প্রকৃত শহীদ কারা?
বর্তমানে অনেকেই শহীদ শব্দটি নিজেদের খেয়াল খুশি মত ব্যবহার করছে। এমনকি বেধর্মীদের বেলাও ব্যবহৃত হচ্ছে। শহীদ শব্দটি মূলত কুরআনের নিজস্ব শব্দ। কাজেই কুরআন যাদেরকে শহীদ বলেছে তাদেরকেই শহীদ বলা উচিত। ইদানিং অধিকাংশ লোকেরা যাকে তাকেই শহীদ বলে আখ্যা দিচ্ছে। এমনকি কাফের, মুশরিক, অমুসলিম, বেইমান ও মুনাফিক নিহত হলেও তাদেরকেও শহীদ বলে উপাধি দিয়ে তাদের সমাধিগুলোতে কত রকম শিরক-বিদআত কার্য করে যাচ্ছে। আর ইসলাম সম্বন্ধে অজ্ঞ লেখকগণ তাদের বই-পুস্তকে পর্যন্ত শহীদের মনগড়া অর্থ ও ব্যাখ্যা লিখে ছাত্র-ছাত্রীদের মগজে এভ্রান্ত অর্থ দ্বারা নকল শহীদের চিত্র বদ্ধমূল করে দিচ্ছে। কারণ সাধারণ মানুষ শহীদের অর্থ ও ব্যাখা জানে না।
শহীদ হলো আরবি শব্দ। এবং আল্লাহর পথে নিহত ব্যক্তির জন্য শহীদ উপাধি স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা ও তিনার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিয়েছেন। প্রথমত, বিজ্ঞ আলেমদের মতামতের দিকে যদি দৃষ্টিপাত করি তারা বলেন: "শহীদ হল, আল্লাহর রাস্তায় নিহত ব্যক্তি। অর্থাৎ, প্রত্যেক অভিধানেই পরিষ্কার দেখতে পাবো যে, একমাত্র আল্লাহর পথে নিহত হলেই শহীদ হয়। দ্বিতীয়তঃ আল্লাহ স্বয়ং কোরআন শরীফে বলেন: "যারা আল্লাহর পথে নিহত হয় একমাত্র তারাই শহীদ হবে এবং আল্লাহর বিরাট বিরাট পুরস্কার ও বিভিন্ন ধরনের নিয়ামত পাবে।
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন: "আর যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে। অতঃপর সে নিহত হয় বা বিজয়ী হয় আমি তাকে বিরাট পুরস্কার দেবো"। (সূরা আন নিসা :৭৪). এবং তিনি শহীদদের মর্যাদা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে বলেন : "ঈমানদারগন আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে"। (সূরা আন নিসা : ৭৬).
অতঃপর বোঝা গেল যে, আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে নিহত হলেই শহীদ হয়। অন্য আর কোন যুদ্ধে নিহত হলে কখনোই শহীদ হয় না। তাফসীরে জালালাইনে লিখেছেন যে, আল্লাহর দ্বীনকে অতি উচ্চ করার জন্যে, যুদ্ধ করে নিহত হলে শহীদ হবে।
তৃতীয়তঃ বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী সমূহ থেকে স্পষ্ট জানতে পারা যাবে যে, অন্য আর কোন যুদ্ধ তো দূরের কথা ধর্মযুদ্ধে গিয়েও যদি মনের মধ্যে পার্থিব কোন স্বার্থ বা উদ্দেশ্য রাখে তবে তাতেও শহীদ হবে না। যেমন তিনি ইরশাদ করেছেন : "হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এক ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ বা যুদ্ধ করতে চায়, আবার পার্থিব মাল দৌলতও চাই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন : সে ব্যক্তির জন্য শহীদের কোন সওয়াব বা নেকি নেই"। (আবু দাউদ, মিশকাত:৩৩৪).
