধন করা হয়েছে।”
অযোধ্যা পর্বের যে উল্লেখযোগ্য বিবরণগুলি মুছে ফেলা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে , রাম জন্মভূমি আন্দোলনের জন্য সমর্থকদের একত্রিতকরণ এবং এল. কে আডভানির নেতৃত্বাধীন বিজেপির রথযাত্রা, বাবরি মসজিদ পতনে কার সেবকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, 1992 সালের 6 ডিসেম্বর মসজিদ ধ্বংসের পরে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে জরুরি অবস্থা জারি ও রাষ্ট্রপতি শাসন (ভারতীয় সংবিধান, অনুচ্ছেদ ৩৫৬) এবং বিজেপির "অযোধ্যার ঘটনার জন্য অনুশোচনা"।
সংশোধিত পাঠ্যপুস্তকটিতে ধ্বংসের অন্তত তিনটি রেফারেন্স সরিয়ে দিয়ে অযোধ্যায় নবনির্মিত রাম মন্দিরকে "শতাব্দী পুরানো আইনি ও রাজনৈতিক বিরোধ" এর চূড়ান্ত পরিণতি হিসাবে চিত্রিত করেছে। পূর্ববর্তী সংস্করণে 1986 সালে তালা খোলার ঘটনা থেকে শুরু করে পরবর্তীতে উভয় হিন্দু-মুসলিম
পক্ষের রাজনৈতিক সংহতির বিবরণ ছিল। অযোধ্যা বিরোধের এই চূড়ান্ত রায় পাঁচ বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত সাংবিধানিক বেঞ্চ এর সর্বসম্মত (5-0) রায়ে 9 নভেম্বর 2019 তারিখে সুপ্রিম কোর্ট দ্বারা ঘোষণা করা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট বিতর্কিত জমি (2.77 একর) মন্দির নির্মাণের জন্য একটি ট্রাস্টের কাছে হস্তান্তর করার নির্দেশ দেই এবং বাবরি মসজিদের পরিবর্তে একটি মসজিদ নির্মাণের উদ্দেশ্যে উত্তরপ্রদেশ সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ডকে অন্য জায়গায় বিকল্প 5 একর জমি দেওয়ার নির্দেশ দেই।
সংশোধিত পাঠ্যপুস্তকটিও অযোধ্যার ইতিহাসের একটি নতুন সংস্করণ যেইটিতে ইতিহাসের সাথে সাথে ঘটনার ক্রমও বদল করা হয়েছে। পুরানো পাঠ্যপুস্তকে মীর বাকিকে 16 শতকে বাবরি মসজিদ নির্মাণকারী হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু নতুন সংস্করণে বাবরি মসজিদ নাম পরিবর্তন করে সেটিকে "তিন গম্বুজ কাঠামো" বলে অবিহিত করা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে যে উক্ত "তিন গম্বুজ কাঠামো" শ্রী রামের জন্মস্থানের জায়গায় নির্মিত হয়েছিল এবং এর অভ্যন্তর ও বাইরের অংশে হিন্দু চিহ্ন এবং ধ্বংসাবশেষের প্রদর্শন "দৃশ্যমান ছিল"।
নতুন পাঠ্যপুস্তকটি এখন শুধুমাত্র 9 নভেম্বর, 2019-এর সুপ্রিম কোর্টের ' রাম মন্দির নির্মাণের অনুমতিপ্রদান' রায়ের উল্লেখ করে পূর্ববর্তী সমস্ত রায় এবং ঘটনাক্রমকে মুছে দিয়েছে। উল্লেখিত সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সম্বন্ধে বলে হয় যে, “...এই আদালতের প্রতিটি বিচারককে কেবলমাত্র নামমাত্র দায়িত্ব দেওয়া হয় না বরং তারা সংবিধান ও এর মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার শপথ নেন। সংবিধান এক ধর্ম ও অন্য ধর্মের বিশ্বাসের মধ্যে পার্থক্য করে না। সকল ধর্মের সকল প্রকার বিশ্বাস, উপাসনা এবং প্রার্থনা সমান।” এইভাবে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, “মসজিদ নির্মাণের পূর্ব থেকে এবং পরবর্তীকালে হিন্দুদের বিশ্বাস সর্বদাই এটাই ছিল যে ভগবান রামের জন্ম সেই স্থানেই হয় যেখানে 'তিন-গম্বুজ কাঠামো' টি নির্মিত হয়েছিল।
নতুন সংস্করণটির অযোধ্যা বিবাদের সমাপ্তি নিম্নরূপ ব্যাখ্যা করেঃ “ সুপ্রিম কোর্টের রায় রাম মন্দির নির্মাণের জন্য বিতর্কিত স্থানটি শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টকে বরাদ্দ করে এবং সুন্নি কেন্দ্রে একটি মসজিদ নির্মাণের জন্য উপযুক্ত জায়গা বরাদ্দ করার জন্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে। এইভাবে, গণতন্ত্র সংবিধানের অন্তর্ভুক্তিমূলক চেতনাকে সমুন্নত রেখে আমাদের মতো বহুবচন সমাজে বিরোধ নিষ্পত্তির কাজ করে । প্রত্নতাত্ত্বিক খনন এবং ঐতিহাসিক রেকর্ডের মতো প্রমাণের ভিত্তিতে আইনের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এই সমস্যাটি সমাধান করা হয় । সুপ্রীম কোর্টের এই রায়ে সমাজের পক্ষ থেকে ব্যাপকভাবে সম্মতি ও স্বাগত অভ্যর্থনা দেখা যাই যেটি এমন একটি প্রখর অনুভূতিপ্রবণ মামলাতে ঐকমত্য গড়ে তুলে ভারতের গণতান্ত্রিক নীতির পরিপক্কতার একটি সর্বোত্তম উদাহরণ হিসেবে প্রমাণিত হয় ।