শহীদের ফজিলত ও মর্যাদা :-
শহীদের মর্যাদা ও মর্তবা যে কত বড় যার বর্ণনা স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা কোরআন শরীফে করেছেন : "যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয় তাদেরকে মৃত বলো না। বরং তারা জীবিত কিন্তু তোমরা তা বুঝনা"। (সূরা আল বাকারাহ: ১৫৪).
সূরা আল ইমরানে আল্লাহ তায়ালা শহীদগনের চারটি বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন। প্রথম, তারা অনন্ত জীবন লাভ করেছেন। দ্বিতীয়, তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে রিজিক পান। তৃতীয়, তারা সদা সর্বদা আনন্দমুখর থাকেন। চতুর্থ, তারা যেসব মুসলিম ভাইদেরকে পৃথিবীতে রেখে গিয়েছেন তাদের ব্যাপারেও এ আনন্দ অনুভূত হয় যে, তারাও পৃথিবীতে জিহাদে নিয়োজিত আছেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত সব যুগে থাকবেন। ফলে তারাও জিহাদ করে শহীদ হয়ে এসব অতি উন্নমানের নিয়ামত ও অতি উচ্চ মর্যাদা লাভ করবেন। হযরত সামুরা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাঃ এরশাদ করেছেন : "আমি অদ্যরাত্রে দেখলাম দুজন লোক (ফেরেশতা) এসে আমাকে গাছের উপর উঠিয়ে এমন অতি উত্তম ও অতি সুন্দর ঘরে নিয়ে গেল যার থেকে উত্তম ঘর আমি আর কখনো দেখিনি। তারা বলল, এ ঘর শহীদগনের ঘর"। (বুখারী শরীফ :৩৯১).
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসুল সাঃ এরশাদ করেছেন : ওই জাতের শপথ যার হাতে আমার প্রাণ। আল্লাহর পথে যাকেই জখম (ক্ষত) করা হয় কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় আসবে যে, তার যখম হতে রক্ত প্রবাহিত হতে থাকবে। রক্তের রঙ লাল হবে কিন্তু ঘ্রাণ হবে মিশকের ঘ্রাণ। যাকে আল্লাহর পথে ক্ষত করা হয় তার সম্বন্ধে আল্লাহ তাআলাই খুব ভালো জানেন"। (বুখারী শরীফ:৩৯৩).
হাদিসে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ তাআলার নিকটে শহীদ ব্যক্তির ছয়টি উচ্চ মর্যাদা ও মহা পুরস্কার রয়েছে। প্রথম, রক্তের প্রথম ফোটা পড়তেই তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। দ্বিতীয়, তার স্থান জান্নাতে দেখান। তৃতীয়, কবরের আজাব থেকে রক্ষা করা হয়। চতুর্থ, কিয়ামত ও জাহান্নামের ভয়ংকর আতঙ্ক থেকে রক্ষা করা হবে। পঞ্চম, মাথার উপর ইয়াকুতের সম্মানিত মুকুট পরানো হবে যা পৃথিবী ও তাতে যা কিছু আছে সেগুলোর চেয়ে উত্তম। ষষ্ঠ, ডাগর ডাগর চক্ষুধারী ৭২ জন হুর তার সাথে বিবাহ দেওয়া হবে এবং তার আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে থেকে সত্তর জন আত্মীয়ের সুপারিশ কবুল করা হবে"। (তিরমিজি:১৯৯, ইবনে মাজা:২০১, মিশকাত:৩৩৩).
উপরে শহীদের যেসব অতি উচ্চ ফজিলত, মর্তবা ও মর্যাদার কথা পবিত্র কোরআন ও হাদিসের অকাট্য দলিল দ্বারা বর্ণনা করা হলো সেগুলো ওই সমস্ত শহীদকে দেওয়া হবে যারা প্রকৃত রূপে আল্লাহ ও তিনার রাসূলের নিকট শহীদ বলে গণ্য। পৃথিবীর লোকেরা অন্যান্য নিহত লোককে শহীদ বলে যতই উপাধি দেক না কেন। কিন্তু ইসলামের শরীয়তে তারা কখনোই শহীদ হবে না।